৬০ বর্ষ ২৩ সংখ্যা / ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ / ৫ মাঘ, ১৪২৯
উদ্ধত লালঝান্ডার রক্তিম শপথে উত্তাল গ্রাম-নগর
পিছু হঠছে সাম্প্রদায়িক-দুর্নীতিবাজ অপশক্তি
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শাসন থেকে কেশপুর - ভয় ভাঙছে মানুষের। রাজ্যজুড়ে অপশাসন আর নজিরবিহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে উত্তাল বঞ্চিত মানুষ লালঝান্ডা আঁকড়ে ধরে সোচ্চার হয়ে দাবি জানাচ্ছেন প্রতিকারের। মানুষ নেমে এসেছেন পথে। গত অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে সিপিআই(এম)’র ডাকে শুরু হওয়া ‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও’ অভিযান কর্মসূচি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাংলার প্রতিটি প্রান্তে লালঝান্ডার প্রতিবাদী মিছিল আর মাঠ ছাপানো জমায়েতের জেরে আতঙ্কে দিশেহারা দশা চাপা দিতে নাজেহাল তৃণমূল কংগ্রেস। হুমকি দিয়ে, গুলি চালিয়ে, পুলিশ দিয়ে লাঠি চালিয়ে আর দমিয়ে রাখা বা ঘরমুখো করা যাচ্ছে না জবাবদিহি চাইতে আসা গরিব বঞ্চিত মানুষদের। প্রবল-বিক্ষোভের মুখে পড়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনীর মধ্যেও বাড়ছে ধন্দ আর আতঙ্ক। মরিয়া হয়ে তাঁরা চড়াও হয়ে গুলি চালাচ্ছে সিপিআই(এম) কর্মীর ওপর - ঘটছে এমন ঘটনাও। লালঝান্ডার এই সক্রিয়তায় সমস্যায় শুধু তৃণমূল নয়, তৃণমূল-বিজেপি উভয়েরই। ২৬ ডিসেম্বর দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পশ্চিমবঙ্গে আসা এবং তাঁর সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হাত ধরে তোলা গদগদ ভঙ্গির ছবিতে তৃণমূল-বিজেপি’র বোঝাপড়ার পাটিগণিত ফের একবার ধরা পড়তেই আরও ব্যুমেরাং হয়েছে পরিস্থিতি। এই দু’দলকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষ বিকল্প হিসেবে বামপন্থীদের বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করছেন তার আভাস ছিলই। এমনকী সন্ত্রাস দীর্ণ এলাকাগুলিতে একের পর এক ভয়ভাঙা সুবিশাল মিছিল থেকেও সেই মানসিক দৃঢ়তার স্বতঃস্ফূর্ত অবয়ব ক্রমশ স্পষ্টতর হচ্ছে।
১৩ জানুয়ারি সিপিআই(এম)’র ডাকে ২০১১ সাল থেকে কার্যত অবরুদ্ধ থাকা সন্ত্রাস কবলিত বারাসাত ২ নম্বর ব্লকের খড়িবাড়ি থেকে কলুপাড়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ধরে সুবিশাল মিছিল হয় লালঝান্ডার। মিছিল থেকে স্লোগান উঠেছে, গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও। জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার আহ্বানে এদিন খড়িবাড়ি থেকে এই মিছিল শুরু হয়।
মিছিলে অংশ নিয়েছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য পলাশ দাশ সহ গার্গী চ্যাটার্জি, সোমনাথ ভট্টাচার্য, মানস মুখার্জি, তন্ময় ভট্টাচার্য এবং এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মিছিলের শুরুতে মহম্মদ সেলিম বলেন, লুটের টাকা এঘাট ওঘাট ঘুরে কালীঘাটে জমা করতে রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস চালিয়ে গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষ জেগে উঠেছেন। লড়াই শুরু হয়েছে। এসব আর চলতে দেওয়া হবে না। মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ২০১১ সাল থেকে প্রতিশ্রুতির ধাপ্পা দিয়ে পঞ্চায়েত বিধানসভার লোকসভা থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দখলদারির কায়েম করেছে। পলাশ দাস বলেন, বছরের পর বছর মানুষের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হলেও লালঝান্ডা আছে মানুষের হৃদয়ে আজকের পদযাত্রায় তা প্রমাণ হলো।
বারাসত ব্লক ২-এর অন্তর্গত দাদপুর, ফলতি বেলিয়াঘাটা, শাসন, কীর্তিপুর এক এবং দুই, কেমিয়া খামারপাড়া, রোহান্ডা চণ্ডীপুর - এই আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলের মানুষ শামিল হয়েছিলেন এই দিনের পদযাত্রায়। এই ব্লকের সমস্ত বিরোধী কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পার্টির ডাকা কোনো কর্মসূচিতে যোগ দিতে গেলে কর্মসূচির আগে ও পরে নির্যাতন করা হয়। পাহারা দিয়ে মিছিলে যাওয়া আটকাতে রাস্তায় নেমেছিল তৃণমূলীরা। দোকানপাট জোর করে বন্ধ করে রাখা হয়। এদিন জমায়েত শুরু হতেই ভয় ভেঙে মানুষের ঢল নামে পদযাত্রায়। এদিনের সংক্ষিপ্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন আহমেদ আলি খান।
মিছিলের পরে শাসন সংলগ্ন এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে তৃণমূল স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা এবং সোনার হার ছিনতাই করে। এলাকার গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এলাকা জুড়ে রাহাজানির মুক্তাঞ্চল তৈরি করেছে দুষ্কৃতীরা।
একই পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর থেকে বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর সহ একের পর এক জেলায়। হাজারো মানুষ লালঝান্ডা নিয়ে পথে নেমে লিখছেন লড়াইয়ের নতুন দিনলিপি।