E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২০ মে, ২০২২ / ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা অটুট রাখতে এবং কাজের দাবির সংগ্রামে ব্যাপকতম যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করো

ডিওয়াইএফআই একাদশ সর্বভারতীয় সম্মেলনের আহ্বান

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়


সম্মেলনের পতাকা উত্তোলন করছেন ডিওয়াইএফআই-র সর্বভারতীয় সভাপতি মহম্মদ রিয়াজ।

এ দেশে প্রতিদিন বিপন্ন হচ্ছে গণতন্ত্র। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে সংবিধানের মূল নীতি সমূহ। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেরুকরণের লক্ষ্যে কেন্দ্রের বিজেপি-আরএসএস সরকারের দ্বারা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের ধারণা আক্রান্ত। দেশের প্রজাতান্ত্রিক কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রাখার লড়াইয়ে ও গণ আন্দোলনে ডিওয়াইএফআই অগ্রণী সংগঠন হিসেবে আরও বেশি যুবদের শামিল করবে - এই আহ্বান জানিয়ে সল্টলেকের দিয়োগো মারাদোনা নগরে ঐকতান পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি পরিষদে (ইজেডসিসি) অনুষ্ঠিত হলো ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের ১১তম সর্বভারতীয় সম্মেলন।

সম্মেলন থেকে ৭৭ জনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়েছে। সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এ এ রহিম (কেরালা)। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য (পশ্চিমবঙ্গ), কোষাধ্যক্ষ সঞ্জীব কুমার (দিল্লি)। সম্মেলন থেকে ২৮টি প্রস্তাব পাশ হয়। প্রতিনিধি এবং দর্শক মিলিয়ে দেশের ২২টি রাজ্য থেকে ৪৫০ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তিনটি বইয়ের উদ্বোধন করা হয় সম্মেলন মঞ্চে।

১৩‍‌ মে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিদের স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান ও গানের সুরে কার্যত ঐকতানের অনুরণন ছিল ইজেডসিসি প্রাঙ্গণে সকাল ৯টা থেকেই। প্রবাদপ্রতিম যুবনেতা কমরেড দীনেশ মজুমদার, হাতে চে গুয়েভেরার উল্কি আঁকা মারাদোনার ছবি লাগানো রাস্তার দু’লেন জোড়া সুদৃশ্য তোরণ এবং সংগঠনের লাল তারা সংবলিত সাদা পতাকায় ছাওয়া আইল্যান্ড। তৃণমূল আমলে কলকাতায় ছাত্র-যুবদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে পুলিশি বর্বরতায় দমনের খণ্ড চিত্রের কোলাজ সকালের উদ্বোধনী কার্যক্রমকে অন্য মাত্রা দেয়।

সম্মেলনের উদ্বোধন পর্বের শুরুতেই রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমরা নূতন যৌবনেরই দূত’ এবং তারপর ফয়েজ আহমদ ফয়েজের ‘হাম দেখেঙ্গে’ গানের সঙ্গে কোরিওগ্রাফি উপস্থাপিত হয়।

সম্মেলনের পতাকা উত্তোলন করেন ডিওয়াইএফআই-র সর্বভারতীয় সভাপতি মহম্মদ রিয়াজ। উপস্থিত ছিলেন সারাভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক এবং ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সম্পাদক হান্নান মোল্লা, সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা নীলোৎপল বসু, প্রাক্তন যুবনেতা এম এ বেবি, সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মরিয়াম ধাওয়ালে, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চিত্র পরিচালক শশীকুমার, অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখার্জি প্রমুখ। এরপর শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নেতৃবৃন্দ ও সম্মেলনের প্রতিনিধিরা।

প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বের শুরুতে সম্মেলন পরিচালনার জন্য এ রহিম, মীনাক্ষী মুখার্জি, বালাভেলাম, পলাশ ভৌমিক, সঞ্জয় পাশোয়ান, কুমুদ দেববর্মণকে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলী গঠিত হয়। সম্মেলনে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন এ এ রহিম এবং বালাভেলাম। ডিওয়াইএফআই-এর গত সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ জন যুবকর্মী শহিদ হয়েছেন। কেরালার মিথিলাজ, হক মহম্মদ, পি ইউ শানুপ এবং আব্দুল রহমান আউফ এই পর্বে শহিদ হয়েছেন। পশ্চিমবাংলায় এসময় শহিদ হয়েছেন মইদুল মিদ্যা এবং ত্রিপুরায় সুশীতল দেব বর্মন। তামিলনাড়ুতে এই সময় শহিদ হয়েছেন এম অশোক।

