E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১৪শ সংখ্যা / ২০ নভেম্বর ২০২০ / ৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৭

২৬ নভেম্বর রুখে দাঁড়াবার দিন তারই দৃঢ়প্রস্তুতি রাজ্যজুড়ে


সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে নন্দীগ্রামে মিছিল।

প্রতিবেদনঃ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় - দেশের বিজেপি সরকারের ‘অচ্ছে দিনে’র মহিমায় কৃষকের রক্তে বোনা ফসলে কর্পোরেটের উদ্যত থাবা। এ রাজ্যেও আক্রান্ত উত্তরের চা বাগান শ্রমিক থেকে সাগরের সবজি বোনা কৃষক, হুগলির আলুচাষি থেকে কাজ হারিয়ে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিক আর রুজির অনিশ্চয়তায় ভোগা প্রায় অভুক্ত খেতমজুরসহ কাজ হারানো নানা পেশার মানুষ। তবে গ্রাম ভারতের জমি থেকে জঙ্গল - সব কেড়ে নেওয়ার হাজারো ছল ধরে ফেলেছেন বিপর্যস্ত অর্থনীতির জন্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত দেশের খেটে খাওয়া মানুষেরা। তাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক শক্তি - এ রাজ্যের শহরের গণ্ডি পেরনো শ্রমিক-কৃষক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে অর্জিত অধিকার এবং বিভাজনের রাজনীতি রুখে সম্প্রীতি বজায় রাখতে পাল্টা আঘাত হানতে জোটবদ্ধ। পাহাড় থেকে সমুদ্র জুড়ে তাই প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি চলছে ২৬ নভেম্বরের ধর্মঘটের নিবিড় প্রচার-প্রস্তুতি-জল্পনা।

এ রাজ্যের ২১টি কৃষক এবং খেতমজুর সংগঠন রয়েছে সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পশ্চিমবঙ্গ শাখায়। এই সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি কলকাতায় আয়োজিত এক গণ কনভেনশনে কৃষক বিরোধী নয়া আইনগুলির বিরুদ্ধে ১০টি কেন্দ্রীয় ফেডারেশন এবং ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর গ্রামীণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। কনভেনশনে তৃণমূল সরকার যেভাবে কৃষক স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে তার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন কৃষক নেতৃবৃন্দ।

জনগণের দাবি নিয়ে তাই ধর্মঘটের সমর্থনে চা বাগান অধ্যুষিত পাহাড়ি পথে লাল ঝান্ডা হাতে উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকরা মিছিল করে চড়াই পেরোচ্ছেন। শুধু হাঁটছেনই না, মিছিলে শামিল করছেন বন্ধ চা বাগানের রুজিহারা সাথীদেরও। দার্জিলিঙ, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার - সর্বত্রই বাগানের গেটে গেটে চলছে মিটিং। ২৬ নভেম্বরের ধর্মঘটের দাবির বয়ান শুনছেন মানুষ। মিটিং শুনতে এসে তাঁরা সোচ্চারে স্বাগত জানাচ্ছেন বাগান খোলার স্থানীয় দাবি তুলে ধরার বিষয়টিকে।

গ্রামীণ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে কলকাতার কনভেনশনে নেতৃবৃন্দ ৭-দফা দাবির সমর্থনের পাশাপাশি কৃষকদের দাবিগুলি তুলে ধরে বলেছেন, কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইনের বিরোধিতার পাশাপাশি রাজ্যকে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন বিদ্যুৎ বিল ২০২০ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। শ্রম কোড বাতিল করতে হবে। গ্রাম-শহরের গরিব মানুষের জন্য বছরের ২০০ দিনের কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরি সুনিশ্চিত করতে হবে। রক্ষা করতে হবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কৃষক, খেতমজুর সহ অন্য ক্ষেত্রের গ্রামীণ মজুর সহ সকল অংশের আদিবাসী জনগণের অধিকার।

দেশপ্রেমের বাগাড়ম্বর করে দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের কাছে দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার আগ্রাসী পথে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতাসীন হয়েছে মোদী সরকার। যেমন পাঁচ বার এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির চেষ্টা করা হলো, কিন্তু ক্রেতা মিলছে না।উদারনীতির জয়গান গাওয়া নির্লজ্জ কেন্দ্রীয় সরকার তবু বিক্রির জন্য অনড়। এয়ার ইন্ডিয়া বেচে দেওয়ার জন্য তাই শর্ত শিথিল করা হচ্ছে আরও। প্রতিরক্ষা থেকে কয়লাসহ শক্তিক্ষেত্রের চলছে লাগামহীন বিলগ্নিকরণ আর সরকারি সম্পদ জলের দরে বেচে দেওয়া। এই প্রেক্ষিতেই আগামী ২৬ নভেম্বর দেশজুড়ে ডাকা ধর্মঘটকে সফল করতে ও তাতে শামিল হতে সচেতন এরাজ্যের মানুষ মিটিং মিছিল কনভেনশনে প্রতিবাদের দিনলিপি লিখছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের কর্মরত শ্রমিক কর্মচারী এবং অকালে অবসর নিতে বাধ্য হওয়া শ্রমিক একসঙ্গে গলা মিলিয়ে প্রচারে মুখোশ খুলে দিচ্ছেন কেন্দ্রের সরকারের।

তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল হলদিয়ায়। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল জুড়ে আওয়াজ উঠেছে, শিল্পনগরীর শ্রমিকরা ধর্মঘটে শামিল হয়ে প্রমাণ করে দেবেন দেশের সর্বস্তরের মেহনতি মানুষের নেতৃত্বে ২৬ নভেম্বর তৈরি হতে চলেছে নতুন মাইলফলক। দৃঢ়কণ্ঠে তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য বারের মতো স্ট্রাইক ভাঙতে এলে তৃণমূলের সরকারকে পড়তে হবে শ্রমিকদের চ্যালেঞ্জের মুখে।

হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা কমছে। বাড়ছে ঠিকা শ্রমিকের সংখ্যা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেসরকারিকরণের উদ্যোগ। এসবের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের সমর্থনে সাধারণ সভা ও গ্রুপ সভায় স্থায়ী কাজে ঠিক প্রথা বাতিল করার দাবি, সমকাজে সমবেতন দেওয়ার দাবি, ঠিকা শ্রমিক, ক্যাজুয়াল ও সাপ্লাই শ্রমিকদের পিএফ’র টাকা মূল কর্তৃপক্ষের কোনো নম্বরে জমা রাখার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন ঠিকা শ্রমিক অনুপম মাইতি, অসীম হাজরারা।

উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ - জেলাগুলি জুড়ে একই সুরে রাজ্যের সর্বত্র ধর্মঘটের পক্ষে থাকা শ্রমিক কর্মচারীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সার্বিক জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট ডাকা হলেও এরাজ্যের তৃণমূল সরকার কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ভাঙতে পুলিশ নামিয়ে ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা করে। শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে এর মোকাবিলা করবে।

সময় বদলালেও উদ্দেশ্য বদলায়নি শাসক শ্রেণির। তখন ছিল জোতদার আর এখন কর্পোরেটরা। এখন এই কৃষি আইন হলো কৃষকের জমি আর ফসল লুটের সরকারি পরোয়ানা - ভাগচাষির কোনো অধিকার থাকবে না, থাকবে না কৃষকের নিজের জমিতে ফসল চাষ করার স্বাধীনতা। দাম নির্ধারণ করার। ধান গম চাষের চেয়েও লাভজনক রাবার তুলা ইত্যাদির চাষ করবে কর্পোরেট সংস্থা। খাদ্যের অভাব দেখা দেবে। আর কৃষি আইন অনুযায়ী ধান গম এসব খাদ্যশস্য অত্যাবশ্যকীয় আইনের বাইরে রাখার ফলে কর্পোরেট লাগামছাড়া মজুদ করবে। বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য শস্যের দাম। তাই গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ছোটো বড়ো নানা সভাতে কাছে বা দূরে দাঁড়িয়ে তৃনমূল বা বিজেপি করা কর্মীও বুঝতে চাইছেন বিষয়গুলি, একপেশে ভাবনার বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে।

ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে বর্ধমানের পুতুন্ডার পেশায় খেতমজুর সঞ্জয় ধাড়া, মিত্যুন মাঝিদের উপলব্ধি - এ রাজ্যের তৃনমূল বিজেপি এক। কারণ মজুরির আন্দোলনে নেমে পিঠে পুলিশের লাঠি পড়েছে ওদের। গ্রামে একশ’ দিনের কাজ অমিল। পঞ্চায়েত হাত গুটিয়ে নিয়েছে। লকডাউনের মধ্যে দেশের হেঁচকি তোলা অর্থনীতি মুড়িয়েছে কর্মসংস্থানের যাবতীয় নটে গাছ। সব খোয়ানোর আশঙ্কার আতঙ্কের মধ্যেই তাই গ্রাম বাংলা জুড়ে গ্রামের প্রবীণদের আলোচনায় উঠে আসছে মন্বন্তরের দিনের হাহাকার আর লড়াইয়ের কথা। জমি খোয়ানোর কথা। কেন উঠে আসছে এমন ফেলে আসা কালো অতীত? উঠে আসছে নয়া কৃষি আইনের জেরে। উঠে আসছে বামফ্রন্টের মিটিং আর ২৬-র ধর্মঘটের গ্রাম বৈঠকগুলিতে তোলা ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে। দেশে যে খাদ্য সংকটের দিন ফিরে আসছে তা তুলে ধরছেন কৃষকনেতা জহর দত্তরা।

