৫৮ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ৬ ফাল্গুন, ১৪২৭
করোনাকালে মানুষের দুর্দশার মধ্যে মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ স্লোগানের আড়ালে কর্পোরেটদের লুটের রাজত্ব
সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত
২৪ মার্চ নরেন্দ্র মোদী ভারতবাসীকে কোনোরকম প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে নোটবন্দির মতো মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে প্রথম দফায় ২১ দিনের জন্য লকডাউন জারি করে ভাষণ দিলেন। ৯৩শতাংশ অসংগঠিত শ্রমিকের রুজি-রোজগার সম্পর্কে একটি বাক্যও উচ্চারিত হলো না। ১০ কোটি কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিক রুটি-রুজি হারিয়ে কিভাবে বাড়ি ফিরবেন - তারও কোনো দিশা দেখাতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী। করোনা মোকাবিলায়ও ভারত চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মোট সংক্রমণের ৯০ শতাংশই ভারতের।
লকডাউনের মধ্যে কর্পোরেটজীবী মোদী সরকারের অকর্মণ্যতায় লকডাউনের মধ্যে ভারতবাসীর দুর্দশা চরমে পৌঁছেছিল। স্বাধীনোত্তর ভারতে এর কোনো নজির নেই। লকডাউনের আগে থেকেই অর্থনৈতিক সঙ্কট - বিপর্যস্ত দেশ। বেকারির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেন্টার ফর মনিটরিং অফ ইন্ডিয়ান ইকনমি প্রকাশিত তথ্য অনুসারে লকডাউন জারির বৎসরাধিককাল আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বেকারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৬.১ শতাংশ - যা ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে যে, লকডাউনের কিছু আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কর্মরত শ্রমজীবীদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি - ৬৯ শতাংশ কাজ হারিয়েছিলেন লকডাউনের সময়। এদের মধ্যে ১৫ শতাংশ শ্রমিক গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কাজ ফিরে পাননি। গত মে মাসে প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল যে, শহরে প্রতি দশজনে ৮জন ও গ্রামে প্রতি ১০জনে ৬ জন কাজ হারিয়েছেন। অকৃষিকাজে যুক্ত শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি, ২৪০টাকা থেকে ৯০ শতাংশ কমে হয়েছে ২১৮ টাকা আর ঠিকাশ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি ৯৪০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৪৯৫ টাকা। সরকারি পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের গত জুনের হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের মধ্যে ছোটো পেশায় যুক্ত শ্রমজীবীদের ৯০ শতাংশের আয় বন্ধ হয়ে যায়। এই আয় বন্ধের জন্য এক মাসেই এই শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৪ লক্ষ কোটি টাকা - যা জিডিপি’র ২ শতাংশ।
লকডাউনের মধ্যে চরম দুর্দশা নেমে এসেছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনে। ভারতের কোভিড মহামারীতে সমাজের দুর্বলতম মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দিকটি হলো পরিযায়ী শ্রমিকদের মর্মান্তিক দুর্দশা। সাংসদদের দিল্লি থেকে ফেরার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। বিদেশ থেকে বিমানে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ি ফেরার ও খাবারের কোনো ব্যবস্থাই করেনি মোদী সরকার। মোদী সরকারের সামান্যতম মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে প্রতিদিন ২.৩ কোটি যাত্রী পরিবহণে সক্ষম ভারতীয় রেল পরিযায়ী শ্রমিকদের কয়েকদিনের মধ্যেই নিজ রাজ্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম হতো।
