E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪১ ও ৪২ সংখ্যা / ১৯ জুন ২০২০ / ৪ আষাঢ় ১৪২৭

মহামারী ও শোষকের রাষ্ট্র

অর্ণব ভট্টাচার্য


আজ থেকে প্রায় পৌনে সাতশ’ বছর আগেকার ইয়োরোপ। বিউবনিক প্লেগের প্রকোপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে একটা গোটা মহাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। মৃত্যুর বিভীষিকা চারিদিকে। পৃথিবীর ইতিহাসে সেই ভয়ঙ্কর মহামারী ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত। ব্ল্যাক ডেথের জন্য কর্মঠ মানুষের সংখ্যাও কমে যায় ব্যাপক হারে। কিন্তু তার জন্য যাতে শ্রমজীবী মানুষ কিছুতেই মজুরি বেশি না চান তা নিশ্চিত করতে তৎপর হয়ে ওঠে তৎকালীন সামন্তপ্রভুদের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র। ১৩৪৯ ও ১৩৫১ সালে ইংলন্ডে আইন প্রণয়ন করা হয় যে, শ্রমজীবীদের ১৩৪৬ সালের মজুরি গ্রহণ করতে হবে। ১৩৫১ সালের The Statute of Labourers-এ বলা হয় যে, যদি ১৩৪৬ সালে ধার্য মজুরি নিতে কেউ অস্বীকার করে তাহলে তাকে কারারুদ্ধ করা হবে; যদি কেউ বিনা অনুমতিতে কাজ ছেড়ে দেয় তারও স্থান হবে কারাগারে। কেবল ইংলন্ড নয়, ফ্রান্স ও ইতালির বিভিন্ন শহরে এভাবে আইন তৈরি করা হয় যাতে শ্রমিকরা বাড়তি মজুরি না পান। ১৩৬০ সালে ইংলন্ডে আইনকে আরও কঠোর করে কম মজুরিতে না খাটতে চাওয়া শ্রমিকদের আরও বেশি শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। নভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত পৃথিবীতে শ্রমজীবী মানুষের ওপর যে আক্রমণ নেমে আসছে রাষ্ট্রীয় মদতে তা দেখে ব্ল্যাক ডেথের সমসাময়িক ইয়োরোপে রাষ্ট্রের ভূমিকার বিষয়টি নতুন তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়। ইতিহাসের এটাই শিক্ষা যে, চরম মানবিক বিপর্যয়ের সময়েও শোষকশ্রেণির নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্র শ্রমজীবীদের শোষণ করার কোনো সুযোগ ছাড়ে না, বরং সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে শোষণকে তীব্রতর করে।

ঘরে ফিরতে চাওয়া শ্রমিকদের ওপর পুলিশদের লাঠিচার্জ সুরাটে

আমাদের দেশে অতিমারীর সময় মানুষের অসহায়তাকে কাজে লাগিয়ে এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট চালু থাকার সুযোগে একের পর এক জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। একদিকে কর্পোরেটের স্বার্থসিদ্ধি করবার জন্য ব্যাপক বেসরকারিকরণের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। কয়লার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে বেসরকারি সংস্থাকে মুনাফা করার সুযোগ করে দেওয়া, আরও ছ’টি বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া, কৃষিক্ষেত্রে ফাটকা কারবারের পথ পরিষ্কার করা ও গোটা কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেট হাঙরদের মুখে ঠেলে দেওয়ার মতো একাধিক চরম জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে মোদী সরকার। এর সাথে শ্রমআইন বদলে দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্জিত অধিকার ‍‌ছিনিয়ে নিয়ে তাদের পুঁজির ক্রীতদাসে পরিণত করার চক্রান্ত চলছে। এ সময়কালে শিল্পপতিরা সপ্তাহে ৬০-৭০, এমনকি ৮০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের প্রস্তাব দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার তো আগামী তিন বছরের জন্য চারটি শ্রমআইন ছাড়া সবক’টি শ্রমআইনের আওতা থেকে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দিয়ে লাগামহীন শ্রমিক শোষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যোগী সরকারের এই জঘন্য পদক্ষেপের সুবাদে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য ক্যান্টিন, ফার্স্ট এইড বক্স, সাপ্তাহিক ছুটি এমনকি টয়লেটের ব্যবস্থা করাও বাধ্যতামূলক থাকছে না। এমনকি দীর্ঘকাল কাজ করার পরও শ্রমিককে গ্র্যাচুইটি থে‍‌কে বঞ্চিত করার অধিকার পেয়ে যাচ্ছে মালিকপক্ষ। ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের স্লোগানের আড়ালে এভাবে দেশীয় অর্থনীতি, বিশেষত দেশের শ্রমজীবী মানুষকে কার্যত আত্মহননের দিকে ঠেলে দিচ্ছে মোদী সরকার। বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটকে তীব্র শ্রমিক শোষণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ব্লু-প্রিন্ট অনুসরণ করে।

নভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত পৃথিবীতে শ্রমজীবী মানুষের ওপর যে আক্রমণ নেমে আসছে রাষ্ট্রীয় মদতে তা দেখে ব্ল্যাক ডেথের সমসাময়িক ইয়োরোপে রাষ্ট্রের ভূমিকার বিষয়টি নতুন তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়। ইতিহাসের এটাই শিক্ষা যে, চরম মানবিক বিপর্যয়ের সময়েও শোষকশ্রেণির নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্র শ্রমজীবীদের শোষণ করার কোনো সুযোগ ছাড়ে না, বরং সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে শোষণকে তীব্রতর করে।

লকডাউনের ফলস্বরূপ গোটা দেশে বেকারি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী কর্মরত ২০-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ২.৭ কোটি কর্মচ্যুত হয়েছেন। সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির তথ্য অনুযায়ী দেশে বেকারির হার ২৬ শতাংশের কিছু বেশি। কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা অন্ততপক্ষে ১৪ কোটি। অপরিকল্পিত লকডাউনের পরবর্তী সময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে যথেচ্ছ কর্মী ছাঁটাই না করতে পারে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রাথমিকভাবে সারকুলার জারি করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাথে কোনোরকম পরামর্শ করা প্রয়োজন বলেই মনে করেনি মোদী সরকার। এমতাবস্থায় দেশে ১৪ কোটিরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে চরম অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন। দেশের গরিব, মেহনতি মানুষ এসময়কালে ৪ লক্ষ কোটি টাকার আয় হারিয়েছেন। এই বিপদ থেকে তাঁদের মুক্ত করবার কোনো রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলবলের নেই। দেশ বিদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের পরামর্শকে নস্যাৎ করে, অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার বদলে কর্পোরেট পুঁজিকে অবাধ বিচরণ করার সুযোগ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। জনগণের কষ্ট লাঘব করা ও ভারতকে ‘আত্মনির্ভর’ বানানোর কথা বলে যে আর্থিক প্যাকেজ পেশ করেছে সরকার তা বিশ্লেষণ করলেই এই সরকারের জনবিরোধী চেহারা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

