E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২৩ সংখ্যা / ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ / ৫ মাঘ, ১৪২৯

পুনরায় তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

কাকদ্বীপে দিনমজুর দম্পতিকে পুড়িয়ে মারার পুলিশি তদন্ত বাতিল


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ তৃণমূলী জমানায় জঘন্য বর্বরোচিত রাজ‍‌নৈতিক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম ২০১৮ সালের কাকদ্বীপের বুধাখালির সিপিআই(এম) সমর্থক দম্পতিকে পুড়িয়ে মারার জঘন্যতম ঘটনা। এই তদন্তকে পরিকল্পিতভাবে বিপথে চালনা করার পুলিশি অপচেষ্টাকে বানচাল করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ১৬ জানুয়ারি এই মামলায় বিচারপতি রাজশেখর মানথা পাঁচ বছর ধরে চলা পুলিশের এই তদন্তকে বাতিল করে দিয়ে আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেনকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে এই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। সম্পূর্ণ নতুনভাবে স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এরাজ্যে তৃণমূল শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী কর্মীদের উপর একের পর এক নৃশংস আক্রমণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি ঘটনাতেই পুলিশ প্রশাসন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসকদলকে আড়াল করে কুৎসিত নজির তৈরি করেছে। তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ ২০১৮ সালের ১৩ মে’র কাকদ্বীপের বুধাখালি পঞ্চায়েতের ঘটনা। এই পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কাছাড়িবাড়ি গ্রামে সিপিআই(এম) সমর্থক দম্পতি দেবপ্রসাদ দাস ও উষারানি দাসকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা।

তৃণমূলী জমানায় রাজ্যের বুকে সাম্প্রতিককালের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকেও ‘বৈধতা’ দিয়েছিল প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন। তৎকালীন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা নবান্নে বসে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মতো বর্বরোচিত ঘটনাকে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে শর্ট সার্কিটে পুড়ে মৃত্যু বলে বোঝাতে চেয়েছিলেন। তৃণমূল সরকারের নির্দেশে সর্বোচ্চ পুলিশ আধিকারিকদের মদতে প্রকৃত হত্যাকারীদের বাঁচাতে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছিল পুলিশ। এই উদ্দেশ্যেই চার্জশিট দাখিল করেছিল পুলিশ। মূল অপরাধীদের আড়াল করে অন্য কয়েকজনকে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এই মিথ্যা মামলার ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। পুলিশের পাঁচ বছর ধরে চলা তদন্তকে বাতিল করে পুনরায় স্বাধীনভাবে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের মাত্র কয়েকদিন আগে বুধাখালির দরিদ্র দিনমজুর দেবপ্রসাদ দাস ও উষারানি দাসকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে লালঝান্ডার অস্তিত্বকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল শাসকদলের দুষ্কৃতীরা। এই গরিব দম্পতি নিদারুণ কষ্টের মধ্যে জীবনযাত্রা চালিয়েও জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আঁকড়ে ছিলেন লালঝান্ডাকে। তখন তাঁদের একমাত্র সন্তান দীপঙ্করকে দেখতে হয়েছিল বাবা-মার দগ্ধ দেহ। সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল আইনি লড়াই। কালের অগ্রগতিতে সেদিনের সেই সন্তান দীপঙ্কর দাস আজ আইনের স্নাতক। ১৬ জানুয়ারি শুনানির সময়েও কালো কোট পরে আদালতে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এই তথ্য বিচারপতিকে জানান আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জি।

আদালতের এই রায় সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ি বলেছেন, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে অনেক বড়ো জয় পাওয়া গেল ঠিকই, কিন্তু লড়াই শেষ হলো না। নজরদারি চলবে নতুন তদন্তের গতিপ্রকৃতির ওপর। হত্যাকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবেই।