E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২ সংখ্যা / ২০ আগস্ট, ২০২১ / ৩ ভাদ্র, ১৪২৮

কালো রবীন্দ্রনাথ এবং কালো দিনের গল্প

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


তালিবান টালিবান চুলোয় যাক। চুলোয় যাক পেট্রোল ডিজেলের আকাশ পথে এগিয়ে চলা। চুলোয় যাক শহরাঞ্চলে বেকারির হার দু’অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলা। চুলোয় যাক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবিমতো প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমে ভারতীয়দের অলিম্পিক পদক জয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ। চুলোয় যাক ‘আসামি’ মাতঙ্গিনী হাজরাও। আপাতত মূল সমস্যা কালো কুলো রবীন্দ্রনাথ। মাল বেচার ফাঁকে ফাঁকে নিত্যিনতুন উদ্ভট আবিষ্কারের ছন্দে পথ চলা ফেরিওয়ালাদের নতুন আবিষ্কার, ‘রবীন্দ্রনাথ কালো ছিলেন বলে তাঁর মা কোলে নিতেন না’। শুধু শিক্ষামন্ত্রী নয়, কোনো মন্ত্রী সান্ত্রিকেই প্রশ্ন করা ইদানীং রীতিবিরুদ্ধ। সূত্র জানতে চাওয়া - নৈব নৈব চ। অতএব - মাননীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বিশ্বভারতীতে বসে অম্লানবদনে যখন বলেছেন - রবীন্দ্রনাথ কালো ছিলেন বলে কোলে নিতেন না মা - তখন তাই সই। ভাগ্যিস বলে দেননি - সেই কারণেই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাহলে সেটাও মাথা নিচু করে মেনে নিতে হতো। মান্যবরের এই নব উদ্ভাবনে আমরা পুলকিত, আনন্দিত, উৎফুল্ল। জানার কি কোনো শেষ আছে!

সবকিছু অবশ্য এত সহজে চুলোয় পাঠানো যায়না। এই যেমন তালিবান টালিবানদের সাম্প্রতিক কাণ্ডকারখানা। খারাপ তালিবান, ভালো তালিবান, পরিবর্তিত তালিবান - এসব বিতর্কে এত তাড়াতাড়ি ঢোকার দরকার নেই বলেই ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তালিবানিদের অতীত কর্ম এতোটাই ‘কু’, ‘নির্মম’, ‘নৃশংস’ - যে আফগান দেশের নাগরিকদের একটা বড়ো অংশ তাঁদের মসৃণ ক্ষমতা দখলে আতঙ্কিত। ঠিক কোন জাদুবলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করে কার্যত বিনা বাধায় একটা রাষ্ট্র তারা দখল করে নিলো তা অবশ্যই বিস্ময়ের। আফগান নাগরিকদের আশঙ্কা, তালিবানিরা আবারও আগেকার মতো নৃশংস শাসন ফের চালু করতে পারে। যা মহিলাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে। সেই কারণে, দেশের নাগরিকদের একটা বড়ো অংশই দ্রুত দেশ ছাড়তে চাইছেন। সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুসারে, গত ১৫ আগস্ট কাবুলের পতনের পর আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে এটিএম-এর সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। আকাশে হেলিকপ্টারের আনাগোনা। চলছে মার্কিন দূতাবাস থেকে তাদের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া। আফগানিস্তানে কাজ চালানো বিভিন্ন পশ্চিমি মিশনও তাদের কর্মীদের আফগানিস্তান থেকে বের করে নিতে চাইছে। বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্স (ANDSF)-এর জন্য গত মার্চ ২০২১ পর্যন্ত আমেরিকা খরচ করেছে ৮৮.৩ বিলিয়ন ইউ এস ডলার। আমেরিকান এক সংস্থার পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, সেনাবাহিনীতে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। ফলে আফগান বাহিনীর জন্য যে ৮৮.৩ বিলিয়ন ইউ এস ডলার গত কয়েক বছরে খরচ করা হয়েছে এখন প্রশ্ন উঠেছে সেই অর্থ কীভাবে, কোন খাতে খরচ হয়েছে? ওই সংস্থাই জানিয়েছে, আফগান সেনার ক্ষমতা সম্পর্কে আমেরিকান সেনারা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কখনোই কোনো পর্যালোচনা ছাড়াই এই আত্মবিশ্বাস। আর আমেরিকান বাহিনী সরে যেতেই কীভাবে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছে আফগানিস্তান তার সাক্ষী সে দেশের প্রতিটি নাগরিক এবং বিশ্ব।

