E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২১ এপ্রিল, ২০২৩ / ৭ বৈশাখ, ১৪৩০

বিধ্বস্ত পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তুলতে প্রস্তুত হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বঞ্চিত মানুষ

সন্দীপ দে


পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর - একটা সময় এই গোটা অঞ্চলটা যেন তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাস-অত্যাচারের সমার্থক হয়ে উঠেছিল। তখন ছিল অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা। সময়টা ১৯৯৮-৯৯ সাল। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তখন বিরোধী নেত্রী, কেন্দ্রের মন্ত্রী। ভূমিসংস্কার আর বর্গা আইনে জমি হারানো কিছু পুরনো জোতদার,ভূস্বামীদের মদতে সেই সময়ে তিনি কুখ্যাত সব দুষ্কৃতীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন হিংসা-সন্ত্রাসের অভিযান। লক্ষ্য ছিল রাজ্যের ক্ষমতা দখল। অনেকেরই স্মরণে থাকবে ১৯৯৯ সালে কেশপুরের সরাইয়ের মাঠে সভা করে তিনি বলেছিলেন, ‘কেশপুর হবে সিপিএমের শেষপুর’। সেই সময় থেকেই তৃণমূলীদের বর্বরোচিত হিংসা-সন্ত্রাসের অভিযানে সিপিআই(এম) কর্মীদের রক্তে সিক্ত হতে থাকে কেশপুরের মাটি। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে লাল ঝান্ডার কর্মীদের শহিদের তালিকা। আজ পর্যন্ত কেশপুর অঞ্চল ৭৮ জন শহিদের স্মৃতি বহন করছে। রাজ্যের ক্ষমতা দখলের পর শাসক দলের দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন তিন জন সিপিআই(এম) কর্মী। খুন, হত্যার পাশাপাশি সিপিআই(এম) কর্মী-সমর্থকদের ওপর ওদের যে অত্যাচার চলেছে, তা অনেক সময় মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার ছাড়িয়ে গেছে। আজও নিখোঁজ একজন।

লেখার সূচানাতেই তৃণমূলী হিংসা-সন্ত্রাসের এই বৃত্তান্ত উল্লেখের কারণ এবং যা বলা অত্যন্ত জরুরি তা হলো - এত সন্ত্রাস-অত্যাচারের বিভীষিকাময় দুঃসহ অন্ধকার সময় পার করা সত্ত্বেও শুধু কেশপুর নয়, বীভৎস সন্ত্রাসে জেলার বিভিন্ন এলাকাকে কিছুদিন বিপর্যস্ত করে রাখা সত্ত্বেও লালঝান্ডার অস্তিত্বকে মোছা যায়নি। স্বজন হারানো যন্ত্রণা ও দুর্বিষহ অত্যাচারের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও পার্টি কর্মী-সমর্থকদের শক্তহাতে ধরা রক্ত পতাকা কখনো শিথিল হয়নি। কেশপুরে পার্টি দপ্তর জামশেদ আলি ভবনই আক্রান্ত, ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে পাঁচ বার। আর পার্টির কত শাখা অফিস যে ভাঙার পর দখল হয়েছে, তার সংখ্যা অগুণতি।

কেশপুরে শোনা যাচ্ছে ভিন্ন স্বর

কেশপুরের প্রত্যন্তেও এখন অন্য স্বর শোনা যাচ্ছে। এখানকার অত্যাচারিত বঞ্চিত মানুষ দীর্ঘদিন শাসক দলের চোখ রাঙানি,অত্যাচার আর বঞ্চনা সহ্য করে, দিনের পর দিন চোখের সামনে মাত্রাছাড়া লুটের কারবার দেখে এই দুর্বিপাক থেকে এখন মুক্তি চাইছেন।