শুধু কৃষিতে এগিয়ে থাকা বর্ধমান নয়, রাজ্যের প্রতিটি কৃষি প্রধান জেলাতেই কৃষিজীবী-শ্রমজীবী সহ নানা বর্গের মানুষের কপালের ভাঁজ বাড়িয়েছে সরকারের নয়া শ্রমকোড আর কৃষি আইন। টান পড়েছে হেঁসেলে। তাই কাজ না জোটায় নিরুপায় কিছু মানুষ ধার করছেন নয়া মহাজনি কারবার মাইক্রো ফিনান্সওয়ালাদের কাছে। সেখানে ভিটেমাটি বন্ধক পড়ছে প্রায় তিরিশ শতাংশ হারে সুদ দিতে না পারার জেরে। আয়কর দেন না এমন মানুষদের সরকারকে মাসে ন্যূনতম ৭,৫০০ টাকা দেবার এবং সরকারের ঋণ মকুবের দাবিতে গলা মিলিয়েছেন ঋণগ্রস্ত মানুষও। ধর্মঘটের দিন রাস্তায় থাকবেন তাঁরাও।

মুখ্যমন্ত্রীর সভায় প্রকাশ্যে তাঁত চাষীরা বলেছেন টাকার অভাবে কাজ নেই। বলেছেন সরকারি অর্ডার না থাকার কথা। রাজ্যের সব তফশিলি পরিবারকে মাসে ১০০০ টাকা পেনশনের আওতায় এনে ফেলার যে ঘোষণা তা পেতে আবেদন করতে পারেননি মানুষ নির্দিষ্ট অ্যাপ এর অভাবে- এসব কথাও উঠেছে ওই মিটিংয়ে। তৃণমূলের বাছাই করা প্রতিনিধিদের উষ্মাও টের পাচ্ছেন তৃণমূলেশ্বরী। আবার উদ্বাস্তু জনগণের সঙ্গেও মমতা ব্যানার্জি। প্রতারণায় ফুঁসছেন প্রান্তিক মানুষ। নিঃশর্ত দলিল তুলে দেওয়ার নামে তাদের দখলদার তকমা দিয়েই মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন - একথাও উঠে আসছে মিটিং মিছিলে। রাজ্য জুড়েই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন জনগণ।

গ্রাম শহর মিলিয়ে রাজ্য জুড়েই ধর্মঘটের সমর্থনের সংগ্রামী রোজনামচা। ধর্মঘটকে হরতালে পরিণত করে সফল করতে হাওড়া জেলায় চোদ্দটি জুটমিলের শ্রমিকরা পথে নেমেছেন। সারা জেলার প্রতিটি অঞ্চলে ধর্মঘট সফল করার জন্য স্ট্রাইক কমিটি গঠন করে ধর্মঘটের সমর্থনে নিবিড় প্রচার করা হচ্ছে। হ্যান্ডবিল পোস্টার ও ফ্লেক্স সারা জেলায় প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক সহ মিড-ডে-মিল আইসিডিএস, আশা প্রকল্প শ্রমিকদের মধ্যেও ধর্মঘটের প্রচার চালানো হচ্ছে। সাড়া মিলছে ব্যাপক।

হরতাল পালনে ইতিবাচক মনোভাবে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তেই যেমন জঙ্গলমহলের সন্ত্রাসদীর্ণ এলাকাগুলি ধর্মঘটের সমর্থনে বেলপাহাড়িতে মিছিলে প্রান্তিক মানুষের ঢল। ওই মিছিল থেকে অন্যান্য দাবিগুলোর সঙ্গে কংসাবতী জলাধার থেকে বোরো চাষের জন্য বিনা পয়সায় সেচের ব্যবস্থা সহ কাজের দাবি এবং মাওবাদী তৃণমূল যৌথ বাহিনীর হাতে নিহত ও নিখোঁজ পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তা ও চাকরির ব্যবস্থার দাবি নিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয় বিডিও দপ্তরে। কৃষক সভা, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, কিষান কংগ্রেসের যৌথ উদ্যোগে বিনপুর -২-নম্বর ব্লকের বিক্ষোভ সভাতে ২৬ নভেম্বরের পক্ষে বক্তব্য রাখেন পুলিনবিহারী বাস্কে, দিবাকর হাঁসদা প্রমুখ।সুবিশাল মিছিল হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামেও। যা স্পষ্টতই পালাবদলের ইঙ্গিত।