২০০২ সালে আমেরিকা আফগান বাহিনীর জন্য বহু বিলিয়ন ডলারের প্রশিক্ষণ শুরু করে এবং তিন বছর পর পুলিশ এবং সামরিক, দুই ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আফগান বাহিনীকে তালিবান বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করতে মার্কিন সামরিক প্রশিক্ষকদের প্রায় দু’ দশক সময় লেগেছিল। যদিও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ৩,০০,৬৯৯ সৈন্যর বিশাল বাহিনী তালিবানি যোদ্ধাদের মাত্র ৮০ হাজারের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বললেই ঠিক বলা হবে। এই অল্প সংখ্যক সৈন্য দিয়েই হেলায় আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবানি যোদ্ধারা। তালিবানি হানাদারির সামনে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর একের পর এক কমান্ডার কোনোরকম প্রতিরোধ গড়ে না তুলেই আত্মসমর্পণ করেছেন। বলা ভালো, আফগানিস্তানকে তুলে দিয়েছেন তালিবানিদের হাতে। এর পেছনে কার সুতোর টানে কার আঙুল নাচলো তা বলবে সময়। তবে রাশিয়ান বাহিনী আফগানিস্তান থেকে বিদায় নেবার পর আশরাফ ঘানি যেরকম উৎফুল্ল হয়ে সমাজতান্ত্রিক ছোঁয়া থাকা নাজিবুল্লা সরকারের পতনের গন্ধে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি লস এঞ্জেলস টাইমসে আর্টিকেল লিখে ফেলেছিলেন, ‘আফগানিস্তানের পতন এখন সময়ের-অপেক্ষা’ - এবার এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু করতে হয়নি। তার আগেই ১৫ আগস্ট কাবুলের দখল নিয়েছে তালিবান। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর প্রাসাদে বসেই আলোচনা হয়েছে তালিবানিদের সঙ্গে। এরপর নিরাপদে, বিনা বাধায় প্রায় ১৬৯ মিলিয়ন ইউ এস ডলার সঙ্গে নিয়ে সবার আগে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ১৯৮৯ সালে উল্লসিত, আজকের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ। দেশবাসীকে তালিবানের হাতে ছেড়ে পলাতক রাষ্ট্রপ্রধান। ইতিহাস জানাচ্ছে - নাজিবুল্লা সেদিন পালাননি। দেশেই ছিলেন এবং সেই সময়ের ‘খারাপ’ তালিবান অর্থাৎ মার্কিন মদতপুষ্ট মুজাহিদিনরা তাঁকে মেরে রাস্তায় ঝুলিয়ে দিয়েছিল।

