E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৪ সংখ্যা / ১৯ নভেম্বর, ২০২১ / ১ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮

প্রতিবাদ কর্মসূচি সফল করতে কলকাতার শ্রমিক ভবনে কনভেনশন


কলকাতার শ্রমিক ভবনে ট্রেড ইউনিয়নগুলির কনভেনশন।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ১২ নভেম্বর কলকাতার শ্রমিক ভবনে শ্রমিক সংগঠনগুলির এক যৌথ সভায় দিল্লিতে আয়োজিত (১১ নভেম্বর) জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনের সমর্থনে এবং ২৬ নভেম্বর দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি সফল সহ আগামী বাজেট অধিবেশনকালে দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘট সর্বাত্মক করতে প্রস্তুতির লক্ষ্যে এক কনভেনশন আয়োজিত হয়। এদিন শ্রমিক ভবনে এই কনভেনশন পরিচালনা করেন সিআইটিইউ’র রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি সহ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের পক্ষে সুখেন্দু গোস্বামী, গণেশ সরকার, অতনু চক্রবর্তী, শান্তনু ঘোষ, শেখ রফিকউদ্দিন ও মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।

যৌথ কনভেনশনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিআইটিইউ’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিমা, শেয়ার, কর্পোরেটদের কাছে বেচে দিয়ে এবং শ্রম আইন সংশোধন করে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। কৃষি আইন সংশোধনের মাধ্যমে বৃহৎ পুঁজিপতিদের মুনাফা বাড়ানো হচ্ছে এবং কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণিকে সংকটের সামনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিগত চার বছরের বেলাগাম বেসরকারিকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেসরকারিকরণের মাধ্যমে গত চার বছরে ছয় কোটি টাকা তুলেছে মোদি সরকার। পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটের মধ্যে পড়েছে। মহামারী সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে জনবিরোধী পদক্ষেপের জেরে আয় কমেছে মানুষের এবং কর্মচ্যুত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাই আগামী দিনে রাজ্যজুড়ে প্রচারের ক্ষেত্রে ২৬ নভেম্বরের কর্মসূচি সহ সাধারণ ধর্মঘটের প্রচারে এই বিষয়গুলি মানুষের সামনে আমাদের বলতে হবে।

এই কনভেনশন থেকে গৃহীত প্রস্তাবে জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনে দাবিগুলিকে সমর্থন করে শ্রমিক-কৃষক-জনস্বার্থবিরোধী, জাতীয় স্বার্থবিরোধী কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিগুলির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী লড়াই আন্দোলন ও সংগ্রামকে আরও তীব্র করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে বৃহৎ দেশি-বিদেশি পুঁজিপতি ও কর্পোরেটদের স্বার্থে দেশের সরকার যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, কর্মসংস্থান ও দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতির ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে এবং স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পথে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষকের ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলতে হবে। কনভেনশনে আইএনটিইউসি’র পক্ষে বক্তব্য রাখেন কামারুজ্জামান, এআইটিইউসি’র পক্ষে বাসুদেব গুপ্ত, এআইসিটিইউ’র পক্ষে বাসুদেব রায়, ইউটিইউসি’র পক্ষে অশোক দাস, ইউটিসিসি’র পক্ষে দীপক সাহা, বিইএফআই’র পক্ষে জয়দেব দাশগুপ্ত, প্রতিরক্ষাকর্মী ইউনিয়নের পক্ষে সুভাষ সাহা, টেলিকমের পক্ষে অনিমেষ মিত্র এবং ১২ জুলাই কমিটির পক্ষে প্রদীপ্ত দাস প্রমুখ।

এদিনের কনভেনশন থেকে বিভিন্ন বক্তারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের তীব্র বিরোধিতা করে ব্যাংক-বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা, শিল্প, বন্দর, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, এয়ারলাইনস, এয়ারপোর্ট, ন্যাশনাল হাইওয়ে, টেলিকম সার্ভিস সহ সমস্ত ক্ষেত্রে বিগত চার বছরে যেভাবে নামমাত্র মুল্যে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে এবং এনএমপি’র ঘোষণা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে লড়াই আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন।এই নীতি সমূহ বাতিল করতে বাধ্য করার কর্মসূচি গ্রহণের প্রেক্ষিতে ব্যাপক বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে জারি থাকা শ্রমিক-কর্মচারীদের লড়াইয়ের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়েছেন বক্তারা।

একইভাবে দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের সংশোধন ও নয়াকৃষি আইন বাতিল, ফসলের লাভজনক দামের অধিকারের দাবিতে, বিদ্যুৎ বিল বাতিলের দাবিতে কৃষকদের লড়াইয়ের প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়েছে। আগামী ২৬ নভেম্বর কৃষকদের দিল্লি অভিযান ও অবরোধের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শ্রমিক-কৃষক সহ সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে ব্যাপক সংখ্যায় রাজ্য জুড়ে নামার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন শ্রমিক নেতৃত্ব।

এই কনভেনশন থেকে বাজেট অধিবেশনের সময় দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘটের প্রস্তুতি এখন থেকেই ধারাবাহিকভাবে গ্রহণ করার আবেদন করা হয়েছে। গৃহীত প্রস্তাবে আগামীদিনে রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী শ্রমিক-কৃষক বিরোধী আন্দোলনকে তীব্র করতে এবং রাজ্যের শ্রমিক সংগঠনগুলির সাথে কৃষক, খেতমজুর, ছাত্র-যুব-মহিলা সহ দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলনে শামিল হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিন সংযুক্ত কৃষক মোর্চার পক্ষে বক্তব্য রাখেন কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার। তিনি কনভেনশনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের ডাকা ধর্মঘটের পক্ষে কৃষকরা থাকবেন। ঐক্যবদ্ধ প্রচারেও অংশগ্রহণ করবে কৃষকসভা।

কনভেনশন থেকে ২৬ নভেম্বর নিজাম প্যালেসে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পক্ষে জমায়েত সংগঠিত করার ডাক দেওয়া হয়েছে। বেলা দুটোর সময় ওইদিন কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসারদের কাছে লিখিত বক্তব্য পেশ করা হবে। একই সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে এবং শহরাঞ্চলে জেলা সদরসহ মহকুমা অফিসে ও অন্যত্র দাবিপত্র জমা করা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৃষক খেতমজুর সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে কর্মসূচিতে শামিল করা হবে।