সম্মেলন শুরুর পর্বে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শহিদ মইদুল মিদ্যার মা, কেরালার শহিদ হক মহম্মদের বাবা, কেরালার অপর শহিদ মিথিলাজের বড় ভাই এবং ত্রিপুরার কমরেড সুশীতল দেববর্মণের মা।

শহিদ পরিবারের প্রতি সহমর্মিতায় মৌন হয়ে যায় গোটা প্রেক্ষাগৃহ। তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বার্তা

কলকাতা ডিওয়াইএফআই ১১তম সর্বভারতীয় যুব সম্মেলনে বার্তা পাঠালেন সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাঠানো অডিও বার্তা পাঠ করেন ডিওয়াইএফআই’র সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখার্জি। ওই বার্তায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘বর্তমানে আমাদের রাজ্যে এবং দেশে যে জনবিরোধী ও দমনপীড়নের সরকার চলছে তা প্রতিহত করতে পারে একমাত্র বামপন্থী আন্দোলন। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে সমস্ত প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে পশ্চিমবঙ্গের ডিওয়াইএফআই কর্মীরা রাজ্যর সর্বত্র প্রতিদিন আন্দোলন সংগঠিত করছেন। তাঁদের সংগ্রামকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন এবং ডিওয়াইএফআই’র এই সম্মেলনের সমস্ত সদস্যবৃন্দকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।’’

শশীকুমারের উদ্বোধনী বক্তব্য

সম্মেলনের উদ্বোধন করে শশীকুমার বলেন ডিওয়াইএফআই’র ১১তম সর্বভারতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করে বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং চিত্রপরিচালক শশীকুমার বলেন, উন্নততর পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য যে মানবিক মূল্যবোধ এবং নীতি রয়েছে তা আজ চ্যালেঞ্জের মুখে। এই পরিস্থিতি আগে কখনও ছিল না। দেশের বিজেপি সরকারকে দেখে মনে হচ্ছে গণতন্ত্র নয়, চলছে নির্বাচনী স্বৈরাচার। গণতন্ত্র শুধু নয়, দেশে সংবিধানও প্রতিদিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। ডিওয়াইএফআই আমাদের কাছে সংগ্রাম সাহস, নিশ্চয়তা এবং আশার প্রতীক। এখানে শুরুতে যে শহিদদের কথা বলা হলো তাঁরা সাম্য, ন্যায়, ধর্মনিরপেক্ষতা, সুসংহত দেশের জন্য লড়াই করেছেন। তাঁদের ত্যাগ এবং অনেক রক্ত ঝরিয়ে আমরা গণতন্ত্র অর্জন করেছি। ভারতের ধারণা, যা সাধারণভাবে পোষণ করা হয় সেখানে সংখ্যাগত গরিষ্ঠতা নয়, ক্ষমতার বিভাজনের ধারণা সঙ্গত। সেই ধারণাই আজ সমূলে আক্রান্ত। গণতন্ত্রের এই দীপশিখা আমাদের জ্বালিয়ে রাখতে হবে। এটা ডিওয়াইএফআই’র সামনেও চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, দার্শনিক মন্টেস্কু বলেছিলেন ক্ষমতা বিভাজনসাধ্য। বিচার বিভাগ, আইনসভা, প্রশাসনের মধ্যে তা হবে। আমাদের সংবিধানে এই ক্ষমতার বিভাজন বিষয়টি হলো মূলগত বৈশিষ্ট্য। গোটা বিষয়টা চলে পারস্পরিক সংবরণ এবং সমন্বয়ের ভিত্তিতে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এভাবেই অর্থপূর্ণ এবং সজীব থাকে। কিন্তু এখন প্রশাসন বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকার অতি সক্রিয়‌তা দেখাচ্ছে, যা আইনসভাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। চর্চা-আলোচনা ছাড়াই সংসদে বিল পাশ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আইনসভা কখনই প্রশাসনের ইশারায় চলার কথা নয়। আইনসভার ইচ্ছাকেই রূপ দেওয়ার কথা প্রশাসনের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে না। বিচারবিভাগকে পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রদ্রোহের আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। বয়স্ক মানুষ এমনকী তরুণ যাঁরা সাধারণ বোধের কথা বলছেন তাঁদেরও জেলে পুরে রাখা হচ্ছে। বিনোদ দুয়া থেকে সিদ্দিক কাপ্পান, উমর খালিদ, জেএনইউ’র ছাত্রছাত্রীদের যাঁরা কোভিডে সরকারের ভূমিকা থেকে কৃষক আন্দোলন, হাথরসের দলিত মহিলার ধর্ষণ ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ে মতামত প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে। কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গ করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উপনিবেশ আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রয়োগ করে।

তিনি বলেন, ২০১৪ থেকে এই আইনে দেশের প্রায় ১৩ হাজার মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যার ষাট থেকে সত্তর শতাংশ মামলা গত দু-এক বছরে চালু করা হয়েছে। ক্ষমতা এবং আইনের এই প্রয়োগে সংবিধান আক্রান্ত। পারস্পরিক সংবরণ এবং সমন্বয় থাকছে না। মোবাইল ব্যবহার করলেই সেটা চলে আসছে নজরদারির আওতায়। মোবাইলে কোনো বার্তা লিখে রেখে দিয়ে না পাঠালেও সেটা পড়া হচ্ছে এবং আমি কী করছি তা নয়, সেই মেসেজ পড়ে আমার উদ্দেশ্য কী সেটা সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত করে ফেলা হচ্ছে। এর থেকে বিরোধী দলের নেতা, সমাজকর্মী এমনকী ডাক্তার প্রমুখ কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। এভাবেই গণতন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘পেগাসাস’ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় এক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যা বলা হলো তাতে এটা দাঁড়ালো যে, সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার মতপ্রকাশের অধিকার, থেকে প্রশাসন বঞ্চিত করতে পারে না দেশের কোনো নাগরিককে। সাংবাদিকের খবর পাওয়ার উৎস গোপন রাখারও অধিকার আছে একথা বলল সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়।

তিনি বলেন, কিন্তু এই সরকারের চামড়া এতটাই মোটা যে, তারা তাদের অ্যাজেন্ডা চালু রাখতে কসুর করছে না। বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্থার কার্যকারিতাকে উপহাস করা হচ্ছে। সংবিধানকে ভুলুণ্ঠিত করা হচ্ছে এভাবেই। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু সংখ্যাগুরুবাদ যখন মেরুকরণকে আশ্রয় করে রাজনীতিগতভাবে, তখন সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। এটা‍‌ই চলছে এখন ভারতে। দেশের যুব সমাজ এবং ডিওয়াইএফআই’র মতো সংগঠন নীরব দর্শক হয়ে এসব দেখবে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। সেটাই এখানে এখন আরও বিপজ্জনকভাবে প্রয়ো‍গ করা হচ্ছে জরুরি অবস্থা জারি না করেই। শুধু রাষ্ট্রদ্রোহের আইন নয়, রয়েছে ইউএপিএ’র মতো আরও বিভিন্ন দানবিক আইন যা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এই আইনগুলোও যথেষ্ট ওদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য।

তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে একটি মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, সংবিধানের ১৪, ১৯, ২৯ ধারা যা সমতা মতপ্রকাশের অধিকার, জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারকে যদি অটুট না রাখা যায় তাহলে সংবিধান অক্ষুণ্ণ থাকবে না। এই ধারাগুলোই এ সময়ে বিপন্ন। কালবুর্গি থেকে গৌরী লঙ্কেশ এর শিকার।

শশীকুমার বলেন, ক্ষমতার বিভাজন আরএসএস-বিজেপি’র সমস্যা, মৌলিক অধিকারসমূহও ওদের কাছে সমস্যা। আমরা বলছি মূল্যবৃদ্ধির কথা, এদেশে ধনকুবেরদের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা, গরিব ও সাধারণ মানুষের রোজগার কমে যাওয়ার কথা। অথচ এ‍‌গুলোর কোনোটাই সরকারের কাছে ইস্যু নয়, ইস্যু শুধুমাত্র ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক মেরুকরণ। প্রজাতান্ত্রিক কাঠামো, সংবিধান বর্ণিত ভারতের ধারণা এসব নিয়েই তাই ভাবা দরকার, লড়াই করা দরকার। আমি জানি এই লড়াইয়ে উদাহরণযোগ্য ভূমিকা নেবে ডিওয়াইএফআই। দেশে বামপন্থীদের গণআন্দোলন যেভাবে এগোচ্ছে আমি নিশ্চিত ইতিবাচক পরিবর্তন হবেই। সেই লড়াইয়ের অন্যতম অগ্রণী সংগঠন হিসেবে ডিওয়াইএফআই সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার পথেই লড়াই জারি রাখবে।

অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতির বক্তব্য

অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী সম্মেলনের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে আমাদের রাজ্য কৃষি, শিক্ষা, কৃষ্টি, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছিল। এমনকী এই সম্মেলনস্থলটিও বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্যের অন্যতম দৃষ্টান্ত।

তিনি বর্তমান তৃণমূল সরকারের অপশাসনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা থেকে কৃষ্টি সর্বত্রই সংকট। এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিদিনই মানুষের কণ্ঠস্বর যাতে শোনা যায় তার লক্ষ্যে হামলা-হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে ল‌ড়াইয়ে আছি। আক্রমণ-অত্যাচারের মোকাবিলা করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এসে পৌঁছেছি এই সম্মেলনের সন্ধিক্ষণে। আমরা দিয়েগো মারাদোনার নামে এই সম্মেলন স্থলের নামকরণ করেছি যিনি শুধু ফুটবলই বাঁ পায়েই খেলতেন না, রাজনৈতিক বিশ্বাসেও ছিলেন বামপন্থী।

তিনি ডিওয়াইএফআই’র স্লোগান, ‘সমাজতন্ত্রই ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যৎ আমাদের’ উচ্চারণ করে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে বলেন, সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী লড়াই আরও তীব্র হোক। ডিওয়াইএফআই’র ধর্মনিরপেক্ষ ভারত গড়ার লড়াই যেখানে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সবাই সমানভাবে পাক তা আরও শক্তি অর্জন করুক। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। সমাজতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।

অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদকের বক্তব্য

অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক প্রাক্তন ছাত্র-যুবনেতা পলাশ দাস সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই সম্মেলনের প্রচার উপলক্ষে রাজ্যজুড়ে পথসভা, সেমিনার সহ পরিবেশ রক্ষার লড়াইকে জোরদার করতে এক হাজার ম্যানগ্রোভের চারা পোঁতা হয়েছে। আয়োজিত হয়েছে লিঙ্গ বৈষম্যের অবসানের বিরোধিতায় যুবক-যুবতীদের মিলিত ফুটবল ম্যাচ। এর সব কিছুই করতে হয়েছে খুব কম সময়ের মধ্যে। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন সম্ভব হয়েছে। শাসক তৃণমূলের পক্ষ থে‍‌কে সম্মেলনের আয়োজনে নানা অসহযোগিতার বিষয়ে তিনি জানান, হলটির সজ্জার জন্য প্রকাশ্য সমাবেশের দিন রাত্রি ৯টায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে সংগঠকদের চাপে ফেলতে। তৃণমূলের সন্ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে এবং মোদির আরএসএস’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা আমাদের বাড়ছে। সাফল্য আসবেই - আমরা আত্মবিশ্বাসী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংবিধানের মূল নীতিগুলি রক্ষা এবং যুবদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের দিশা উঠে আসুক এই সম্মেলন থেকে।

সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের অভিনন্দন

সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে বিজেপি-আরএসএস সরকারের অপশাসনের সম্পর্কে বলেন, এই শক্তিকে পরাস্ত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি এই বর্বর জমানার একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্পের লক্ষ্যে আমাদের লড়াই। এই সম্মেলন আরও শক্তিশালী সংগঠন গড়ার দিশা দেবে এবং অন্যান্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও শক্তি, যারা এই পরিবর্তনের লক্ষ্যে লড়াই করছে, তাদের নেতৃত্ব দেবে। দু’দিনের ভারতব্যাপী শিল্প ধর্মঘটে আমরা শুধু কাজের জন্য এবং আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অর্জিত অধিকার, যা এখন প্রবল আক্রমণের মুখে তা রক্ষার জন্য লড়াই করিনি, আমরা লড়াই করছি দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষার জন্যও - যা আমাদের স্লোগান ছিল।