আফগানিস্তানে ঠিক কী ঘটছে তার পুরোটা জানা সম্ভব নয়। আমাদের বেশিরভাগেরই ভরসা কিছু বিদেশি সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া। সেই সব সূত্রের ওপর ভরসা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করা ঠিক হবে না। তবুও গত কয়েকদিনে যেসব ছবি, ভিডিয়ো, খবর সামনে এসেছে তাতে আগেকার খারাপ তালিবান এখন কতটা ভালো তালিবান হয়ে গেছে সে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। খবর মূলত আসছে কাবুল এবং সংলগ্ন অঞ্চল থেকে। এর বাইরে আরও যে ৩৩ প্রদেশ - সেখানে কী হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। মহিলা সাংবাদিককে প্রশ্নের উত্তর দিলেও অথবা সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘আমরা ভালো হয়ে গেছি’ ‘তালিবান শান্তি চায়’ দাবি করলেও। কাবুল বিমানবন্দরে শয়ে শয়ে মানুষের দৌড়, মানুষের বিমান বন্দরে ঢুকতে চাওয়ার আর্তি, সুস্থভাবে বাঁচতে চেয়ে দেশ ছেড়ে পালানো মানুষের উড়ন্ত বিমান থেকে খসে পড়া, দেশের পতাকা নিয়ে মিছিল করা সাধারণ আফগান নাগরিকদের ওপর তালিবানি বাহিনীর গুলিচালনা, বিউটি পার্লারের সামনে মহিলাদের ছবি সাদা রঙ দিয়ে ঢেকে দেওয়া, কালাশনিকভ নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় তালিবানি বাহিনীর টহলদারি - এসব সামান্য কিছু উদাহরণ মাত্র। গত সোমবার ১৬ আগস্ট থেকে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র কাবুল বিমানবন্দরেই গুলি চালনা এবং পদপিষ্ট হয়ে ৪০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্পুটনিকের প্রতিবেদন অনুসারে, পূর্ব নাঙ্গারহার প্রদেশে আফগান জাতীয় পতাকার সমর্থনে সমাবেশকারীদের ওপর বুধবার তালিবানি সদস্যরা গুলি চালিয়েছে। প্রতিবাদকারীদের ওপর তালিবান গুলি চালানোয় কমপক্ষে ২ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তালিবানিরা রাস্তায় বিমানবন্দর অভিমুখী মানুষের নথিপত্র যাচাই করছে এবং জোরপূর্বক কিছু লোককে চেকপোস্ট থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। তাদের বিমানবন্দরে যাবার পথেই আটকে দিচ্ছে। কাবুল বিমানবন্দরে মহিলা ও শিশুদের মারধর এবং বেত্রাঘাত করা হয়েছে। ভয়েস অফ আমেরিকা জানাচ্ছে - কাবুলের অধিকাংশ পুরুষেরই পরনে এখন কুর্তা-পাজামা। মহিলাদের পোশাকেও বড়োসড়ো পরিবর্তন এসেছে গত কয়েকদিনেই। অন্যান্য সাধারণ দিনগুলোতে কাবুলের রাস্তায় প্রচুর মহিলার উপস্থিতি লক্ষ করা যেত। এঁদের অনেকেই জিনস্, লংস্কার্ট পরে থাকতেন। কিন্তু গত দু'দিন কাবুলের রাস্তা প্রায় মহিলা শূন্য। নিতান্ত প্রয়োজনে কাউকে বেরোতে হলে হিজাব-বোরখা দিয়ে নিজেদের সম্পূর্ণ ঢেকে তাঁরা রাস্তায় বেরোচ্ছেন। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের বিভিন্ন শহরে ধর্মগুরুদের উদ্দেশে তালিবান কালচারাল কমিশন নির্দেশিকা জারি করে বলেছে, ‘তালিবান যোদ্ধাদের বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাত্রী চাই। শর্ত, পাত্রীদের ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে তরুণী হতে হবে। বিধবা হলে ৪৫ বছরের নিচে হতে হবে।' একাধিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে চলছে অরাজকতা, খুনখারাপি। ছেলে, মেয়ে, শিশু, কিশোরী - নিস্তার নেই কারোরই। কোনও পরিবারে ২ জন মেয়ে থাকলে একজনকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তালিবানরা। মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিয়ের জন্য। তালিবান-বধূ করার জন্যই চলছে অপহরণ। তাখর এলাকায় স্বামী ছাড়া কোনও মহিলাকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনও মহিলা চাকরি করতে পারবেন না বলে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। পুরুষরাই শুধুমাত্র উপার্জন করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। কাবুলে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে তালিবানিরা এবং খবর নিচ্ছে কারা কারা আমেরিকান বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। সরকারের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ থাকার কারণেও বেশ কিছু মানুষ তালিবানিদের হাতে খুন হয়ে গেছেন বলে দাবি উঠেছে। যদিও এক রাশিয়ান সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ১৮ আগস্ট দেশের উত্তরাংশে অবস্থিত পারবান প্রদেশের রাজধানী চারিকা সহ বেশ কয়েকটি এলাকা তালিবানদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করেছে আফগান সেনারা। এসবের কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে আর কতটা গুজব জানা নেই। তবে একথা তো সত্যি - ভয়, আতঙ্ক, নির্মমতা, নৃশংসতা, অত্যাচার - এসবই জড়িয়ে আছে ‘তালিবান’ নামের সঙ্গে। যদিও পাশতু এই শব্দের অর্থ নাকি ‘ছাত্র’।