ঘরে ফিরতে চাওয়া শ্রমিকদের ওপর পুলিশদের লাঠিচার্জ মুম্বাইয়ে

অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার তার সিংহভাগ পুরোনো প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি। সর্বোপরি প্যাকেজের বিরাট অংশ জুড়ে কেবল নানারকম ঋণের প্রস্তাব। কার্যত ৫ দিন ধরে বৈকালিক সাংবাদিক সম্মেলন করে ঋণমেলার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সরকারের কোষাগার থেকে সরাসরি জনগণের জন্য যা খরচ হবে তা ২ লক্ষ কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থাৎ মেরেকেটে জিডিপি-র ১ শতাংশের সামান্য কিছু বেশি অর্থ যা এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য একেবারেই অকিঞ্চিৎকর। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা বারে বারে প্রস্তাব দিয়েছেন যে, এই সময় জনগ‍‌ণের হাতে নগদের জোগান দেওয়া দরকার। বামপন্থীরা আগামী ছ’মাস পর্যন্ত আয়করের আওতাভুক্ত নন এমন পরিবারে সাড়ে সাত হাজার টাকা দেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা বাস্তবায়িত করতে জিডিপি-র ৩ শতাংশ খরচ হবে। বিভিন্ন দেশ করোনা অতিমারীজনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় জিডিপি-র ১০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করছে। কিন্তু ভারত সরকার মাত্র ৩ শতাংশ অর্থ খরচ করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নারাজ। ন্যূনতম অর্থনৈতিক বোধ থাকলে কেন্দ্রীয় সরকার একাজ করত কেন না জনগণের হাতে অর্থ না এলে তারা উৎপাদিত পণ্য কেনার ক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন না এবং বাজারে চাহিদার অভাবের জন্য যে মন্দা পরিস্থিতি করোনা অতিমারীর আগে থেকেই চলছে এবং বর্তমানে তীব্রতর হয়েছে তার মোকাবিলাও করা যাবে না।

অন্যদিকে ঋণদানের প্রকৃত চিত্র কি তা একটা উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হয়ে যাবে। দেশে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির (এমএসএমই) সংখ্যা ৬.৩৪ কোটি যারমধ্যে ৪৫ লক্ষ সংস্থা কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাবিত ঋণের সুযোগ নিতে পারবে। অর্থাৎ মোট এমএসএমই-র মাত্র সাত শতাংশ। তবে গড় ঋণের পরিমাণ মাত্র ৬.৬৭ লক্ষ টাকা যা দিয়ে আদৌ কোনো কার্যকরী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করা এই প্রতিষ্ঠানগুলির পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ সরকার এহেন নিস্ফলা প্যাকেজ দিয়ে নাম কিনতে চাইছে।

এই সময়কালে দেশের কৃষিজীবী মানুষ ব্যাপক আর্থিক দুর্গতির শিকার। অথচ তাদের ঋণমকুবের কোনো ব্যবস্থা করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। বরং গোটা কৃষিক্ষেত্রে যাতে বৃহৎ পুঁজির মালিকরা দাপিয়ে বেড়াতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। চুক্তিচাষের পথ, ঢালাও মজুতদারির পথ সুগম করেছে।

অর্থমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছিলেন যে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নাকি সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকা ও খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছিল। এর আগে শীর্ষ আদালতের সাম‍‌নে গত ৩১ মার্চ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা দাবি করেন যে, একজনও পরিযায়ী শ্রমিক নাকি রাস্তায় নেই। অথচ দেশের সমস্ত টিভি চ্যানেলে ও সংবাদপত্রের পাতায় পরিযায়ী শ্রমিকদের অবর্ণনীয় যন্ত্রণার ছবি, শত শত মাইল পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে পাড়ি দেওয়ার ছবি ফুটে উঠেছে। এই রুঢ় বাস্তবকে অস্বীকার করে এই মানবিক বিপর্যয়কে লঘু করে দেখাতে চেয়েছে কেন্দ্রের সরকার। তাই অর্থনৈতিক প্যাকেজে পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়নি।

