৬০ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ১৯ মে, ২০২৩ / ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে
মহম্মদ সেলিম
প্রাথমিকে একলপ্তে ৩২ হাজার চাকরি প্রশ্নের মুখে। রাজ্য সরকার-এর দ্বারা গঠিত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ - এদের পরিচালনায় নিয়োগ পরীক্ষা, বিশেষত অ্যাপ্টিচিউড টেস্ট এবং ভাইভা (১০ নম্বর), নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং জটিলতা দেখা দিয়েছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী দায় অস্বীকার করে তাঁর ভাঙা রেকর্ড-এর মতো সিপিআই(এম) এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিট-কে দোষারোপ করে চলেছেন। অবশ্য তিনি এখন সব বিষয়েই তাই করে থাকেন!
মনে রাখতে হবে, এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ২০১৬ সালের নিয়োগ নিয়ে। তার পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের ধুয়ো তুলে যিনি ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন, তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে সব পর্যায়ে সব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত, আইনসংগত, দায়বদ্ধ সংস্থাগুলিকে ভেঙে মনমতো মনোনীত লোকজনকে বসিয়েছেন। তখন থেকেই সংস্থাগুলির স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নিযুক্ত সমস্ত শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, উপযুক্ততা নিয়ে কেউই - এমনকী আদালতও কিছু বলেনি। প্রশ্ন উঠেছে নিয়োগ পদ্ধতি, নিয়োগকারীদের সততা, নিরপেক্ষতা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার গলদ নিয়ে। এই ব্যাপক কেলেঙ্কারির তুলনা একমাত্র বিজেপি পরিচালিত মধ্যপ্রদেশ সরকারের এই ধরনের নিয়োগ পরীক্ষায় ‘ব্যাপম কেলেঙ্কারি’র রেকর্ডের সঙ্গে করা যায়।
আমরা মনে করি যোগ্য, উপযুক্ত মেধাসম্পন্ন যাঁরা এই প্রক্রিয়ার মধ্যেও কোনরকম দুর্নীতির আশ্রয় না নিয়ে নিয়োজিত হয়েছেন, তাঁদের স্বার্থ যেন কোনভাবেই বিঘ্নিত না হয়। তাঁদের সামাজিক সম্মান, তাঁদের পেশা এবং ব্যক্তিজীবনে যাতে কোনো ছন্দপতন না ঘটে তা দেখার দায়িত্ব নিয়োগকারী সংস্থার।
প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন ইতিমধ্যেই কালবিলম্ব না করে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পথে নেমেছেন। প্রশাসন এবং বিচারালয় যাতে এ ব্যাপারে সঠিক অবস্থান নিতে পারে তার জন্য তাঁরা ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছেন।
বিচারপতি তাঁর রায়ে এই অংশের বিপুল সংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষকের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় তার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুততার সঙ্গে সময়বদ্ধভাবে নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি কোনরকম অসম্পূর্ণতা থাকে, তাহলে তা পূর্ণ করার নিদান দিয়েছেন। এখন প্রশাসনিকস্তরে প্রক্রিয়াটিকে দ্রুততার সঙ্গে সুসম্পন্ন করার দায়িত্ব সরকারের। নিয়োগকারী সংস্থার সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে যেসব ক্ষেত্রে ত্রুটি, ইচ্ছাকৃত পক্ষপাতিত্ব, অসম্পূর্ণতা বা অবৈধতা ধরা পড়েছে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ স্ক্রুটিনি করতে গিয়ে যা ধরা পড়ছে বা পড়তে পারে সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকে ত্রুটিমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও প্রশ্নাতীতভাবে স্বচ্ছ করার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
সমস্ত যোগ্য, উপযুক্ত শিক্ষকদের যেমন কোনো স্বার্থহানি কাম্য নয়, তেমনই উপযুক্ত, যোগ্য, মেধাসম্পন্ন বঞ্চিতদেরও আর অবহেলা করা সহ্য করা হবে না। সমস্ত শূন্যপদে আইনানুগভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে যদি না বাঁচানো যায় তাহলে বাংলার গোটা সমাজের বুনিয়াদ নড়বড়ে হয়ে যাবে। দোষী, দুর্নীতিগ্রস্ত ও ভ্রষ্ট নীতির প্রণেতা, উদ্গাতা, প্রয়োগ ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কাউকে রেহাই দেওয়া যাবে না। তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।