৬০ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ১৯ মে, ২০২৩ / ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
প্রসঙ্গ কর্ণাটক নির্বাচন
নোটা টাটা, এখন স্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করবে দেশ
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
জুলাই ৬৪ এ ডি। ৬ দিন ধরে নাকি আগুন জ্বলেছিল রোম নগরীতে। শহরের ৭০ শতাংশ সেই আগুনে বিধ্বস্ত হয়েছিল। সংকটের সময় নির্লিপ্ত থাকা সম্রাট নিরোর গল্প আমরা অনেকেই শুনেছি। সত্যি মিথ্যে জানি না বলেই গল্প বললাম। তিনি নাকি রোম যখন পুড়ছিল তখন সিথারা বাজাচ্ছিলেন। তবে অতি সম্প্রতি ভারতবাসী যা দেখলো তা গল্প নয়। কারণ, কর্ণাটক নির্বাচন আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেল দেশের উত্তর-পূর্বের মণিপুর যখন জাতিদাঙ্গায় দাউ দাউ করে জ্বলছে, কমপক্ষে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তখন নিত্যনতুন পোশাক পরে, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কর্ণাটকে রোড শো করছেন। দুটোর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য বোধহয় নেই। বিজেপি সূত্র অনুসারে কর্ণাটকে নির্বাচনের আগে দলের পক্ষ থেকে ৯,১২৫টি মিছিল, ১,৩৭৭টি রোড শো করা হয়েছে। বিজেপি নেতারা ৩১১টি মন্দির এবং মঠে গেছেন। এছাড়াও সভা করা হয়েছে ৯,০৭৭টি। যার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ১৬টি সভা এবং ১৫টি রোড শোতে অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৯টি সভা এবং ৯টি রোড শোতে অংশ নিয়েছেন।
১৩ মে। চলছিল নির্বাচনী ফল ঘোষণার খবর। হঠাৎই সেখানে শুরু হয়ে গেল ‘বজরংবলি কী জয়’। একদিকে ‘ভুয়ো ফলাফল’ ঘোষণা করে চেল্লাচ্ছেন সঞ্চালিকা রুবিকা লিয়াকত, আর তার সঙ্গেই চলছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গলায় ‘বজরংবলী কী জয়’, সৌজন্যে এবিপি নিউজ। নির্লজ্জতার সব সীমা অতিক্রম না করলে এই ধরনের সাংবাদিকতা করা যায়না। লেখাটা রুবিকা লিয়াকতকে দিয়ে শুরু করার কারণ এটাই। কানওয়াল, চৌধুরী, গোস্বামীরাও একই পদবাচ্য। সংবাদমাধ্যম নিজের মাথা কতটা বিকিয়ে দিতে পারলে এইধরনের সঞ্চালনা করতে বাধ্য হন একজন সঞ্চালিকা বা এই ধরনের ভুয়ো খবর (পড়ুন ফেক নিউজ) সম্প্রচার করতে বাধ্য হয় তথাকথিত ‘মেইনস্ট্রিম মিডিয়া’, তার প্রমাণ সারা দেশ দেখেছে গত ১৩ মে। নির্বাচনী ফলাফলে না হোক, সঞ্চালনায় বিজেপি’কে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিল এইসব মিডিয়া হাউস। কেউ কেউ বিজেপি’র হার দেখাতে না চেয়ে অন্য খবর দেখাতে শুরু করেছিল। আর ইন্ডিয়া টুডে চ্যানেলে বিজেপি’র আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্যকে কর্ণাটকে দলের হার নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি প্রায় হুমকি দিয়েই সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে বললেন সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাইকে। হায় রে দেশের সংবাদমাধ্যম! হায় গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ! সাধে কী আর প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে গত ২ বছরে ১৯ ধাপ অবনমন!!! রবীশ কুমার সাধে কী বলেছিলেন ‘গোদি মিডিয়া’? আর দেশের নির্বাচন কমিশনকেও লাখো লাখো স্যালুট। কারণ এভাবে সরাসরি ধর্মের নামে ভোট চাইবার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, সামান্য সতর্ক করারও হিম্মত দেখায়নি ভারতের নির্বাচন কমিশন। গণতন্ত্রের জয় হোক!
এসব পরনিন্দা পরচর্চা বাদ দিয়ে মূল বিষয়ে আসা যাক। কারণ এই মুহূর্তে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ফলাফল একদিকে যেমন বিরোধী শিবিরকে অক্সিজেন জোগাবে, তেমনই এই বছরে দেশের আরও যে চার রাজ্যে (রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং তেলেঙ্গানা) বিধানসভা নির্বাচন আছে সেখানে লড়াই জোরদার করবে।
শহিদ গৌরী লঙ্কেশের রক্তে ভেজা কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিজেপি নিশ্চই দলীয় স্তরে হারের ময়নাতদন্ত শুরু করে দিয়েছে। এই নির্বাচনে বিজেপি’র পরাজয়ের পেছনে একাধিক কারণ থাকলেও সবথেকে বড়ো কারণ সম্ভবত ছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, দুর্নীতি এবং ভেদাভেদের রাজনীতির বিরোধিতায় সাধারণ মানুষের এককাট্টা হওয়া। এছাড়াও বর্ষীয়ান লিঙ্গায়েত এবং বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরিয়াপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া, বিজেপি’র দীর্ঘদিনের সঙ্গী লক্ষ্মণ সাবাদি, জগদীশ শেট্টারকে মনোনয়ন না দেওয়ায় লিঙ্গায়েত ভোটের বড়ো অংশ বিজেপি’র দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধীর কৃতিত্বকে কোনোরকমভাবে ছোটো না করেও বলা যায়, শুধুমাত্র ভারত জোড়ো যাত্রা বা কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ার কারণে এই ফল ভেবে নেওয়াটা নিতান্তই সরলীকরণ। তীব্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এবং বিজেপি’র লাগাতার তৈরি করে যাওয়া মেরুকরণের রাজনীতির প্রবল বিরোধিতার কারণেই কিন্তু এবার কর্ণাটকে ২৪ জন প্রভাবশালী মন্ত্রীর মধ্যে ১২ জনই পরাজিত হয়েছেন। এমনকী রাজ্যের এক প্রভাবশালী লিঙ্গায়েত মন্ত্রী, ভি সোমান্না দুই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বরুণা এবং চামরাজনগর - দুটিতেই পরাজিত হয়েছেন।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল, যেসব প্রভাবশালী লিঙ্গায়েত নেতা কর্ণাটকে বিজেপি’র রাশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন সেইসব নেতাদের নির্ভরশীলতা থেকে দলকে দূরে রাখা; এবং দ্বিতীয়ত, যাঁদের জনপ্রিয়তা কম তাঁদের মনোনয়ন না দেওয়া। সেই সময়ে বিজেপি’র উচ্চ নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে গৃহীত এই মডেল কার্যকর হবে। যাতে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা মোকাবিলা করা যাবে, এবং ‘হিন্দুত্ব’র প্রভাবে গোষ্ঠী রাজনীতির প্রভাব এবং বিধায়কদের ব্যক্তিগত প্রভাবকে ঠেকানো যাবে। যদিও নির্বাচনী ফলাফল থেকে প্রমাণ হয়ে গেছে, এক্ষেত্রে এই দুই পদক্ষেপই বুমেরাং হয়ে আঘাত হেনেছে বিজেপি শিবিরে। দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্গায়েত নেতা লক্ষ্মণ সাভাদি, হিরেকেরুরের প্রাক্তন বিধায়ক ইউ বি বানাকর, ইয়েল্লাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ভি এস পাতিল, ধারওয়াড়ের প্রাক্তন এমএলসি মোহন লিম্বিকাই, টুমকুরের প্রাক্তন বিধায়ক কিরণ বিজেপি ছেড়েছেন। এছাড়াও ছ’বারের বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ক্লিন ইমেজের জগদীশ শেট্টারের বিজেপি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকশো মোটামুটি প্রভাবশালী লিঙ্গায়েত নেতাও বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন।
