৫৯ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২০ মে, ২০২২ / ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
বিজ্ঞানী-গবেষক ডঃ নির্মলবরণ চক্রবর্তীর জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গত ২৬ এপ্রিল বিখ্যাত বিজ্ঞানী এবং গবেষক ডঃ নির্মলবরণ চক্রবর্তীর জীবনাবসান হয়েছে। দীর্ঘদিন খড়্গপুর আইআইটি’র ইলেকট্রনিকস বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন।
অধ্যাপনার কাজ শুরু করেছিলেন কলকাতার বিজ্ঞান কলেজে, পরবর্তীকালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। কলকাতার বিজ্ঞান কলেজ থেকে ষাটের দশকে খড়্গপুর আইআইটি’তে যোগদান করার পর ২০২০ সালের মহামারীর কাল শুরু হওয়া পর্যন্ত সেখানে প্রতিদিন সকাল-বিকেল ছিল নিত্য যাতায়াত।
ছাত্র দরদী এই অধ্যাপক গবেষণায় মগ্ন থাকতেন। জীবনে অবসরের প্রয়োজন আছে সেটা তিনি মানতেন না। তাঁর এই মানসিকতাকে মান্যতা দিয়ে আইআইটি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছিলেন, যতদিন তিনি কর্মক্ষম থাকবেন ততদিন তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ঘর থাকবে এবং তাঁর নামের নেমপ্লেটও থাকবে।
তিনি ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান জানিয়েছে। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় লক্ষ করে যে, খড়্গপুর আইআইটি থেকে যে সকল ছাত্র গবেষণার জন্য সেখানে গেছেন, তাদের গবেষণার পরিচালক ছিলেন ডঃ চক্রবর্তী। সেই কারণে তারা ঠিক করে ডঃ চক্রবর্তী মনোনীত দুইজন ছাত্রকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর সুযোগ দেওয়া হবে অধ্যয়নের ও গবেষণার।
ছাত্র দরদী অধ্যাপক নির্মলবরণ চক্রবর্তী ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সাহায্য দিয়ে অনেক দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তফশিলি জাতি উপজাতি ছাত্রীদের বিজ্ঞান বিভাগে গবেষণার জন্য মাতা জ্যোতি চক্রবর্তীর নামে একটি বৃত্তি চালু করেছিলেন তিনি। মহিলাদের স্বাবলম্বী প্রকল্পগুলি রূপায়িত করার জন্য জ্যোতি চক্রবর্তী কর্মনীড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেও তিনি অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন।
নির্মলবরণ চক্রবর্তী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রসন্নমোহন চক্রবর্তী ও বিশিষ্ট মহিলা নেত্রী জ্যোতি চক্রবর্তীর তৃতীয় পুত্র।
প্রয়াত অধ্যাপকের স্মরণে খড়্গপুর আইআইটি ইলেকট্রনিক্স বিভাগে, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এবং তক্ষশিলা ক্যাম্পাসে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ৮ মে সল্টলেকে এইচএ ব্লকে ছোটো বোন বনানী বিশ্বাসের বাড়িতে স্মরণসভা হয়। ছাত্র ডঃ অপূর্ব দত্ত, ডঃ চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বাষট্টি বছরের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন, তৎকালীন বিজ্ঞান কলেজের ফলিত পদার্থবিদ্যায় অভিজ্ঞ অধ্যাপকগণ কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে তিনি তৎক্ষণাৎ সমাধান করে দিতেন।
বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিভাবান ডঃ চক্রবর্তীর জীবন কথা আজকের প্রজন্মের জানা প্রয়োজন।
ডঃ দেবেশ দাস বলেন, তাঁর মতন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি খুব কম দেখেছি। জানার আগ্রহ ছিল এত বেশি - গবেষণার নতুন বিষয় মনে হলেই ফোন করে জেনে নিতেন।
স্মরণসভায় এই কথাই উঠে আসে প্রতিভাবান মানুষ মারা গেলেও মরে যায় না। তিনি বেঁচে থাকেন কাজের মধ্যে।
আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের মাধ্যমে সভাটি শেষ হয়। প্রতিদিন রাত্রে নিদ্রার আগে ডঃ নির্মলবরণ চক্রবর্তী এই গানটি শুনতেন।
তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী ঝর্না চক্রবর্তী, দুই কন্যা চৈতালি এবং মিতালি, দুই জামাতা সুব্বা রাও ও শুভ্র দাস, নাতনি মধুরিমা ও নাতি সৌম্যকে।