৫৯ বর্ষ ১৪ সংখ্যা / ১৯ নভেম্বর, ২০২১ / ১ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮
আক্রান্ত চতুর্থ স্তম্ভঃ বেঙ্গল কি স্পেকটেটর?
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
মাত্র সাত টাকা দেনা। আর তার দায়েই বন্ধ হয়ে গেছিল ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’। একটানা পঁচিশ বছর গরিব খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে শুধুমাত্র কলম সম্বল করে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার পরেও। ব্রিটিশ শাসক, নীলকর, জোতদার, জমিদার, মহাজন - যে লেখনীতে ত্রস্ত ছিল সবাই। মাঝেমধ্যে খ্যাতনামা ব্যক্তিরা নিখাদ ভালোবাসা সহকারে আক্রমণ, ভাঙচুর সবই চালিয়েছেন গ্রামবার্তা প্রকাশিকা তথা তার সাংবাদিক-সম্পাদক-প্রকাশক-বিক্রেতা ব্যক্তিটির ওপর। প্রেস চালাতে গিয়ে হাজারো ‘অপ্রেস’-এর শিকার হরিনাথ তথ্য ‘সাপ্রেস’ বা ‘কমপ্রেস’ করতে শেখেননি। ‘ডিপ্রেস’ড-ও হননি। কপর্দকশূন্য কাঙাল হরিনাথ অবশ্য শেষ পর্যন্ত যুঝে উঠতে পারেননি।
সদ্য ফেলে আসা ১৬ নভেম্বরের ‘ন্যাশনাল প্রেস ডে’-তে কেন জানিনা হরিনাথ মজুমদার মনে করিয়ে দিলেন - তখনও ছিল, এখনও আছে, আগামীতেও থাকবে। লড়ে যেতে হবে এর মাঝখান থেকেই। তখন ও এখনের পরিস্থিতি এক না হলেও গলা টেপার অভ্যাসে ভীষণভাবেই একরকম। তাই কাঙালের উত্তরসূরি হিসেবে সিদ্দিকি কাপ্পান, কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেম, এরেন্দ্র লিচোংবাম, বুদ্ধিনাথ ঝা, সমৃদ্ধি কে সাকুনিয়া, স্বর্ণ ঝা, বিনোদ দুয়া, শ্যাম মীরা সিং - এক নিঃশ্বাসে আরও অনেক ক’টা নাম লিখে ফেলা যায়। যদিও এসব ইতিহাসে গোস্বামী, চৌধুরী, দে-দের কিস্যু আসে যায় না। তাঁরা ছন্দে আছেন, স্রোতে আছেন, ভেসে আছেন। চারটে ধর্ষণ, পাঁচটা কূটকচালি, কিছুটা ব্যালকনি নাচ, আর কিছুটা বিনোদন মানুষকে খবরের নামে গিলিয়ে দিতে পারলেই দিনের দায়িত্ব শেষ। এসব চুলোর দুয়ারে পাঠিয়ে আমাদের জন্যে বরং জেগে থাকুন এ যুগের হরিনাথরা।
“আমাদের চারপাশে যা ঘটছে তা নথিভুক্ত করা আমাদের কর্তব্য।” এ বছরের ১৬ জুলাই আফগানিস্তানে তালিবানি আক্রমণে নিহত রয়টার্সের চিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি মৃত্যুর মাস তিনেক আগে ২৬ এপ্রিল তাঁর এক ট্যুইটে একথা লিখেছিলেন। পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী দানিশের প্রসঙ্গ এখানে না টানলেও হয়তো হতো। তবুও টানতেই হলে। কারণ দেশে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ-এর সময় বেশ কিছু ভয়ংকর ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরে কঠিন সত্যের মুখে যিনি আমাদের দাঁড় করিয়েছিলেন, তিনি দানিশ। তাঁর ট্যুইট - ‘নথিভুক্ত করা আমাদের কর্তব্য’ – সেই বক্তব্য মেনেই। সেখানে যেমন ছিল গঙ্গার তীরে শ’য়ে শ’য়ে কোভিডে মৃত মানুষের দেহ বালি চাপা দেওয়ার দৃশ্য, তেমনই ছিল শ্মশানে অবিরাম জ্বলে চলা চিতা। হাসপাতালের এমারজেন্সির সামনে ভরতির আশায় সারি সারি ট্রলিতে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ভিড়। যে সমস্ত ছবির মাধ্যমে দেশে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর সরকারি প্রচার আর বাস্তবের ফারাকটা এক মুহূর্তে ধরা পড়ে গেছিল।