কাজ ও আশ্রয় হারিয়ে কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিক অভুক্ত অবস্থায় শত শত কিলোমিটার হেঁটে চলেছেন বাড়ির দিকে - এমন দৃশ্য দেশভাগের সময় ছাড়া ভারত আর দেখেনি। লকডাউনের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে স্ট্রান্ডেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এবং দি থেজেস জিএন-এর সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ৮২ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক কোনো সরকারি রেশন পাননি, ৭০ শতাংশ পাননি রান্না করা খাবার। ৮৫ শতাংশই নিজের রাজ্যে ফিরেছেন নিজেদের টাকায়। ১০ জুন পর্যন্ত ৯৭১জন পরিযায়ী শ্রমিক ক্ষুধায়, দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ক্লান্তিতে, পুলিশি অত্যাচার, রেল বা সড়ক দুর্ঘটনা ও অন্যন্য কারণে মারা গিয়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের সাথে মোদী সরকার যেভাবে তঞ্চকতা করেছে - তা স্বাধীনোত্তর ভারতে ইতিপূর্বে কোনোদিন দেখা যায়নি।
করোনাকালে মোদী সরকার মহামারী আইনের সুযোগ নিয়ে দেশের সংবিধানের মূল কাঠামো ধ্বংস করে অর্থনীতির ভিত্তিতে অন্তর্ঘাত ঘটিয়ে বহু শ্রমে নির্মিত জাতীয় সম্পদ নির্বিচারে বেসরকারিকরণ করে চলেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমআইন বিলোপ করে শ্রমকোডের নামে কর্পোরেটের নির্বিচারে শ্রমিক শোষণের অধিকার প্রদান। সর্বোপরি কৃষকদের সর্বস্বান্ত করার উদ্দেশে দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের সামনে বিশাল কৃষি বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য গায়ের জোরে কৃষি আইন পাশ।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে পেট্রোলিয়ামের দর যখন তলানিতে, চাহিদা নেই বললে চলে, তখন লকডাউনের মধ্যে মার্চ ও মে মাসের মধ্যে পেট্রোলে ১৩টাকা ও ডিজেলে ১৬ টাকা উৎপাদন শুল্ক বসিয়ে শুরু হয়েছিল জ্বালানির দামবৃদ্ধি। এখন প্রতিদিনই জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। মে মাসে রান্নার গ্যাসের দাম ছিল সিলিন্ডার পিছু ৫৮৪টাকা, তারপর থেকে ক্রমান্বয়ে গ্যাসের দামবৃদ্ধি করে এখন দাম হয়েছে ৭৪৫টাকা। গত দু’মাসেই বৃদ্ধি হয়েছে ১২৫ টাকা। গরিবের কেরোসিনে ভরতুকি তুলে নেওয়ার পর রেশনে ও খোলাবাজারে একই দামে বিকোচ্ছে কেরোসিন।
করোনাকালে ভারতবাসীর অসীম দুর্দশার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১২ মে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নামে এক নতুন স্লোগান আমদানি করেন। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ আসলে দেশি- বিদেশি পুঁজিপতিদের সরকারি সম্পদ লুটের স্লোগান। স্লোগান শুনে মনে হচ্ছে যেন অতীতে ভারত কোনোদিন আত্মনির্ভরতার পথে হাঁটেনি। সীমাবদ্ধভাবে হলেও স্বাধীনতার পর দেশ স্বয়ম্ভরতার পথে হেঁটেছিল বলেই মূল সার্ভিস সেক্টরগুলি এবং মূল মূল শিল্পগুলি সবটাই রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে বিকশিত হতে পেরেছিল। এর মধ্যে আছে রেল ও বিমান পরিবহণ, ইস্পাত, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনি ও কয়লা, ব্যাঙ্ক, জীবনবিমা সহ অজস্র শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতবাসীরা অনেক প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজেদের চেষ্টায় এই মূল শিল্পগুলি গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের কাছে আত্মনির্ভরতার অর্থ ছিল বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় দেশের অর্থনীতির বিকাশ। করোনাকালে আরএসএস প্রচারক নরেন্দ্র মোদীর নয়া ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ধাপ্পার স্লোগানের আড়ালে একদিকে তিনি আত্মনির্ভরতার কথা বলছেন, অন্যদিকে সংস্কারের নামে শিল্প ও পরিষেবার প্রতিটি ক্ষেত্রকেই দেশি ও বিদেশি পুঁজির সামনে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। আসলে করোনা মহামারীর মধ্যে আম্বানি-আদানি সহ দেশি-বিদেশি কর্পোরেট মালিকদের কাছে জলের দরে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দেওয়ার জন্যই এই স্লোগান আমদানি করেছেন মোদী।
