E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ১৯ মে, ২০২৩ / ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০

কমরেড হো চি মিনের বিপ্লবী শিক্ষা

শংকর মুখার্জি


কমিউনিস্ট পার্টি এবং তার সদস্যদের কেমন হতে হবে সে প্রসঙ্গে বহু কথা লিখে গেছেন কমরেড হো চি মিন। তা ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য শুধু নয়, সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট আন্দোলনের কাছেও সে এক অমূল্য সম্পদ।

মৃত্যুর কিছুদিন আগে ১৯৬৯ সালের ১০ মে হো চি মিন তাঁর ‘শেষ ইচ্ছাপত্র’ লিখেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ৭৯। কয়েক বছর আগের তুলনায় সেসময় তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছিল অনেকটাই। কিন্তু মন ছিল সতেজ। জীবনের একেবারে শেষপর্বে লেখা এই ‘ইচ্ছাপত্র’-এ স্বাভাবিকভাবেই বহু বিষয় এসেছে। প্রকাশ করেছেন পার্টি সম্পর্কে তাঁর মহামূল্যবান উপলব্ধি।

একটা আদর্শস্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলতে গেলে তাকে কী কী অনুশীলনে সর্বদা রত থাকতে হবে তা নিয়ে কমরেড হো চি মিনের আলোচনা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বেই ভিয়েতনামের জনগণ ফরাসি, জাপ এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মহাকাব্যিক লড়াই-আত্মত্যাগ করেছে, দেশকে তাদের জোয়াল থেকে মুক্ত করেছে। সারা বিশ্বের শোষিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে সে লড়াই-আত্মত্যাগ এক অনন্যসাধারণ অধ্যায়। হো চি মিনের নিরলস চেষ্টায় লৌহকঠিন, শত্রুপক্ষের আক্রমণের মোকাবিলায় যেকোনো আত্মত্যাগে প্রস্তুত সেই কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠেছিল ১৯৩০ সালে। আর পার্টি গড়ে ওঠার পর সাড় চার দশক ধরে সেদেশের জনগণ এই তিন মহাশক্তিধর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে লড়াই চালিয়েছে। হো চি মিনের ১৩৩ তম জন্মদিবসে পার্টি সম্পর্কে তাঁর ভাবনার আলোচনা এসময়ে খুবই শিক্ষাপ্রদ। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় ১৯১১ সালে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন। আর এর ১৯ বছর পর গড়ে তুলেছিলেন সেই কমিউনিস্ট পার্টি।

*    *    *

ভিয়েতনামে ফরাসিদের আগ্রাসন শুরু হয় ১৮৫৮ সালে। আর ১৮৮৪ সালে, অর্থাৎ মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে তারা উপনিবেশ স্থাপন করে ফেলে সমগ্র ভিয়েতনামে। এর মধ্যেই আয়ত্তে এসেছিল কম্বোডিয়া। কয়েক বছরের মধ্যে লাওসকে কব্জায় নিয়ে এসে ফরাসিরা ১৮৮৭ সালে তৈরি করে ইন্দোচীন।

এই ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনেই ১৮৯০ সালের ১৯ মে হো চি মিনের জন্ম। দেশপ্রেমের ধারায় সম্পৃক্ত এক পরিবারে জন্ম হো চি মিনের। কৈশোরেই সেই ধারা হো চি মিনের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। ফরাসিদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই ভিয়েতনামের জনগণ লড়াই করেছে। কিন্তু ফরাসি আগ্রাসনের বছরগুলিতে ভিয়েতনামের নগুয়েন রাজবংশ স্বদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে; ফরাসিদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত ১৮৮৪ সালে সমগ্র ভিয়েতনামকে ফরাসিদের হাতে সমর্পণ করে। তবে সমগ্র দেশ ফরাসিদের হাতে চলে গেলেও স্বাধীনতা জন্য ভিয়েতনামবাসীর যে আজন্মলালিত আকাঙ্ক্ষা তা শেষ হয়ে যায়নি। সে আকাঙ্ক্ষারই এক বিস্তৃত এবং পরিণত রূপ আমরা দেখেছি হো চি মিনের সমগ্র জীবনে। এক জায়গায় তিনি বলছেনঃ “আমরা এক হাজার বছর ধরে লড়াইতে আছি, প্রয়োজন হলে আরও হাজার বছর লড়ব”। ১৯০৮ সালে এরকমই এক ফরাসি বিরোধী লড়াই-আন্দোলনের উত্তাপের ছোঁয়ায় হো চি মিনের বিপ্লবী জীবনের কাজকর্ম শুরু হয়।