হ্যাঁ। ‘ওইসব ছবি তোলার জন্য’ মৃত্যুর পরেও দানিশকে রেহাই দেয়নি একটা বড়ো অংশ। দানিশের সঙ্গে বামপন্থীদের কোনো যোগ ছিল বলে জানা নেই। তবে ভাবতে অবাক লাগলেও দানিশের মৃত্যুর পরে বামপন্থীদের আক্রমণ করে টাইমস অব ইন্ডিয়াতে প্রতিবেদন লিখেছেন টাইমস নাও-এর এডিটর-ইন-চিফ। ট্যুইটারে দানিশের মৃত্যু নিয়ে প্রায় উৎসব হয়েছে। জনৈক ট্যুইটারি যেমন লিখেছিলেন - তিনি হিন্দুদের শ্মশানের ছবি তুলে বিদেশি মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র ভারতকে হেয় করতে নয়, হিন্দু ধর্মকেও হেয় করার জন্য। অন্য এক ট্যুইটারির বক্তব্য অনুসারে, সিদ্দিকি গল্প তৈরি করার জন্য ড্রোন দিয়ে ছবি তুলে হিন্দুদের পবিত্র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া লঙ্ঘন করেছিলেন। আর দানিশের মৃত্যু সংবাদ আসার পর এক ট্যুইটারি লিখেছিলেন - এটাই সম্ভবত আজকের সেরা খবর। আরও ড্রোন শট তুলুন। খুব ভালো। আপনার যা প্রাপ্য আপনি তাই পেয়েছেন। এছাড়াও খ্যাতনামা এই চিত্র সাংবাদিকের নিহত হওয়ার খবরে শোকপ্রকাশ করেননি দেশের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই। একটু অন্য প্রসঙ্গে হলেও সম্প্রতি মেঘালয়ের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক একটা ভালো কথা বলেছেন। গত ৭ নভেম্বর রাজস্থানের জয়পুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন - দিল্লির নেতারা একটা কুকুর মরলেও শোকবার্তা পাঠান। কিন্তু কৃষি আইনের বিরোধিতা করে আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৬০০ কৃষকের মৃত্যু হলেও তাঁরা সেই বিষয়ে মন্তব্য করেন না।
পদ্মশ্রী পাবার পরেই কঙ্গনা রানাওয়াত-এর ৪৭-এর স্বাধীনতাকে ‘ভিক্ষা’ বলে মনে হয়েছে, বদলে ২০১৪ তে তিনি প্রকৃত স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছেন। এদিক ওদিক ছুটকো ছাটকা প্রতিবাদ হলেও দেশের শাসকদলের কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতা এখনও পর্যন্ত এর প্রতিবাদ করেছেন বলে আমার অন্তত জানা নেই। শহর কলকাতার বুকে এর আগে কখনও নাথুরাম গডসের জন্মদিন পালন হয়েছে বলেও কেউ না শুনলেও এবার তাও হয়েছে। এসবের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের কানহা গোশালায় লাউডস্পিকারে গোরুদের ভজন শোনানোর ব্যবস্থা হয়েছে। গোরুদের জন্য উত্তরপ্রদেশের আট জেলায় ব্যবস্থা করা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সেরও। প্রায় ৫১৫টি অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় নামার জন্য তৈরি। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ভূপালে ইন্ডিয়ান ভেটেরনারি অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘শক্তি-২০২১’ কনভেনশনে গিয়ে জানিয়েছেন, গোরু, গোবর এবং গোমূত্র একজন ব্যক্তির পাশাপাশি দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। যদি আমরা চাই তাহলে নিজেরাই গোরু, গোবর এবং গোমূত্রের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতির উন্নতি করতে পারি। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন শ্মশানে এখন গৌকাষ্ঠ (গোবর থেকে নির্মিত) ব্যবহার করা হচ্ছে। যা কাঠের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করবে। গোরুর মাধ্যমে কীভাবে লাভজনক ব্যবসা করা যেতে পারে সেই বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পশু চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।
