৫৮ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৫ মার্চ, ২০২১ / ২০ ফাল্গুন, ১৪২৭
মেদিনীপুর কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের লড়াই
মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কমিউনিস্ট আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি শান্তি-সুস্থিতির লক্ষ্যে চলছে সংযুক্ত মোর্চার প্রচার। এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সংযুক্ত মোর্চা মনোনীত সিপিআই’র প্রার্থী তরুণ কুমার ঘোষ। আন্দামান জেলে অতিবাহিত করা বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী, জেলার কৃষক আন্দোলনের অগ্রগণ্য নেতা এবং দীর্ঘদিনের বিধায়ক কমরেড কামাখ্যা ঘোষের পুত্র, বিদেশ থেকে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত এই সমাজকর্মী দুঃস্থ মানুষদের কল্যাণে, স্বাস্থ্য ও রক্তদান শিবির পরিচালনা সহ বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন পরিচালনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সামাজিক কাজে যুক্ত রয়েছেন। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই তিনি সকাল সন্ধ্যা বাড়ি বাড়ি প্রচার এবং এলাকা পরিক্রমা করছেন।
এই কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ৮টি এবং শালবনীর ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সর্বত্রই সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে যুব কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি চোখে পড়ছে।
এই কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুর পৌরসভা। দু’বছর পৌরসভার নির্বাচন না করে তৃণমূলের বিধায়ক দীনেন রায়কে প্রশাসক হিসেবে বসানো হয়েছে। এদিকে পৌর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শহরবাসী। শুধু তাই নয়, এই কেন্দ্রের মানুষের ভোটলুটের মতো জঘন্য অভিজ্ঞতাও রয়েছে। কেবল পৌর পরিষেবাই নয়, বর্তমান তৃণমূলী শাসনে কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি, সুতোকল সহ অন্যান্য ছোটো-মাঝারি শিল্প বন্ধ। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শালবনির ইস্পাত কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে বেকারদের কর্মসংস্থানের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা মাওবাদী জঙ্গিদের সাহায্য নিয়ে হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপ চালিয়ে তৃণমূল নেত্রী বানচাল করে দিয়েছিলেন। এই অবস্থার মধ্যে তৃণমূলের বিভিন্নস্তরের নেতা মাতব্বররা চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বেকারত্বের জ্বালায় অনেককেই পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন্ রাজ্যে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে। এই কেন্দ্রের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার কৃষকেরা রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো ধান-আলু চাষ করে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চাষিরা ধান চাষ করে সরকার নির্ধারিত দাম পাচ্ছেন না। এছাড়া তাঁরা জলের দরে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সমস্ত কিছু ছাড়াও আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। এই বিষয়গুলিই সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে সর্বাগ্রে উঠে আসছে।
লকডাউনের সময়ে এখানকার বিপুল অংশের পরিযায়ী শ্রমিক তাদের এলাকায় ফিরে আসার পর খুবই দুর্দশার কবলে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের সাহায্যে কোনো সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। শাসকদলের কাউকে তখন দেখা যায়নি। এসব নিয়ে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। সাধারণ মানুষের এই দুঃসহ অবস্থার নিরসন কীভাবে হবে তা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই শাসকদল তৃণমূলের। অন্যদিকে বিজেপি মানুষের কথা না ভেবে মেতে রয়েছে দলবদলের খেলায়। ওরা মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরিতে নানাভাবে চক্রান্ত করছে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এখানে অভিনেত্রী জুন মালিয়াকে প্রার্থী করে দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকে চাপা দিতে চাইছে। দলের অন্দরেই যখন বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ মাত্রা ছাড়াচ্ছে, তখন তৃণমূলপ্রার্থী নিজেকে মহিষাদল রাজবাড়ির বংশধর বলে তুলে ধরতে চাইছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনের হাজারো প্রশ্ন-সংশয়ের নিষ্পত্তির পথ পাচ্ছে না শাসকদল। এমনই এক পরিস্থিতিতে এই কেন্দ্রের ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী লড়াইয়ে মানুষের সমর্থন ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে।