৫৮ বর্ষ ৩১ সংখ্যা / ১৯ মার্চ, ২০২১ / ৫ চৈত্র, ১৪২৭
উপাসনাস্থল আইন বদলের বিরুদ্ধে পলিট ব্যুরোর বিবৃতি
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উপাসনাস্থল আইন অপরিবর্তিত রাখার দাবি জানালো সিপিআই(এম)। এই আইন অনুযায়ী উপাসনাস্থলের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের আবেদন পুনর্বিবেচনা করা যায় না। এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতায় প্রশ্ন তুলে দায়ের করা আবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর দাবি, আদালতে এই আইন পরিবর্তনের জন্য আবেদনে বিরোধিতা করতে হবে কেন্দ্রকে।
পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনটি পুনর্বিবেচনার রাস্তা খুলল সুপ্রিম কোর্ট। এই সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। আইন অনুযায়ী, ১৯৪৭’র ১৫ আগস্টে যেমন ছিল উপাসনাস্থলের ধর্মীয় চরিত্র ঠিক তেমনই রাখতে হবে। ধর্মীয় উপাসনাস্থলের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কোনো আবেদন বিচারবিভাগ বিবেচনাও করতে পারবে না। আইন পাশের আগে দায়ের করা মামলা বিচারযোগ্য থাকবে না।
১৯৯১ সালে পাশ হয় এই আইন ‘উপাসনা স্থল (বিশেষ সংস্থান) আইন, ১৯৯১’। ছাড় দেওয়া হয়েছিল কেবল বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলাকে। অযোধ্যার ওই জমি নিয়ে সেই সময় বিবাদ চলছিল বলে ব্যতিক্রম বিবেচনা করা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে পলিট ব্যুরো উল্লেখ করেছে যে, ২০১৯ সালের অযোধ্যা রায়েও সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, অন্যান্য উপাসনাস্থলের জমি সংক্রান্ত বিবাদের মামলা এরপর আর বিবেচিত হবে না।
পলিট ব্যুরো বলেছে, যে পরিপ্রেক্ষিতে এই আইন তৈরি হয়েছিল তার পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত আইনটি অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। সুপ্রিম কোর্টের নোটিশের জবাবে সেই বক্তব্যই জানানো উচিত কেন্দ্রের।
সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, এই আইন পুনর্বিবেচনার রাস্তা খুলল সুপ্রিম কোর্ট। এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট খেদের। কেন্দ্রের এখন উচিত আইনটি অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে আদালতে অবস্থান জানানো।
উপাসনাস্থলের ধর্মীয় চরিত্র বদলের মামলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে আলোড়িত অযোধ্যার জমিস্বত্ব মামলার রায় ঘোষণা করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এমন অনেকগুলি বিবাদ বহুদিন ধরে জিইয়ে রেখেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো আরএসএস’র বিভিন্ন শাখা সংগঠন। যেমন উত্তর প্রদেশে কাশী এবং মথুরায় একাধিক উপাসনাস্থল ঘিরে এমন বিবাদ রয়েছে। বিভিন্ন নির্বাচনের আগে এই বিবাদ ঘিরে উত্তেজনা খুঁচিয়ে দেয় সঙ্ঘ পরিবার, রাজনৈতিকভাবে ফায়দা তোলার চেষ্টা করে বিজেপি। উপাসনাস্থল আইন নিয়ে নতুন আবেদন দায়ের করেছেন আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে’র নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নোটিশ পাঠিয়ে জবাব চেয়েছে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, আইন মন্ত্রক এবং সংস্কৃতি মন্ত্রককে।
উপাধ্যায়ের আবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় আইনে একতরফা, অযৌক্তিক সময়সীমা স্থির করা হয়েছে। ১৯৪৭’র ১৫ আগস্টে উপাসনাস্থলের যে চরিত্র ছিল তা তেমনই থাকবে বলা হয়েছে। এমনকি আবেদনও করা যাবে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখদের ধর্মীয় অধিকারে বাধা তৈরি করছে এই আইন। এর আগেও আইন বদলের উদ্যোগ থেকেছে। তবে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসীন হওয়ার পর থেকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তির সক্রিয়তা বেড়েছে।
২০১৯ সালে অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে রামমন্দিরের পক্ষে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই সময়ে প্রধান বিচারপতি ছিলেন রঞ্জন গগৈ। কিন্তু সেই রায়ের বয়ানেও উপাসনাস্থল আইনকে ধর্মনিরপেক্ষ সাংবিধানিক কাঠামোর অন্যতম ভিত্তি বলেছিল সুপ্রিম কোর্টই। রায়ে বলা হয়েছিল যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার সময় ধর্মীয় উপাসনাস্থলের চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখার প্রতিশ্রুতি ধর্মনিরপেক্ষতার সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরি করেছিল।