কিশোর বয়স থেকেই হো চি মিনের একটা বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। যেকোনো বিষয়কে গভীরে গিয়ে তিনি ভাবতে পারতেন। তা দিয়েই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পূর্বসূরীদের অনুসৃত পথের কোনোটাই তেমন কার্যকরী নয়। সেই পথের সন্ধানেই তাঁর বিদেশ যাত্রার সিদ্ধান্ত। একটি জাহাজের পাচকের সহকারী হয়ে তিনি বিদেশের উদ্দেশে পাড়ি দিলেন। তাঁর গন্তব্য প্যারিস। এরপরে স্পেন, আলজেরিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশ, আমেরিকা, ব্রিটেন ঘুরে ফের ১৯১৭ সালে ফরাসি দেশে আসেন। প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ভিয়েতনামিজ প্যাট্রিয়ট। সম্পূর্ণভাবে তিনি নিজেকে রাজনৈতিক কাজে নিয়োজিত করেন। এই সময়েই রাশিয়ায় ঘটে অক্টোবর বিপ্লব। তাঁর ভাবনার জগতে বিশাল পরিবর্তন এনে দেয় এই বিপ্লব।

অক্টোবর বিপ্লবের কিছুদিনে পরেই শেষ হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৯ সালে ভার্সাইতে বসে শান্তি বৈঠক। অ্যাসোসিয়েশন অব ভিয়েতনামিজ প্যাট্রিয়টের পক্ষ থেকে সেই বৈঠকে হো চি মিনএকটা দাবিপত্র পেশ করেন। যাতে আটটি দাবি করা হয়েছিল। ওই দাবিপত্রে হো চি মিন নগুয়েন আই কুয়োক নামে সই করেন। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি এই দাবিপত্রকে গুরুত্বই দিলো না। হো চি মিন আবার উপলব্ধি করলেন, ভিয়েতনামবাসীদের নিজের শক্তিতেই নিজেদের মুক্ত করতে হবে।

এদিকে অক্টোবর বিপ্লব দেশে দেশে মুক্তি আন্দোলনে, শ্রমিক আন্দোলনে নতুন প্রাণসঞ্চার করল। ১৯১৯ সালে লেনিনের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল তৈরি হয়। ইন্টারন্যাশনালের দ্বিতীয় কংগ্রেসে গৃহীত হলো লেনিনের ‘থিসিস অন দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড কলোনিয়াল কোশ্চেন’। এই দলিল পড়ে হো চি মিন অভিভূত হলেন। যে পথের সন্ধানে তিনি এতোদিন দেশবিদেশে ঘুরেছেন, তার হদিস পেলেন। ‘The Path Which Led Me to Leninism’ প্রবন্ধে হো চি মিন লিখছেনঃ “এক কমরেড আমাকে লেনিনের ল্যুম্যানিতে প্রকাশিত ‘থিসিস অন দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড কলোনিয়াল কোশ্চেন” পড়তে দিলেন। ওই দলিলের রাজনৈতিক পরিভাষাগুলি বোঝা কঠিন ছিল। কিন্তু বারবার পড়ার ফলে শেষ পর্যন্ত এই দলিলের মর্মবস্তু গ্রহণ করতে পেরেছিলাম। এই দলিল আমার মধ্যে আবেগ, উদ্দীপনা, স্বচ্ছ দৃষ্টি এবং আত্মবিশ্বাস সঞ্চারিত করেছিল। আমি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম। কোনো বিশাল সমাবেশকে সম্বোধন করার মতো করে আমার ঘরে আমি চেঁচিয়ে বলেছিলামঃ ‘প্রিয় স্বদেশবাসী! আমাদের যা প্রয়োজন এটা হলো সেই, এই হলো আমাদের মুক্তির পথ প্রদর্শক!”

