E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৩১ সংখ্যা / ১৯ মার্চ, ২০২১ / ৫ চৈত্র, ১৪২৭

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জীবনের অভিজ্ঞতাই মানুষকে চিনিয়ে দিচ্ছে পথের দিশা। তাই আসন্ন নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে লক্ষণীয়ভাবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, উৎসাহ-উদ্দীপনা, সমর্থন বাড়তি মাত্রা সংযোজন করছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এটাই প্রাক্ নির্বাচনী চালচিত্র। জেলায় নির্বাচন হবে দুই পর্যায়ে। ২৭ মার্চ এবং ১ এপ্রিল - প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে। এই জেলায় আসন সংখ্যা ১৫। তার মধ্যে ৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সিপিআই (এম), সিপিআই ২টি আসনে,কংগ্রেস ৩টি আসনে এবং আইএসএফ একটি আসনে। সিপিআই(এম) যে আসনগুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেগুলি হলো - কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর, গড়বেতা, শালবনী, নারায়ণগড়, কেশপুর, ডেবরা, দাশপুর, ঘাটাল। সিপিআই’র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আসন দু’টি হলো দাঁতন, মেদিনীপুর শহর। কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সবং, পিংলা ও খড়্গপুর সদর আসনে এবং আইএসএফ চন্দ্রকোণা আসনে লড়ছে।

সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে বুথস্তরে প্রচারের উপর। শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে সর্বত্র বাড়ি বাড়ি যাওয়া, প্রত্যেক বাড়িতে প্রচারপত্র বিলি, কেন তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে সংযুক্ত মোর্চাকে সমর্থন করা জরুরি তা ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। শহরে ওয়ার্ড ভিত্তিক এবং গ্রামে বুথ ভিত্তিক পাড়া ভাগ করে চলছে নিবিড় প্রচার। বাড়ি বাড়ি প্রচারে কেবল কর্মীদের একতরফা বক্তব্যই নয়, আন্তরিক আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে সাধারণ ভোটারদের কথাও ধৈর্যের সঙ্গে শোনা ও মতবিনিময় চলছে। তাঁদের কথার মধ্য দিয়েও বিভিন্নভাবে উঠে আসছে তৃণমূল- বিজেপি'র অপশাসন ও অপকীর্তির নানা কাহিনি।

রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো এই জেলাতেও বিগত বিধানসভা,পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে সাধারণ মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। বিশেষকরে গড়বেতা, শালবনী, কেশপুর, পিংলা, ডেবড়া, চন্দ্রকোণা রোড ও নারায়ণগড়ের কিছু অংশ জুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস, হুমকি, রিগিং ইত্যাদির জন্য সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেননি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে বেশিরভাগ জায়গায় বামফ্রন্ট সহ বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। ভোট না করেই অধিকাংশ জায়গায় পঞ্চায়েতগুলি দখল করে নিয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এমনই এক পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস-বিক্ষুব্ধ মানুষ ভেবেছিলেন বামপন্থীরা বোধহয় পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে পারবে না। তাই তারা বিজেপি’র প্রতি আস্থা পোষণ করেছিলেন। এছাড়া আরএসএস সহ হিন্দুত্ববাদী শক্তি কৌশলে একটি স্লোগান ছড়িয়ে ছিল ‘‘আগে রাম পরে বাম’’। তাতেও বিভ্রান্ত হয়েছিলেন অনেক মানুষ। এবারে পরিস্থিতির পরিবর্তন নানাভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। মোহভঙ্গ হচ্ছে অনেকেরই। পরিস্থিতি উপলব্ধি করে তাদের অনেকেই ফিরে আসছেন এবং বামপন্থীদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছেন, সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন।

তারই উজ্জ্বল আভাস প্রত্যক্ষ করা গেছে মেদিনীপুর, খড়্গপুর শহর এবং ঘাটালে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেবার সময়ে। সিপিআই(এম), সিপিআই সহ বামফ্রন্টের শরিকদল, কংগ্রেস এবং আইএসএফ’র অগণিত নেতা, কর্মী, সমর্থকের অংশগ্রহণে মিছিলের অবয়ব বিশাল আকার নিয়েছে। অপশাসন, দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার শাসকদল ক্রমশ পায়ের তলার মাটি হারিয়ে কিছু জায়গায় হামলা ও হুমকির পথ নিয়েছে। সম্প্রতি গড়বেতা কেন্দ্রের খড়কুসুমাতে সংযুক্ত মোর্চার মিছিলের ওপর তৃণমুলের দুর্বৃত্তরা বোমা ছুঁড়ে, লাঠি নিয়ে আক্রমণ করে। আক্রমণে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সহ অনেকেই আহত হন, একজনকে হাসপাতালেও ভরতি করতে হয়েছে। এদিকে পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। এসব সত্ত্বেও মানুষ অকুতোভয়ে আসছেন সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে। মিছিল, পথ সভা, বৈঠক সভাগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। সব মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।