৫৮ বর্ষ ১৪শ সংখ্যা / ২০ নভেম্বর ২০২০ / ৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৭
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
সৃষ্টির অনুপম বৈচিত্র্যে আলোকিত চেতনায় উজ্জ্বল জীবন
সন্দীপ দে
‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবি প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সহ বিশিষ্টরা।
বাংলা সংস্কৃতি জগতের অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর বৈদগ্ধ্য, অনুপম সৃষ্টিশীলতা আর চেতনার বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ে বাঙালির মনোজগতে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। তাই সবার মননে তাঁর স্মৃতির উজ্জ্বল সম্ভার রেখেই চিরবিদায় নিয়েছেন।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কৃষ্ণনগরে তাঁর জন্ম। তাঁদের আদিবাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। তাঁর বাবা মোহিতকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সময় থেকেই তাঁদের পরিবারের সদস্যরা নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন। সৌমিত্রের বাবা মোহিতকুমার কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি বাড়ি আসতেন। কৈশোরে এই বাড়িতেই সৌমিত্রের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। অবসর সময়ে বাবার আবৃত্তি অথবা মা আশালতা দেবীর রবীন্দ্র কবিতা শুনিয়ে শিশুকালে ঘুম পাড়ানোর স্মৃতিই উত্তরকালে তাঁকে কাব্য রচনায় এবং আবৃত্তি শিল্পে প্রণোদিত করে। সেই সঙ্গে তাঁর মধ্যে রবীন্দ্র চেতনাও ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হয়। একই সঙ্গে এই বাড়িতেই অভিনয়ের হাতেখড়ি তাঁর। সৌমিত্রর বাবা তো বটেই, এমনকি দাদুও নাট্যদলে যুক্ত ছিলেন। নিজেদের বাড়ির উঠোনে তক্তপোশের সাহায্যে স্টেজ বানিয়ে বিছানার চাদর দিয়ে পর্দা ও উইংস তৈরি করে নাটকের স্মৃতিকথা সৌমিত্র নিজেই বিভিন্ন সময়ে বলেছেন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন কৃষ্ণনগরের সেন্ট জেমস্ বিদ্যালয়ে। এরপর বাবার বদলির চাকরির সূত্রে বারাসত এবং পরে চলে আসেন হাওড়ায়। মাঝে কিছুদিন ছিলেন দার্জিলিঙে। হাওড়া জেলা স্কুল থেকেই তিনি স্কুল ফাইনাল পাশ করেন। পরে তিনি সিটি কলেজ থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পর্বে পঞ্চাশ-ষাট দশকের কলকাতার সংস্কৃতি, মানবমুক্তির দিশা বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। তাঁর লেখার সূত্রেই জানা যায়, ১৯৫২ সালে লক্ষ্ণৌয়ে গিয়েছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হয়ে। তিনি লিখেছেন, (গণশক্তি) ‘আমি কখনো আইপিটিএ’র সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। ছাত্র রাজনীতিই করতাম। লক্ষ্ণৌয়ে গিয়ে ওরা আমাকে ডেকে গানের দলে ঢুকিয়ে দিল। গান গাইলাম’।
কলেজ জীবনেই নাট্যাচার্য শিশির ভাদুড়ির সান্নিধ্যে আসেন এবং তিনিই সৌমিত্রকে প্রথম কলকাতার থিয়েটারের সঙ্গে পরিচিত করান। তিনি লিখেছেন (গণশক্তি), ‘শিশিরকুমার ভাদুড়ির অভিনয় আমাকে প্রভাবিত করেছে গভীরভাবে। আমি ওঁকেই গুরু মানি। ওঁর মতো অভিনেতা জীবনে আমি কোথাও দেখিনি। বিদেশেও দেখিনি। তাঁর চরিত্রায়ন, স্টেজে হাঁটাচলা, অভিব্যক্তি - এককথায় অনবদ্য ছিল।... ওঁর সঙ্গে একবার অভিনয় করার সুযোগ হয়েছিল। প্রফুল্ল-এ সুরেশের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম।’
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি পেশাদার নাটকের জগতেও তিনি তাঁর অনন্য কীর্তির স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তাঁর অভিনীত নামজীবন, নীলকণ্ঠ, রাজকুমার, ফেরা, চন্দনপুরের চোর, ন্যায়মূর্তি, ঘটক বিদায়, প্রাণতপস্যা, টিকটিকি, হোমাপাখি, দর্পণে শরৎশশী থেকে রাজা লিয়র প্রভৃতি নাটক আজও অনেকের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
কৈশোরেই কবিতা লেখা শুরু করলেও কলকাতায় এসে জীবনানন্দ দাশ, সমর সেন, বুদ্ধদেব বসু, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা পাঠের মধ্যদিয়ে কবিতার বিভিন্ন রচনাশৈলীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় এবং বন্ধু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে কবিতা চর্চার প্রবাহের সূচনা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনায় প্রস্ফুটিত হতে থাকে প্রকৃতি, সমাজ, চারপাশের বিক্ষুব্ধ সময়কাল, বেঁচে থাকার অপরিহার্য অভিজ্ঞতাগুলি সহ তাঁর প্রেম, ভালোবাসা ইত্যাদির অমলিন অনুভব। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উৎসাহে প্রকাশিত হতে থাকে কাব্যগ্রন্থ। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য - জলপ্রপাতের ধারে দাঁড়াব বলে, ব্যক্তিগত নক্ষত্রমালা, শব্দরা আমার বাগানে ইত্যাদি। এছাড়াও তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ - পড়ে আছে চন্দনের চিতা, হায় চিরজল, হে সায়ংকাল, পদ্মবীজের মালা, জন্ম যায় জন্ম যাবে, ধারাবাহিক তোমার জলে, যা বাকি রইল, মধ্যরাতের সংকেত ইত্যাদি।
বন্ধু নির্মাল্য আচার্যের সঙ্গে তিনি সম্পাদনা করেছেন সম্পূর্ণ নতুন চরিত্রের পত্রিকা ‘এক্ষণ’। এই পত্রিকার প্রায় প্রতিটি সংখ্যাই বিষয় সম্ভারে, আঙ্গিকে হয়ে ওঠে সংরক্ষণযোগ্য - অমূল্য। এরমধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সত্যজিৎ রায় কৃত প্রচ্ছদে মার্কস সার্ধশতবর্ষ সংখ্যা।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়েই ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের একজন অন্যতম অগ্রগণ্য, প্রবাদপ্রতিম অভিনেতার স্থান নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৫৯-এ মুক্তি পায় প্রথম ছবি সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’। এই ছবির সূত্রেই চলচ্চিত্র জগতে তাঁর পরিচিতির দুয়ার খুলে যায়। তিনি সত্যজিতের মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন। অপুর সংসার, চারুলতা, তিনকন্যা, কাপুরুষ ও মহাপুরুষ, দেবী, অভিযান, অরণ্যের দিনরাত্রি, সোনার কেল্লা, জয়বাবা ফেলুনাথ, অশনি সংকেত, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু, শাখাপ্রশাখা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সত্যজিৎ রায় ছাড়াও তিনি মৃণাল সেনের পুনশ্চ, প্রতিনিধি, আকাশকুসুম, মহা পৃথিবী এবং তপন সিংহের ঝিন্দের বন্দি, ক্ষুধিত পাষাণ, আতঙ্ক প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করেছেন। চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের ১২টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। তারমধ্যে একটুকু বাসা, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, অমরগীতি প্রভৃতি ছবিতে বিশেষ বিশেষ চরিত্রে পাওয়া যায় তাঁকে। সরোজ দে-র ‘কোনি’ ছবিতে ‘ক্ষিদ্দা’ চরিত্রে তাঁর অভিনয় লড়াইয়ের প্রণোদনা সঞ্চারে এক অনন্য চরিত্রকেই তুলে ধরে। উত্তমকুমারের সঙ্গে অভিনীত সলিল দত্ত’র স্ত্রী এবং দিলীপ রায়ের দেবদাস ছাড়াও অতল জলের আহ্বান, বসন্ত বিলাপ, তিন ভুবনের পারে, অগ্রদানী, বাক্সবদল, বাঘিনী, পরিণীতা, সাত পাকে বাঁধা, ছুটির ফাঁদে, দেখা, আবার অরণ্যে, উত্তরণ, প্রাক্তন, বেলাশেষে প্রভৃতি ছবি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে।
অভিনয়, কাব্যচর্চা, আবৃত্তি পরিবেশনা প্রভৃতি নানা কর্মকাণ্ডে তাঁর দীপ্ত বিচরণের পাশাপাশি তিনি অবসর মুহূর্তে মগ্ন থেকেছেন ছবি আঁকায়। তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনীও হয়েছে।
১৯৬০ সালে তিনি দীপা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের পুত্র কবি সৌগত চট্টোপাধায়, কন্যা নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী পৌলমী চট্টোপাধ্যায়, দৌহিত্র রণদেব বসু। তিনি তাঁর সারাজীবনের সঞ্চিত গ্রন্থরাজি, স্মারক ইত্যাদি দান করে গেছেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সারা জীবন অনন্য কীর্তির জন্য অগণিত দর্শক, গুণমুগ্ধের যেমন অকুণ্ঠ ভালোবাসা-সম্মান পেয়েছেন, তেমনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ২০০৪ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি পান। ২০০৬ সালে পান ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড। ২০১২ সালে ভারত সরকারের ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কারে সম্মানিত হন। ‘সংগীত নাটক আকাদেমি’ পান ১৯৯৮ সালে। ২০১৮-তে ফরাসি সরকারের ‘লিজিওন অফ অনার’ সম্মানে ভূষিত হন। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘বঙ্গ বিভূষণ’ সম্মান প্রদান করেন। ২০১৩ সালে তিনি এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় সহ সৃষ্টির নানা অঙ্গনে নিরন্তর প্রবাহের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট - তা হলো বামপন্থা। সেই অবস্থান থেকে কখনোই সরে আসেন নি তিনি। তাঁর মনে এই রাজনৈতিক সচেতনতার উন্মেষ ঘটেছিল শৈশবই, দাদু এবং বাবা দু’জনেই জড়িয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। তিনি নিজেই লিখেছেন (গণশক্তি): ‘‘১৯৪৫ সাল, আমার দাদা আর আমি স্কুলের ছাদে উঠে ইউনিয়ন জ্যাক পুড়িয়েছিলাম। আমার দাদু হাওড়া বোমা মামলায় জেল খেটেছিলেন, বাবাও এক সময় জেলে ছিলেন। বাঘাযতীন আমাদের বাড়ির লোক ছিলেন। আমার দাদুর বড়ো দিদির ছেলে ছিলেন যতীন্দ্রনাথ। ...যতীন্দ্রনাথ আমার দাদুরই সমবয়সী ছিলেন। আমাদের আদি বাড়িতেই থাকতেন যতীন্দ্রনাথ।’’
বাড়ির এই রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ছোটোবেলা থেকেই নিবিড় পড়াশোনা, বিশেষকরে কলকাতায় ছাত্রজীবনে ভিন্ন মনন-চিন্তনের আবহ তাঁকে আলোড়িত করেছিল। যা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল মার্কসীয় চেতনার সমীপে। ১৯৯০ সালে সাহিত্য আকাদেমি আয়োজিত ‘ব্যক্তি ও বই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেনঃ ‘‘কলকাতায় কলেজে পড়তে এসে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে জড়িয়ে পড়লাম এবং কিছুটা রাজনীতির সঙ্গেও। ছোটোবেলাতেই আমাদের বাড়িতে প্রাক্ স্বাধীনতার স্বাদেশিক আন্দোলনগুলির উষ্ণতার ছোঁয়া ছিল। বাবা, দাদু স্বদেশি করে জেল খেটেছিলেন। সাতচল্লিশের শাসন পরিবর্তন কিন্তু দেশের জনজীবনে তেমন কোনও মুক্তির সন্ধান দিতে পারল না বলেই প্রতীয়মান হলো অল্প কিছুকালের মধ্যেই। প্রথম তারুণ্যের সংবেদনশীল দিনগুলোতে দেশবাসীর দারিদ্র্য শোষণ-পীড়ন যখন মনকে নিয়তই ক্ষুব্ধ করে তুলতো সেই সময় ছাত্র আন্দোলনের স্রোতবাহিত হয়ে মার্কস-এঙ্গেলস-এর কিছু কিছু লেখা আমার কাছে পৌঁছেছিল। তারমধ্যে প্রথমটি ছিল কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো - যার প্রথম লাইনটিই মানব সমাজের ইতিহাস সম্পর্কে যুগান্তকারী চিন্তার সূচনা করেছিল - ‘The history of all hitherto existing society is the history of class struggle’...। ইতিহাসকে এর আগে কেউ কখনও এমন করে দেখেনি।...
