৫৮ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ৬ ফাল্গুন, ১৪২৭
‘‘ফরেন’’ এবং ‘‘ডেস্ট্রাক্টিভ’’: গৈরিক তত্ত্ব
পল্লব সেনগুপ্ত
মান্যবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি ক’দিন আগে একটি নতুন লব্জ উপহার দিয়েছেন ১৩৫ কোটি দেশবাসীকেঃ ‘‘ফরেন ডেস্ট্রাক্টিভ আইডিওলজি’’ - ধ্বংসাত্মক বিদেশি ভাবধারা! ব্যাপারটা যে ঠিক কী, খায় না মাথায় দেয় - সেটা অবশ্য তিনি খুলেখেলে বলেননি - তবে ভাষণের মধ্যে যে রাগঝালের আস্বাদ তিনি বিতরণ করেছেন আমজনতার জন্যে - তাতে বোঝাই যায় যে, ওটা প্রযুক্ত হয়েছে আদর্শগতভাবে যাঁরা তাঁর বিরোধী মত পোষণ করেন, তাঁদের উদ্দেশে। এখন প্রশ্ন, তাঁর দলের প্রধান বিরোধী শক্তি বলে লোকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে মনে করে যদিচ, তবু একমাত্র ‘মৌখিকভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতা’ ছাড়া বিজেপি এবং তাদের কিছু কিছু ভাবনাচিন্তায় পার্থক্যের পরিসরটা নিতান্তই কম। বিশেষত, খোলা বাজারের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে! আর তাছাড়া তাদের ‘আইডিওলজি’ বলতে যা বুঝি আমরা, সেখানে ‘ফরেন’ সংশ্রব কই? তাহলে মাননীয় মোদীজি’র ওই একঘ্নী বাক্যবাণটি কাদের উদ্দেশে নিক্ষিপ্ত।
মোদীজি শব্দটি সম্ভবত শিখেছেন দু-চারটি অতি-দক্ষিণপন্থী মার্কিনী সংবাদপত্র থেকে, যারা ‘‘ডেস্ট্রাক্টিভ আইডিওলজি’’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে থাকে কমিউনিজম সম্পর্কে। আর ‘‘ফরেন’’ শব্দটা তো বিজেপি’র রাজনৈতিক বয়ানে বাঁধা বুলি। ‘‘বিদেশি হটাও’’-এর পিঠ-পিঠ অনিবার্যভাবেই তো এসে পড়বে ‘‘বিদেশি আদর্শ’’ হটাও।
তাই এসেছেও। স্বদেশিয়ানার একমাত্র ঠিকেদারি যেখানে ওঁর দলই নিয়ে রাখার দাবি করে, সেখানে বিশ্বজনীন ভাবধারার কথা যারা বলে, দুনিয়ার শ্রমিককে সঙ্ঘবদ্ধ হবার কথা যাদের আন্দোলনের প্রথম কথা, যারা দুঃখদারিদ্র্য মোচনের ক্ষেত্রে সর্বমানবের কথা বলে - তারা, অর্থাৎ কমিউনিস্টরা তো মোদীজি-দের (যে কোনো দক্ষিণপন্থী দলেরই) চক্ষুশূল হবে যে, সে আর আশ্চর্য কী?
‘ডেস্ট্রাক্টিভ’ শব্দটার কথায় পরে আসছি। আগে ‘‘ফরেন’’ ব্যাপারটার একটু ‘‘প্যারট ইনভেস্টিগেশন’’ করা যাক। গড়পড়তাভাবে, দক্ষিণপন্থী রাজনীতির সব থৌলৎদারই কমিউনিজম এবং কমিউনিস্টদের সম্পর্কে মানসিকভাবে একটা চোরা-আতঙ্কে ভোগে বলেই, মুখে সে সম্পর্কে আবোল-তাবোল বকে, ভয় কাটানোর চেষ্টা করে। ওই রকমই আবোল-তাবলি একট লব্জ হলো - কমিউনিজম ভাবধারাকে এ দেশের শিকড়বিহীন বলে জিগির তুলে ‘‘ফরেন’’-টরেন বলা। যেহেতু সাম্যবাদী চিন্তাধারার উদ্গাতা কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস ছিলেন জন্মসূত্রে জার্মান এবং তাঁকে কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জন্মসূত্রে রুশীয় - লেনিন, তাই এই প্রগাঢ় নির্বোধতার জাতক স্বরূপ ‘‘ফরেন’’ কথাটার অপব্যবহার করা হয়েছে।... আরে বাবা, জন্মসূত্র ধরে বিশ্বমানবের কল্যাণে যাঁরা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন, তাঁদেরকে কী আর অমুক দেশের, তমুক শহরের মানুষ বলে চিহ্নিত করা যায়? না, করা উচিত?
