৬০ বর্ষ ২৩ সংখ্যা / ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ / ৫ মাঘ, ১৪২৯
বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রয়াণ দিবসে কমরেড জ্যোতি বসুকে স্মরণ
জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন বিমান বসু।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন ও গণ আন্দোলনের অগ্রগণ্য নেতা কমরেড জ্যোতি বসুকে তাঁর ১৪তম প্রয়াণ দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই উপলক্ষে মূল অনুষ্ঠানটি হয় জ্যোতি বসু নগরে (নিউটাউন)। এখানে জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভার শিরোনাম ছিল - ‘পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা-জ্যোতি বসুর ভাবনা-আজকের দুরবস্থা ও ভবিষ্যতের রূপরেখা।’ সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য, রাজ্যের প্রাক্তন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সূর্য মিশ্র এবং সিপিআই(এম)-র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ছিলেন আলোচক। সভা পরিচালনা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
এই আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন,বামপন্থা মানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। মানুষের অংশীদারী। বিকল্প ভাবনা রূপায়ণের দিশা। মানুষ জাগছেন। মানুষের ঐক্যকে দৃঢ় রাখতে হবে। আমরা ভাঙা বুকের পাঁজর দিয়ে নয়া বাংলা গড়ব।
প্রাক্কথনে বিমান বসু বলেন, ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হওয়ার পর জ্যোতি বসু বলেছিলেন - আমরা রাইটার্স থেকে সরকার চালাব না। এ রাজ্যের পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা, ভোটাধিকার ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়েছিল জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে, ভাবনায়। বামফ্রন্ট সরকারের মানুষের আরও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার দৃষ্টিভঙ্গির ফল হিসেবে। তারপর তা সারা দেশে চালু করা হয়। বিমান বসু জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ গড়ে তোলার জন্য অর্থ সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে আমরা অগ্রসর হতে চাইছি। আমাদের অর্থবল কম। আপনাদের সাহায্য চাইছি।
সূর্য মিশ্র তাঁর বক্তব্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এবং বামফ্রন্ট সরকার পরিচালনায় জ্যোতি বসুর ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, কী করতে হবে বুঝতে হলে জ্যোতি বসুর কাছে ফিরতে হবে। তিনি কাজ করেছেন পার্টির সম্পাদক হিসেবে, পার্টি মুখপত্রের সম্পাদক হিসেবে, শ্রমিকদের মধ্যে, তেভাগা আন্দোলন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। জ্যোতি বসু বিরোধী দলনেতা ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন - তাই তাঁকে শুধু একটা দিক থেকে বিচার করলে হবে না। সংবিধান সংশোধন হবার আগে এখানে পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ, আদিবাসী-তপশিলিদের জন্য সংরক্ষণ, নির্দিষ্ট সময়ে পঞ্চায়েত ভোট করা এসব তাঁর সময়ে হয়েছে। আমাদের সাফল্যের বিষয়গুলি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের বিকল্প নিয়ে পৌঁছাতে হবে মানুষের কাছে। কিন্তু আমাদের বিকল্পের কথার ভিত্তিতেই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সরকার আমাদের নেই। কীভাবে পঞ্চায়েত, পৌরসভা চালাতে পারি এই পরিস্থিতিতে? তাহেরপুরের উদাহরণকে তুলে ধরতে হবে। সরকার, পঞ্চায়েত, পৌরসভায় না থাকা সত্ত্বেও অতিমারীর সময় কীভাবে কাজ করেছি, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। পথ খুঁজতে হবে। মানুষের উপর আস্থা রাখতে হবে।
মহম্মদ সেলিম বলেন, স্বাধীন ভারতে কোন সমাজ ব্যবস্থা হবে, কোথায় দাঁড়িয়ে শোষণ মুক্তি ঘটবে, কীভাবে তা বাস্তবায়িত করতে হবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সেসব নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসার পরই ভেবেছিলেন জ্যোতি বসু। জাত, পাত, ভাষা, অঞ্চল ভেদে মানুষের মধ্যে যে ঐক্য - তা গড়ে তোলার জন্য তিনি তাঁর গোটা জীবন কমিউনিস্ট পার্টিতে অতিবাহিত করেছেন। দেশের প্রান্তিক ও নিপীড়িত অংশের মানুষের কণ্ঠস্বর হবার চেষ্টা করেছিলেন জ্যোতি বসু। সেই লক্ষ্যেই ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হবার পর নির্বাচিত পঞ্চায়েত তৈরি হয়।
বামপন্থা মানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। মানুষের হাতে আরও ক্ষমতা। মানুষ ভরসা চায়। সাহস চায়। সেই ভরসা, সাহস জোগানোর দায়িত্ব বামপন্থীদের নিতে হয়। আমরা সেই দায়িত্ব নেব।
এদিনের আলোচনাসভার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেত্রী রেখা গোস্বামী, পলাশ দাশ, মৃণাল চক্রবর্তী, সুখেন্দু পাণিগ্রাহী, অপর্ণা গুপ্ত প্রমুখ।
এদিন জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা দুটি খসড়া গবেষণাপত্র তুলে দেন সেন্টারের চেয়ারম্যান বিমান বসুর হাতে। খসড়া দুটির বিষয়বস্তু হলো - মূলত গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি, মূলত কৃষি, শিল্প এবং বেকারির পরিস্থিতি কোথায় পৌঁছেছে তার বিশ্লেষণ এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার বর্তমান হাল। ‘স্টেট অব বেঙ্গল ইকনমি’ নামের প্রথম খসড়াটি বিমান বসুর হাতে তুলে দেন অর্থনীতিবিদ ঈশিতা মুখার্জি। অন্য খসড়াটি তরুণ গবেষকদের প্রতিনিধি হিসাবে পৃথ্বী বণিক চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেন।