E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২১ এপ্রিল, ২০২৩ / ৭ বৈশাখ, ১৪৩০

উত্তরপ্রদেশে যোগীরাজ

'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিয়ে পুলিশ হেপাজতেই হত্যাকাণ্ড


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উত্তর প্রদেশে যোগী আদত্যনাথ সরকারের আমলে এনকাউন্টারের নামে একের পর হত্যাকাণ্ড, বুলডোজার রাজনীতির মাধ্যমে চরম নৈরাজ্য চলছে। গত ১৩ এপ্রিল ঝাঁসিতে পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় গ্যাংস্টার আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ আহমেদ। ছেলের মৃত্যুর দু’দিনের মাথায় ১৫ এপ্রিল রাতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরফ আহমেদ। একটি হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে আতিক ও আশরফকে ১৩ এপ্রিল এলাহাবাদের (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৫ এপ্রিল রাতে প্রয়াগরাজে মেডিকেল চেকআপের জন্য আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরফ আহমেদকে নিয়ে যাওয়া হয় কলভিন হাসপাতালে। এইসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন সাংসদ আতিক আহমেদ। সেইসময় আচমকাই তার মাথায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালানো হয়। ঘটনার সময় আতিক আহমেদ এবং তার ভাইয়ের হাতে হ্যান্ডকাপ লাগানো ছিল বলে জানা গেছে। অনেকেরই অভিযোগ, যোগী সরকারের পরিকল্পনা অনুয়ায়ী এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, গুলি চালানোর পর হত্যাকারীরা 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দেয়।

আতিক আহমেদের আইনজীবী বিজয় মিশ্র সাংবাদিকদের জানান, খুব কাছ থেকে আতিক আহমেদ এবং তার ভাইয়ের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি আতিক আহমেদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ১৬ এপ্রিল এক বিবৃতিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো জানিয়েছে, এ এক বীভৎস হত্যাকাণ্ড। পুলিশি হেফাজতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনেই আতিক ও তার ভাই আশরফকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনা বুঝিয়ে দিল, উত্তরপ্রদেশে এখন সম্পূর্ণ নৈরাজ্য চলছে। আইন বলে সেখানে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ব্যাপক পুলিশ প্রহরার মধ্যে এই খুন সরকারি যোগসাজশকেই ইঙ্গিত করছে। উত্তরপ্রদেশে এনকাউন্টারের নামে যেভাবে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই ঘটনাকে দেখতে হবে। আদিত্যনাথ সরকারই এই সবের জন্য দায়ী। হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করাতে হবে আতিক ও আশরফের হত্যাকাণ্ডের। এই খুনের পিছনে যারা আছে, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করতে হবে এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এক ট্যুইট বার্তায় জানান, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি’র যোগী সরকারের আমলে জঙ্গলরাজ চলছে। এই সরকারের অনন্য বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এনকাউন্টারের নামে হত্যাকাণ্ড, বুলডোজার রাজনীতি এবং অপরাধীদের প্রশ্রয়দান। সুনিশ্চিত করতে হবে আইনের শাসন, গ্রেপ্তার করতে হবে চক্রান্তকারীদের এবং তাদের দিতে হবে কঠোর শাস্তি।

ঘটনার পর এক ট্যুইট বার্তায় সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, "উত্তরপ্রদেশে অপরাধ চরমে পৌঁছেছে এবং অপরাধীদের মনোবল বাড়ছে। পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে যখন প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে কাউকে হত্যা করা যায়, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কী হবে। এ কারণে জনমনে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করছে বলে মনে হচ্ছে।"

পুলিশের সামনে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিক আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরফের হত্যার ঘটনায় ১৯ এপ্রিল পাঁচ পুলিশ আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছে প্রশাসন।

যাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তারা হলেন শাহগঞ্জ পুলিশের সিনিয়র অফিসার অশ্বিনী কুমার সিং এবং দুই ইন্সপেক্টর এবং দুই কনস্টেবল রয়েছেন। ইতিমধ্যে এই ঘটনার তদন্তের জন্য যে সিট তৈরি হয়েছে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

প্রাক্তন সাংসদ এবং তার ভাইকে যে তিনজন গুলি করে হত্যা করে তারা হলেন লাভলেশ তিওয়ারি, সানি সিং এবং অরুণ মৌর্য। প্রয়াগরাজে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসে আহমেদ ও তার ভাইকে গুলি করে।

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ১০,৭১৩টি এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে। যাতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৩ জনের। যার মধ্যে সবথেকে বেশি এনকাউন্টার হয়েছে মীরাটে - ৩,১৫২টি। যাতে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগ্রায় বিগত কয়েক বছরে এনকাউন্টার হয়েছে ১,৮৪৪টি এবং ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেরিলিতে ১,৪৯৭টি এনকাউন্টার হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।