৫৮ বর্ষ ১৪শ সংখ্যা / ২০ নভেম্বর ২০২০ / ৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৭
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিজেপি’র কৌশলের প্রাথমিক প্রবণতা
গৌতম রায়
বিহার বিধানসভার ভোটে রাজ্য এবং কেন্দ্রের গোটা প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের জোটকে অ্যানে মার্গে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে বিজেপি। বামপন্থীদের পক্ষ থেকে ভোটগণনা ঘিরে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। বিজয়ী বামপ্রার্থীর শংসাপত্র রিটার্নিং অফিসার জালিয়াতি করেছেন, বামেরা এই অভিযোগে সরব হয়েছেন। দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কাকস্য পরিবেদনা। কমিশন শাসকদলের বাইরে নিজেদের বিন্দুমাত্র অস্তিত্বগত প্রমাণ আজ পর্যন্ত রাখতে পারেনি।
এইরকম একটি অবস্থায় কেন্দ্রের শাসক বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ফেলেছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার চলতি মেয়াদ শেষ হবে। বিজেপি’র কাছে এখন পশ্চিমবঙ্গ দখলের বিষয়টি কার্যত ভারত দখলের মানসিকতা নিয়ে চলার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। আসাম, ত্রিপুরার ভোট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় পাশাপাশিই হবে। পূর্বভারত দখল করে বিজেপি এখন চাইছে, তাদের হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী চিন্তাচেতনাকে ক্রমশ উপমহাদেশে সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদকে সংহত করবার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিতে। তাহলে বিজেপি’র পক্ষে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা পর্বের পর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার যে ভোট হবে, সেই ভোটে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছানো। আর উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রশ্নটি আরএসএস–বিজেপি’র কাছে ২০২৪সালের লোকসভা ভোটের নিরিখেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পশ্চিমবঙ্গের ভোট, বিশেষকরে যে রাজ্যটির মানুষের বৌদ্ধিক চেতনার প্রতি গোটা ভারতে একটা প্রবহমান বিশেষ সম্ভ্রমবোধ আছে, সেই রাজ্যে যদি বিজেপি শাসনক্ষমতা দখল করতে পারে, তাহলে সেটিকে তারা তাদের একটা বিশেষ রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবেই দেখবে।
এই লক্ষ্যে স্থির থেকে আরএসএস, পশ্চিমবঙ্গে তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র কৌশলগত দিকে এখন থেকেই বেশ বড়োরকমের নজরদারি করে, অদলবদল আনতে শুরু করেছে। অনেকেরই ধারণা, বিগত ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপি’তে গিয়ে, দলের টিকিট পেয়ে যাঁরা লোকসভাতে গেছেন, তাঁদের সাংগঠনিক গুরুত্ব দিয়ে বিজেপি, নিজেদের দুঃসময়ের সাথীদের প্রতি বিশেষ সুবিচার করছে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যাঁরা বিগত লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপি’তে গিয়ে সাংসদ হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বিজেপি’র মূল মস্তিষ্ক আরএসএস’র সংযোগ ছিল না, সেই ব্যক্তিদের তৃণমূলে অবস্থানকালে - এই তথ্যটি সম্পর্কে আদৌ কি নিশ্চিত হওয়া যায়? বর্তমান নিবন্ধকার তৃণমৃলের বিধায়ক থেকে বিজেপি সাংসদ হওয়া এক ব্যক্তির সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জেনেছেন যে, নোটবন্দির সময়কাল থেকেই, সেই ব্যক্তির রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ বিজেপি’র সুরে। নোটবন্দির উগ্র সমর্থক হিসেবে সেই তৃণমূল বিধায়কের ব্যক্তিগত সহায়ক হিসেবে পর্যন্ত আরএসএস’র এক প্রচারক কর্মরত ছিলেন। তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার জন্যে নিয়মিত মস্তিষ্কপ্রক্ষালন করতেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে, দলীয় সংগঠনকে পুনর্গঠিত করার নাম করে আইটি সেলের নবনিযুক্ত প্রধান অমিত মালবিয়ার যে কার্যক্রম, সেটি কিন্তু হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবিরের আদৌ কোনো নতুন কার্যক্রম নয়। সুরেশ পূজারির জায়গাতে অমিত মালবিয়ার নিয়োগকে একাংশের সংবাদপত্র বিজেপি’র নতুন উদ্যোগ হিসেবে দেখাতে চাইছে।