৬০ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ১৯ মে, ২০২৩ / ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
এগরায় তৃণমূলীদের বাজি-বোমার কারখানায় প্রবল বিস্ফোরণে মৃত্যু ১০ জনের
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরায় বোমা তৈরির কারখানায় প্রবল বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত দশ জনের। স্থানীয় কুখ্যাত তৃণমূল নেতা কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগের বাড়িতে থাকা বোমার কারখানায় ১৬ মে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টা নাগাদ আচমকা বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এগরার খাদিকুল গ্রাম। গ্রামবাসীরা ছুটে এসে দেখেন, গোটা বাড়িটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দূরে দূরে ছিটকে পড়েছে ঝলসানো দেহ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ঘটনাস্থল খাদিকুল গ্রামের মানুষদের দাবি, মৃতের সংখ্যা ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। তৃণমূলী সন্ত্রাসের নায়ক এই বোমা কারখানার মালিক ভানু বাগের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা ১ নম্বর ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই খাদিকুল গ্রামের মোট ১ বিঘা ৫ কাঠা জমি স্থানীয় এক বর্গাদার দয়ানিধি মাইতির কাছ থেকে জোর করে দখল করে নিয়ে ভানু বাগ একটি বাড়ি ও কারখানাটি তৈরি করে। ২৫ জন কর্মী কাজ করতেন এখানে। এদিন ৩ জন কাজে আসেননি। ২২ জন কর্মী কাজ করছিলেন। বিস্ফোরণের সময় ভানু বাগ নিজেও ছিলেন ঘটনাস্থলে। তবে আহত অবস্থায় তিনি পুলিসের সাহায্যে পলাতক বলে জানা গেছে। তাঁর দাপটেই সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪ সদস্যের মধ্যে ১০ জনই তৃণমূলের। গোটা এলাকায় সন্ত্রাস চলে তৃণমূলের।
এগরার বিস্ফোরণের এই নজিরবিহীন ঘটনায় রাজ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৪জন। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, দগ্ধ দেহগুলি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দূরে দূরে ছিটকে পড়েছে। এমনকী পাশের পুকুর থেকেও দগ্ধ দেহ ও দেহাংশ উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযোগ, পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে কারখানা চলছিল। গ্রামের মানুষ বলেছেন, মাসে ৫০,০০০ টাকা করে ঘুষ নিত এগরা থানার পুলিশ। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ এবং দমকল। এগরা থানার আইসি-কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে উর্দি ছিড়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। যদিও বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরে এটাই প্রথম নয়, গত বছরেও বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিল এই জেলায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এদিন নবান্নে বসে শুরু থেকেই মৃতের সংখ্যা কম করে দেখানোর এবং ঘটনাটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ বলে লঘু করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে যতগুলি বাজির কারখানার সরকারি লাইসেন্স আছে তার কোনটিরই ঠিকানা পূর্ব মেদিনীপুর নয়। আবার দেশের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সম্পর্কে পক্ষপাতিত্বের লাগাতার অভিযোগ করলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাৎপর্যপূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনআইএ-কে তদন্তভার তুলে দেওয়ার প্রশ্নে তিনি সহমত পোষণ করেছেন। যদিও ইতিমধ্যেই সিআইডি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এদিন বিস্ফোরণের খবর পেতেই স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতা সমীর সামন্ত, তপন প্রধান অমিয়রঞ্জন দাস সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে গিয়ে পার্টি কর্মীদের নিয়ে উদ্ধার কাজে হাত লাগান এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে সাহায্য করেন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আহতদের ভরতি করা হয়েছে।