বলতে দ্বিধা নেই শাহরা করিমির নাম আমি কদিন আগেও জানতাম না। আফগানিস্তানের এই চলচ্চিত্র পরিচালকের নাম জেনেছি ক'দিন আগে। সম্প্রতি বিশ্বের সমস্ত সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর খোলা চিঠি লেখার পর। তাঁর চিঠিতে যা যা লিখেছেন শাহরা তা থেকেও কিছুটা ধারণা করা যেতে পারে আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে। তাঁর চিঠিতে উঠে এসেছে তালিবানিদের নৃশংসতার কথা। দেশের মহিলাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। সম্প্রতি ফেসবুকে এক ভিডিয়ো বার্তায় তিনি জানান - তালিবান শহরে পৌঁছে গেছে। অভিনন্দন। আমরা এখন পালাচ্ছি। যাঁরা পালাতে সক্ষম তাঁরাও দেশ ছাড়ুন। ২০১৯ ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত ‘হাভা, মারিয়ম আয়েশা’ছবির পরিচালক শাহরা করিমি তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, তালিবানিরা সামন্ততান্ত্রিক, পিতৃতান্ত্রিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। মহিলাদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এরা পেছন দিকে হাঁটা পছন্দ করে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘তালিবানিরা মহিলাদের অধিকার ছিনিয়ে নেবে, আবারও মহিলাদের ঘরের ভেতর পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের সমস্ত অভিব্যক্তি নীরবতায় পরিণত হবে। এর আগে যখন তালিবানরা ক্ষমতায় ছিল তখন কোনো মেয়ে স্কুলে পড়তো না। তার পরবর্তী সময়ে ৯০ লক্ষ আফগান মেয়ে স্কুলে যায়। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহে বহু স্কুল ধ্বংস করে দিয়েছে তালিবানরা। আবারও কমপক্ষে ২০ লক্ষ আফগান মেয়ে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।’ শাহরার বক্তব্য অনুসারে, ‘দেশে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। যার পুরোটাই এখন ঝুঁকির মুখে। তালিবানিরা ক্ষমতা দখলের পরেই সমস্ত শিল্পকর্ম বন্ধ করে দেবে। আমি এবং অন্যান্য চলচ্চিত্র পরিচালকরা ওদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হব। তালিবানিদের লক্ষ্যই হলো শিল্প এবং মহিলাদের দমন করা।’ শাহরার চিঠির বয়ান অনুসারে, 'গত কয়েক সপ্তাহে, তালিবানরা আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, তারা বহু শিশুকে অপহরণ করেছে, তারা বহু অল্পবয়সী মেয়েদের পুরুষদের কাছে স্ত্রী হিসেবে বিক্রি করেছে, তারা পোশাকের জন্য একজন মহিলাকে খুন করেছে, একজন মহিলার চোখ কেড়ে নিয়েছে, তারা আমাদের একজন জনপ্রিয় কমেডিয়ানকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমাদের এক ঐতিহাসিক কবিকে হত্যা করেছে এবং বর্তমান ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম প্রধানকে হত্যা করেছে।’ এর পাশাপাশি দি কাইট রানার গ্রন্থের প্রণেতা খালিদ হোসেনি এক ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ‘তালিবানিদের ক্ষমতা দখল এক দুঃস্বপ্ন।’ ‘আমেরিকানরা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আফগানরা যে দুঃস্বপ্নের আশঙ্কা করছিল তা আমাদের চোখের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে।’

মাতৃস্নেহ বঞ্চিত বেচারি ‘কালো রবীন্দ্রনাথ’কে নিয়ে লিখতে গিয়ে কীভাবে যেন আফগানিস্তানের কালো তালিবান জমানায়, আফগান নাগরিকদের কালো দিনে ঢুকে পড়েছিলাম। আপাতত হুঁশ ফিরতে মনে হচ্ছে, কালো রবীন্দ্রনাথ, কালো তালিবান, কালো আচ্ছে দিন - চারপাশটাই বোধহয় ভীষণরকম কালোর গ্রাসে। শুধুমাত্র সীমানার বাধাটুকু উপড়ে দিলেই দেখা যাবে সর্বগ্রাসী এ কালোর গ্রাসে সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ। যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকায়। গাজা থেকে ঘানায়। হিমালয় থেকে কন্যাকুমারীতে। উড়ন্ত প্লেনের চাকা ধরে বাঁচতে চাওয়ার অসম্ভব চেষ্টা অথবা মাটি কামড়ে প্রতিরোধ। বাঁচার পথ খুঁজে নিক মানুষই।