তিনি বলেন, দেশের এই ফ্যাসিস্ত জমানায় যে পদ্ধতিতে এদের কর্মসূচি চাপিয়ে দেওয়া চলছে, তার জেরে দেশের বেকারত্ব অত্যন্ত আশঙ্কাজনক উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারতীয় অর্থনীতির কর্মসংস্থান করার ক্ষমতাকেই এরা ধ্বংস করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফিনান্স পুঁজির নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের নির্দেশে আর্থিক নীতির দ্বারা এ‍‌ই ধ্বংসের কাজ চলছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে এখন পুরনো মাল বেচার ঠিকানায় পরিণত করা হচ্ছে। শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। মোদি সরকার আমাদের সেই দিকেই নিয়ে যেতে চাইছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই সরকারকে, এই শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব। ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই কর্মহ্রাসের বিষয়টি, কাজের সুযোগ সৃষ্টির প্রশ্নে ভারতীয় অর্থনীতির বেহাল দশার পরিস্থিত এবং স্বৈরাচারী সরকারের ধ্বংসাত্মক ভূমিকার বিষয়গুলি যুক্ত করে ভাবুক। কারণ এটা পরস্পর সম্পর্কিত একটি বিষয়। যৌথ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ডিওয়াইএফআই-কে পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

এআইকেএস’র সম্পাদক হান্নান মোল্লার অভিনন্দন

সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার পক্ষ থেকে সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, ডিওয়াইএফআই দেশের বিপ্লবী যুবদের প্রজন্মভিত্তিক সংগঠন, যাদের ওপর দেশের আগামী লড়াই এবং প্রগতির ভার ন্যস্ত। সমাজ বদলের লক্ষ্যে এই সংগঠন সম্মেলন থেকে নতুন দিশা অর্জন করবে এ বিষয়ে আমাদের আস্থা রয়েছে। আজ কোনো স্লোগান নয়, দেশকে বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, আমি ২৬ বছর যুব আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি কৃষক সভার কাজ করছি। কৃষি এখন গভীর সংকটের মুখে, যা দেশের সরকারের তৈরি। গোটা কৃষি ব্যবস্থা মোদি সরকার তুলে দিচ্ছে আদানি-আম্বানিদের হাতে।

ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের জেরে মোদী সরকারের মাথানত করার বিষয় প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করেই সমাধান বার করতে হবে। ভিক্ষা করে নয়। নরেন্দ্র মোদি কর্পোরেট এবং হিন্দুত্ব বিভাজন নীতির মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। দেশে কৃষক মজদুর একতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। এই দুই মিলিত শক্তির জেরে দেশে ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন তৈরি হবে। এই ঐক্য থেকেই সমাজ বদলের প্রথম ধাপ সূচিত হবে। এই সংগঠনের যুবদের তার উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। ডিওয়াইএফআই’র নওজওয়ানরা বিপ্লবের বাণীরই বাহক। তাই এই সম্মেলন থেকে নতুন ভাবনার ভিত্তিতে সেই গণ-আন্দোলনের বার্তা গ্রামে গ্রামে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। পরাস্ত করতে হবে নরেন্দ্র মোদির সরকারকে।

সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সম্পাদক মরিয়ম ধাওয়ালের বক্তব্য

সম্মেলনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সম্পাদক মরিয়ম ধাওয়ালে বলেন, আপনারা শোষণমুক্ত, অন্যায়মুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্নের লক্ষে এই সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন তার জন্য অভিনন্দন। অনেক ত্যাগ, আত্মবলিদানের ঐতিহ্য রয়েছে আপনাদের। আমাদের সবাইকে দেশের মানুষের শোষণমুক্তির ল‍ক্ষ্যে নেওয়া শপথ পুনুরুচ্চারণ এবং লড়াইয়ের পথ খুঁজে বার করতে হবে। এ লড়াই আমাদের লড়তে হচ্ছে সেই শক্তির বিরুদ্ধে যারা দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি সঙ্কটময়। বিজেপি-আরএসএস জাতি-ধর্ম ও ভাষার নামে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে। অন্যদিকে মোদি সরকার সব বেচে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। আমরা হিন্দু, মুসলমান, দলিত সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলেছি। স্বৈরাচারী সরকারের সমস্ত পরিকাঠামো বদলে দিতেই এআইডিডব্লউএ এবং ডিওয়াইএফআই একসঙ্গে র‍‌য়েছে লড়াইয়ের ময়দানে।

এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের বক্তব্য

সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, নয়া শিক্ষানীতি জনবিরোধী। সর্বজনীন শিক্ষার পথ থেকে সরছে বিজেপি-আরএসএস’র সরকার। সকলের জন্য শিক্ষা না থাকলে ছাত্র-যুবরা চাকরি চাইতে পার‍‌বে না। এটাই তাদের লক্ষ্য। এর বিরুদ্ধে আমরা ছাত্র-যুবরা পথে নেমে আরও তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করব।

