৫৮ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ৬ ফাল্গুন, ১৪২৭
পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস মোর্চাই বিকল্প
সীতারাম ইয়েচুরি
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস দল পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি বামপন্থী সমর্থককে ভয় দেখিয়ে, হিংস্র আক্রমণ চালিয়ে এবং পুলিশি নির্যাতনের মাধ্যমে রাজ্য ছাড়া করতে বাধ্য করা হয়েছে। তৃণমূল সরকারের দশ বছরের শাসনকালের মধ্যে তাঁরা তাঁদের ঘরে ফিরতে পারেননি। পরিবার থেকে তাঁদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে এবং তাঁরা চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রায় সমসংখ্যক মানুষকে জেলে আটক রাখা হয়েছে বা বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হয়েছে। একদিকে অর্থনৈতিক দুর্দশা, অপরদিকে ভয় ও সন্ত্রাসের আবহ তাঁদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের পুলিশও দায়ী।
এই অবস্থার প্রেক্ষিতে যদি রাজ্যে নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া না হয় তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস-বিরোধী বিশাল সংখ্যক মানুষ বিজেপি’র দিকে ঝুঁকে পড়বে। তাতে বিজেপি’র জয় সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু জনগণ জানেন যে, বিজেপি-তৃণমূল এই দুই শক্তি যারা মেরুকরণ করতে চাইছে, তাদের বিকল্প হিসেবে রাজ্যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শক্তি রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস শাসনে অসন্তুষ্ট জনগণের বিশাল অংশ এই বাম-কংগ্রেস মোর্চাকে সমর্থন করবে। রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাদের বছরের পর বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার আপাতভাবে তোষণ করে চলেছে, তারাও এখন অনুভব করছেন বর্তমান এই সরকার বাস্তবে তাদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য প্রায় কিছুই করেনি। ধর্মনিরপেক্ষ এবং সংখ্যালঘু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ ক্রমশই বেশি বেশি করে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিচ্ছেন। বিজেপি-কে পরাস্ত করার তাগিদেই তারা তৃণমূল কংগ্রেস দলকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাদের সামনে নির্ভরযোগ্য বাম-কংগ্রেস মোর্চা থাকছে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তীব্র হয়েছে এবং একই সাথে বিজেপি-র সংস্পর্শ থেকেও মানুষ নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিচ্ছে, এই সামগ্রিক অবস্থাকেই বিবেচনায় রাখতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি এই দুই দলই জনজীবনের বাস্তব বিষয়গুলিকে আড়াল করতে চাইছে। তারা এই দুই দলের মধ্যেই মেরুকরণ ঘটাবার চেষ্টা করছে এবং প্রচারমাধ্যম তাদের সঙ্গ দিচ্ছে। তাদের প্রচারের ধারা হলো, প্রধানমন্ত্রী বনাম মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেস বনাম বিজেপি। এই মিথ্যা দ্বিপক্ষীয় ভাষ্য প্রচার করে তারা পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস মোর্চার বাস্তবতাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।
(‘হিন্দু বিজনেস লাইন’ পত্রিকার ১৫ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত।)