৫৮ বর্ষ ৩১ সংখ্যা / ১৯ মার্চ, ২০২১ / ৫ চৈত্র, ১৪২৭
গড়বেতা কেন্দ্রঃ ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রতীক্ষায় মানুষ
গড়বেতা কেন্দ্রে খড়কুসুমায় পথসভায় বক্তব্য রাখছেন সিপিআই(এম) প্রার্থী তপন ঘোষ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গড়বেতা কেন্দ্রের মানুষ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে চাইছেন নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। বিগত বিধানসভা, পঞ্চায়েত এবং লোকসভা - কোনো নির্বাচনেই এই কেন্দ্রের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যক্ষ করার সু্যোগ পাননি। শাসকদলের দুর্বৃত্তরা গায়ের জোরে বুথের পর বুথ দখল করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দৌরাত্ম্য চালিয়ে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি। এর ফল যা হবার তাই হয়েছে। পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা আসন জিতে অবাধ লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। এই অঞ্চলের মানুষ জানেন শাসকদলের মদতে কীভাবে শীলাবতী নদীর বালি অবৈধভাবে পাচারের কারবার চলছে এবং এই টাকা এখানকার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে তা কালীঘাট পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। প্রায় একইভাবে প্রশাসনের মদতে শাসকদলের মাতব্বররা মোরাম আর পাথরের বেআইনি কারবার চালাচ্ছে অবাধে। কোটি কোটি টাকার লুটের কারবারে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়কের। এছাড়া পঞ্চায়েতগুলি দখল করে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুট করছে।আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা নিজেরাই ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, যেখানে যেখানে সুযোগ পেয়েছে বিজেপি-ও গরিব মানুষের টাকা লুটের বখরা নিয়েছে। এলাকাশুদ্ধ মানুষ জানেন বিজেপি’র মণ্ডল সভাপতি লোহিত বেরার পরিবারের ২০জন আমফান ঝড়ে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা করে পেয়েছে। সকলেই জানেন এদের কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হননি। এমনও দেখা গেছে, এই কেন্দ্রের অনেক জায়গায় পাকা বাড়ির লোকেরাও শাসকদলের বদান্যতায় ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে গেছে। দিনের পর দিন মানুষ এসব দেখেছেন। সেই সঙ্গে এটাও লক্ষ করেছেন যে, দুর্নীতির ক্ষেত্রে তৃণমূল-বিজেপি’র মিল এবং সখ্য কতটা। শাসকদলের এই সমস্ত কার্যকলাপ, স্বয়ং বিধায়কের নানা অপকীর্তি যেমন মানুষ দেখছেন,তেমনি প্রত্যক্ষ করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেও দুর্নীতি কীভাবে জাঁকিয়ে বসেছে।
সরকারে আসার আগে থেকেই এরা যে হিংসার রাজনীতি শুরু করেছিল তা রাজ্যের ক্ষমতা দখলের পর আরও ভয়ঙ্কর আকার নেয়। ২০১১ সালে গড়বেতার শিক্ষক জিতেন নন্দীকে খুন করে শাসকদল তৃণমূল রাজ্যজুড়ে খুনের অভিযান শুরু করে। এরপর এখানে লক্ষ্মীকান্ত সর্দার, গণেশ দুলে, চিত্তরঞ্জন রক্ষিত, সইদুল ভুঁঞাকে নৃশংসভাবে খুন করে। শুধুমাত্র সিপিআই(এম) করার ‘অপরাধে’ ক্ষমতা দখলের নেশায় উন্মত্ত শাসকদলের দুষ্কৃতীরা এদের খুন করে। শীতল মাইতিকে বিপুল অঙ্কের জরিমানার জন্য এমনভাবে চাপ দেওয়া হয় যে, তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। ইমাম আলি খানের উপর ওদের বর্বরোচিত অত্যাচারের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে দীর্ঘ চিকিৎসা করানো সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। বিভিন্ন সময়ে শাসকদলের হামলা-অত্যাচারে এখানকার সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি পরিবারকে ঘরছাড়া - এলাকাছাড়া থাকতে হয়েছে। পার্টির নেতা-কর্মীদের অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই কেন্দ্রে সিপিআই (এম) প্রার্থী তপন ঘোষের নামেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি মোগলাপোতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শাসকদলের দৌরাত্ম্যে তিনি প্রায় ৪ বছর স্কুলে যেতে পারেননি। এই অঞ্চল জুড়েই এক সময় মাওবাদীদের সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাসের অভিযানের সূচনা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। একদিকে এদের এই অত্যাচার, সন্ত্রাস, খুনের রাজনীতি, অন্যদিকে সীমাহীন দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি ও লুটের কারবার - এসবই আজ জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করছেন সাধারণ মানুষ। তাদের প্রত্যাশা - অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তাহলেই জবাব পাবে শাসকদল। এটা বুঝে গেছে শাসকদল। বুঝেছে বিজেপি-ও। তৃণমূল এবারে প্রার্থী বদল করেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। ওদের যাবতীয় অপকীর্তি-দুঃশাসনের পরিণামে ওদের পায়ের তলার মাটি যে ক্ষয় হচ্ছে তা ওরা সম্যকভাবেই টের পেয়েছে। তাই দেখা গেছে খড়কুসুমাতে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী তপন ঘোষের উপস্থিতিতে প্রচার মিছিলে হামলা চালায় তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা। এই হামলায় প্রত্যক্ষভাবে মদত দেয় তৃণমূল প্রার্থী উত্তরা সিং হাজরা। এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দিয়েছে এরা কতটা আতঙ্কিত। এছাড়াও আরেকটি লক্ষণও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে, তৃণমূলের লাগামহীন সন্ত্রাসে যারা পরিত্রাণের আশায় বিজেপি’র মতো সাম্প্রদায়িক দলের কাছে আশ্রয় খুঁজেছিল, তাদের অনেকেই আজ নিজেদের বিভ্রান্তি কাটিয়ে বাম-গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সমর্থনে এগিয়ে আসছেন। গড়বেতা কেন্দ্রের এই আবহ নতুন এক সম্ভাবনাকেই ক্রমশ মূর্ত করে তুলছে।