৫৭ বর্ষ ৪১ ও ৪২ সংখ্যা / ১৯ জুন ২০২০ / ৪ আষাঢ় ১৪২৭
সাধারণ মানুষের দাবি দাওয়া নিয়ে ১৬ জুন রাজ্যজুড়ে পালিত হলো বিক্ষোভ কর্মসূচি
কলকাতায় সমাবেশ বানচাল করতে গ্রেপ্তার করা হলো বামপন্থী নেতৃবৃন্দকে
রানি রাসমণি রোডে বামফ্রন্ট সহ ষোল দলের কর্মসূচি পালনে পুলিশের বাধা।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজ্যের মানুষের সাধারণ দাবিদাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৬ জুন কলকাতায় রানি রাসমণি রোডে বামফ্রন্ট ও সহযোগী ১৬ দলের আন্দোলন কর্মসূচি ভেস্তে দিতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ করেও বেকায়দায় পড়ে গেল মমতা ব্যানার্জির সরকার। বেআইনিভাবে নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ ধিকৃত হলো সর্বত্র। কর্মসূচির দাবিসমূহের প্রতি সহমর্মিতা জানালেন রাজ্যের মানুষ। আমফান সাইক্লোন-এর ভয়াবহ তাণ্ডবের জেরে রাজ্যের সব খোয়ানো সাধারণ গরিব মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। এই প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলাজনিত পরিস্থিতিকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করার দাবি, খেটে খাওয়া এবং প্রান্তিক মানুষ যারা আয়করের আওতাভুক্ত নন, তাঁদের পরিবারকে মাসে ৭,৫০০ টাকা দেবার দাবি, করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউন পর্বে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে মাসে ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য বিনামুল্যে দেবার দাবি, জেলাস্তরে সাইক্লোন পরবর্তী পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি, কর্মচ্যুত মানুষের কর্মসংস্থানের দাবি, কাজের সময়সীমা না বাড়িয়ে ৮ ঘণ্টা রাখা প্রভৃতি দাবিতে এদিন পথে নামেন বামফ্রন্ট সহ ১৬ দলের নেতৃবৃন্দ।
The Defence. Artist: Rabin Dutta
কিন্তু বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরুর আগেই সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সহ বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের একাংশকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। রানি রাসমণি রোডের পশ্চিমপ্রান্ত থেকে ৩৩জন নেতৃবৃন্দকে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে চলে যায় লালবাজারে। এই বেআইনি পুলিশি পদক্ষেপের জেরে তীব্র সমালোচনা এবং প্রতিবাদমুখর পরিস্থিতির সামনে পড়ে বেসামাল হয়ে যান পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। সর্বত্র এই খবর ছড়িয়ে যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দুরত্ব বজায় রেখে শামিল বামফ্রন্ট কর্মীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে রানি রাসমণি রোডে। মুখরক্ষার জন্য ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই নিঃশর্তে ধৃত নেতৃবৃন্দকে ছেড়ে দেওয়া্র প্রতিশ্রুতি দিলেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া নেতৃবৃন্দকে দীর্ঘক্ষণ ধরে লালবাজারে কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে আটক রাখা হয়। লালবাজারে পুলিশি হেপাজত থেকেই সূর্য মিশ্র একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, লকডাউন বিধি আমরা ভাঙিনি, কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা বাইরে আছেন তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, সিপিআই রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি,সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য সহ বামফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ রানি রাসমণি রোড-এর ডিভাইডার সংলগ্ন ফুটপাতে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট দাবিসমূহের স্বপক্ষে কর্মসূচি জারি রাখলেও বাদ সাধে কলকাতা পুলিশ। আইন ভঙ্গ হচ্ছে এই অজুহাত দেখিয়ে তাঁদের এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু বামপন্থী নেতৃবৃন্দ বলে দেন, আমরা রাস্তা আটকাইনি, সমাবেশ করে সভাও করছি না। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছি গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে। এর মধ্যে বেআইনি কাজ কোন্টা? আইনের যুক্তিতে না পেরে পুলিশ পিছু হঠে। কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ ওই লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়। ওই ভাবেই অবস্থান বিক্ষোভ চলতে থাকে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বাম নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তো যান চলাচলে কোনও বাধা দিইনি। নাগরিক হিসাবে শান্তিপূর্ণভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকার সাংবিধানিক অধিকার আমাদের রয়েছে। তাহলে গ্রেপ্তারি কেন? মানুষ কি না খেতে পেয়ে মরবে? লকডাউনে অসহায় মানুষকে খাদ্য দিতে হবে, রোজগারহীন মানুষকে কাজ দিতে হবে। মানুষের সমস্যার সমাধানে এই সব দাবির কথা উল্লেখ করলেই কেন এভাবে পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে এরাজ্যে?
বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরুর আগেই গ্রেপ্তার করা হলো সূর্য মিশ্র সহ নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের।
দুপুর তিনটে থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত বিক্ষোভের পরে নেতৃবৃন্দ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে রানি রাসমণি রোডের কর্মসূচি শেষ করেন এবং লালবাজারে আটক ৩৩ জনের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে কলকাতায় থানায় থানায় বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শুরু হয়ে যায় কলকাতার বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভের কর্মসূচি। কলকাতার থানাগুলির সামনে বামপন্থী কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এরপরেই সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ লালবাজার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় নেতৃবৃন্দকে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল বিমান বসু সহ নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা।
এদিন কলকাতার এই কর্মসূচিতে অংশ নেন বামফ্রন্ট পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই(এম) নেতা অনাদি সাহু, রেখা গোস্বামী, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হাফিজ আলম সইরানি, আরসিপিআই নেতা মিহির বায়েন ও সুভাষ রায়, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা শৈবাল চ্যাটার্জি, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা জয়হিন্দ সিং, বলশেভিক পার্টির নেতা প্রবীর ঘোষ, সিপিআই(এমএল) নেতা ইন্দ্র ঘোষ দস্তিদার, সিপিবি নেত্রী বর্ণালী মুখার্জি, এনসিপি নেত্রী শবনম জুদাইয়ার, এলজেডি নেতা অমিতাভ দত্ত প্রমুখ। জেলাগুলিতেও এদিনের আন্দোলন কর্মসূচিতে সিপিআই(এম)’র জেলা নেতৃত্ব এবং অন্যান্য বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলির নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়েছেন।