কঙ্গনাকে নিয়ে যে প্যারাগ্রাফটা শুরু হয়েছে এবং গোরুতে শেষ সেটা গত এক সপ্তাহের খাঁটি দেশীয় সংবাদমাধ্যমের নির্যাস। মোটামুটি কঙ্গনা টু গোরু নিয়ে ঘোরাফেরা করতে করতে সপ্তাহ কাটিয়ে দেওয়া গেছে। মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেন্স না থাকলেও গোরুর জন্য এদেশে অ্যাম্বুলেন্স হচ্ছে এই বা কম কী! ২ মে, ২০১৭। উত্তরপ্রদেশের এটাওয়াতে জনৈক উদয়বীরের ১৫ বছরের ছেলের মৃত্যু হয় সরকারি হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে স্ট্রেচার বা অ্যাম্বুলেন্স কিছুই না পেয়ে অসহায় বাবাকে একা একা কাঁধে করে ছেলের দেহ নিয়ে যেতে হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮। উত্তরপ্রদেশের বান্দায় অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করেও পাননি এক ব্যক্তি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ই-রিকশ করে ছেলেকে হাসপাতালে আনতে বাধ্য হন বাবা। ২৮ মে, ২০১৯। উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে স্থানীয় হাসপাতালে অনুরোধ করেও অ্যাম্বুলেন্স পাননি মা-বাবা। বাধ্য হয়ে ছেলে আফরোজের দেহ কোলে করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হন। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১। উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ জেলার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স চেয়েও পাননি জনৈক রাজকুমার। বাধ্য হয়ে মৃত ছেলেকে নিজের কাঁধে করে নিয়ে ফিরতে বাধ্য হন তিনি। এগুলোর কোনোটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বলা যেতে পারে গোচ্ছন্ন ঘটনা। খুব বেশি গুরুত্ব না দিলেও চলে।
ব্যস্ত মিডিয়া যেহেতু আমাদের জানায়নি তাই অনেকেরই চোখের আড়ালে চলে গেছে আরও এক ঘটনা। গত ৯ নভেম্বর এক বিবৃতিতে মেটা (ফেসবুকের মাদার কোম্পানি) জানিয়েছে, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে ভারত থেকে ‘মেটা’কে ৪৫,২৭৫ জন ব্যবহারকারী সম্পর্কিত তথ্য (Data) সরবরাহ করতে বলা হয়েছিল। এর আগের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২০ সময়কালে, ভারত সরকারের মোট অনুরোধ ছিল ৪০,৩০০টি। এছাড়াও ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুককে আরও ৬৮,৪৮৫ জন ব্যবহারকারীর তথ্য সরবরাহ করার অনুরোধ করা হয়, যার মধ্যে ৫১ শতাংশ অনুরোধ পূরণ করা হয়েছে। মাসিক কমপ্ল্যায়েন্স রিপোর্টে মেটা জানিয়েছে, তথ্য প্রযুক্তি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) বিধি, ২০২১ মেনে ফেসবুকের জন্য ১০টি নীতি মেনে ২৬.৯ মিলিয়ন বিষয়বস্তু এবং ইন্সটাগ্রাম-এর জন্য ৯টি নীতি মেনে ৩.২ মিলিয়ন বিষয়বস্তু উপর ব্যবস্থা নিয়েছে। জুলাই-ডিসেম্বর ২০২০ সময়কালে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের নির্দেশের পর ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ৮৭৮টি ক্ষেত্রে অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এবছরের প্রথম ৬ মাসে অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে ২২ টি ক্ষেত্রে। আর ফেসবুকের প্রাক্তন কর্মী ফ্রান্সেস হাউজেন জানিয়েছেন, ২০১৮ থেকে ২০২০-র মধ্যে ভারতে ধর্মীয় মেরুকরণ, ভুয়ো খবর, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে অবমাননাকর পোস্টের অসংখ্য অভিযোগ ফেসবুকের দফতরে জমা পড়ে। উল্লেখ করার বিষয়, সংস্থার কর্মীরাই সেই অভিযোগ তুললেও গুরুত্ব দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ অথবা গুরুত্বপূর্ণ নয় এখনও হয়তো সবটা বুঝে উঠতে পারিনি।
