E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২ সংখ্যা / ২০ আগস্ট, ২০২১ / ৩ ভাদ্র, ১৪২৮

সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির আহ্বান

শ্রেণি আন্দোলন গণআন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম শক্তিশালী পার্টি সংগঠন গড়ে তুলতে হবে


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচনের পরে সমগ্র পার্টিকে মতাদর্শের ভিত্তিতে আরও সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার ঐতিহাসিক কর্তব্য আমাদের সামনে। দুর্বার শ্রেণি ও গণ আন্দোলন গড়ে তুলে তাকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম এইভাবে পার্টিকে গড়ে তুলতে হবে। ফ্যাসিস্তধর্মী, স্বৈরাচারী, দুর্নীতিবাজসহ সমস্ত উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তিকে জনবিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করার লক্ষ্যে দায়িত্ববোধে সচেতন, নিঃস্বার্থভাবে জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী, মেহনতি, পশ্চাদপদ, বঞ্চিত, শোষিতসহ জনগণের সমস্ত অংশের সাথে জীবন্ত সম্পর্কে আবদ্ধ এমন পার্টিকর্মী সংবলিত শক্তিশালী পার্টি গড়ে তোলাই এই মুহূর্তের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। ১২ এবং ১৩ আগস্ট প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে এই সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু।

সভার শুরুতেই পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যসমাপ্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করেছেন। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কমিটির বিশ্লেষণও তিনি উপস্থিত করেন। পশ্চিমবঙ্গের ফলাফলে নির্বাচনী রাজনৈতিক লাইন রূপায়ণে ঘাটতি ও সাংগঠনিক ত্রুটির কথাও কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে। রাজ্য কমিটির সদস্যদের আলোচনার পরে ইয়েচুরি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রবর্তী ঘাঁটি। বহু আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে এই রাজ্যের পার্টিকে লড়াই করতে হচ্ছে। চিহ্নিত ত্রুটিগুলি সংশোধন করে পশ্চিমবঙ্গে পার্টিকে ফের শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।

রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র সভায় সংগঠন সংক্রান্ত পর্যালোচনা ও আসন্ন পার্টি সম্মেলনপর্বের রূপরেখা পেশ করেছেন। ৪৮জন রাজ্য কমিটির সদস্য এই রিপোর্টের ওপরে আলোচনা করেছেন। উপসংহারে মিশ্র বলেন, সংগঠনের ক্ষেত্রে যে ত্রুটিগুলি চিহ্নিত হয়েছে তা সংশোধন করতে হবে। শাখাকে জীবন্ত করার দিকে জোর দিতে হবে। সর্বস্তরের কমিটির প্রয়োজনীয় পুনর্গঠন করতে হবে। জনগণের স্বার্থে নিয়মিত আন্দোলন সংগ্রাম ব্যতিরেকে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যধারা পরিচালিত হতে পারে না। আন্দোলনের যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে তাকে ব্যবহার করতে হবে। রাজ্যে এই আন্দোলন সংগ্রামে বিজেপি বিরোধী, তৃণমূল বিরোধী শক্তিকে সমবেত করার প্রয়াস জারি থাকবে।

রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে শাখা সম্মেলন শুরু হবে। শাখার সব সদস্যই এরিয়া সম্মেলনে প্রতিনিধি থাকবেন। কোভিড বিধি মেনে এই সম্মেলনপর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

জনজীবনের জরুরি দাবিতে আন্দোলন পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্য কমিটিতে। ১৫ থেকে ২২ আগস্ট রাজ্যে সর্বজনীন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দ্রুত দেবার দাবিতে কর্মসূচি পালিত হবে। লোকাল ট্রেন চালানোর দাবিতেও কর্মসূচি পালিত হবে। যথাযথ সতর্কতা মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সেপ্টেম্বরে ১৫ দফা দাবিতে দেশব্যাপী যে প্রতিবাদ বিক্ষোভের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে এরাজ্যেও তা পালিত হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি

সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ১৩ আগস্ট এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, জাতীয়স্তরে বিজেপি বিরোধী সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই সংগঠিত করার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বিরোধী, বিজেপি বিরোধী লড়াই চালিয়ে যাবে সিপিআই(এম)।

পার্টির এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বলেছেন, বাংলায় তো তৃণমূলও জনগণের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে। এখানে তার প্রতিরোধ তো করতেই হবে। কিন্তু জাতীয়স্তরে বিজেপি বিরোধী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ লড়াই সারা দেশের জন্যই জরুরি। আগামী ২০ আগস্ট ১৪টি বিরোধী দলের ভার্চুয়াল সভা হবে বলে তিনি জানান।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, একেকটা জায়গায় পরিস্থিতি একেকরকম। এক জায়গার লড়াইয়ের পদ্ধতি কপি করে তুলে এনে আরেক জায়গায় পোস্ট করে দিলে সমাধান হয় না। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। প্রসঙ্গত তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল মানুষের অধিকারের ওপর আক্রমণকারী। ওরা রেড ভলান্টিয়ারদেরও আক্রমণ করছে।

ত্রিপুরায় তৃণমূল সম্পর্কে সিপিআই(এম)’র অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় তৃণমূল ছিল, কিন্তু তারা সবাই মিলে আগেই বিজেপি-তে চলে গেছে। এখন মিডিয়াতে তৃণমূলকে দেখা যেতে পারে, কিন্তু ত্রিপুরার মাটিতে তৃণমূল নেই। ত্রিপুরায় গত তিন বছর ধরে বামফ্রন্টই লড়ছে বিজেপি’র বিরুদ্ধে, বামপন্থীরাই আক্রান্ত বিজেপি’র হাতে।

কোভিড মহামারীতে দেশবাসীকে দুর্দশায় ডুবিয়ে কীভাবে মোদী সরকার সংসদীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিক সম্মেলনে তার উল্লেখ করেছেন। পেগাসাস নিয়ে সরকারের জবাব না দেওয়া এবং সংসদে বিরোধীদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, হিন্দুত্ববাদীরা সংসদকে ধ্বংস করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে।