৫৮ বর্ষ ১৪শ সংখ্যা / ২০ নভেম্বর ২০২০ / ৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৭
করপোরেট পঞ্চায়েত!
অমিতাভ রায়
কিঝাক্কমবালম কেরলের একটি পঞ্চায়েত সমিতি। ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত এই পঞ্চায়েত সমিতির ১৭টিতে ২০১৫-এর নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল জয়ী হয়নি। কেআইটিএক্স নামের একটি গারমেন্টস্ কোম্পানির মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছিলেন। সরাসরি কোম্পানির নামে প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। টোয়েন্টি২০ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেন। করপোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি (সিএসআর) বা সংস্থার সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিধি অনুযায়ী কেআইটিএক্স এই বেসরকারি সংগঠন টোয়েন্টি২০ প্রতিষ্ঠা করেছে।
কেআইটিএক্স-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাবু এম জ্যাকব সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে টোয়েন্টি২০ কিঝাক্কমবালম ছাড়া আরও চারটি পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্ভুক্ত সবক’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কিঝাক্কমবালম-এর প্রতিবেশী এই পঞ্চায়েত সমিতিগুলি হলো - মাঝুভান্নুর, আইক্কারানাডু, কুন্নাথুনাডু এবং ভেঙ্গোলা। সবমিলিয়ে পাঁচটি পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে সবক’টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন টোয়েন্টি২০ নাম নিয়ে আদতে কেআইটিএক্স মনোনীত প্রার্থী।
১৯৭৮-এ পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর গ্রাম উন্নয়নের জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থার সাফল্যের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে সংবিধান সংশোধন করে ১৯৯০-এর দশক থেকে দেশের সর্বত্র পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয় এবং সরকারের অনুদান নিয়ে নির্বাচিত পঞ্চায়েত স্থানীয়স্তরে উন্নয়নের কাজ করে। করপোরেট কোম্পানি কেআইটিএক্স বেনামে টোয়েন্টি২০ বেসরকারি সংস্থার সুবাদে কিঝাক্কমবালম-এর পঞ্চায়েত সমিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর নিজের সিএসআর বাবদ বরাদ্দ অর্থ এই পঞ্চায়েতে বিনিয়োগ করে। ফলে রাজ্যের অন্যান্য পঞ্চায়েত সমিতির তুলনায় কিঝাক্কমবালম-এ অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে আরও বেশি জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছে। গ্রাম উন্নয়ন খাতে বাড়তি ব্যয় বরাদ্দের সুযোগ থাকায় টোয়েন্টি২০ অসরকারি সংস্থার প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা আপাতদৃষ্টিতে বেশি। তবে যে কথাটা বলা হচ্ছে না তা হলো - একটা হোক বা পাঁচটা মূল করপোরেট কোম্পানি কেআইটিএক্স-এর সিএসআর বাবদ বরাদ্দ অর্থ কিন্তু একই থাকবে। আইন অনুযায়ী ট্যাক্স দেওয়ার পর বাৎসরিক মুনাফার ২ শতাংশ সিএসআর হিসেবে খরচ করতে হয়। একটার জায়গায় পাঁচটা পঞ্চায়েত সমিতির দখল পেলে স্বাভাবিকভাবেই সিএসআর পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু ততদিনে গ্রামবাসীদের ধোঁকা দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি দখলের কাজ সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আগামীদিনের বিপদসঙ্কেত। কেআইটিএক্স-এর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামী দিনে করপোরেট জগতের রাঘববোয়ালরা দেশের সর্বত্র সমস্ত পঞ্চায়েত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে পারে। গ্রামীণ গণতন্ত্র নিজের মুঠোয় আনার পর সংসদীয় গণতন্ত্র গ্রাস করে নেওয়া তো শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
তথ্যসূত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নভেম্বর ১০, ২০২০।