কিন্তু অমিত মালবিয়ার পূর্বসূরি সুরেশ পূজারি, আরএসএস-বিজেপি’র সামাজিক প্রযুক্তির যে ভূমিকর্ষণ করে গিয়েছেন, তাকে আসন্ন বিধানসভার ভোট অনুযায়ী একদিকে ধর্মীয় ও সামাজিক মেরুকরণের লক্ষ্যে পরিচালিত করাই হলো আসল কর্মসূচি।
অপরদিকে একদম সাধারণ মানুষের তৃণমূল কংগ্রেসের শাসন ঘিরে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী মানসিকতা, সেটি যাতে কোনো অবস্থাতেই বামপন্থী শিবিরের দিকে না ঝোঁকে, সেই লক্ষ্যেই সামাজিক প্রযুক্তিতে সময়োপযোগী অদলবদল ঘটানোর তাগিদেই ব্যাঙ্কিং সেক্টর থেকে আরএসএস-এ আসা অমিত মালবিয়াকে আইটি সেলের দায়িত্বে পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ। ধর্মীয় মেরুকরণের যে চেনা রাস্তায় আরএসএস দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’কে হাঁটায়, সেইপথে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যে হাঁটাবে না, তার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই পরিষ্কার। বিজেপি’র জন্যে যে ধর্মীয় মেরুকরণের দরকার হয়, সেই মেরুকরণটা সঙ্ঘের ‘স্বাভাবিক মিত্র’, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বারো, তেরো বছর ধরে, এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে এবং পরবর্তীতে ক্ষমতা ধরে রাখতে করে চলেছেন।
’৪৭-এর স্বাধীনতার পর, প্রায় পঁচাত্তর বছর অতিক্রান্ত। তবু দেশভাগের ক্ষত বাংলার মানুষদের বুক থেকে সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে, এ কথা বলা যায় না। দেশভাগের এই ক্ষতটিকেই সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি এবং দলীয়স্বার্থে ব্যবহার করতেই, বামফ্রন্টের আমলে সংখ্যালঘু মুসলমানেরা বঞ্চিত, তাঁদের জমি কেড়ে নিচ্ছে বামফ্রন্ট সরকার - এই ধরনের বিকৃত সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়েছিলেন মমতা। সেই লক্ষ্যেই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে, সংখ্যালঘু মুসলমানদের উন্নয়নের নাম করে, কেবলমাত্র তাঁদের জন্যে হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ ইত্যাদির কথা বলেছিলেন। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের দিয়ে সেইসবের শিলান্যাসও করেছিলেন। তখন কিন্তু বামপন্থীরা ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল মমতার এই কর্মকাণ্ডের পিছনে, ক্ষমতা দখলের স্বার্থে কি ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক কৌশল আছে,সে সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি।
আনন্দবাজার পত্রিকা এখন (১৬/১১/২০) বিজেপি’র প্রচার কৌশলে আইটি সেলের ভূমিকার কথা বলছে। সঙ্ঘের বিস্তারের কথাও বলছে। সঙ্ঘের এই সব শাখা সংগঠনগুলির বিস্তার ঘিরে কদাচিৎ কিছু বললেও, গোটা কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে আনন্দবাজার কখনোই কিছু বলেনি। মমতা নিজে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইউপিএ-র মন্ত্রী হিসেবেই এমন কিছু অসাংবিধানিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যেগুলি একদিকে মুসলমান সমাজকে বিভ্রান্ত করেছে, অপরদিকে ধর্মীয় বিভাজনের লক্ষ্যে আরএসএস-বিজেপি’র স্বার্থসিদ্ধি করেছে - এ সম্পর্কেও আনন্দবাজার কখনো কিছু বলেনি। মমতার রাজনৈতিক স্বাথসিদ্ধি, ক্ষমতাদখলের লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপ যে সম্পূর্ণভাবে আরএসএস’র রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র একমাত্র রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘সাম্প্রদায়িকতা’র প্রচার, প্রসার এবং প্রয়োগ - এটি যাতে মানুষ বুঝতে না পারেন, সেজন্যে সমস্ত বাণিজ্যিক প্রচারমাধ্যমগুলি কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে।