আমাদের রাজ্যেও যে ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্প রয়েছে তার সুযোগ পেয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের মাত্র ০.৩শতাংশ। এ সময়কালে খিদের জ্বালায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মঘাতী হয়ে, অপুষ্টির কারণে এবং বাড়ি ফেরবার পথে পথ দুর্ঘটনায় কয়েক শত শ্রমিক মারা গিয়েছেন। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও কর্মহীন শ্রমিকদের অনাহারে মৃত্যুর কথা স্বীকার করতেই চায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। খিদের জ্বালায় কাতর হয়ে, ভাড়াবাড়ির পাওনা মেটাতে না পেরে শ্রমিকরা যখন দলে দলে রাজপথে তখনও কেন্দ্রীয় সরকার তাদের খাবারের ব্যবস্থা বা সুষ্ঠু পরিবহণের ব্যবস্থা করেনি। লকডাউনের প্রায় দেড়মাস পর শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা হয়েছে। লকডাউনের আগে প্রবাসী ভারতীয়দের বিমানে করে নিখরচায় দেশে ফিরিয়ে আনা ভারতীয় রাষ্ট্র হতদরিদ্র শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিতে কসুর করেনি।। ফ্যান, জল, খাবারের সুবিধাহীন দুঃসহ ট্রেনযাত্রায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক শ্রমিক। সব মিলিয়ে এই অপরিকল্পিত লকডাউনে ভারতীয় রাষ্ট্রের নগ্নরূপ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

শ্রমজীবী মানুষের প্রতি অবহেলার উল্টো পিঠেই রয়েছে বেপরোয়াভাবে কর্পোরেট তোষণ। তাই যে সরকারি ক্ষেত্র করোনা অতিমারী মোকাবিলায় সামনের সারিতে থেকে লড়াই করছে তাকে পরিকল্পনামাফিক দুর্বল করে কর্পোরেট পুঁজির হাতে দেশীয় অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করেছে মোদীর সরকার। তথাকথিত ‘স্ট্র্যাটেজিক’ ক্ষেত্রে এক থেকে চারটি রাষ্টায়ত্ত সংস্থা থাকবে, বাকি সব রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকে হয় মিশিয়ে দেওয়া হবে, নচেৎ বেসরকারিকরণ করা হবে। কয়লা ক্ষেত্রে বেসরকারি পুঁজিকে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এই আর্থিক প্যাকেজে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বিদেশি বিনিয়োগ হবে ৭৪শতাংশ। দেশের মহাকাশ গবেষণাতেও বেসরকারি সংস্থা অনুমতি পাচ্ছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ক্রস সাব‍‌সিডি তুলে দিয়ে নিম্নবিত্তের সর্বনাশ করার ব্যবস্থা হয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থা যার কয়েকটি রিলায়েন্স, টাটা বা আদানির মতো কর্পোরেট পরিচালিত সেখানে ৯০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। এছাড়া চাল-ডাল-তেল-আলু-পেঁয়াজ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। জনগণের যখন সর্বনাশ তখন কর্পোরেটের পৌষমাস। বুর্জোয়া-সামন্তপ্রভু নিয়ন্ত্রিত ভারতীয় রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে এই অন্যায় চলছে। ১০০ দিনের কাজ ছাড়া আর কোনোভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা নেই এই প্যাকেজে। চরম বেকারির সঙ্কটে সরকারের এই উদাসীনতা অমার্জনীয় অপরাধ। করোনা অতিমারী বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদের দেউলিয়া চেহারাকে বেআব্রু করেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাবে জনস্বাস্থ্যের যে করুণ চেহারা ফুটে উঠেছে তা এখন পুনরায় কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণায় ফিরে যাওয়ার জন্য, সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকাকে খর্ব করবার দাবিকে জোরদার করছে। কয়েকটি দেশে এ কাজ শুরু হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে জনগণের গলায় কর্পোরেটের ফাঁস আরও চেপে বসছে। এতবড়ো স্বাস্থ্য সঙ্কটে গোটা দেশ নাজেহাল হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব করেনি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। করোনা মোকাবিলায় বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক এবং এই অবস্থাতেও তারা মুনাফা করার দিকেই জোর দিচ্ছে। মুনাফা নির্ভর স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং শোষণ ও মুনাফা নির্ভর সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেই বর্তমান সরকার শক্তিশালী করতে চায়। গত আড়াই মাস ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপ সেই অস্বাস্থ্যকর প্রবণতার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।