রাজ্যের মন্ত্রী ও লিঙ্গায়েত নেতা ভি সোমান্না ফলাফল প্রকাশের পর প্রকাশ্যে বলেছেন, বি এস ইয়েদুরিয়াপ্পাকে জিজ্ঞেস করুন লিঙ্গায়েত ভোট কেন বিজেপি’র পক্ষে আসেনি। ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট। হয়তো বা তিনি বিজেপি’র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর কথার অর্থ এরকমও হতে পারে যে, মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় লিঙ্গায়েত ভোট বিজেপি’র পক্ষে আনার জন্য যথেষ্ট তৎপরতা দেখাননি ইয়েদুরিয়াপ্পা। তিনি ঘুরিয়ে শোধ নিয়েছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৪৬ জন লিঙ্গায়েত নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। যাঁদের মধ্যে ৩৭ জন লিঙ্গায়েত নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপি ৬৯ জন লিঙ্গায়েত নেতাকে মনোনয়ন দিলেও জয়ী হয়েছেন মাত্র ১৫ জন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে বিজেপি’র পরাজয়ের বড়ো কারণ লিঙ্গায়েত ভোটব্যাঙ্কে ধস।
রাজ্যের লিঙ্গায়েত, ভোক্কালিগা অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগাভাগির ছবিটা আরও স্পষ্ট হতে পারে ভোট শতাংশের হারের দিকে একবার দেখে নিলে। কর্ণাটকের ২২৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মোট ১০২টি আসনে একই গোষ্ঠীর প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস এবং বিজেপি। যেখানে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে ৫.৮৭ শতাংশ এবং বিজেপি’র বেড়েছে ০.৮১ শতাংশ। যেসব আসনে লিঙ্গায়েত প্রার্থী ছিল সেইসব আসনে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে ৭.১৭ শতাংশ এবং বিজেপি'র ভোট কমেছে ২.৯৭ শতাংশ। ভোক্কালিগাদের ক্ষেত্রে ২৫টি আসনে কংগ্রেসের ভোট যেখানে বেড়েছে ১.৩৯ শতাংশ সেখানে বিজেপি’র ভোট বেড়েছে ৯.৫১ শতাংশ। তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ৫১টি আসনে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে ৮.৯৩ শতাংশ এবং বিজেপি'র ভোট কমেছে .৮১ শতাংশ। আর এই চার ক্ষেত্রেই জেডিএস’র ভোট শতাংশ কমেছে যথাক্রমে ৫.২১, ৩.৬১, ৯.৪০ এবং ১.৭৪ শতাংশ।
কর্ণাটকের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে মানুষের ভোটদানের গতিপ্রকৃতি থেকে এটা স্পষ্ট, মানুষ কোনোভাবেই বিজেপি-কে ক্ষমতায় চায়নি। এমনকী জেডিএস-কেও ততটা গুরুত্ব দেয়নি। গতবারের কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকারকে যেভাবে অপারেশন লোটাসের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাও সাধারণ মানুষ যে ভালোভাবে নেয়নি, তা এবারের ফলাফল থেকেই স্পষ্ট। সে কারণেই ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের ১০৪ থেকে এবার বিজেপির ৬৬-তে নেমে যাওয়া। অর্থাৎ বিজেপি’র আসন কমেছে ৩৮টি। অন্যদিকে গতবারের নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল ৮০টি আসনে। যা এবার বেড়ে হয়েছে ১৩৫। অর্থাৎ অতিরিক্ত ৫৫টি আসন লাভ। একইভাবে গতবারের ৩৭ আসন থেকে একধাক্কায় ১৮ আসন কমে ১৯-এ নেমে আসা জেডিএস’র ওপরেও যে মানুষ ভরসা রাখেনি এই ফলাফলই তার প্রমাণ।
নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুসারে এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছে ৪২.৮৮ (১,৬৭,৮৯,২৭২ ভোট) শতাংশ ভোট এবং বিজেপি পেয়েছে ৩৬ (১,৪০,৯৬,৫২৯ ভোট) শতাংশ ভোট। জেডিএস’র ঝুলিতে ১৩.২৯ (৫২,০৫,৪৮৯ ভোট) শতাংশ ভোট। ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে বিজেপি’র ভোট কমেছে মাত্র .৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ ক্ষমতা হারালেও বিজেপি কিন্তু নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক কার্যত অটুট রেখেছে।