দেশভাগের ভাবাবেগে যাতে মুসলমান সমাজকে বিভ্রান্ত করা যায়, সে জন্যেই মমতা ভুল উচ্চারণে, ধর্মীয় দ্যোতনাসূচক হিন্দু আরবি শব্দ উচ্চারণ করেছেন। হিজাব পড়ে, মোনাজাতের ভুল ভঙ্গিমায় ফটোশ্যুট করেছেন। আর দেশভাগের ক্ষত উস্কে ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুকেও মুসলিম বিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক করে তুলতে এই আইটি সেল-কে ব্যবহার করে, ‘মমতাজ বেগম’ নামক অভিধা গোয়েবলসের কায়দায় ছড়িয়েছে আরএসএস-বিজেপি। মুসলিম ভোট যাতে নিজের দলের বাইরে না চলে যায়, সেই লক্ষ্যে আরএসএস’র তৈরি করে দেওয়া এই ‘মমতাজ বেগম’-এর ইমেজটিকে প্রচণ্ড ভালোভাবে উপভোগ করেছেন। অথচ ধর্মীয় পরিমণ্ডলের সামান্য কিছু মানুষকে, তাঁদেরই ওয়াকফের টাকা থেকে, দু’চার পয়সা ডোল দেওয়া ছাড়া, তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারীর স্বাধিকার - এইসব নিয়ে একটিও পদক্ষেপ নেননি।
মমতা তাঁর গত প্রায় দশ বছরের শাসনকালে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে আদর্শগত প্রশ্নে কখনো সংঘাতে যান নি। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে, তাঁকে কোমরে দড়ি দিয়ে ঘোরাবার মতো অরাজনৈতিক কথা বলে আসর গরম করেছেন। যেমন একদা কংগ্রেস দলে নিজের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে বুঝে, নরসিংহ রাওয়ের মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, তেমনিই, সেই রাগী ইমেজে শান দিয়েছেন। অথচ নোটবন্দি থেকে পুলওয়ামা, ৩৭০, ৩৫-এ অবলুপ্তি, এনআরসি, এমপিআর, দিল্লি গণহত্যা, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপে প্রধানমন্ত্রী মোদী কর্তৃক রামমন্দিরের শিলান্যাস, কোভিড ১৯ ঘিরে শ্রমআইনকে অকেজো করা, ব্যাপক ছাঁটাই, অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, পরিযায়ী শ্রমিক, ইত্যাদি প্রশ্নে সেখানে প্রতিবাদীই হলেন না। এমন কিছু বিষয় তাঁর নিজের এবং দলের লোকেদের সম্পর্কে চাগিয়ে দিলেন, যার জেরে বিজেপি’র ধর্মীয়, সামাজিক বিভাজনের ভিতর দিয়ে ভোট রাজনীতিতে মেরুকরণের যে ভয়ঙ্কর দিক, সেই দিকটি সম্পর্কে মানুষকে কার্যত ভুলিয়েই দিলেন। মানুষের কাছে এই মুহূর্তের সমস্যা সারদার আর্থিক দুর্নীতি, আমফানে চাল চুরি, ত্রিপল চুরি ইত্যাদির মতো বিষয়গুলিই আসন্ন ভবিষ্যতে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের বিপদের থেকেও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এবং তাৎক্ষণিক সমস্যা হিসেবে উঠে এল। এটাও মমতার আরএসএস’র পরামর্শ অনুযায়ী একটি কৌশলী পদক্ষেপ। এই কারণেই সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সুদূরপ্রসারী সাম্প্রদায়িকতার বিপদ, মৌলবাদের বিপদের থেকে, তাৎক্ষণিক বিপদ, মমতা বা তাঁর ভাইপো অভিষেক বা তাঁর দলীয় সতীর্থদের সীমাহীন দুর্নীতি অনেক বেশি সেই মুহূর্তের বিপদ হয়ে দেখার প্রবণতাটা তীব্র হলো।
মমতা এভাবেই একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে, মুখে ছদ্ম বিজেপি বিরোধিতার লেবাস নিয়ে, আরএসএস-বিজেপি’কে একদম ভূমিস্তরে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, জাতপাতভিত্তিক বিভাজনের প্রচার, প্রসার এবং প্রয়োগের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছেন। অপরদিকে তাঁদের এই সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে, মমতা বা তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা দলীয় সতীর্থদের দিকে ওঠা পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতির প্রশ্নে কার্যত মমতার সুবিধে করে দেওয়া অবস্থান গ্রহণ করেছে কেন্দ্রের পরিচালনাধীন সিবিআই থেকে শুরু করে আরও নানা কেন্দ্রীয়স্তরের তদন্তকারী সংস্থা। ঠিক ভোটগুলির আগে এইসব দুর্নীতি নিয়ে একটু আধটু টানাপোড়েন করে কেন্দ্রীয় সরকার। মমতাও গরম গরম কথা বলে, কেন্দ্রের বিজেপি পরিচালিত সরকারকে ব্যক্তিগত বিদ্বেষপরায়ণ হিসেবে তুলে ধরে, নিজের দলের বেশ ভালোরকমই ভোট রাজনীতির সাফল্য ঘরে তোলেন।
পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস-বিজেপি’র যে সুসংবদ্ধ সামাজিক প্রযুক্তি, যারফলে সমস্তরকমের বিভাজনগুলিকে তীব্র করে মেরুকরণের প্রক্রিয়াকে সফল করে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি, সেই গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে যাতে সাধারণ মানুষ কোনো অবস্থাতেই এতোটুকু ওয়াকিবহাল হতে না পারেন, তার জন্যেই মমতার অসংলগ্ন রাজনৈতিক আচরণ (যেমন চপ শিল্প, সব কাজ করে ফেলেছি, নির্বাচনের হাওয়া উঠলেই চাকরির ঢালাও প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি) আমরা দেখতে পাই। মানুষ যাতে মমতার অসংলগ্ন, অবিবেচক সংলাপগুলিকে একটা রাজনৈতিক দ্যোতনায় দেখে, মমতার প্রকৃত রাজনৈতিক অভিসন্ধি, আরএসএস-বিজেপি’র সামাজিক প্রযুক্তি, সেটির দিকে ভুলেও চোখ না ফেরায়, তাই মমতা এইসব কৌশল নেন।
মমতাকে এই কৌশল নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে যে পরিচালনা করে আরএসএস, তা নিয়ে এতোটুকু সন্দেহের অবকাশ নেই।এইভাবেই একটা চটুল রাজনীতির ধারকবাহক এবং অত্যন্ত মানবিক গুণ সম্পন্না নেত্রী হিসেবে মমতাকে তুলে ধরে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির।ফলে মমতাকে ব্যবহার করে বাংলাজুড়ে ক্ষমতা করায়ত্ত করবার লক্ষ্যে আরএসএস যে নিজের এই মুহূর্তের সবথেকে জোরালো রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘সাম্প্রদায়িকতা’র বিষে বাংলার মাটিকে নীল করে দিচ্ছে, সেদিকে বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতা, কর্মীরই তেমন একটা নজর থাকে না। মমতার মানসিক ভারসাম্যের এলোমেলো অবস্থানজনিত কর্মকাণ্ড, সংলাপ, এইসব ঘিরেই তখন অ-বিজেপি, অ-তৃণমূল রাজনীতির নেতা-কর্মীরা বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে বিজেপি’র দীর্ঘস্থায়ী, সুদূরপ্রসারী ভয়াবহ বিপদের মাত্রাটিকে কার্যত অনেক কম গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়।
তাই এই কৌশলকে আরও ক্ষিপ্র করতেই অমিত মালবিয়াকে ঘিরে নতুন পরিকল্পনা আরএসএস শিবিরে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে লড়াই, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, আপসহীনতার যে ধারাবাহিক ঐতিহ্য আছে, তাকে অকেজো করে, গোটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চাবিকাঠিটা কর্পোরেট দুনিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার মকশোটাই আরও অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে ব্যাঙ্কিং সেক্টরের অমিত মালবিয়াকে বিজেপি’র এই আইটি সেলের প্রধানের দায়িত্ব অর্পণ করবার ভিতর দিয়ে। নির্বাচন প্রক্রিয়াতে সাধারণ ভোটারের অধিকার কতখানি সুরক্ষিত থাকবে আগামীদিনে, বিজেপি’র এই কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত ভোট করাবার প্রবণতা থেকে, তা’ঘিরে প্রবল সংশয়ও ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। অতীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শাসনকালে ভোটাধিকার যেমন উচ্চবিত্ত, উচ্চবর্ণের ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল, সেই ভাবনার দিকে এগোনোর প্রবণতা যে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তির আদৌ নেই, এইকথা এখন আর কোনোভাবেই বলতে পারা যাচ্ছে না।