এয়ার ইন্ডিয়া, কয়লা, পেট্রোলিয়াম-সহ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের ১০০ শতাংশ দেশি-বিদেশি পুঁজির জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। দেশের বন্দরগুলিও বিক্রি করার আইন পরিবর্তন করা হয়েছে সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে। এমনকি দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নের সাথে জড়িত প্রতিরক্ষার যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন, মহাকাশ গবেষণায়ও বিদেশি সংস্থার অনুপ্রবেশ ঘটেছে মোদীর আমলে। নরেন্দ্র মোদীর আমলে শ্রমিকদের শ্রম আত্মসাৎ করে সীমাহীন মুনাফা ঘরে তুলছে দেশি-বিদেশি কর্পোরেট মালিকরা। নির্লজ্জের মতো এই শোষণ ও দেশকে বেচে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকে আড়াল করার জন্য মোদী ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর নামে অতিমারীর মধ্যে মানুষকে ধাপ্পা দিয়ে চলেছেন।
লকডাউনের মধ্যে কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে শিক্ষানীতি বদল করেছে সরকার। শ্রমআইন বদল করে অবাধ ছাঁটাই ও শ্রমের সময় বৃদ্ধি করে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের অবাধ শ্রমিক শোষণের ছাড়পত্র তুলে দিয়েছে শ্রমকোড নামে এক দানবীয় মধ্যযুগীয় আইন তৈরি করে। আরএসএস প্রচারক নরেন্দ্র মোদীর স্বৈরাচারী ভূমিকার জন্যই করোনাকালে দি ইকনমিস্ট ইনটেলিজেন্ট ইউনিটের গণতন্ত্র সূচকে ভারতের স্থান আরও দুই ধাপ নিচে নেমে ৫৩ হয়েছে। স্কোর ২০১৯-এর ৬.৯ থেকে কমে হয়েছে ৬.৬১।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সভার প্রাক্কালে প্রকাশিত অক্সফ্যামের রিপোর্টে মোদী সরকারের মুখোশটা খুলে গিয়েছে। ‘The Inequality Virus, Davos India Supplement, 2021’ মহামারীর মধ্যে একদিকে ভারতের মানুষকে কীভাবে বঞ্চনার শিকার হয়ে অভুক্ত থাকতে হয়েছে, অন্যদিকে কীভাবে দেশের বিলিয়নিয়াররা মুনাফার পাহাড় গড়েছে - তা ফাঁস করে দিয়েছে এই রিপোর্ট। অক্সফ্যামের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে,লকডাউনের সময় কাজ হারিয়েছেন ১২.২ কোটি মানুষ, যার মধ্যে ৭৫ শতাংশ বা ৯.২ কোটি কাজ করতেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে। লকডাউনের মধ্যে এপ্রিল মাসে প্রতি ঘণ্টায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছেন। প্রায় ৫৭ শতাংশ শ্রমিক মজুরি পাননি এবং ২০ শতাংশ প্রথাবহির্ভূত ক্ষেত্রে তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে কোনরূপ সাহায্যই পাননি। লকডাউনের সময় ১০টি পরিবারের মধ্যে ৮জনের আয়ের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
রিপোর্টে আরও আছে, শিক্ষায়তনগুলি বন্ধ থাকার কারণে মিড ডে মিলের ওপর নির্ভরশীল গরিব শিশুদের এক অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ১২ লক্ষ ৬০ হাজার বিদ্যালয়ে পাঠরত ১২ কোটি ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৭৭.৮ শতাংশ তফশিলি উপজাতি এবং ৬৯.৪ শতাংশ তফশিলি জাতিভুক্ত শিশুর বেশিরভাগই খাদ্যের জন্য মিড ডে মিলের উপর নির্ভরশীল। সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মিড ডে মিল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ রান্না করা খাবার, ৫৩ শতাংশ শুকনো রেশন এবং ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী টাকা পেয়েছে। অনলাইন ক্লাসেও এক বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবারের মধ্যে মাত্র ২.৭ শতাংশের কাছে কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ এবং ৮.৯ শতাংশের ইন্টারনেটের সুবিধা রয়েছে। তফশিলি উপজাতি পরিবারের ৯৬ শতাংশ এবং তফশিলি জাতির ৯৬.২ শতাংশ পরিবারের শিশু, যারা বিদ্যালয়ে পাঠরত, তাদের কম্পিউটারের সুবিধা নেই।
রিপোর্টের চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, করোনা সময়কালে সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যেও বিশ্বের ও ভারতের বিলিওনিয়ারদের (১০০ কোটি মার্কিন ডলার বা তার বেশি সম্পদের মালিক) যা সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে - তা রূপকথাকেও হার মানাবে। লকডাউন ও মহামারীর মধ্যে বিশ্বে বিলিওনিয়ারদের সম্পদ বেড়েছে ১৯ শতাংশ। অথচ ভারতের বিলিওনিয়রদের মোদী সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর কল্যাণে তা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের ১০০ বিলিওনিয়ারের সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ১২ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এই সম্পদ ভারতের সব থেকে গরিব ১৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের প্রত্যেককে ৯৪ হাজার ৪৫ টাকা করে বণ্টন করা যেত। শীর্ষে থাকা মাত্র ১১জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদ বৃদ্ধি ঘটেছে ৭ লক্ষ ২০ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা।এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি হয়েছে মোদী মিত্র আম্বানি ও আদানির। আম্বানির সম্পদ বেড়েছে ৩৬.৮ বিলিয়ন থেকে ৭৭.৫বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১১০ শতাংশ),আর আদানির বেড়েছে ৮.৯ থেকে ২৭.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২১১ শতাংশ)।
মহামারীর মধ্যে একা মুকেশ আম্বানির সম্পদ বেড়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ২,৯৯,৭৫৫ কোটি টাকা - প্রতি ঘণ্টায় ৯০ কোটি টাকা। মুকেশ আম্বানির এক ঘণ্টার আয় একজন অদক্ষ শ্রমিকের আয় করতে ১০ হাজার বছর লাগবে এবং মুকেশ আম্বানির এক সেকেন্ডের আয়ের সমান আয় করতে লাগবে তিন বছর। অথচ দেশের ২৪ শতাংশ মানুষের মাসিক আয় ছিল তিন হাজার টাকার নিচে। ৪ শতাংশ সম্পদকর যদি ৯৫৪জন ধনীতম ব্যক্তির ওপর বসানো হতো তাহলে জিডিপি’র ১ শতাংশ আয় সরকারের হতো। সেদিকে মোদী সরকার না গিয়ে কর্পোরেট প্রভুদের মুনাফা যাতে আরও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় তার উদ্দেশ্যে শ্রমআইনে পরিবর্তন এনেছে, যার ফলে ৭০ শতাংশ কলকারখানার শ্রমিক শ্রমআইনের আওতার বাইরে চলে যাবে।
অক্সফ্যাম রিপোর্টের মুখবন্ধে সঠিকভাবেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস লিখেছেনঃ “কোভিড-১৯ মহামারী ক্রমবর্ধমান বৈষম্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পৌরাণিক কাহিনি প্রকাশ করে বলা হয়েছিল যে, আমরা প্রত্যেকেই একই নৌকায় একই সমুদ্রে ভেসে চলেছি। কিন্তু এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, কিছু মানুষ একটি বৃহৎ এবং বিলাসবহুল ও সবচেয়ে দামি জলযানে (superyachts) রয়েছেন, অন্যরা ভাসমান ধ্বংসাবশেষ আঁকড়ে ধরে কোনরকমে বেঁচে রয়েছেন।”
করোনা আবহে অনেকগুলি শব্দের সাথে আমরা প্রতিদিনই পরিচিত হচ্ছি। তারমধ্যে ‘নিউ নর্মাল’ বা নব্য- স্বাভাবিকতা একটি পুরনো শব্দকে নতুনভাবে চালু করা হয়েছে। ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক রিচ মিলার এবং ম্যাথিউ বেনজামিন এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। আসলে নয়া-উদারনীতির তাত্ত্বিক প্রবক্তারা বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার ভয়াবহতায় নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এই শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। করোনাকালে কর্পোরেট লুট আড়াল করতে আমাদের দেশেও এখন বহুলভাবে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ শব্দবন্ধটিও কর্পোরেটের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বিক্রি করে তাদের লুট অবাধ করার জন্যই আবিষ্কার করা হয়েছে।