E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২ সংখ্যা / ২০ আগস্ট, ২০২১ / ৩ ভাদ্র, ১৪২৮

স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদীর মিথ্যা প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা করল কৃষক সভা


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে দেশের কৃষি এবং কৃষকদের অবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে বক্তব্য পেশ করেছেন তাঁকে সত্যের অপলাপ এবং বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিহীন আখ্যা দিয়ে নিন্দা করেছে সারা ভারত কৃষক সভা। যে কৃষি আইন প্রত্যাহার করার দাবি নিয়ে দেশের কৃষকেরা বছরব্যাপী সংগ্রাম করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় কার্যত তাকে উপেক্ষা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কৃষক সভা বলেছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের তোলা ইস্যুগুলিতে সংসদে কিছু বলতে নারাজ কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করে মিথ্যার জাল বুনে তিনি বললেন, বিজেপি সরকার কৃষকদের জন্য অনেক কিছু করেছে। দীর্ঘ নয় মাস ধরে দিল্লির সীমান্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ৬০০ কৃষক শহিদ হয়েছেন কিন্তু নরেন্দ্র মোদী অনমনীয় থেকেছেন কর্পোরেট মুনাফা বাড়ানোর জন্য নীতি প্রণয়নে। তিনি যদি সত্যিই ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ভাবতেন, তাহলে তিনটি কৃষি আইন এবং বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি অধিকার দিতে আইন প্রণয়ন করতেন।

কৃষক সভা আরও বলেছে, তেতো সত্যি কথাটা হলো, বিগত সাত বছরে নরেন্দ্র মোদী জমানায় কৃষকদের আয় তাঁর দাবি মতো দ্বিগুণ হয়নি, হ্রাস পেয়েছে। কৃষকদের আত্মহত্যার সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ফসল বীমা যোজনা যা ছোটো কৃষকদের সাহায্যের জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি যে বাগাড়ম্বর করেছিলেন, তা নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কৃষকদের বিমার নিস্পত্তি করা হয়নি। যদিও তাঁরা এবং কেন্দ্রীয়, রাজ্য সরকারগুলি প্রিমিয়াম দিয়ে গেছেন নিয়মিত। এই যোজনার অকার্যকরতার দরুন অন্ধ্র প্রদেশ, বিহার, গুজরাট, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি পিএমএফবিওয়াই স্কিম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।

কৃষক সভা আরও বলেছে, প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন ছোটো কৃষকদের জন্য সহজ ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে এই সরকার, কিন্তু কৌশল হলো অনেক আগে থেকেই চুক্তি চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের এই প্রকল্পের তালিকার আওতা থেকে কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এমনকী যখন কৃষকরা কোভিড মহামারীর সময় ব্যাপক পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তখন তাদের কোনো ত্রাণ দেওয়া হয়নি বা তাদের ঋণমকুব করবার মতো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কৃষক সভা ক্ষোভের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে ওই বিবৃতিতে বলেছে, আরও একটা মিথ্যে ফিরি করা হলো লালকেল্লা থেকে। বলা হলো যে, কৃষিতে ন্যূনতম সহায়ক মুল্য উৎপাদন মূল্যের দেড়গুণ করা হয়েছে। অথচ জাতীয় কৃষি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার সি২+৫০% ফরমুলা চালুই করে নি। একইসাথে এটাও লক্ষণীয় যে অধিকাংশ শস্যের ক্ষেত্রে সংগ্রহ মূল্য যা এমনকী এই এমএসপি যা অধিকাংশ শস্যের ক্ষেত্রেই সি২+৫০% এর থেকেও চল্লিশ পঞ্চাশ শতাংশ নিচে, তা নিশ্চিত করা হয়নি। ২০২০ সালের অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসের একটা রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ১১টি বড়ো কৃষিপ্রধান রাজ্যের কৃষকরা ১৯০০ কোটি টাকা পেয়েছেন দু'মাসের শস্য বিক্রি করে যা এমএসপি’র চেয়েও কম। ভুট্টার ক্ষেত্রে দর ঘোরাফেরা করছে ১১০০ থেকে ১৫৫০ টাকা কুইন্টাল পিছু, যেখানে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এমএসপি ১৮৫০ টাকা। অক্টোবর ২০২০-তে কর্ণাটকে বাজরার দর এমএসপি’র ৪৫ শতাংশ নিচে ছিল। সংগ্রহ ব্যবস্থার দুরবস্থার জেরে মধ্য প্রদেশে জোয়ারের দর ছিল এমএসপি’র চেয়ে ৫৬ শতাংশ কম। ওই সময়পর্বে প্রধান রাজ্যগুলিতে ধানের দর এমএসপি’র ১৫ শতাংশ কম। যেখানে বিহারের মতো রাজ্যে এই দর ছিল এমএসপি’র ৫০ শতাংশেরও কম। ধানের ক্ষেত্রে কুইন্টাল পিছু যদি সি২+৫০% ফরমুলা অনুযায়ী দাম দেওয়া হতো তাহলে ধানের ক্ষেত্রে এমএসপি’র চেয়ে ৬৫০ টাকা এবং মুগের ক্ষেত্রে এমএসপি’র চেয়ে ১৪০০ টাকা বেশি দর উঠত। পেট্রোল-ডিজেলের নাভিশ্বাস তুলে দেওয়া দাম বৃদ্ধির জেরে সারের এবং কৃষি উপকরণের দামের ব্যাপক বৃদ্ধির জন্য কৃষি এই মুহূর্তে পেশা হিসেবে চালানোই দুষ্কর। কৃষির উৎপাদন মুল্যের ব্যাপক বৃদ্ধির তুলনায় পিএম কিষান যোজনার থেকে প্রাপ্তি অত্যন্ত কম। বিজেপি সরকারের নীতিসমূহ কৃষি ক্ষেত্রে কৃষকের যে আয় ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে তার জন্য দায়ী। বাস্তবে ছোটো কৃষক এবং চুক্তি চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিজেপি সরকারের নীতির জেরে।