E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ৬ ফাল্গুন, ১৪২৭

মুর্শিদাবাদ জেলার আন্দোলন সমাবেশ


সংবাদদাতাঃ মহঃ সামসুজ্জোহা

বিড়ি শ্রমিকরা ধুঁকছেন, মুর্শিদাবাদ জেলার মন্ত্রীর মালিকানাধীন বিড়ি কারখানাও দু’সপ্তাহ ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে। অন্য কারখানাগুলিতেও উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশ। করোনা আবহে জেলার লক্ষাধিক বিড়িশ্রমিক কাজ হারিয়ে রোজগারহীন হয়ে পড়েছেন। সূত্রের খবর, গত কয়েকমাস ধরে বিড়ি বিক্রি ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বিড়ি মালিকরা জানিয়েছেন, এখন পুরো সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের কাজ দেওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে শ্রমিকরা প্রতি হাজার বিড়িতে ১৫২ টাকা করে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর মালিকরা এর সুযোগ নিয়ে বলছেন, মজুরি বৃদ্ধি সম্ভব নয়।

জঙ্গীপুর বিড়ি শিল্পাঞ্চলে ৪৮টি বড়ো বি‍‌ড়ি কারখানা আছে। এছাড়াও আচ্ছে অজস্র ছোটো ছোটো বিড়ি কারখানা। মুর্শিদাবাদ জেলায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ শ্রমিক এইসব কারখানায় কাজ করেন। বিড়ি শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। বাজেটে বিড়ি শ্রমিকদের সুবিধা না দিয়ে মালিকদেরই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। চায়ের দোকানে বিড়ি বিক্রি করলে ১৫-২৫ টাকা কমপেনসেশন সেস বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। এর ফলে কারখানাগুলিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বি‍‌‍ড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি আবুল হাসনাত খান বলেছেন, বিড়ি শিল্পের সঙ্কটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিড়ি শ্রমিকরা। কাজ হারাবেন বেশ কয়েক লক্ষ শ্রমিক। আমরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছি বলে জানিয়েছেন আবুল হাসনাত খান।

বঞ্চনার প্রতিবাদে বিড়ি শ্রমিকদের জাতীয় সড়ক অবরোধ

গত ৩ বছরে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি এক পয়সাও, অথচ বাজারে জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। অভাব বাড়‍‌‍‌ছে বিড়ি শ্রমিক মহল্লায়। ২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জঙ্গীপুরে ৪টি এলাকায় রাস্তা আটকে অবরোধ করেন বি‍‌ড়ি শ্রমিকরা। তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থিত বিড়ি শ্রমিক ছাড়া বাকি সমস্ত সংগঠনের বিড়ি শ্রমিকরা ওইদিন একত্রিত হয়ে আন্দোলন অবরোধে অংশগ্রহণ করেন। এদিন ওমরপুর মোড়ে চলে আসেন জঙ্গীপুর, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘির বিভিন্ন গ্রামের বিড়ি শ্রমিকরা। রাস্তার পাশে মঞ্চ বেঁধে বেলা দু’টো নাগাদ শুরু হয় বিক্ষোভসভা। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ৩৪নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। একই সাথে ধুলিয়ান ডাকবাংলো মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন বি‍‌ড়ি শ্রমিকরা। সেখানেও বিক্ষোভসভা হয়। মজুরি না বাড়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে বি‍‌‍‌‍‌ড়ি মহল্লা। মজুরির প্রশ্ন করলেই মালিকরা ব্যবসা মন্দার দোহাই দিচ্ছেন। দোহাই দিচ্ছেন সরকারি আইনকানুনের। অথচ মালিকদের সম্পদ বেড়ে চলেছে। বিড়ি মালিকরাই প্রশাসনের পদে থাকায় সরকার শ্রমিকদের কথায় কর্ণপাত করছে না। বিড়ি শিল্পের মালিক মন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সাংসদ খলিলুর রহমান। শাসকের ছত্রছায়াতেই জেলার অধিকাংশ মালিক অবস্থান করছেন।

বিড়ি শ্রমিক জামিলা বিবি, শিউলি বেগমরা জানালেন, সপ্তাহে কাজের দিন কমানো হয়েছে যেমন, তার উপর পর্যাপ্ত পাতা, মশলাও দেওয়া হচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে সংসার অচল হয়ে যাবে। এদিন বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম হাজার বিড়ি পিছু ২৬৭টাকা ৪৪ পয়সা মজুরি চালু করতে হবে। সপ্তাহে ৭দিনই কাজ ও সঠিক পরিমাণে পাতা, মশলা দিতে হবে। প্রতিটি শ্রমিককে পিএফ এবং ওয়েল ফেয়ারের আওতায় আনা, ডিজিটাল কার্ড দেওয়ার দাবিতেও সরব হয় সংগঠনগুলি। মুর্শিদাবাদ জেলা বিড়ি মজদুর অ্যান্ড প্যাকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক জ্যোতিরূপ ব্যানার্জি, সভাপতি মহম্মদ আজাদ জানান, মালিক মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন মিনিমাম ওয়েজে ইন্সপেক্টর থেকে ডেপুটি লেবার কমিশনার সকলের কাছে বারবার লিখিত দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে। কেউই কর্ণপাত করছেন না। বিড়ি মালিকদের হয়ে সরাসরি কাজ করছেন সরকারি আধিকারিকরা। বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের রাস্তায় পথ অবরোধে নামতে হয়েছে। প্রতিকার না হলে আগামীদিনে আবারও পথ অবরোধ করবে বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলি।