৫৮ বর্ষ ৩১ সংখ্যা / ১৯ মার্চ, ২০২১ / ৫ চৈত্র, ১৪২৭
নির্বাচকদের দরবারে
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
গতকাল, মানে ১৭ তারিখ আবারও একটা 'ইস্তেহার' বেরিয়েছে। ভোট এলেই 'ইস্তেহার' বেচারিকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। সব রাজনৈতিক দলের টানাটানিতে ছোট্ট শব্দটার সে এক প্রাণান্তকর অবস্থা। দামি কাগজ, রঙিন ঝকঝকে ছাপা, ফ্ল্যাশ লাইটের ঝলকানি, মিডিয়ার নাচানাচির শেষে ডাস্টবিনে গড়াগড়ি খাওয়াই যার পরিণতি। ভোট হয়ে গেলে ওতে কী লেখা ছিলো কে আর মনে রাখে। প্রতিশ্রুতি চিরকাল গালভরাই হয়। গিলে নিতে কতক্ষণ! সেই কবে ২০১৪ সালে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনের ইস্তেহারে বলেছিলো - 'বহুত হুয়া নারী পর অত্যাচার, আব কী বার...', 'বহুত হুয়ি দেশ মে মেহেঙ্গাই কা মার, আব কী বার...', 'বহুত হুয়ি জনতা পর পেট্রোল ডিজেল কা মার, আব কী বার...', 'বহুত হুয়া কিষান পর অত্যাচার, আব কী বার...'। প্রায় ৯০০ টাকা রান্নার গ্যাস আর প্রতি লিটারে প্রায় ১০০ টাকা পেট্রোলের দাম দেবার সময় সেসব আর কে মনে রেখেছে! তাই ২০১৪-র প্রতিশ্রুতি ২০১৯-এ বেমালুম হাওয়া। তখন সেখানে কর্মসংস্থান উড়ে গিয়ে, মানুষের সমস্যা উড়ে গিয়ে শুধুই রামসংস্থান। কিংবা তৃণমূলের ২০০৯, ২০১১, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৯, ২০২১-এর ইস্তাহার। 'শিল্পে সবুজ বিপ্লব' থেকে নন্দীগ্রামে শিল্প ঝড়। 'উন্নয়ন' আর 'অনুপ্রেরণার' শিলা পুঁততে পুঁততে সব প্রতিশ্রুতি বেমালুম হাওয়া। লকডাউনের সময় বামেদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো হয়েছিলো বিনামূল্যে রেশন, প্রতি পরিবারে সাড়ে সাত হাজার টাকা নগদ দেবার। পাড়ায় পাড়ায় শ্রমজীবী ক্যান্টিন থেকে সস্তার বাজার - ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো বাম কর্মীরা। সেইসময় ঘাপটি মেরে বসে থাকা তৃণমূলের এবারের নির্বাচনী ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি - ক্ষমতায় ফিরলে বহু কিছু করা হবে। যা দেখে মিডিয়া প্রায় গদগদ। অথচ এই তৃণমূল, বিজেপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই তো করোনার লকডাউন হয়েছে, আমফান হয়েছে। চাল চুরি, ত্রিপল চুরি, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা - সাধারণ মানুষের প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভূমিকাও মানুষ দেখেছে। বামেদেরও। সবাই তো আর বামফ্রন্ট সরকার নয়। যে হাতে পেনসিল নিয়ে বসে ইস্তাহার মিলিয়ে মিলিয়ে টিক দিয়ে দিয়ে কাজ করবে। হ্যাঁ। সেরকমই হত। ৩৪ বছরের ইতিহাস অন্তত তাই বলে। ইস্তাহার নিয়ে ধোঁকাবাজি বামেদের কখনও করতে হয়নি।
ইস্তাহার নিয়েই যখন কথা উঠলো তখন একটু তৃণমূলের ইস্তাহার নিয়েই কথা হোক। বেশি কিছু নয়। শুধু মাত্র নন্দীগ্রাম নিয়ে। যে কেন্দ্র এবার হাইভোল্টেজ। হেভিওয়েট প্রার্থীরা আছেন। রাজ্যের শাসকদলের সুপ্রিমো থেকে নির্বাচনের ঠিক মুখে শাসকদল ত্যাগ করে নায়ক হয়ে ওঠা বিজেপি'র পোস্টার বয়। যিনি এই সেদিন পর্যন্ত শাসকদলের পক্ষে ওই অঞ্চলের বিধায়ক, সাংসদ সবই ছিলেন। গত ১০ বছর তিনি মন্ত্রী সান্ত্রি সব থেকেও 'দলে থেকে কাজ করতে পারেননি'। 'মানুষের জন্য কিছু করতে পারেননি'। তাই এবার জিতলে 'কাজ করবেন'। তা নন্দীগ্রাম নিয়ে কী ছিলো ২০০৯, ২০১১ সালের তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে?
২০০৯ সালের ১৪ই মার্চ নন্দীগ্রাম থেকেই তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের তোড়জোড় শুরু করেছিলেন সুপ্রিমো। সেই ইস্তাহারে ছিল একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের ফারাক এই ১২ বছরে দেখেছে নন্দীগ্রামের মানুষ। যেমন দেখেছে নন্দীগ্রামের বাম বিধায়ক মহম্মদ ইলিয়াসকে ভুয়ো স্টিং অপারেশানে ফাঁসিয়ে দেওয়া ভুয়ো সাংবাদিকের তৃণমূল হয়ে বিজেপি'তে চলে যাওয়া। আজও যে বিভ্রান্তির জন্য হাত কামড়ান নন্দীগ্রামের বহু মানুষ। এই নির্বাচনে বামপ্রার্থী মীনাক্ষী মুখার্জিকে পেয়ে তাঁরা আরও একবার আশায় বুক বাঁধছেন।
বামেরা নন্দীগ্রামে শিল্পই চেয়েছিলো। রাজ্যের তদানীন্তন বিরোধী দল তৃণমূল এবং তার সহযোগী উগ্র বামশক্তির ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের জেরে সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। পরে তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দেয় জেলিংহ্যাম চরে রেলের কারখানার। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ এই কারখানার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত মালগাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি হওয়ার কথা ছিলো সেই প্রতিশ্রুতিতে। সে সবের কিছুই হয়নি। শামুকখালিতে দ্বিতীয় বন্দরের প্রতিশ্রুতি। না, সে কাজও এগোয়নি। হলদিয়াতে রেল কোচ কারখানার প্রতিশ্রুতি। না, প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিশ্রুতি ছিলো নন্দীগ্রাম স্টেডিয়ামের। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের। কথা ছিল রেল, সেইল আর রাজ্য সরকার মিলে করবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। সে কাজও এক ইঞ্চি এগোয়নি। ২০১২ সালের ১৪ই মার্চ স্থানীয় সীতানন্দ কলেজ মাঠে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ৩৪১টি কিষান মান্ডি হবে রাজ্য জুড়ে। নন্দীগ্রামেই প্রথম কিষান মান্ডির শিলান্যাস করেন তিনি। আজ সেই মান্ডির হাল বেহাল। কৃষকদের থেকে ফসল কেনা অনিয়মিত। নন্দীগ্রাম ঘিরেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল বাইরের রাজ্যে কাজ করা এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের তিনি ঘরে ফিরিয়ে আনবেন। বর্তমান নন্দীগ্রামের শুধুমাত্র দুটি ব্লক থেকে ২৫ হাজার যুবক বাইরের রাজ্যে কাজ করেন। প্রতিশ্রুতি ছিল এখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র হবে। এখানকার মানুষকে আর ভেলোর, চেন্নাই যেতে হবে না, এই নন্দীগ্রামেই সেই পরিষেবা পাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই হাসপাতালের পরিকাঠামো আজ বেহাল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের রেফার করা হয় বলে অভিযোগ। নন্দীগ্রামে প্রচার চলাকালীন আঘাত পেয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই ওই তথাকথিত সুপার স্পেশালিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা না করিয়ে কলকাতায় ফিরেছেন।
এছাড়াও নন্দীগ্রামে ১৪ মার্চের ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়। পরবর্তীকালে আর কোনো সরকারি সাহায্য তাঁরা পাননি বলে অভিযোগ। তৃণমূল সরকার পরিবারের লোকজনকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ৫ জন গ্রুপ ডি-র পরীক্ষা দিলেও আজও সেই নিয়োগ হয়নি।
সারা রাজ্যের পাশাপাশি নন্দীগ্রামে থাবা বসিয়েছিলো সারদা। তথ্য অনুসারে নন্দীগ্রামে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে সারদা চিটফান্ড। অভিযোগ, রীতিমতো তৃণমূল নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতায় তা হয়েছে। সর্বস্ব খুইয়েছেন হাজার হাজার নন্দীগ্রামবাসী। একজনও টাকা ফেরত পাননি। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দু অধিকারী ও মমতা ব্যানার্জির ছায়াসঙ্গী মেঘনাদ পালের কথায় - “কিছুই হয়নি। কারখানা, শিল্প কিছু না। বরং নন্দীগ্রামে মৃত ১৪ জনের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য বামফ্রন্ট সরকার করেছিল। গত ১০ বছরে মৃত কিংবা আহতদের পরিবার একটা সরকারি সহায়তা পায়নি”। কাজেই তৃণমূলের ইস্তাহার নামক সোনার পাথরবাটির গল্প শুনতে যতটা ভালো বাস্তবে যে ততটা ভালো নয় সে উপলব্ধি আজ মানুষের হাড়ে হাড়ে।
একদিকে যখন তৃণমূলের মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি তখন অন্যদিকে বিজেপি'র আদাজল খেয়ে দেশকে 'আত্মনির্ভর' করে তোলার চেষ্টায় একের পর রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি বিক্রির বন্দোবস্ত করে ফেলা। জল, মাটি, আকাশ - কোনো কিছুই আর নিরাপদে নেই এই কর্পোরেট বন্ধু সরকারের হাতে। তথ্য অনুসারে, আগামী চার বছরে ১০০টি সরকারি সংস্থা বিক্রি করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। যার মূল্য প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা। নীতি আয়োগ ওই ১০০টি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে। তৈরি হয়েছে একটি পাইপলাইন। আপাতত তা মেনেই ফাস্ট ট্র্যাক মোডে এইসব সরকারি সম্পত্তি বিক্রির পথে এগোতে চাইছে সরকার। ক্ষমতায় আসার পরই পরবর্তী ৫ বছরে ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছনোর কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা যে দেশ বেচে কে জানতো! নীতি আয়োগের তৈরি করা এই পাইপলাইনে আছে বন্দর, ক্রুজ টার্মিনাল, টেলিকম পরিকাঠামো, তেল ও গ্যাস পাইপলাইন, ট্রান্সমিশন টাওয়ার, রেলওয়ে স্টেশন, স্পোর্টস স্টেডিয়াম ইত্যাদি। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে।
এছাড়াও তালিকায় আছে দেশের একাধিক বিমানবন্দর। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার ৪টি বিমানবন্দরের বাকি শেয়ার ছাড়াও আরও ১৩টি বিমানবন্দরকে বেসরকারিকরণ করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন মন্ত্রকের তরফে এই বিষয়ে অনুমোদনের প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মন্ত্রীসভায় এই শেয়ার বেসরকারিকরণ পত্রে অনুমোদন পাওয়ার জন্য পাঠানো হবে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া এই ১৩টি বিমানবন্দরের মধ্যে লাভজনক ও অলাভজনক বিমানবন্দরকে এক করে আকর্ষণীয় প্যাকেজ করা হবে। এর সঙ্গেই দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ বিমানবন্দরের সরকারের হাতে থাকা অংশের শেয়ারও বিক্রি করতে চলেছে কেন্দ্র। গত বছরেই নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার আদানি গ্রুপকে ৬টি বিমানবন্দরের শেয়ার বিক্রি করে। যার মধ্যে ছিল লক্ষ্ণৌ, আহমেদাবাদ, জয়পুর, মেঙ্গালুরু, তিরুবনন্তপুরম এবং গুয়াহাটি। মুম্বই বিমানবন্দরে ৭৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর হাতে। বাকি শেয়ার রয়েছে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার হাতে। অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোরও কিছু না কিছু শেয়ার সরকারের হাতে রয়েছে। এবার সেগুলোর পুরোপুরি বেসরকারিকরণের পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র।
দেশে ঘটা করে ৪ ঘণ্টার নোটিশে লকডাউন জারির মতো মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশেই হয়েছিলো নোটবাতিল। পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিল করে আনা হয়েছিলো নতুন পাঁচশো টাকা এবং দু'হাজার টাকার নোট। রাতারাতি দেশজুড়ে মানুষকে রাস্তায় নেমে লাইন দিতে হয়েছিলো কেন্দ্রের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তের জন্য। যার ফল আজও ভুগছে দেশের অর্থনীতি। অথচ ঘটা করে আনা সেই দু'হাজার টাকার নোটই এবার তুলে নেবার পথে হাঁটছে কেন্দ্র। এখনও এই বিষয়ে কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও গত দু'বছরে ছাপা হয়নি কোনো দু'হাজারি নোট। একথা সংসদে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী 'গোলি মারো শালোকো' স্লোগান খ্যাত অনুরাগ ঠাকুর। সংসদে এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০০০ টাকার ৩,৩৬২ মিলিয়ন কারেন্সি নোট ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ বাজারে ছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর হিসেব অনুসারে এখন বাজারে ২০০০ টাকার কারেন্সি নোট আছে ২,৪৯৯ মিলিয়ন। এই প্রসঙ্গে ২০১৯ সালে আরবিআই সূত্রে জানা গেছিলো ২০১৬-১৭ সালে ৩,৫৪২.৯৯১ মিলিয়ন ২০০০ টাকার নোট ছাপানো হয়েছিল। ২০১৭-১৮ সালে ছাপানো হয় ১১১.৫০৭ মিলিয়ন। ২০১৮-১৯ সালে ছাপানো হয় ৪৬.৬৯০ মিলিয়ন ২০০০ টাকার নোট। এপ্রিল ২০১৯-এর পর থেকে আর কোনো ২০০০ টাকার নোট ছাপানো হয়নি। দেশের অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, দেশের মানুষকে বিপথে চালিত করার এই দায় কোন্ 'গদ্দার' 'দেশদ্রোহী'দের?
অথচ আমাদের চারপাশে এতকিছু ঘটে গেলেও যাদের কাছ থেকে আমরা দুটো খবর পাবার জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকি সেই মিডিয়া বাবুদের বিশেষ হেলদোল নেই। এসব খবর সাধারণভাবে মিডিয়ার ছকের মধ্যে আসে না। যেমন আসে না বামেদের কোনো কথাও। তাঁরা বরং অনেক বেশি আগ্রহী মনোনয়ন না পেয়ে দলত্যাগ করা শোভন-বৈশাখী নিয়ে, মনোনয়ন না পেয়ে সোনালির কান্না নিয়ে, দলবদল নিয়ে। সেখানে কেরালায় এক ধাক্কায় ৩৩ জন বাম প্রার্থীকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে প্রার্থী করা না হলেও তা মিডিয়ার নজর এড়িয়ে যায়। কারণ সেখানে মনোনয়ন না পেয়ে কেউ কান্নাকাটি করেন না, দলীয় অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান না, বা পার্টি অফিসে তালাও ঝোলান না। উল্টে শালবনি কেন্দ্রে আগের বারের বামপ্রার্থী এবারের বাম প্রার্থী সুশান্ত ঘোষকে পাশে নিয়ে যখন প্রচারে বেরোন সেটাও মিডিয়ার নজর এড়িয়ে যায়। মানুষ যখন নতুন উদ্যমে লালঝান্ডা কাঁধে নিয়ে ১০ বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকা পার্টি অফিস খুলে নতুন স্বপ্ন দেখেন সেটাও তাঁদের নজর এড়িয়ে যায়। অতি বিজ্ঞরা তখন স্টুডিয়োতে কালো পর্দা টাঙিয়ে কীভাবে সংযুক্ত মোর্চার কোনো দলের নেতাকে ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করে বিব্রত করা যায় তাতে সচেষ্ট থাকেন।
এই সাপ্তাহিক যেদিন প্রকাশিত হবে রাজ্যে প্রথম পর্বের নির্বাচন তার থেকে ঠিক হাতে গোনা সাত দিন পরে। নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা স্পষ্ট নয়। মিডিয়ার তৈরি করা বাইনারি মেনে প্লাস্টার করা, থুড়ি ব্যান্ডেজ বাঁধা পায়ে খেলা হবে নাকি দৃঢ় প্রত্যয়ে হাত মুঠো করে অধিকার রক্ষার খেলা হবে তা সময় বলবে। ফল জানা যাবে ২ মে। আগামী পাঁচ বছর বাংলা গোখরোর ছোবল খেয়ে ছবি হবে, নাকি আহত নকল বাঘের মেকি হুঙ্কার শুনবে, নাকি মিডিয়ার বাইনারি ভেঙে আরও একবার বলে উঠবে হাল ফেরাও লাল ফেরাও, ফেরাতে হাল, ফিরুক লাল - তা ঠিক করে নিতে হবে মানুষকেই। খুব তাড়াতাড়ি।