খসড়া প্রস্তাব পেশ

সম্মেলনে প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বে সংগঠনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখার্জি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটময়। নতুন কাজ নেই উপরন্তু কর্মহীনতা বেড়েছে। বৈষম্য বেড়েছে মানুষে মানুষে। এই সময় আমাদের নজরে এসেছে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি এবং সমাজতান্ত্রিক শিবিরের দেশগুলির অতিমারী নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। নয়া উদারবাদের এই পর্বে যেমন দুনিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হচ্ছে তেমনই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাড়ছে। কোভিড মহামারী দেশ এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দেশে একদিকে আরএসএস-বিজেপি সংবিধানের মর্মবস্তুকে অগ্রাহ্য করতে চাইছে অন্যদিকে বিভাজন নীতির মধ্যদিয়ে কর্মহীনতার বিরুদ্ধে যুবদের এবং সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে বিপথে পরিচালিত করতে চাইছে। এই বিরুদ্ধে লড়াইটা তীব্রতর হচ্ছে। ব্যর্থতায় ভরে গেছে শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। কেরালা, পশ্চিমবাংলা, ত্রিপুরাসহ দেশের বিভিন্ন অংশে যুবদের ওপর আক্রমণ নেমে আসছে প্রতিনিয়ত। অবিরাম সংখ্যালঘু, দলিত ও আদিবাসী অংশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তা সত্ত্বেও আমাদের মোট সদস্যসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি রাজ্যের রাজ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং রাজ্যগুলির পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে আন্দোলনের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলা।

খসড়া রিপোর্টের উপর প্রতিনিধিদের আলোচনা

খসড়া রিপোর্টের ওঅপর প্রতিনিধিদের আলোচনা শুরু হয় ১৪ মে। মোট ৫২ জন প্রতিনিধি খসড়া প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেছেন। এদের মধ্যেও ৭ জন মহিলা প্রতিনিধি।

সম্মেলনের প্রতিনিধিদের আলোচনা থেকে উঠে এসেছে দেশের বর্তমান সংকটের প্রসঙ্গ এবং সংকট পেরিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথাও। ত্রিপুরার প্রতিনিধিরা বলেছেন কিভাবে প্রতিনিয়ত বিজেপি-আরএসএসের আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে তারা লড়াই করছেন। প্রকাশ্যে কর্মসূচি নিতে না পারলেও গোপনে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন তারা। শুনছেন তাদের অভাব-অভিযোগের কথা। এর পাশাপাশি দেশজুড়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ আরএসএস-বিজেপি পরিচালিত দিল্লির সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের এবং যুবদের ক্ষোভের বয়ান উল্লেখ করেছেন প্রতিনিধিরা।

কাশ্মীরের প্রতিনিধিরা বলেছেন কিভাবে সেখানকার মানুষকে বিশেষত যুবকদের নানাভাবে হেনস্থা এবং অপমান করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন-সংগ্রামের ওপর প্রতিনিয়ত নামিয়ে আনা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন। সেনাবাহিনীর হাতে হয়রান হচ্ছেন সব বয়সের মানুষ। কিন্তু মানুষ প্রতিবাদে মুখর হচ্ছেন একথাও জানাতে ভোলেননি তারা। মতাদর্শ চর্চার ওপর জোর দিয়েছেন একাধিক প্রতিনিধি। সময় উপযোগী তথ্য এবং প্রচারপত্র আরো বেশি করে পৌঁছে দেওয়া যুব কেন্দ্রীয় দপ্তরের সঙ্গে রাজ্য ইউনিটগুলির সমন্বয় আরো বাড়ানোর কথা, তুলনায় দুর্বল ইউনিটগুলিকে শক্তিশালী ইউনিটগুলি সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সাহায্য করার কথা, পরিবেশ রক্ষায় লড়াইয়ের কথা উঠে এসেছে আলোচনায়। শহিদের মৃত্যুতে শোক যেমন ব্যক্ত করেছেন প্রতিনিধিরা তেমনই শোককে শপথে পরিণত করার প্রত্যয় দেখিয়েছেন তারা। স্থানীয় স্তরে আন্দোলন সংগঠিত করার কথা, আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘপথ সাইকেল যাত্রায় সংগঠিতভাবে অংশগ্রহণ করার কথা, গণ আন্দোলনের অন্যতম পরিপূরক শক্তি হিসেবে অংশগ্রহণ করার কথা, স্বতঃস্ফূর্তভাবে রেল রোকো, রাস্তা রোকো, কর্মসূচি নেবার কথা, কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়ানোর কথা, পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আশ্রয় দেওয়া এবং খাবার জোগানোর মতো বিষয় উঠে এসেছে আলোচনায়। প্রতিনিধিদের আলোচনার শেষে জবাবি ভাষণ দেন অভয় মুখার্জি।

ডিওয়াইএফআই-এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা

ডিওয়াইএফআই-এর বর্তমান মোট সদস্য সংখ্যা ৯৬ লাখ ৩৯ হাজার ২১৬। সদস্য সংগ্রহে সব থেকে এগিয়ে কেরালা। তাদের সদস্য সংখ্যা ৫১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৫৮৫। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পশ্চিমবাংলায় সদস্য সংখ্যা এখন ২৯ লক্ষ ১৩ হাজার ৯৬০। ত্রিপুরায় এই পর্বে সদস্য সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ১০০। ত্রিপুরায় টিওয়াইএফ-এর সদস্য সংখ্যা ৪৯ হাজার ১৫০। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে খসড়া রিপোর্টটি গৃহীত হয়। এরপর ৭৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়‌।

আন্তর্জাতিক অভিনন্দন বার্তা

ডিওয়াইএফআই ১১তম সর্বভারতীয় সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা এসেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে। কিউবা এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধি সম্মেলন মঞ্চে এসে সহমর্মিতার বার্তা এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার উচ্চারণ করেছেন যেমন, তেমনই ব্রিটেন, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম থেকেও এসেছে অভিনন্দন বার্তা।

সেমিনার ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন

এদিন যুব সম্মেলন উপলক্ষে ঐকতান প্রাঙ্গণে দুটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রাক্তন ছাত্র নেতা গৌতম দেব।

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫বর্ষে পা রাখা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অংশের বিশিষ্ট মানুষ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের ভূমিকা নিয়ে একটি প্রদর্শনী এবং অপরটি ১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল অবধি পশ্চিমবাংলায় বামফ্রন্ট সরকারের নানা জনকল্যাণমুখী বিকল্প উদ্যোগ সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে আয়োজিত হয়।

সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারের বিষয় ছিল ‘ভারত ও বাংলার অর্থনীতির অভিমুখঃ কেরালার বিকল্প’। এই সেমিনারটি আয়োজিত হয় ইজেডসিসি’র মুক্ত মঞ্চে। এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেরালা বিধানসভার অধ্যক্ষ এম বি রাজেশ, সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা, অধ্যাপক ঈশিতা মুখার্জি, পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক বাসব বসাক, প্রাক্তন ছাত্র নেতা শতরূপ ঘোষ। সঞ্চালনা করেন যুবনেতা কলতান দাশগুপ্ত।

ডিওয়াইএফআই’র নতুন কমিটি

কলকাতা ডিওয়াইএফআই ১১তম সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকে ৭৭ জনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়েছে। তার মধ্যে যুবতী আছেন ১৫ জন। সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এ এ রহিম (কেরালা)। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য (পশ্চিমবঙ্গ)। কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন সঞ্জীব কুমার (দিল্লি)।

সম্মেলন থেকে ১৮ জনের সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রয়েছেন হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা এবং বিকাশ ঝা। ৭৭ জনের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে এরাজ্য থেকে রয়েছেন মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, কলতান দাশগুপ্ত, হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, ইব্রাহিম আলি, পারমিতা ঘোষ, অয়নাংশু সরকার, শচীন খাতি, সইফুল সর্দার এবং বিকাশ ঝা। এছাড়া রয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতা ভি পি শানু, ময়ূখ বিশ্বাস। সম্মেলনে ২২টি রাজ্য থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ৪৫০ জন। তার মধ্যে কেরালার প্রতিনিধি ছিলেন ১২৩ জন এবং পশ্চিমবঙ্গের ৯৫ জন। ক্রেডেনশিয়াল কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ৪৫০ জনের মধ্যে অনলাইনে ৪০০ জনের তথ্য মিলেছে। এই ৪০০ জনের মধ্যে ৬২ জন মহিলা প্রতিনিধি।