৫৯ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২০ মে, ২০২২ / ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদে জেলায় জেলায় মিছিল-সভা
অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সোনারপুরে মিছিল।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী, মানুষ-মারা নীতির পরিণতিতে আক্রান্ত ও বিপর্যস্ত মানুষ আজ পথে নেমেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সোচ্চার হচ্ছেন। সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার প্রতিবাদ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে সিপিআই(এম)-র ডাকে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি নানা কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে।
এই কর্মসূচিগুলির মধ্য দিয়ে তৃণমূলের লুঠেরাদের হাত থেকে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে মুক্ত করার আহ্বানও ধ্বনিত হয়েছে। এই সমস্ত কর্মসূচিতেই অগণিত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাল পতাকা নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। এই কর্মসূচিগুলিতে মানুষ তৃণমূল দুর্বৃত্তদের ধর্ষণ, খুনের মতো অপরাধের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।
ডায়মন্ডহারবার-সোনারপুরে মিছিল
এই সমস্ত ইস্যুগুলি নিয়েই ১৫ মে সিপিআই(এম)-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির ডাকে ডায়মন্ডহারবার এবং সোনারপুরে দুটি সুবিশাল প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়েছে। ডায়মন্ডহারবার রবীন্দ্রভবনের সামনে থেকে ডায়মন্ডহারবার স্টেশন পর্যন্ত মিছিলে অংশ নেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক শমীক লাহিড়ী, পার্টি নেতা রতন বাগচী, রাম দাস, প্রতীক উর রহমান, প্রভাত চৌধুরী, দেবাশিস দে, শাহনওয়াজ মোকামি প্রমুখ।
অপরদিকে রাজপুরে শহিদ দাশুমতি ভবনের সামনে থেকে সোনারপুর মোড় পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলে ছিলেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, পার্টি নেতা রাহুল ঘোষ, তুষার ঘোষ, কান্তি গাঙ্গুলি, অলোক ভট্টাচার্য, রামশংকর হালদার, রুহুল আমিন গাজি, অনির্বাণ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
ডায়মন্ডহারবারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে মানুষের দাবি নিয়ে লড়াই হবে। তৃণমূল এবং বিজেপি-বিরোধী সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে। তৃণমূলের হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে হবে। তৃণমূলের লুঠেরাদের হাত থেকে পঞ্চায়েতকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
তিনি বলেন, মানুষের জন্য, গ্রামের উন্নয়নের জন্য বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছিল। এখন পঞ্চায়েতে লুঠেরাদের রাজত্ব চলছে। রেগার টাকা, ঘরের টাকা, আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাপ্য টাকা যাদের পাওয়ার কথা, তাঁদের না দিয়ে আত্মসাৎ করছে তৃণমূলের নেতারা। তোলাবাজি চলছে।
আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়তে পারে তারাই, যাদের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আদর্শ আছে, নীতি আছে। বিজেপি’র সঙ্গে বামপন্থীদেরই আদর্শগত লড়াই হবে।
এদিন ডায়মন্ডহারবারে রবীন্দ্রভবনে আয়োজিত একটি সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, সারা দুনিয়া এবং দেশের সাথে সাথে আমাদের রাজ্যেও দক্ষিণপন্থী শক্তির বিপদ বাড়ছে। মানুষের অধিকার ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের কাঠামো ভাঙছে। সংসদীয় গণতন্ত্র শেষ করতে চাইছে। মোদি-অমিত শাহ দেশের সংসদকে শেষ করছেন, আর এরাজ্যে গণতন্ত্রকে শেষ করছেন মমতা ব্যানার্জি। স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ ধর্ম, জাত, ভাষার নামে মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে চাইছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে লড়াই দক্ষিণপন্থার সঙ্গে বামপন্থীদের। এজন্যই শক্তিশালী পার্টি গড়ে তুলতে হবে। মানুষের সাথে নিবিড় সংযোগ গড়ে তুলে স্থানীয় ইস্যুতে আন্দোলন করতে হবে। গণআন্দোলনকে বিকশিত করতে হবে।
এই সভায় বক্তব্য রাখেন শমীক লাহিড়ী, প্রভাত চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন রতন বাগচী।
সোনারপুরে দাশুমতি ভবনে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন সূর্য মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী এবং রাহুল ঘোষ। সভাপতিত্ব করেন তুষার ঘোষ।
আমলাশুলিতে দৃপ্ত মিছিল-সভা
জঙ্গলমহলের মানুষের রুটি-রুজি ও জীবন-জীবিকার নানা সমস্যা, পানীয় জলের সংকট, পঞ্চায়েতে গরিব মানুষদের উন্নয়নের টাকা নয়ছয় করা সহ পঞ্চায়েতকে শাসকদলের লুঠের আখড়ায় পরিণত করার বিরুদ্ধে এবন এর প্রতিকারের দাবিতে ১৪ মে জঙ্গলমহলের আমলাশুলিতে লালঝাণ্ডার দৃপ্ত মিছিল সংগঠিত হয়েছে। এদিন প্রায় ৬ কিলোমিটার পথজুড়ে লাল পতাকার মিছিলে শামিল ছিলেন সংলগ্ন এলকার আদিবাসী সহ বিভিন্ন অংশের মানুষ। মিছিল শেষে আমলাশুলি গঞ্জে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সভায় পার্টির জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ মা মাটি মানুষের সরকারের নামে তৃণমূলের সীমাহীন দুর্নীতি, লুঠের কারবার, অন্যদিকে পানীয় জলের হাহাকার, জঙ্গলমহল জুড়ে মজুরি হ্রাস, একশো দিনের মজুরির টাকা চুরি, জঙ্গলের গাছ কেটে পাচার, বালি পাচার সহ পঞ্চায়েত দখল করে লুঠের কারবার ইত্যাদি বিভিন্ন অপকীর্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করার। তিনি গ্রামের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জোট বাঁধুন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ঘেরাও করে প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত জেহাদ ঘোষণা করুন, চোরদের জেলে ভরার লড়াই জারি রাখুন। লালঝান্ডা আপনাদের সাথি হয়েই সেই লড়াইয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, এই ব্লকেই মাওবাদী নামধারী তৃণমূল কংগ্রস ৩৯ জন পার্টি কমরেডকে খুন করেছে। কিন্তু মানুষ এখন বলছে চোরদের রাজত্ব চলছে। সিপিআই(এম)-ই ভালো ছিল। এখন জঙ্গলমহলের শত শত মানুষ লালঝান্ডা কাঁধে নিয়ে লড়াইতে শামিল হচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ খতম না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই আরও তীব্র হবে।
সুশান্ত ঘোষ বলেন, গত একমাসে জেলায় নয়টি ধর্ষণ সহ দু’জনকে খুন করা হয়েছে। এমন ঘটনায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য এবং বিজেপি নেতা যুক্ত। দুটি দলই এক। এদের হটাতে না পারলে মানুষের দুর্দশা কমবে না।
এদিনের সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা কমিটির সদস্য প্রসেনজিৎ মুদি। মিছিলে অংশ নেন পার্টি নেতা কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে, বিকাশ লোহার। সভাপতিত্ব করেন বলাই দাস।