সেই সময়ে ফরাসি শ্রমিকশ্রেণির পার্টি ছিল ফরাসি সোস্যালিস্ট পার্টি। ১৯২০ সালে তার ‘টুর’ কংগ্রেসে হো চি মিন অংশ নেন। কংগ্রেসে তিনি কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন। উপনিবেশগুলোর মুক্তি সংগ্রামকে সাহায্য করার আহ্বান জানান। সোস্যালিস্ট পার্টির এই কংগ্রেস থেকেই ফরাসি দেশের কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হয়। প্রথমদিন থেকেই তিনি সেই পার্টির সদস্য। ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির সাহায্যে সেদেশে বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে আসা দেশপ্রেমিকদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ইউনিয়ন অব কলোনিয়ান পিপল” নাম একটি সংগঠন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘লাপ্যারিয়া’ নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এই সংবাদপত্রের মাধ্যমে তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের নিষ্ঠুর নির্মম চরিত্রকে তুলে ধরেন। ভিয়েতনামে গোপনে এই সংবাদপত্রের প্রচার হতো। দ্রুতই এই সংবাদপত্র ভিয়েতনামের মানুষের মন জয় করে নিল। এরপরের চার বছর তিনি গভীরভাবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ অধ্যয়ন করেন। বুঝতে পারেন, “একমাত্র শ্রমিকশ্রেণিকে মুক্ত করেই জাতীয় মুক্তি সম্ভব এবং উভয়বিধ মুক্তি হলো কমিউনিজম ও বিশ্ববিপ্লবের কাজ।”

১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হলো বিশ্বযুদ্ধ। ভিয়েতনামে ফরাসিরা কঠোর হাতে দমন করতে লাগল জনগণের আন্দোলনকে। ফ্যাসিস্ত জার্মানি ১৯৪০ সালের জুন মাসে ফরাসি দেশ দখল করে। জার্মানির সহযোগী জাপান এই সুযোগে ভিয়েতনাম দখল করে নেয়। কমিউনিস্ট পার্টি ঘোষণা করলঃ ফরাসি উপনিবেশবাদ এবং ফ্যাসিস্ত জাপান উভয়ই আমাদের শত্রু। এই উভয় শত্রুর বিরুদ্ধে একযোগে আমাদের লড়াই করতে হবে। পার্টি আহ্বান জানালোঃ সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা দখল করার উদ্দেশ্য নিয়ে জনগণকে সংগঠিত ও শিক্ষিত করতে হবে, আর তাতে নেতৃত্ব দিতে হবে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টিকে। ১৯৪১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরলেন হো চি মিন। নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন বিপ্লবী আন্দোলনের।

১৯৪৪ সালের ডিসেম্বর মাসে হো চি মিনের নির্দেশে জেনারেল গিয়াপের নেতৃত্বে ভিয়েতনাম মুক্তি বাহিনীর প্রচার স্কোয়াড গঠিত হয়।এদিকে ১৯৪৫ সালের প্রথমদিক থেকে বিশ্বযুদ্ধ পরিসমাপ্তির দিকেই এগোচ্ছিল। জার্মানি, ইতালি আত্মসমর্পণ করল। ১৯ আগস্ট রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করল জাপান। ওই দিনই গণকংগ্রেসে সর্বাত্মক অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত হয়। সফল অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আগস্ট বিপ্লব জয়যুক্ত হলো। ২ সেপ্টেম্বর রাজধানী হ্যানয়ে অস্থায়ী সরকারের পক্ষে হো চি মিন স্বাধীনতা সনদ পাঠ করেন। ১৯৪৬ সালের ৬ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২ মার্চ নবনির্বাচিত আইনসভার পূর্ণ অধিবেশনে হো চি মিন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

কিন্তু ফরাসিরা ফের ভিয়েতনামের ওপর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করল। আবার শুরু হলো দীর্ঘ প্রতিরোধ সংগ্রাম। গেরিলা যুদ্ধের সাথে ছোটো বড়ো লড়াইও চলতে থাকল। শেষে ১৯৫৪ সালের ৭ মে টানা ৫৫ দিনের লড়াইয়ে দিয়েন বিয়েন ফু'র যুদ্ধে ফরাসিরা পরাজিত হলো। যুদ্ধে ফরাসিদের পরাজয়ের পর ১৯৫৪ সালের ২০ জুলাই জেনেভা সম্মেলনে ইন্দোচীনের স্বাধীনতা ও শান্তি সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

১৯৫৪ সাল থেকেই ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলে ফরাসিদের ছেড়ে আসা স্থান মার্কিনীরা দখল করতে শুরু করে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের জনগণ ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ফর লিবারেশন তৈরি করে মার্কিনী দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। দক্ষিণ ভিয়েতনামে পুতুল সরকারের সঙ্গে মার্কিনিরা আতাঁত গড়ে তোলে। এ সরকারকে বকলমে তারাই তৈরি করেছিল। মার্কিনীরা দক্ষিণে বিধ্বংসী যুদ্ধের সূচনা করে। এই যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৬৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হো চি মিন মারা যান।

*    *    *

১৯৩০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর পরবর্তী চার দশক হো চি মিন ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন ভিয়েতনাম মুক্তি সংগ্রামের। এই চার দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় তিনি এই শিক্ষাই বিশ্বের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে দিয়ে গেছেন যে, রাজনৈতিকভাবে যে কোনো সাফল্যের একেবারে মূলে রয়েছে পার্টি এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য স্থাপন।

শেষ ইচ্ছাপত্রে এই প্রসঙ্গে হো চি মিন বলছেনঃ “ঐক্য আমাদের পার্টি ও জনগণের একটি সর্বাধিক মূল্যবান ঐতিহ্য। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নিচে সেল পর্যন্ত সমস্ত পার্টি কমরেডকে পার্টির অভ্যন্তরে এই ঐক্য ও চিন্তার অভিন্নতাকে চোখের মণির মতো অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।” এই ঐক্য এবং চিন্তার অভিন্নতা মুখে বললেই পার্টির মধ্যে প্রতিষ্ঠা হবে না। হো চি মিন বললেনঃ “পার্টির সংহতি ঐক্য বিকশিত করার সর্বোত্তম উপায় হলো পার্টির অভ্যন্তরে প্রশস্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং নিয়মিতভাবে ও গুরুত্ব সহকারে আত্মসমালোচনা ও সমালোচনার অনুশীলন। কমরেডসুলভ প্রীতি পার্টির মধ্যে বিরাজ করা উচিত।”

জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনে পার্টি সদস্য ও ক্যাডারদের করণীয় কী সে প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে গেছেন হো চি মিন - ‘‘প্রতিটি পার্টি সদস্যকে, প্রতিটি ক্যাডারকে অবশ্যই বিপ্লবী নৈতিকতা দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হতে হবে এবং কর্মক্ষমতা, মিতব্যয়িতা,অখণ্ড সততা, দৃঢ় ন্যায়পরায়ণতা, জনগণের স্বার্থে পূর্ণ আত্মনিয়োগ এবং সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থপরতা প্রদর্শন করতে হবে। আমাদের পার্টিকে তার পূর্ণ বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে এবং জনগণের নেতা ও অতীব বিশ্বস্ত সেবকের ভূমিকা পালনের যোগ্যতা সপ্রমাণ করতে হবে।”

নিজের হাতে তৈরি পার্টি, তার সদস্য ও ক্যাডারদের প্রতি হো চি মিনের অগাধ আত্মবিশ্বাস ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি ভবিষ্যতে এপথেই চলবে। তাই তিনি বলতে পেরেছিলেনঃ “যদিও মার্কিনী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির জন্য আমাদের জনগণের সংগ্রাম আরও দুঃখকষ্ট এবং আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে অগ্রসর হতে পারে তথাপি সর্বাত্মক বিজয় আমাদের হবেই। এ অবধারিত।

...মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আমাদের জনগণ আরও জীবন ও সম্পদ বিসর্জনের মুখোমুখি হতে পারেন। যাই ঘটুক না কেন, পরিপূর্ণ বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মার্কিনী আক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের সংকল্পে আমরা অবশ্যই অবিচল থাকব।… আমরা একটি ছোট্ট জাতি, বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ফরাসি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - এই দুই বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদকে পরাভূত করার এবং পৃথিবীর জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে যোগ্য অবদান রাখার বিশিষ্ট গৌরবের অধিকারী হবো।”

কমরেড হো চি মিনের এই বিপ্লবী শিক্ষার আলোকে আমাদের নিজেদের বিচার করতে হবে, কোথায় আমরা দাঁড়িয়ে। ভিয়েতনামের তৎকালীন সময়ের সাথে বর্তমান ভারতের কোনো তুলনাই হয় না। কিন্তু আমাদের দেশেও আজ ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তাকে মোকাবিলা করতে ঐক্যবদ্ধ লৌহকঠিন পার্টি গড়ে তোলা এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব আমাদের পার্টির সামনে উপস্থিত। সেই গুরুদায়িত্ব পালনে হো চি মিনের জীবন, তাঁর বিপ্লবী শিক্ষা আমাদের কাছে বিশেষভাবে পাথেয়। বৈপ্লবিক নৈতিকতার সাথে সেই শিক্ষাকে আমাদের রপ্ত করতে হবে।

কমরেড হো চি মিনের বিপ্লবী শিক্ষা দীর্ঘজীবী হোক!
কমরেড হো চি মিন লাল সালাম!