কেশপুর থেকে ১১ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শহিদ ক্ষুদিরামের জন্মস্থান মোহবনিকে ডানদিকে রেখে খেতুয়ায় এসে স্থানীয় বেশ কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলো। এটা ২নং সিরসা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। এরা যেমন তৃণমূলের লুট আর অপকীর্তির ভুরিভুরি উদাহরণ দিলেন, তেমনি এসবের বিরুদ্ধে অনেকদিনের জমে থাকা ক্ষোভও উগড়ে দিলেন। সিরসা গ্রামের গরিব খেত মজুর বিধান জমাদার, সুনীল মণ্ডলরা জানালেন, তাঁদের মতো অনেকেরই একশো দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা পঞ্চায়েতের মাতব্বররা মেরে দিয়েছে। তাঁরা বললেন, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মলয় ঘোষ নিজের জমিতেই পুকুর কাটার নামে টাকা তুলে নিয়েছে। আদতে সেখানে কোনো কাজই হয়নি। একইভাবে রাস্তার জন্য টাকা বরাদ্দ করে অর্ধেক কাজ কোনোমতে করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। দেখা হলো খেতুয়ার শীতল দাসের সঙ্গে। তিনি এখনো তাঁর সারা শরীরে তৃণমূলী অত্যাচারের ভয়ঙ্কর চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর পিঠে-হাতের নানা জায়গায় মাংসপিণ্ড ফুলে দলা পাকিয়ে আছে। তাঁর মতো একজন হতদরিদ্র দিন মজুরের কাছ থেকেও তৃণমূলীরা দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। ২০১১ সালের পর তিনি অনেকবার এমন অত্যাচারের মুখে পড়েছেন, এমনকী গত বছরও হামলা হয়েছে তাঁর উপর। তবু্ও তাঁকে দমানো যায়নি।

খরশু গ্রামের সুকুমার আরি, কান্ত রায়, ভরত আরি, নিতাই আরি এবং তোড়িয়ার বিকাশ ভূঁইয়ারা সকলেই গরিব খেত মজুর। সকলের মুখেই শুধু তৃণমূলীদের চুরি আর লুটের ফিরিস্তি। তাঁদের কথায় উঠে এলো রাস্তা তৈরি, পুকুর ও খাল কাটা ইত্যাদিতে দেখানো হয়েছে ১০০ দিনের শ্রম দিবস, অথচ কাজ হয়েছে মেরেকেটে ৩০ দিন। তারও মজুরি ঠিকঠাক জোটেনি। রাজগ্রামে সজলধারা প্রকল্পে ৯ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে বলে খাতায় কলমে দেখানো হয়েছে, কিন্তু গ্রামের মানুষ জল পায়নি। তৃণমূলীদের এমনই আরও সব কীর্তি-কলাপের কথা জানালেন তাঁরা, একইসঙ্গে ক্ষোভের সঙ্গেই জানালেন কীভাবে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা। এখন তাঁরা মনেপ্রাণে এই বঞ্চনার অবসান চাইছেন।

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও সিপিআই(এম) নেতা রামেশ্বর দলুই বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। তখন জেলা পরিষদও ছিল বামফ্রন্ট পরিচালনাধীন। কিন্তু তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় এসে গায়ের জোরে সব কিছুই দখল নেয়।শুরু হয় ব্যাপক সন্ত্রাস। শুধুমাত্র সিপিআই(এম) করার জন্য অসংখ্য গরিব মানুষকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে। পাট্টার রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও জমিতে চাষ করতে পারেননি অনেকে। উচ্ছেদ করা হয়েছে বর্গাদারদের। সেইসঙ্গে চলেছে সীমাহীন অত্যাচার। গ্রামের মানুষেরই অভিযোগ, এই অঞ্চল থেকে কম হলেও অন্তত ১৫ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে গরিব মানুষদের কাছ থেকে। চৌকিঘাটা ৮নং পঞ্চায়েতের গরিব আদিবাসী গ্রামে তৃণমূলী দুর্বৃত্তরা কী ভয়ঙ্কর অত্যাচার আর লুটপাট করেছে,আজও তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছেন সেখানকার মানুষ। একদিকে এই অত্যাচার-লুট, অন্যদিকে পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক কাজ শিকেয় তুলে শুরু হয় দেদার লুটের কারবার।

উন্নয়নের সূচনা বাম আমলে

বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বিকেন্দ্রীকৃত পঞ্চায়েত ব্যবস্থার হাত ধরে কেশপুর ধীরে ধীরে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে থাকে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দপ্তর তৈরি, পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব বাড়ি নির্মাণ, স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, সমস্ত গ্রামে স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গড়া, আগের তৈরি স্কুলগুলির উন্নতিকরণ, প্রতিটি পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক, হিমঘরের ব্যবস্থা, বিদ্যুদদয়ন, গ্রামীণ রাস্তা তৈরি, শহিদ ক্ষুদিরাম বসু নামাঙ্কিত প্রেক্ষাগৃহ ইত্যাদি তৈরিতে বিরাট ভূমিকা ছিল তৎকালীন জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতের। এই প্রসঙ্গেই উল্লেখের দাবি রাখে, মূলত বামপন্থীদের উদ্যোগেই কেশপুরের ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষের সাহায্যে গড়ে উঠেছে সুকুমার সেনগুপ্ত কলেজ। মোহবনিতে শহিদ ক্ষুদিরামের জন্মস্থানকে কেন্দ্রকরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণও একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।

তৃণমূল জমানায় বিধ্বস্ত পঞ্চায়েত ব্যবস্থা

উন্নয়ন অভিমুখী সেই কেশপুরকে ঘৃণ্য রাজনীতির স্বার্থে অশান্ত করে তোলে তৃণমূল কংগ্রেস। স্তব্ধ হয় গরিব মানুষের জন্য কল্যাণকর প্রকল্প রূপায়ণ ও যাবতীয় উন্নয়ন। স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চায়েতের কর্মকাণ্ডে মানুষের অংশগ্রহণ এবং অধিকার রুদ্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় লুটের রাজত্ব, যা ব্যাপক আকার নেয় ২০১৩ সাল থেকেই। আর ২০১৮-তে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নামে যা হয়েছে তা প্রহসন,জাল জোচ্চুরি যা-ই বলা হোক না কেন তা কমই বলা হবে। বর্তমানে আবাস প্রকল্পে,একশো দিনের কাজে দুর্নীতিতে গোটা ব্লকেই শাসক দল রেকর্ড তৈরি করেছে। বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে যে সামাজিক বনসৃজন হয়েছিল,তার অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন। গাছ কেটে বিক্রি করে তার টাকা লুট হয়ে গেছে। তৃণমূলের এই সমস্ত অপরাধকে আড়াল করে চলেছে পুলিশ প্রশাসন। এটা বিশেষকরে শুরু হয়েছিল এক সময়ের এস পি,যিনি তৃণমূল নেত্রীকে প্রকাশ্যে ‘মা’ বলেও সম্বোধন করেছিলেন, তাঁর আমল থেকে। তিনি চেয়েছিলেন কেশপুর সহ গোটা জেলা থেকে লালঝান্ডা মুছে দিতে। কিন্তু হাজারো অপচেষ্টা সত্ত্বেও পারেননি। পরে অবশ্য তিনি বিশেষ কোনো কারণে তৃণমূল সখ্য ছেড়ে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে যোগ দেন বিজেপি-তে। তাঁর সময় থেকেই সিপিআই(এম) কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা, জেলে পোরা কী না হয়েছে! এখনো কেশপুরে শাসক দল চলছে কার্যত পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই। মনে হবে যেন পুলিশই শাসক দল চালাচ্ছে। অনেক অত্যাচার ও বঞ্চনা সহ্য করে কেশপুরের মানুষ এখন পরিত্রাণ চাইছেন। তাই বুথে বুথে চলছে আলাপ আলোচনা, আগের মতো মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে জোট বাঁধার কাজ।