এসবের মধ্যেই গত ২২ জুলাই এডিটরস গিল্ড-এর তরফ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। ওই সময় দৈনিক ভাস্কর এবং ভারত সমাচারের বিভিন্ন অফিসে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা তল্লাশি চালান। এরপরেই এডিটরস গিল্ড তাদের বিবৃতিতে জানায় - কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জবরদস্তি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে দমানোর চেষ্টা করছে। করোনা অতিমারীর খবর গভীরভাবে তুলে ধরছিল দৈনিক ভাস্কর। যেখানে সরকারের চরম অব্যবস্থার ছবি উঠে আসছিল। প্রচুর মানুষের প্রাণহানিও হচ্ছিল। মহামারী নিয়ে রাজ্য সরকারকে কিছু কঠিন প্রশ্ন করতেই সংবাদমাধ্যমের অফিসে আয়কর হানা দেয়। একইসময়ে দুই সংস্থার অফিসে আয়কর হানার বিষয়টিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এর আগে এই বছরের শুরুতে নিউজক্লিক সহ আরও বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, যে ক’টি সংবাদমাধ্যমের অফিসে হানাদারি চলেছে তার সবগুলোই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের শর্ত মেনে চাঁচাছোলা ভাষায় সরকারের ভুল ত্রুটি তুলে ধরতে অভ্যস্ত।
এক ওয়েবিনারে দৈনিক ভাস্করের জাতীয় সম্পাদক ওম গৌর জানিয়েছিলেন, রাজ্য প্রশাসনের চরম অব্যবস্থার ছবি তুলে ধরার পর সরকারের তরফ থেকে আসা সবরকম বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই উদাহরণ তো আমাদের রাজ্যেও আছে। দৈনিক সংবাদপত্র হওয়া সত্ত্বেও যেখানে কোনো কারণ না দেখিয়েই সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত করা হয়।
এই প্রসঙ্গে বছর ষাট আগের একটা কথা বলা যেতেই পারে। ১৯৬২ সালে এক মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল - সরকারের সমালোচনা করার জন্য বা সরকারের পদক্ষেপের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত কঠোর শব্দ দেশদ্রোহ নয়। গত জুন মাসে সাংবাদিক বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে আনা এক দেশদ্রোহের মামলা খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট-এর বিচারপতি বিনীত শরণ এবং বিচারপতি ইউ ইউ ললিত জানান - ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা উচিত নয়, যদি না হাইকোর্টের বিচারকের নেতৃত্বাধীন প্যানেল তাতে অনুমতি দেয়। সেই প্রসঙ্গেই ১৯৬২ সালের মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে তাঁরা আরও বলেন - ‘‘দেশদ্রোহিতার বিষয়ে কেদারনাথ সিংয়ের রায় অনুসারে প্রত্যেক সাংবাদিক এই ধরনের অভিযোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবেন।’’ যদিও জুন মাসের পরেও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
গ্রামবার্তা প্রকাশিকার প্রথম সংখ্যায় হরিনাথ মজুমদার লিখেছিলেন, “যেমন চিকিৎসক রোগীর অবস্থা সুবিদিত না হইলে তাহার প্রতিকারে সমর্থ হন না, তদ্রূপ দেশহিতৈষী মহোদয়গণ গ্রামের অবস্থা অবিদিত থাকিলে কীরূপে তাহার প্রতিকারে যত্নবান হইবেন?” ‘দেশহিতৈষী মহোদয়গণ’ সমস্যার প্রতিকারে যে আদৌ যত্নবান নন তা বোঝানোর জন্য আরও কয়েকটা বাক্য লেখার প্রয়োজন নেই। তাঁদের বরং লক্ষ্য সমস্যা মেটানোর বদলে সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া। ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তি তৈরি করা। তাই বোধহয় পেটোয়াদের পৌষমাসে সাকুনিয়াদের সর্বনাশ। তবু লড়াই জারি রেখেছিলেন হরিনাথ। লড়াই আজও জারি আছে। ‘কাঙাল’দের লড়াই জারি থাকবে।