৫৯ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২০ মে, ২০২২ / ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
উন্নয়ন ও দুই রাজ্য-দুই দৃষ্টিভঙ্গি
অশোক ভট্টাচার্য
'লাইফ মিশন' প্রকল্পের বাড়ি প্রদান করছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পি বিজয়ন।
সারা দেশ চলছে এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। তার প্রভাব পড়ছে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই। পশ্চিমবঙ্গও তার থেকে বাদ যেতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গ কেন, অন্য যেকোন রাজ্যেই তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। অথচ একটি সুনির্দিষ্ট বিকল্প নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে অনেক সীমাবদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতার মধ্যেও কিছু বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি রাজ্যের সরকার পরিচালনা করা যায়। কেরালা রাজ্য তার একটি উদাহরণ। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মতো কেরালাতেও বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তি পরাজিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন হয় তৃণমূল কংগ্রেস দল। কেরালাতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউডিএফ সরকার। ২০১৬ সালে, পরে ২০২১ সালেও বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে কেরালায় উপর্যুপরি দু’বার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র নেতৃত্বে বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বিজয়ী হয়ে রাজ্য সরকার গঠন করে। শুধু আসন সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, কেরালাতে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির ভোট শতাংশও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূল কংগ্রেস দল ২০১১ সাল থেকে উপর্যুপরি তিনবার বিজয়ী হয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন রয়েছে। দুটি রাজ্যেই বিজেপি পরাজিত হলেও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ৩৮শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে, আসন সংখ্যাও অনেকটা তারা বৃদ্ধি করতে পেরেছে। অন্যদিকে কেরালাতে বিজেপি’র আসন সংখ্যা কমে শূন্যে পরিণত হয়েছে। শতাংশের বিচারে সেখানে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ।
দুটি রাজ্যেই বিজেপি পরাজিত হলেও, কেরালায় বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির বিজয় অবশ্যই অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কেরালায় বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তি বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল কেবলমাত্র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নয়, তারা লড়াই করেছিল বিজেপি’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, নীতি ও বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে। বামপন্থীরা স্লোগান দিয়েছিল একটি উন্নত, দুর্নীতি মুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ নতুন কেরালা গঠনের।
বামপন্থীরা জানে ২০১৪ সাল থেকে দেশে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে যে সরকার চলছে, সেই সরকার শুধু সাম্প্রদায়িকই নয়, তাদের নীতি নব্য উদারীকরণ আর্থিক নীতি অনুসরণ করা, যে নীতিকে বলা হয় করপোরেট ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার নীতি। যে নীতির মূল কথা হলো তাদের নব্য উদারীকরণ আর্থিক নীতির প্রভাব থেকে মানুষের প্রতিবাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে রাখতে জনগণের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের নীতিকে উৎসাহিত করা, যার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা বজায় রাখা। সারা দেশের মানুষ আজ ভুক্তভোগী বিজেপি’র নব্য উদারীকরণ আর্থিক ও স্বৈরতান্ত্রিক নীতির। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে আঘাত করছে আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সাংবিধানিক কাঠামো, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, ইতিহাস চর্চা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ইত্যাদি ভারতের সমস্ত মৌলিক কাঠামোর ওপর।
বামপন্থায় বিশ্বাসী কেরালার বাম গণতান্ত্রিক রাজ্য সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে এই বাস্তবতার মধ্যে এবং একটি বিকল্প নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। আবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সাম্প্রদায়িক ও জনবিরোধী নীতির সর্বাত্মক বিরোধিতা করতে হচ্ছে। অন্যদিকে কেরালা রাজ্যের সরকার দেশের মধ্যে সব চাইতে সফলভাবে কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সর্বপ্রথম তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। প্রতিরোধ করেছে ভয়াবহ বন্যাজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নিপা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিরও।
'লাইফ মিশন' প্রকল্পের বাড়ি।
বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট পরিচালিত কেরালা সরকার জানে তাদের আর্থিক ও প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা। ধারাবাহিকভাবে কেরালার জাতীয় অর্থ কমিশনের প্রাপ্য অর্থ বরাদ্দ হ্রাস করে চলেছে কেন্দ্রের সরকার। অথচ তার মধ্যেও কেরালা গুরুত্ব দিয়ে চলেছে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ, গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও শক্তিশালী করা, বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্র, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা, চেতনা, মূল্যবোধকে সুরক্ষিত ও তার গুণগত মান উন্নত করার এক ধারাবাহিক নীতি তারা অনুসরণ করে সাফল্য অর্জন করে চলেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভরতি বৃদ্ধি করা, বেসরকারি শিক্ষাকে উৎসাহিত না করা, শিক্ষায় বিজ্ঞান মনস্কতা বৃদ্ধি করা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনচেতনা সৃষ্টি করা, সমাজ বিজ্ঞানের চর্চার ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি, সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ, নতুন পদ সৃষ্টি, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে মানুষের পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা, ইত্যাদি বুনিয়াদি কর্মসূচিগুলির ওপরে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে কেরালার বাম গণতান্ত্রিক সরকার। এই সরকার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকারগুলিকে আরও ক্ষমতায়িত করা, উন্নয়ন ও পরিকল্পনায় সরাসরি জনগণকে যুক্ত করার নীতি ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করে চলেছে এবং তাকে শক্তিশালী করেছে। তারই ফলস্বরূপ, ২০১৬-২১ সাল পর্যন্ত কেরালার বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকারকে নীতি আয়োগ দেশের সমস্ত রাজ্যের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গভর্ননেন্সবলে ঘোষণা করেছে। বিদ্যালয় শিক্ষায় গুণগত মান, স্বাস্থ্য সূচক অনুযায়ী কেরালা দেশের মধ্যে রয়েছে প্রথম স্থানে। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (HDI) ও চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (DCI)-এ ২০১৮-২০১৯ সালে সারা দেশে কেরালার স্থান ছিল প্রথম। দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ভারতের স্থান সারা বিশ্বের মধ্যে ১১৭তম। অথচ কেরালার স্থান একই সময়ে ৭৩তম।
বাম-গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন কেরালা রাজ্য সরকারের উন্নয়নের অভিমুখ হলো পিছিয়ে পড়া তথা শ্রমজীবী মানুষ, তপশিলি জাতি-উপজাতি সমাজের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা। সমস্ত মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, আবাসন সুনিশ্চিত করা। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, সাথে দক্ষতা বৃদ্ধি করা। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পরিকল্পনা কমিশন তথা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রথা তুলে দিলেও, বর্তমান কেরালা রাজ্য সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে অব্যাহত রেখেছে। তারা লক্ষ্য ঘোষণা করেছে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে আরও উন্নত কেরালা এবং কেরালাকে উন্নত মধ্য আয়ের দেশগুলির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। কেরালা সরকার রাজ্যের সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার নীতি গ্রহণ করেছে। উচ্চ শিক্ষায় আধুনিক বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর আরও গুরুত্ব দেবার নীতি গ্রহণ করেছে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, ইতিহাস, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনা বৃদ্ধির শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে কেরালা। তারা জোর দিচ্ছে উৎপাদিকা শক্তির আরও বিকাশের।
এই প্রসঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের বিগত ১১ বছরের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের কার্যাবলি ও নীতির দিকে নজর দিলে বোঝা যাবে দুটি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিজনিত পার্থক্য। অথচ দুটি সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে একই সীমাবদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতার মধ্যে। সামাজিক ও মানব উন্নয়নের সূচকের দিক দিয়ে দুটি সরকারের সাফল্য বা উন্নতির মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বিশেষ করে শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ, মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়, ধর্মনিরপেক্ষতা, ইতিহাস চর্চা ইত্যাদি দিক দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের এই সময়ে রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬০ ভাগই কেন্দ্রীয় করের অংশ বা অনুদান। মূলধনি আয়ের ৯০ শতাংশই বাজার বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ঋণ। মূলধনি আয়ের ৫০ শতাংশ তারা ব্যয় করছে ঋণ পরিশোধে। ১১ বছরের মধ্যে রাজ্যের ঋণ ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। উৎপাদন ভিত্তিক অর্থনীতি নয়, সরকারি অর্থ তারা ব্যয় করছে একটি ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি করতে। বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা তারা ব্যয় করে থাকে অনুৎপাদনশীল ক্ষেত্রে, যার সাথে উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক রয়েছে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরির। ২০১২-১৩ সাল থেকে ২০১৯-২০ সাল অর্থবর্ষে সারা দেশে যেখানে মাথা পিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ৫.২শতাংশ সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধির হার ৪.২শতাংশ। এ রাজ্যের সরকার দাবি করে তাদের সময়ে সারা রাজ্যে রাস্তার দৈর্ঘ্য বা উন্নতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে পশ্চিমবঙ্গে এই বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৪শতাংশ। অথচ অন্য সমস্ত রাজ্যে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৮ থেকে ৩৫শতাংশ পর্যন্ত।
একইভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধির হার পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্যান্য রাজ্যে অনেক বেশি। কয়েক লক্ষ নয়, কোটির উপর কর্মসংস্থান সৃষ্টির এক ভিত্তিহীন দাবি তারা করে থাকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করে থাকেন শিল্পে বিনিয়োগ এবং উৎপাদনভিত্তিক শিল্পায়নে পশ্চিমবঙ্গের স্থান নাকি দেশের মধ্যে প্রথম। বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ত্রয়োদশ। শিম্পায়নের নামে চলছে এক তামাশা। পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক ক্ষেত্রের ব্যয় বরাদ্দ কেরালার তুলনায় অনেক কম। পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক বা জনকল্যাণমুখী প্রকল্পে যে ব্যয় করা হয় তা মূলত ভোটমুখী জনপ্রিয়তাবাদী বা পপুলিস্ট। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজস্ব আদায়ের হার বৃদ্ধির একমাত্র ক্ষেত্র আবগারি। অন্যদিকে রাজ্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে প্রায় ৫লক্ষ শূন্য পদে কোনো নিয়োগ না করে, সামান্য অর্থের বিনিময়ে কিছু চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে সেই কাজ করানো হচ্ছে। কয়েক লক্ষ কর্মীকে প্রাপ্য মহার্ঘ্য ভাতা না দিয়ে, প্রাপ্য পেনশন থেকে বঞ্চিত করে, সময়মতো গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি না দিয়ে রাজ্য সরকারের যে অর্থ সঞ্চিত হচ্ছে, সেই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে কিছু জনপ্রিয়তাবাদী প্রকল্পে। যা রাজ্যে অনুৎপাদনশীল অর্থনীতিকে উৎসাহিত করছে। এই রাজ্য সরকার একটি অ-কাজের বা নন-পারফর্মিং সরকার। কেরালায় গত ৫ বছরে ২ লক্ষ শূন্য সরকারি পদে কর্মী নিয়োগ হয়েছে। গত ১ বছরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কয়েক হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালের নামে বড়ো বড়ো ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা হয় নামেই। কেরালার বর্তমান রাজ্য সরকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে।
যেকোনো দেশের বা রাজ্যের উন্নয়নের সূচক সামাজিক উন্নয়নের নিরিখে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষরতা, শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃত্বকালীন মৃত্যু, জীবনের গড় আয়ু, লিঙ্গ অনুপাত, জন্ম হার, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয় ইত্যাদি। ২০১৯ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ওপরের সমস্ত ক্ষেত্রেই সারা দেশের গড় থেকে কেরালা রয়েছে প্রথম স্থানে। সাক্ষরতায় সারা দেশের গড় যেখানে ৭৭.২ শতাংশ, সেখানে কেরালায় ৯৬.২ শতাংশ, শিশু মৃত্যুর হার ভারতে ৩২, কেরালাতে ৭, গড় আয়ু ভারতে ৭০.৯ বছর, কেরালাতে ৭৬.৪ বছর, জন্মহার ভারতে ১৬, কেরালায় ১২.২ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ভারতে ৯ শতাংশ, কেরালায় ৫.২ শতাংশ।
এই সাফল্যই প্রমাণ করে কেরালার বাম-গণতান্ত্রিক সরকারের বিকল্প নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির এই সাফল্য। কেরালার এই সমস্ত সাফল্যের অনেকটাই অর্জিত হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে। অথচ এই সময়ে ভারতের অর্থনীতিকে সবচাইতে বেশি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়েছে, যার সম্পূর্ণ দায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নব্য উদারীকরণ আর্থিক নীতির। বিশেষ করে নোট বন্দী (De monitisation), জিএসটি, কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতি। দেশব্যাপী কৃষিতে সংকট। এর ওপর কেরালার বাম-গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকারকে দায় গ্রহণ করতে হয়েছে পূর্বতন ইউডিএফ সরকারের দুর্নীতি ও আর্থিক নীতির ব্যর্থতার। বিগত বছরগুলিতে কেরালায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত, নিপা ভাইরাস, অতিবৃষ্টি ও বন্যাজনিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে, তার মধ্যেও কেরালার এই সাফল্য শিক্ষণীয়। এই সাফল্য কোনো লোক দেখানো সাফল্য নয়, এই সাফল্য বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের এক বিকল্প নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সাফল্য।