E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২১ এপ্রিল, ২০২৩ / ৭ বৈশাখ, ১৪৩০

বারাসতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া আটক ছাত্র-যুবদের মুক্তির দাবিতে চলছে প্রতিবাদ-আন্দোলন


বারাসত কোর্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিকাশ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গত ১১ এপ্রিল, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসতে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন, ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে জেলা পরিষদ অভিযান সংগঠিত হয় স্বচ্ছ নিয়োগসহ অন্যান্য দাবিতে।

এই দাবিতে কয়েক হাজার ছাত্র, যুব, মহিলা সমবেত হয় বারাসতের হেলা বটতলা মোড়ে। সেখান থেকে গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহকে উপেক্ষা করে সুবিশাল মিছিল বারাসতের বিস্তীর্ণ এলাকা পরিক্রমা করে পৌঁছায় জেলা পরিষদ ভবনের কাছে। সেখানে রাস্তার উপর ব্যারিকেড করে তাদের পথরোধ করে পুলিশ। ছাত্র যুব মহিলারা এগোতে চায়। পুলিশ শুরু করে লাঠচার্জ। বেশ কয়েকজন মিছিলকারী গুরুতর আহত হন। লুটিয়ে পড়েন মহিলারা। পাশেই আদালত পরিসরে দাঁড়িয়ে থাকা আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানায় শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর লাঠিচার্জের। তাদের সমর্থন করেন আশেপাশের দোকানদারেরাও। তাদের উপরও পুলিশ লাঠি চালায়। আহত হন বেশ কয়েকজন মহিলা আইনজীবী সহ আরও অনেক আইনজীবী। আহত মিছিলকারীদের তুলে এনে শুশ্রূষা করতে থাকেন আইনজীবী ও দোকানদারেরা। ক্ষুব্ধ ছাত্র যুব মহিলাদের চাপে ব্যারিকেড উড়ে যায়। ছাত্র যুবদের ঢেউ আছড়ে পড়ে জেলা পরিষদের গেটের উপর। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকরা জানান যে, ডেপুটেশন নেওয়ার কেউ নেই। ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র যুব মহিলারা। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ প্রতিবাদ জানানোর পর নেতৃত্বরা জানান যে, ডেপুটেশন ই মেল করে জেলা পরিষদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এবং সকলকে এই দাবদাহের মধ্যে সাবধানে বাড়ি ফেরার পরামর্শ দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। ধীরে ধীরে সমস্ত এলাকা থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা চলে যেতে থাকেন।

এরপর আসরে নামেন তৃণমূলের নেতারা। নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করা হয় প্রশাসনকে। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আসরে নামেন জেলার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট। বাড়ি ফেরার জন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত ৯ জন ছাত্র-যুবকে বিনা প্ররোচনায় বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বারাসতে বসবাসকারী ছাত্র যুব মহিলা সংগঠনের বর্তমান এবং প্রাক্তন নেতৃত্বের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ।

খবর পেয়ে থানায় ছুটে যান পার্টি নেতৃত্ব এবং আইনজীবীরা। সেখানে বোঝা যায় কি ভয়ানকভাবে মিথ্যা মামলা সাজানোর কাজ চলছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বেআইনিভাবে ধৃত ১০ জনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি জামিনঅযোগ্য ধারা সহ মোট ১৬টি ধারায় মামলা করা হয়।

পরের দিন বারাসত আদালতে তাদেরকে পেশ করে পুলিশ। তখন দেখা যায় আরও ৯ জন প্রাক্তন ও বর্তমান নেতৃত্বের নামও এই মিথ্যা মামলায় যুক্ত করা হয়েছে।

আদালত কক্ষ উপচে পড়ে আইনজীবীদের ভিড়ে। শতাধিক আইনজীবী ছাত্র -যুব আন্দোলনকারীদের হয়ে মামলা লড়তে দাঁড়িয়ে যান। আর আদালত কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন অগণিত জনতা।

দীর্ঘক্ষণ সওয়াল করেন আইনজীবীরা। সরকার পক্ষের আইনজীবী কোনো কথাই বলতে পারেন না।

পুলিশের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের দাবিকে খারিজ করে ৭ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।

এর ৪ দিন পর ১৭ এপ্রিল এই বন্দি ১৯ আন্দোলনকারীর মধ্যে ৩ জনকে পুলিশ হেফাজতে নিতে চান ৭ দিনের জন্য। এদিনও তার বিরোধিতা করেন আইনজীবীরা। আদালত ৭ দিনের বদলে ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের আদেশ দেন।

এর প্রতিবাদে ১৮ তারিখ বামফ্রন্টের আহ্বানে বারাসতে প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়। সারা জেলায় থানায় থানায় ডেপুটেশন সংগঠিত হয়।

১৯ এপ্রিল বাকি সাতজনকে আদালতে পেশ করা হয়। এদিন আন্দোলনকারীদের হয়ে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন যে, এদেশের সংবিধানের দেওয়া প্রতিবাদ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে এই সরকার। এটা সংবিধান বিরোধী। এই ছাত্র-যুবরা দেশের ভবিষ্যৎ। এদের বিরুদ্ধের মিথ্যা মামলা খারিজ করে এদেরকে অবিলম্বে জামিন দেওয়া হোক। আদালত আরও ৭ দিনের জন্য তাদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।