জেলাজুড়েই গ্রামীণ মানুষ পরিত্রাণ চাইছেন

হিংসা-সন্ত্রাসে দীর্ণ, শাসক দলের বেপরোয়া দুর্নীতিতে ক্ষুব্ধ বঞ্চিত কেশপুরের মানুষের যে উপলব্ধি, তার আভাস মিলবে গোটা জেলা জুড়েই। নারায়ণগড় ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েতের ২৭০ টি বুথের কর্মীদের নিয়ে সভা। বেলদা গঙ্গাধর একাডেমির বিশাল প্রাঙ্গণে ছিল সভার আয়োজন। সভার মূল বক্তা সূর্য মিশ্র। ছিলেন পার্টির প্রবীণ নেতা দীপক সরকার, জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ, তাপস সিনহা সহ আরও অনেকে। প্রখর রোদের মধ্যে মিছিল করে এসেছিলেন প্রায় দু'হাজারেরও বেশি মানুষ। এই মানুষেরা ব্লকের ২৭০টি বুথের অগণিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছিলেন প্রতিকারের আশায়। এখানে এসেও অনেকের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেই সীমাহীন দুর্নীতি আর চুরির প্রসঙ্গই উঠে এলো। একশো দিনের কাজ আর আবাস যোজনায় চুরি, কাটমানির উদাহরণ অগণ্য। শৌচাগার নির্মাণের জন্য মানুষের কাছ থেকে ১১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা দেবার কথা পঞ্চায়েতের। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই শৌচাগার মেলেনি। আবার যে ক’জনের মিলেছে, সেই ছবি দেখিয়ে বাকিদের টাকা লুট হয়ে গেছে। এসব নিয়ে যখন পঞ্চায়েতের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে,তখন ১৪ নং খুরশি অঞ্চলে জয়েন্ট বিডিও অনুসন্ধানে যান, রাতারাতি ঠিকাদারকে দিয়ে কিছু শৌচাগার তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তা সবার জন্য হয়নি। ঢালাই রাস্তা, কালভার্ট, পাকা রাস্তা, বিদ্যুতের আলো ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে যা টাকা বরাদ্দ হয়েছে,তার খুব বেশি হলে ৩০ শতাংশ খরচ করে,বাকি টাকা তৃণমূলীরা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছে। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই এগুলোর যা পরিণতি হবার কথা তাই হয়েছে। হেমচন্দ্র পঞ্চায়েতের সসীমদা গ্রামের খেত মজুর অচিন্ত্য বারিক, রবি নায়েক, বেকার যুবক অমল জানা সবারই প্রায় একই অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের একশো দিনের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবাস যোজনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় অনেকের নামে ২০ হাজার টাকা করে এসেছে। সেখান থেকে কাটমানি আদায় হয়েছে। তারপর সব বন্ধ। বাকি টাকা সব উধাও। এখানে অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল, তৃণমূলের এই সমস্ত দুর্নীতি এবং গরিব মানুষের অধিকার কেড়ে নেবার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে বার বার ডেপুটেশন, বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা মেলেনি। অন্যদিকে শাসক দল ও পঞ্চায়েতের সমস্ত স্তরে নেতা-মাতব্বরদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির বহর অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে। কিন্তু তাদের কোনো চক্ষুলজ্জা নেই।

মানুষ চাইছেন জেলার পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে

এই জেলায় সাক্ষরতা ও জনশিক্ষা প্রসার এবং স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী গঠনের উদ্যোগ একটা সময়ে জন আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল। বামফ্রন্ট সরকার গ্রামাঞ্চলে শুধুমাত্র স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী গঠনই নয়, পিছিয়ে পড়া মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে আয় বৃদ্ধিমূলক নানা কর্মসূচি নিয়েছিল। এসব এখন অতীত। উলটে কিছু স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীকে তৃণমূল কংগ্রেস এখন তাদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। আদিবাসী উন্নয়ন সহ অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে পঞ্চায়তের মাধ্যমে উন্নয়নের যে নানা প্রকল্প রয়েছে, তাদের কী কী অধিকার রয়েছে, সেসব গ্রামীণ মানুষের জানার কোনো সুযোগ নেই এখন। সোশ্যাল অডিটের ব্যাপারটাই উঠে গেছে। গ্রাম সংসদ বৈঠক আর বসে না। বামফ্রন্ট সরকারের আমলের সেই বিকেন্দ্রীকৃত পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, গ্রামীণ মানুষকে যুক্ত করে মানুষের উন্নয়নের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ যে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন, তা আজ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে উপলব্ধি করতে পারছেন। কারণ, তাঁরা দেখেছেন এই জেলা অবিভক্ত থাকার সময় থেকেই পঞ্চায়েতের কাজে গোটা রাজ্যে নানা ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত রেখেছিল। মানুষ এখন সেই ঐতিহ্যই ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। মানুষ যাতে এবারে আর কোনোভাবেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিত হতে না পারে সেজন্য স্বেছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা হচ্ছে। তৃণমূলী দুর্বৃত্তদের লুটের পঞ্চায়েতের অবসান ঘটিয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার লক্ষ্যে তাই জোরালো প্রস্তুতি চলছে বুথে বুথে।