কার্ল মার্কসের ভবিষ্যতোক্তিগুলির কতখানি সত্য বা কতখানি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে, কিন্তু মানব ইতিহাসের এই নতুন ব্যাখ্যা আমার কাছে সেদিন যেমন তর্কাতীত বলে মনে হয়েছিল আজও তেমনি সত্য রয়ে গেছে।’’
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মনন জগতে এই চিন্তার সুগভীর প্রভাব সঞ্চারের অনিবার্য পরিণতি হিসেবেই তিনি সম্পৃক্ত হয়েছিলেন বাম আন্দোলনে। তাই তিনি ১৯৫৯ সালে ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী পীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপকুমার, অজিত লাহিড়ী, নৃপেন গাঙ্গুলি, সৌমেন্দু রায় প্রমুখের সঙ্গে বাংলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে গণসংগ্রহ করেছেন, ১৯৬৪ সালে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ময়দানে সভা আয়োজনে নিরঞ্জন সেন (গণনাট্য সংঘ’র সর্বভারতীয় সম্পাদক), অজিত লাহিড়ী, রবি সেনগুপ্ত, নির্মল ঘোষ, উৎপল দত্ত প্রমুখের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, এর আগে ১৯৫৪ সালে তিনি শিক্ষকদের ১২ দিনের অবস্থান আন্দোলনে এসপ্লানেড ইস্টে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার ১৯৬৭ সালে বেঙ্গল মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে সিনেমা হল কর্মীদের ধর্মঘটের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছিলেন।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে সামাজিক-রাজনৈতিক নানা জটিল মুহূর্তে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গতদের সাহায্যে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লেখক শিল্পী সংগঠনের আহ্বানে প্রতিবাদ সভা-মিছিলে অংশ নিয়েছেন। নন্দীগ্রামের শিল্প বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বামফ্রন্ট সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক সমস্তরকম অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে সোচ্চার থেকে দাঁড়িয়েছিলেন বামফ্রন্ট সরকারের পাশে। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বামফ্রন্টের সমর্থনে বক্তৃতা করেছেন। আবার বর্তমান রাজ্য সরকার যখন কপট রাজনৈতিক স্বার্থে অগণতান্ত্রিকভাবে চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত-র ছবি ‘ভবিষ্যতের ভুত’ বন্ধ করার ফতোয়া জারি করেছিল তখন এবং অভিনেতা বিমল চক্রবর্তীর ওপর শাসকদলের দুবৃর্ত্তদের হামলার বিরুদ্ধে অন্যান্য প্রতিবাদী শিল্পীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে প্রতিবাদী সভায় মুখর হয়েছেন তিনি।
এই চেতনাবোধ থেকেই তিনি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার কলঙ্কিত নায়ককে দেশের শাসনক্ষমতার শীর্ষে দেখে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নির্দ্বিধায় তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেছেন জেএনইউ’র আক্রান্ত ছাত্রদের আন্দোলনে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও অকপটে তাঁর সমর্থন ঘোষণা করেছেন, প্রতিবাদের ক্যানভাসে স্বাক্ষর করেছেন।
এই প্রগতিবাদী শিল্পী জীবনের উপান্তে এসেও গণশক্তির শারদ সংখ্যায় সরবে উচ্চারণ করেছেন - ‘এখনও বিশ্বাস করি বামপন্থাই বিকল্প’।