ছাব্বিশে নভেম্বর ইতিহাস গড়তে সিপিআই(এম)র ডাকে পাণ্ডুয়ার মেলাতলা থেকে বিরাট মিছিলে পা মেলান কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুর, অসংগঠিত শ্রমিক সহ ছাত্র-যুব মহিলারা। ধর্মঘটের সমর্থনে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মিছিল হয়। সিআইটিইউ সহ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের ডাকে ধর্মঘটের সমর্থনে কনভেনশন হয় চন্দননগরের পোস্ট অফিসের কাছে এবং চুঁচুড়া এবং ভদ্রেশ্বরে।

ধর্মঘট যেমন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের শ্রমিক-কৃষক বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তেমনি রাজ্যের তৃণমূল সরকার বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে। নিমতৌড়ির গণ কনভেনশনের তাই আওয়াজ উঠেছে এ ধর্মঘট বাঁচার ধর্মঘট, জীবিকা রক্ষা করার পাশাপাশি ধর্মঘট নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ধর্মঘট।

মেদিনীপুর শহরে ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মিছিল থেকে স্লোগান উঠেছে, ২৬ নভেম্বর সারা ভারত ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে দেশের জনতা লকডাউন করবে। জিনিসের দাম কমানো থেকে কৃষি আইন বাতিলের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সবংয়ের মহাল, পিংলার জলচক, ঘাটাল, পিড়াকাটা, শালবনি, দাঁতন-সব জায়গাতেই মিছিলে মিটিংয়ে সফল ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ে সোচ্চার মানুষ।

পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে চলছে ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার মিছিল ও পথসভা। ডেবরা ব্লকের লোয়াদা, পশং, গদাধরচক, নারায়ণগড়ের খুরশি, কুশবসান সহ অন্যান্য জায়গায় মিছিল হয়েছে সারের দাম, বীজের দাম কমানো, বিভাজনের রাজনীতি রুখে দেওয়ার শপথ সহ ধর্মঘটের অন্যান্য দাবি আদায়ের প্রশ্নে।

ধর্মঘট সর্বাত্মক করতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্যান অংশের সঙ্গে সাগর, মন্দিরবাজার ও জয়নগর প্রভৃতি জায়গায় সভা আয়োজিত হয়েছে। এই সভাগুলিতে বক্তব্য রাখেন শমীক লাহিড়ী, সুজন চক্রবর্তী, অপর্ণা ব্যানার্জি প্রতীক উর রহমান, পারমিতা ঘোষ চৌধুরী প্রমুখ।

মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল রাজ্যের মানুষ। রাজ্যে আলুর দর ৪০ টাকা কেজিতে ওঠার পর দায় এড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের কৃষি আইনের ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে আলু বাদ দেওয়ায় দাম দেদার বাড়লেও কৃষক উৎপাদন খরচের দামটুকুও পাচ্ছেন না। কেরালা,পাঞ্জাব,রাজস্থানের মতো পাল্টা আইন না এনে পাশ কাটাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ধর্মঘটের সমর্থনে গ্রাম সভাগুলিতে তাই তীব্র সমালোচিত হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

দেশজুড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে মোটরসাইকেল মিছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটার সাতটি অঞ্চল পরিক্রমা করে। তৃণমূলের বাধা ও হুমকি উপেক্ষা করে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের যৌথ উদ্যোগে স্বরূপনগর ব্লকের মালতী হাইস্কুলে কনভেনশন হয়। সিপিআই(এম) সোনারপুর দক্ষিণ এরিয়া কমিটির ডাকে মহামিছিল হয় ধর্মঘটের সমর্থনে। বারাসতে আয়োজিত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নসমূহের গন কনভেনশনের ধর্মঘটের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বরুণ ভট্টাচার্য্য, রামপদ দাস, পার্থ গাঙ্গুলী প্রমুখ। নৈহাটিতে ও সাধারণ ধর্মঘটকে সর্বাত্মক সফল করার ডাক দিয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এবং অন্যত্র সভাগুলিতে বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলের পক্ষ থেকে মহম্মদ সেলিম, গার্গী চ্যাটার্জি, নেপালদেব ভট্টাচার্য প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। হালিশহরের পৌর কর্মচারীরা তাদের সম্মেলন থেকে সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।

বাঁকুড়া, বীরভূম, দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ সহ অন্যান্য জেলাতেও কৃষক সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটির গণ কনভেনশন এবং শ্রমিক কনভেনশন থেকে ধর্মঘট সফল করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে রাজ্য থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে উৎখাত করার প্রত্যয়ও ফুটে উঠছে।