তাহলে তো গৌতম বুদ্ধ জন্মসূত্রে নেপালী বলে, পৃথিবীর অন্য এতগুলো দেশে তাঁর প্রবর্তিত আদর্শকে ‘‘ফরেন’’ বলে মানতে হবে! জিশাস ক্রাইস্ট জন্মসূত্রে ইহুদি এবং জন্মেছিলেন প্যালেস্তাইনে - তা বলে কি তাঁর অনুসারী ভাবাদর্শকে পৃথিবীর এতগুলো দেশে ‘‘ফরেন’’ বলে গণ্য করা হবে? হজরত মহম্মদ আরবে জন্মেছিলেন যেহেতু, সেজন্যে সে দেশের বাইরে সারা বিশ্বের অন্যত্র কী তাঁর ধর্মধারাকে ‘‘বিদেশি’’ বলে শোরগোল তোলা হবে?... পৃথিবীর ৭৫০ কোটি মানুষের মধ্যে ৩৩.০৬ শতাংশ খ্রিস্টান, ২০.২৮ শতাংশ মুসলিম, ৫.৮৭ শতাংশ বৌদ্ধ - এবং তাঁরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছেন। বিজেপি’র খামযুক্তি মানলে তো, প্রায়-সর্বত্রই তো সেই-সেই ভাবাদর্শগুলো ‘‘ফরেন’’ বলে মার্কা পাবে! তা কি সম্ভব? না, প্রত্যাশিত? উচিত তো নয়ই! বিজেপি’র ব্রেন-ট্রাস্টরা কী বলেন?
।। দুই ।।
মার্কসবাদ-তথা কমিউনিস্ট ভাবধারাকে যে হরহামেশাই ‘‘বিদেশি’’, ‘‘এদেশের মাটিতে তার শিকড় নেই’’ ইত্যাদি সব অভিধায় মূঢ়মতিরা ভূষিত করেন, তাঁরা এটা বলেন কিসের জোরে? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘‘টোট্যাল পলিটিক্যাল সায়েন্স’’ কোর্সের এমএ সিলেবাসে কী তেমন কথা শেখানো হয়েছে? (দোহাই বন্ধুগণ, ‘‘টোট্যাল পলিটিক্যাল সায়েন্স’’ আবার কী সাবজেক্ট এই নিয়ে ভেবে আবার চোখ কপালে তুলবেন না! বলা হয়েছে, মোদীজি নাকি ওই বিষয়টি নিয়েই এমএ পাশ করেছিলেন! এ নিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ করতে চেয়ে আরটিআই করেছিলেন দু-চারটি ফেলুদা-ব্যোমকেশ মার্কা স্বভাবের নচ্যাংড়া তরুণ; তাঁরা উত্তর পেয়েছিলেন ‘‘মোদীজি’র পরীক্ষা-টরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়; কারণ সেগুলো নাকি ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা’-র কারণে গোপন রাখার নির্দেশ আছে ওপর মহলের!’’ ফলে, মান্যবর মোদীজি’র নমিনেশন পেপারে লিখিত ওই অত্যাশ্চর্য বিষয়টি যেভাবে লেখা আছে, তাই-ই আমাদের মানতে হবে!
আচ্ছা, বিজেপি’র এত ‘‘ফরেন’’ বিদ্বেষ কী জন্যে বলুন তো? ওরা সারা দেশের প্রায় সব কিছু অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষাই তো ‘‘ফরেনার’’-দের চরণে সমর্পণ করছে স্রেফ পার্লামেন্টের ভোটের জোরে। যতকিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আছে, সবই তো যে দু’টি একটি তিমিঙ্গিল-মার্কা বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের বকলমে বিদেশি পুঁজির হাতে তুলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার। ব্যাঙ্ক, জীবনবিমা, রেল স্টেশন, এয়ারলাইন্স, কল-কারখানা, উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞানের গবেষণাগার, হাসপাতাল - কোথায় না ঢুকছে বিদেশি পুঁজির নিয়ন্ত্রণ? তাহলে হঠাৎ ‘‘বিদেশি’’ ভাবধারার বিরুদ্ধে এমন খড়্গহস্ত হবার ব্যাপারটা দ্বিচারিতা হয়ে যাচ্ছে না কি? সারা দেশের সামগ্রিক বিকাশের ভবিষ্যৎ যারা বিদেশি পুঁজির কুক্ষীগত করতে নির্লজ্জভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে সাড়ম্বরে, তারা বিশ্বমানবের মুক্তির দিশা যে সাম্যবাদী আদর্শ দেখায়, তাকে ‘‘ফরেন’’ বলে দাগরাজি দেয় কীভাবে?
