E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২০ মে, ২০২২ / ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

সংগঠনের প্রসারের লক্ষ্যে যুব মনকে প্রভাবিত করার মতো কর্মসূচি নিতে হবে

ডিওয়াইএফআই’র সর্বভারতীয় সম্মেলনে প্রাক্তন নেতৃবৃন্দ


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ যুব মন আগামী ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখে। তাদের প্রভাবিত করার মতো বিষয়কে সামনে নিয়ে আসতে হবে। তবেই তারা ডিওয়াইএফআই-এর পতাকাতলে আসবেন। বিশ্বজুড়ে যুবদের আবেগকে দক্ষিণপন্থীরা বিভেদের বীজ বুনতে ব্যবহার করছে। রুখতে হবে সেটাও। ডিওয়াইএফআই-এর একাদশ সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকে এই বার্তাই দিলেন প্রাক্তন যুব নেতৃত্ব। ১৩ মে সম্মেলন মঞ্চে প্রাক্তন যুব নেতা এম এ বে‍‌বি, মহম্মদ সেলিম, হান্নান মোল্লা, এম বি রাজেশ ও তাপস সিনহা সম্মেলনকে ‌‌অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক এবং গণ আন্দোলনের নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, রাজ্যের এবং এই কলকাতা শহরের বামপন্থী মানুষ এবং রেড ভলান্টিয়াররা ডিওয়াইএফআই’র সম্মেলনের আয়োজনকে সফল করতে সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছেন। গত একদশক ধরে এরাজ্যে আমরা ব্যাপক বাধা ঠেলে এগোচ্ছি। কিন্তু ডিওয়াইএফআই’র পতাকা এখানে উড্ডীন রয়েছে।

তিনি বলেন, এই সম্মেলন থেকে আপনারা ভবিষ্যতের কার্যক্রম ঠিক করবেন। ঠিক করবেন দেশকে কীভাবে বাঁচানো যায়, সাংবিধানিক মূল্যবোধ কীভাবে বাঁচানো যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তরাধিকার যা আপনারা বহন করছেন তা কীভাবে এগি‍‌য়ে নিয়ে যাওয়া যায়। ঠিক করবেন বামপন্থী আন্দোলনের ধারা, শ্রমিক‍‌শ্রেণির আন্দোলন, ছাত্র-যুবদের আন্দোলনকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

মহম্মদ সেলিম বলেন, অধিকার আদায়ের দাবির কণ্ঠস্বরকে জোরালো করতে হবে। ডিওয়াইএফআই হলো একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিপ্লবী যুবরা। ভারতের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ রক্ষা করতে হবে আপনাদের। এটাই সহমর্মিতা। আমরা বিশ্বনাগরিক। ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, ভাষার নামে যা মানুষে মানুষে বিভেদ আনে আমাদের লড়াই তার বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা পদ্মফুল নিয়ে মানুষের দুয়ারে গিয়েছিল সেই ফুল এখন বুল‍‌ডোজার হয়ে গেছে। মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক, হরিয়ানা যেখানেই নেওয়া হোক - এটা সুচিন্তিত পদক্ষেপ। সঞ্জয় গান্ধীও জরুরি অবস্থার সময় এরকমটাই করেছিলেন বুলডোজার নিয়ে। গোটা দেশের মানুষ তার বিরোধিতা করেছিলেন। আজকের এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। নতুন নতুন সদস্য, যুবতী সদস্যদের আনতে হবে সংগঠনে আগামীর লড়াই আরও জোরদারভাবে লড়ার জন্য।

প্রাক্তন ডিওয়াইএফআই সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, আজকের পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রাস্তা খুঁজে বার করতে হবে এই সম্মেলন থেকে। দে‍‌শের যুবদের মনে প্রভাব ফেলে এমন স্লোগান দিতে হবে। আজকের প্রজন্মকে আশান্বিত করতে এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে এমন স্লোগান তাদের সামনে রাখতে হবে।

প্রাক্তন যুব নেতা তাপস সিনহা বলেন, যুবদের সামনে লক্ষ্য হিসেবে রয়েছে সমাজতন্ত্র। আগামীদিনে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিতে হবে। কর্মসংস্থানের লড়াইকে আরও তীব্র করতে হবে।

প্রাক্তন যুব নেতা এম এ বেবি বলেন, ডিওয়াইএফআই হলো দেশের সবচেয়ে উৎসাহে ভরপুর রাজনীতি সচেতন সংগঠিত গণসংগঠন। এই সংগঠনের একটা গৌরবময় অতীত রয়েছে। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে, ত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়েছে ডিওয়াইএফআই। তিনি বলেন, আজকের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে হবে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সংগঠনে মহিলাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কমিটির মোট সদস্য সংখ্যার ২০ শতাংশের কোটায় আটকে থাকলে চলবে না, আরও বেশিসংখ্যক যুবতীদের যুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে আত্মসমালোচনা জরুরি। দেশের যেখানেই এই যুব সংগঠন সক্রিয়, সেখানেই দেখা যাচ্ছে মহিলারা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন, নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই জরুরি, যা আপনারা চিহ্নিত করেছেন। বেকারির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন আপনারা। কিন্তু মনে রাখতে হবে ফ্যাসিস্টদের মতো বি‍‌জেপি-আরএসএস তাদের বিষাক্ত কর্মসূচিকে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের নাম দিয়ে চালাতে চাইছে। এই কর্মসূচি যুবদের আকৃষ্ট করছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করেছিলেন সঠিকভাবেই। এর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে দেশজু‍‌ড়ে তো বটেই, স্থানীয় স্তরেও আদায়যোগ্য দাবিকে সামনে রেখে স্লোগান তুলতে হবে।

প্রাক্তন যুব নেতা এবং কেরালা বিধানসভার অধ্যক্ষ এম বি রাজেশ বলেন, এক সংকটময় সময়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন দেশে নয়াউদারবাদী আক্রমণ এবং সাম্প্রদায়িকতার শিকার হচ্ছেন মানুষ। যুবরা এই সাম্প্রদায়িক শক্তির লক্ষ্য। ২০১৪ সাল থেকে দেশের সরকারের নয়াউদারবাদী নীতির জেরে বেশি বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছেন যুবরা। তারা ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে ভোট দিয়ে‍ছিলেন। কিন্তু এখন আকাশছোঁয়া বেকারির জেরে ভুগছেন যুবরা। দেশে সরকারি স্তরে লক্ষ লক্ষ পদ খালি। ডিওয়াইএফআই-কে যুবদের সংগঠিত করার মধ্য দিয়ে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতার আক্রমণ যা ফ্যাসিস্ট শক্তি সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শ প্রসূত তার বিরুদ্ধে মতাদর্শের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ রক্ষার জন্য লড়াই করতে হবে। আমাদের দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। ভগৎ সিং সহ বহু শহিদদের লড়াই ও বলিদানের ঐতিহ্য রয়েছে ডিওয়াইএফআই’র। সাম্প্রদায়িকতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ সহ বিভিন্ন বিপদের বিরুদ্ধে এই সংগঠন লড়াই করেছে। তাই মানুষের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছতে হবে। আরও বেশিসংখ্যক যুবদের সংগঠনের পতাকার নিচে নিয়ে আসতে হবে।