অন্যদিকে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে ৪.৭ শতাংশ। জেডিএস’র ভোট কমেছে ৫.০১ শতাংশ। নিতান্ত সরল পাটিগণিত অনুসারে বিজেপি’র ভোট কমেছে খুবই সামান্য বা কমেইনি বলা যেতে পারে। অন্যদিকে শতাংশের বিচারে জেডিএস’র কমে যাওয়া ভোটের প্রায় পুরো অংশটাই ঢুকেছে কংগ্রেসের ঝুলিতে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০১৮ কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে নোটায় ভোট পড়েছিল ০.৯ শতাংশ বা ৩,২২,৮৪১। যা এবারে কমে হয়েছে ০.৬ শতাংশ বা ২,৬৯,৭৬৩। নোটায় ভোট কমা থেকেও এটা স্পষ্ট যে, মানুষ পক্ষ অবলম্বন করেই বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছেন, অকারণে ভোট নষ্ট করতে চাননি।
কর্ণাটকে এবারের ক্ষমতা বদলে তাৎপর্যপূর্ণভাবে ৩১টি জেলার আসন প্রাপ্তিতে অনেকটাই হেরফের ঘটলেও ব্যতিক্রম হিসেবে রয়ে গেছে উদুপি জেলা। যে জেলার ৫টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই গতবারের মতো এবারও জয়ী বিজেপি। রাজ্য জুড়ে বিজেপি বিরোধী ঝড়ের মধ্যেও একমাত্র উদুপি পুরোপুরি সাথ দিয়েছে বিজেপি-কে। এছাড়াও বেঙ্গালুরু শহরাঞ্চলের ভোটাররা কংগ্রেসের তুলনায় বিজেপি’র প্রতি বেশি আস্থা রেখেছেন। এই জেলার ২৮টি আসনের মধ্যে এবার বিজেপি জয়ী হয়েছে ১৬ আসনে এবং কংগ্রেস ১২টিতে। ২০১৮ নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপি পেয়েছিল ১৫টি এবং কংগ্রেস ১১টি। ২ আসনে জয়ী হয়েছিল জেডিএস।
দক্ষিণ কান্নাডার ৮ আসনের মধ্যে এবারও বিজেপি পেয়েছে ৬টি আসন। কংগ্রেস ২। যা গতবারে ছিল ৭ এবং ১। অন্যদিকে বিদর-এ গতবার ৬ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৪ আসনে জয়ী হলেও এবার সেই আসন কমে হয়েছে ২। বিজেপি ১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪। গতবার বেশ কয়েকটি জেলায় ভালো সংখ্যায় আসন পেলেও এবার একমাত্র হাসান ছাড়া আর কোথাওই জেডিএস’র ফল ভালো হয়নি। এই জেলায় ৭ আসনের মধ্যে ৪টিতে জয়ী হয়েছে জেডিএস। এছাড়া মান্ডয়া, মাইসুরু, রামনগর - সব জেলাতেই জমি হারিয়েছে জেডিএস।
এবারের নির্বাচনে মাইসুরু কর্ণাটক-এর ৫৭ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ৩৬, বিজেপি ৫ এবং জেডিএস ১৪। কিট্টুরু কর্ণাটক-এর ৫০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৩৩, বিজেপি ১৬ এবং জেডিএস ১। কল্যাণ কর্ণাটক-এর ৪১ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ২৬, বিজেপি ১০ এবং জেডিএস ৩। মধ্য কর্ণাটক-এর ২৫ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৯, বিজেপি ৫ এবং জেডিএস ১। এছাড়া যে দুটি অঞ্চল বাকি পড়ে থাকে সেই কারাবল্লি কর্ণাটক-এর ১৯ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৬ ও বিজেপি ১৩ এবং গ্রেটার বেঙ্গালুরুর ৩২ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৫ এবং বিজেপি ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। এই দুই অঞ্চলে জেডিএস কোনো আসন পায়নি।
কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র পর্যুদস্ত হবার পর আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল কী হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ কর্ণাটকে ফল প্রকাশের দিনেই সি ভোটারের এক সমীক্ষার ফলাফলে জানানো হয়েছে, ২০২৪ নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপি'র ভোট নাকি আবার বাড়বে। ঠিক একইভাবে বলা সম্ভব নয় আগামী নভেম্বর ডিসেম্বরে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা নির্বাচনের ফলাফল কী হবে। তবে একথা নিশ্চিত, দেশে বিজেপি বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রে, বিজেপি’র জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে, দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ক্ষেত্রে এই জয় নিঃসন্দেহে বিরোধী শিবিরকে নতুন অক্সিজেন জোগাবে। সেক্ষেত্রে আগামীদিনে কংগ্রেস সহ সমগ্র বিরোধী শিবিরের কাছে কর্ণাটকের জয়ের ধারা দেশজুড়ে ধরে রাখা নিঃসন্দেহে এক বড়ো চ্যালেঞ্জ।