আচ্ছা, বিজেপি যে এখন স্বাদেশিকতার, দেশভক্তির ‘‘পোড়াকাষ্ঠ’’ দেখায় সদাসর্বদা, সেটা করার নৈতিক অধিকার ওদের কতটা?... অবশ্য, বিজেপি সম্পর্কে ‘নৈতিকতা’ শব্দটা ব্যবহার করায় আপনারা ভাই আমাকে তিরস্কার করতেই পারেন!... সে যা-ই হোক, একথাটা তো ওঁদের গিলে ফেলতে দেওয়া যাবে না, যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ থেকে উদ্গম হয়েছে এই দলটির, তারা প্রত্যক্ষভাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে। ব্রিটিশ শাসনের গুণগান করেছে এবং সরাসরি ইংরেজবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের যুবশক্তিকে প্ররোচিত করেছে স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষতি করতে।
ব্রিটিশ শাসনকে এদেশে চিরস্থায়ী করার জন্য গোলওয়ালকরের বইতে নির্লজ্জ, আকুল আকাঙ্ক্ষা, ইংরেজের জেল থেকে সাভারকরের বারংবার হাতেপায়ে ধরার মতো কাতর ভাষায় মুক্তির জন্য মুচলেকা দিতে চাওয়া, কলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লনে ইউনিয়ন জ্যাককে স্যালুট না করতে চাওয়ার ‘অপরাধে’ ভাইস-চ্যান্সেলর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কর্তৃক ‘অবাধ্য’ ছাত্রদের ধরে এনে বেত মারার আদেশ দেওয়া প্রভৃতি অজস্র ঘটনাই তো সংকলিত আছে মহাকালের রেকর্ড বইতে! বিজেপি’র এই আদি-পিতৃপুরুষরা যেভাবে ‘‘ফরেন’’ বন্দনা (না-কি, তোষামোদ?) করে গেছেন, তাতে তাঁদেরই ‘ঐতিহ্যের’ নামে ঘটি-ঘটি জল খাওয়া এই পার্টিটির কী অধিকার আছে বলুন তো, অন্যদেরকে ‘‘ফরেন’’ নিয়ে গালমন্দ করার?
আমরা কী করে ভুলে যাব যে, যখন আজাদ হিন্দ ফৌজ দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের দিকে এগিয়ে তখন তাকে রোখবার জন্যে সাভারকর রীতিমতো রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প বানিয়ে ‘হিন্দু’ যুবকদের ব্রেন ওয়াশ করে তাদেরকে পাঠিয়ে দেন, ব্রিটিশ বাহিনীর তাঁবেদার হয়ে অস্ত্র তুলে নিতে প্ররোচিত করেন? সেই ‘স্বয়ংসেবী’ বাহিনী বস্তুতপক্ষে মণিপুর, আসাম, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি এলাকায় ব্রিটিশের গুপ্তচর হয়ে কাজ করেছে এবং আজাদ হিন্দের সৈন্যদের ঘাঁটির খবর, অগ্রসর হবার খবর জুগিয়েছে তাদেরকে। এবং সক্রিয়ভাবেই বিদেশি শক্তির পদলেহী হয়ে দেশের জন্য সংগ্রামী সৈনিকদের আকছার চোরাগোপ্তা খুনও করেছে।... অবশ্য মুচলেকা দেওয়া ‘বীর’ (?) সাভারকরের জেলমুক্তির শর্তাবলীর মধ্যে এমন ব্যাপারটাও ছিল। ‘হিন্দু’ যুবকদের সঙ্ঘবদ্ধ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে কাজ করার গোপন প্রতিশ্রুতির নথি তো বেরিয়ে পড়েছিল। বিজেপি সরকার অবশ্য সেটাকে নিরুদ্দেশ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে!
।। তিন ।।
‘‘ফরেন’’ ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে যে হুঙ্কার মহামান্য উজির-এ আজম নরেন্দ্র মোদীজি তুলেছেন, সেই সূত্রেই তাঁকে নিমিত্ত করে বিজেপি’র তাবৎ তাবড়-তাবড় ‘আরীয় আদর্শ’ অনুসারী ধর্মপ্রাণদের উদ্দেশে একটা সবিনয় প্রশ্ন নিক্ষেপ করিঃ যে মহান আর্যধর্মের বেদ-অনুসারে উৎসরণ হয়েছে বলে ঢাক পেটানো হয়, সেই বৈদিক ঐতিহ্যও বহুলাংশে ‘‘ফরেন’’ নয়?...ঋগ্বেদ নিয়ে, তার ঐতিহাসিক-সামাজিক পরিপ্রেক্ষা নিয়ে যাঁরা পড়াশুনো, ভাবনাচিন্তা করেছেন, তাঁরাই বলবেন যে - বৈদিক আর্যভাষীরা আদতে এদেশের ভূমিজাতকই ছিলেন না। মোটামুটিভাবে যেটা প্রায় সর্বসম্মত, তা হলো তাঁদের আদি-পিতৃপুরুষরা ছিলেন উরাল পর্বতের সন্নিকটের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। সেখান থেকে ৫/৭ হাজার বছর আগে তাঁদের উত্তরপুরুষরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন নিজেদের ভাষা এবং ধর্ম-দেবতা ইত্যাদি সহ। এই যাযাবর গোষ্ঠীর প্রজাতিগুলি ইয়োরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এসে হানা দেয় এবং ক্রমে ক্রমে সেখানে থাকতে শুরু করে। এদেরই দু’টি প্রধান শাখা - একটি এসেছে ভারতে, অন্যটি ইরানে। এজন্যে বৈদিক মিথোলজি ও আবেস্তীয় (প্রাচীন ইরানের ধর্মগ্রন্থ) মিথোলজির মধ্যে সাদৃশ্যও প্রচুর। আদি-আর্যভাষীর অন্যান্য শাখাগুলি গেছে পূর্ব ইয়োরোপে, জার্মানিতে, গ্রিসে, ইতালিতে এবং ইয়োরোপের অন্যত্রও। এরফলে যে বৈদিক সংহিতা এবং বৈদিক দেবতাদের নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের এত কথাবার্তা - তার ভাষার অনুরূপ শব্দগুচ্ছ এবং তুলনীয় (প্রায় একই নামের) বহু দেবতা ওই সব দেশের ভাষায় এবং সংস্কৃতিতেও ব্যাপকভাবে মেলে। দু-চারটে উদাহরণ দিলেই কথাটা স্পষ্ট হবেঃ বৈদিক ‘ইন্দ্র’-তথা-‘দ্যৌ’ (আকাশ) এবং গ্রিস ‘জিউস’ আসলে একই দেবতা। ‘দ্যৌষ্পিতর’ (দ্যৌ+পিতৃ) এবং রোমান জুপিটারও ওই একই আদি দেবতার নামান্তর ‘বরুণ’ এবং লাতিন ‘উরানোস’, বৈদিক ‘অগ্নি’ এবং স্লাভীয় ভাষাগোষ্ঠীতে প্রাপ্য ‘অ্যাগ্ন’ একই দেবতার নাম। বৈদিক ‘সূর্য’ এবং লাতিন ‘সোলার’; বৈদিক ‘যম’ ও ইরানীয় ‘যিম’; বৈদিক ‘বৃত্র’ ও ইরানীয় ‘বেরেথ্র’ ভিন্ন দেবতা নন। ইন্দ্র কর্তৃক বৃত্র ঋগ্বেদে নিহত হন; তাই ইন্দ্রের আরেকটি নাম ‘বৃত্রহা’ বা ‘বৃত্রঘ্ন’, ইরানীয় মিথে এটাই ‘বেরেত্রঘ্ন’ হয়েছে।
তাহলে যে বৈদিক ‘‘ঐতিহিয়’’ নিয়ে নাগপুরিয়া-গোরখপুরিয়াদের এত অহমিকা - সেটাও তো প্রকারান্তরে ‘‘ফরেন’’-দোষে দুষ্ট! অন্যে পরে কা কথা, খাস ‘‘হিন্দু’’ শব্দটাই তো মূলে আরবীয় - সিন্ধু তীরবর্তী যারা, আরবীয় উচ্চারণে তাই ‘‘হিন্দু’’ হয়ে গিয়েছে বহু-বহু শতাব্দী আগে!... তাহলে?
লেখাটা শেষ করি মোদীজির-ভাষিত ‘‘ডেস্ট্রাক্টিভ’’ শব্দটি নিয়ে। আগেই তো বললাম যে, ওই শব্দটা পাঁড় কমিউনিজম বিদ্বেষী মার্কিনি সংবাদপত্রের লব্জ। কিন্তু এদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কথাটার ঝাড়াই-বাছাই করলে কী দেখি?... যারা ৪০০ বছরের প্রাচীন একটি ঐতিহাসিক সৌধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়, যারা মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভেঙে দেয়, যারা মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষার অধিকারকে চুরমার করে দেয় ‘‘ডেস্ট্রাক্টিভ’’ তারা, না আমরা? মানে কমিউনিস্টরা? ভেবে বলুন তো!