৬০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২১ এপ্রিল, ২০২৩ / ৭ বৈশাখ, ১৪৩০
মুছে ফেলা ইতিহাসঃ দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ মুঘল সাম্রাজ্য
রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়
১১ এপ্রিল ২০২৩। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য পুস্তক থেকে বাদ। এই শিরোনাম এখন সব সংবাদপত্রে। সারা দেশে যে স্কুলগুলি এনসিআরটি’র বই পড়ায়, সেই ছাত্ররা কোনো দিন জানবে না যে, মুঘল সাম্রাজ্য ভারতবর্ষের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। কেন্দ্রীয় শাসকদল পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের জন্য হালে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি তার অন্যতম। কিংস অ্যান্ড ক্রনিকলসঃ দ্য মুঘল কোর্টস (১৬-১৭ শতক) এই শীর্ষক অধ্যায়টি যখন সম্পূর্ণ সরিয়ে দেওয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে কিছু প্রশ্ন ওঠে। উত্তরে কর্তাব্যক্তিরা জানান - কোভিড চলাকালে শিক্ষকরা কোর্স শেষ করতে পারেন নি। ছাত্ররা এত ভার নিতে পারছিল না, তাই এই বিশেষ অধ্যায়টি বাদ দেওয়া হয়। অন্যত্র মুঘলদের উল্লেখ আছে। মুঘল ইতিহাস তো বাদ পড়েনি।
পাঠ্যপুস্তক সংশোধনীতে শুধু মুঘলরা নন, বাদ পড়ছে গণআন্দোলন (Rise of Popular Movements), ভারতের রাজনীতি স্বাধীনতার পর, আরএসএস-এর উত্থান, গান্ধী হত্যা ও গডসের ভূমিকা। অবশ্য শুধু দ্বাদশ শ্রেণির বই নয়, দশম ও একাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে বাদ পড়ছে সেন্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ডস, ক্ল্যাশ অব কালচারস ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভেলিউশন।
এখন শোনা যাচ্ছে ২০২২ সালের জুলাই মাসে রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়, সংসদের শিক্ষা সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি ‘এনসিআরটি’র পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছে। ইতিহাসের সাথে সামঞ্জস্য নেই এমন তথ্য বই থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। জাতীয় বীরদের সম্পর্কে থাকা বিকৃত তথ্যও বই থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে ও ভারতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালকে সমান গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হবে। খবরটি প্রচার হওয়া মাত্র তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। ঐতিহাসিকরা প্রতিবাদ করেন, সঙ্গে থাকে ছাত্র সংগঠন এসএফআই।
শিক্ষাবিদরা সংবাদগুলি বিশ্লেষণ করে দেখান যে, শাসকদল বহুদিন আগে থেকেই তাদের পরিকল্পনা কাজে লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ২০১৮ সালে এনসিআরটি’র স্কুল সিলেবাসের বহর কমানো নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর। তিনি জানিয়েছিলেন, বিএ, বি কম কোর্সের চেয়েও বড়ো এনসিআরটি’র স্কুল সিলেবাস। সেজন্য ২০১৯ থেকে এনসিআরটি’কে সিলেবাস অর্ধেক করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনসময়েই, ইতিহাসের পাতা থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের মতো অধ্যায় বাদ দেওয়া হচ্ছে কেন এবং তার যুক্তি কী? - কখনই বলা হয়নি।
শাসকদল যতই অস্বীকার করুক, এনসিআরটি’র সিলেবাস পরিবর্তন যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা স্পষ্ট হয় বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের প্রকাশ্য বক্তব্যে। কপিল মিশ্র জানান যে, মুঘল মানেই তো চোর, পকেটমার আর লুঠেরা, তাদের নাম ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়াতে ইতিহাস পাঠ উন্নত হবে।
এই ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে সারা দেশের ইতিহাসবিদরা সোচ্চার হলেন ১১ই এপ্রিল। ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট কোশভন ভেলুহাট ও সেক্রেটারি সৈয়দ আলি নাদিম রিজাভি দেশের সব ইতিহাসবিদের কাছে আহ্বান জানালেন, ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হতে। তাঁদের মতে শাসকদল ইতিহাসের পাঠক্রমে একাধিকবার হস্তক্ষেপ করেছে। ইতিহাসের কোনো যুক্তি না মেনে তারা ইউজিসি’র মাধ্যমে বিএ ক্লাসের পাঠ্য ইতিহাসের বইগুলিতে বিকৃত তথ্য প্রচার করেছে। যেমন ভারতবর্ষই ছিল আর্যদের বাসস্থান। মহাকাব্যগুলি হলো ইতিহাসের আকর গ্রন্থ। প্রাচীন যুগে এদেশে জাতিভেদ প্রথা ছিল না, তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুসলমানদের আগমনের ফলে। মধ্য যুগের ক্ষেত্রে প্রথমেই আক্রমণ করা হয়েছে মুঘলদের। পাঠ্যপুস্তকগুলিতে আকবরের উদারনীতি, সুল-হি-কুলের মতাদর্শ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এইভাবে মধ্যযুগের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে গড়ে তোলা হয়েছে এক একরৈখিক, সাম্প্রদায়িক ইতিহাস। যা ইতিহাস রচনার সব যুক্তিকে অস্বীকার করে। এর বিরুদ্ধে ইতিহাসবিদ, ইতিহাসের ছাত্র ও সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেস তাদের সঙ্গে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে অনুরোধ জানান।
আমাদের আজকের আলোচনার প্রথম প্রশ্ন হলো - হিন্দুত্ববাদীদের কাছে ইতিহাস এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ল কেন? আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে ভিত্তি করেই জাতিসত্তার নির্মাণ হয় এবং শাসকদলের রাজনৈতিক সব ধরনের কার্যকলাপকে অতীতের নিরিখে বৈধতা দেওয়া যায়। মতাদর্শ অনুসারে গোলওয়ালকর ছিলেন আরএসএস’র প্রধান প্রবক্তা। ১৯৪০-এর পর থেকেই গোলওয়ালকর হিন্দু-আর্য সংস্কৃতির কাল্পনিক ইতিহাস বিরোধী তত্ত্ব প্রচার করতে থাকেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী হিন্দুরা ভারতের আদত ভূমিপুত্র। এই যুক্তিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা, বিশেষত মুসলমানরা বহিরাগত দস্যুতে পরিণত হন। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ এবং হিন্দু বনাম মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের একটি নিটোল নকশা তৈরি হয়। এই সময় থেকেই জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে, বিশেষত শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হিন্দু জাতীয়তাবাদকে একটি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হতে থাকে।
স্বাধীনতা পাওয়ার পর জাতীয় শিক্ষানীতির যে রূপরেখা নির্মাণ করা হয়, তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর পৃষ্ঠপোষক আরএসএস’র শিক্ষাক্ষেত্রে যে ঘোষিত উদ্দেশ্য, তার মধ্যে মূলগত ফারাক রয়েছে। এটা ঠিক যে সবার জন্য শিক্ষা, যে রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব তা ঔপনিবেশিক ও প্রাক্ ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতা থেকেই গৃহীত। শিক্ষানীতি নির্ধারণ ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে কখনো-কখনো সম্প্রদায়, শ্রেণি বা জাতপাত নিয়ে পক্ষপাতদুষ্টতা থাকলেও এই নীতি ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্বন্ধে সচেতন এবং সাম্যের ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথম থেকেই শিক্ষা হলো সংবিধানের যুগ্ম তালিকাভুক্ত। ফলে আঞ্চলিক সংস্কৃতির বিভিন্নতাকে এর মধ্যে স্বীকার করে নেওয়া হয়। কংগ্রেস আমলে এই আদর্শকে কার্যকর করবার ক্ষেত্রে নানা বাধা ছিল, সমাজের দুর্বল অংশ বহুবার বঞ্চিত হয়েছে, কিন্তু নীতিগতভাবে রাষ্ট্র এর বিপরীতে যেতে পারেনি। প্রথম থেকেই সংঘ পরিবার এই শিক্ষানীতিকে যথেষ্ট জাতীয়তাবাদী বলে মনে করেনি।
সংঘ পরিবারের বিকল্প শিক্ষানীতির প্রকল্প খাতায়-কলমে শুরু হয় ১৯৭৪ সালে অখিল ভারতীয় শিক্ষা সংস্থান চালু হবার সঙ্গে সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে ওঠে নানান নামে। এদের শিক্ষকদের নিয়োজিত হবার আগে পাঁচ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়, যাতে শিক্ষায় হিন্দু ঐতিহ্য বিষয়ে তাঁরা পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
১৯৯৮ সালে প্রথম এনডিএ সরকার গঠিত হবার পর এই প্রক্রিয়া আরও নানাভাবে জোরদার হয়। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে যেকটি স্বশাসিত গবেষণা, শিক্ষা, পরিকল্পনা এবং নীতি-নির্ধারক সংস্থা ছিল, যেমন আইসিএইচআর, আইসিএসএমআর, এনসিইআরটি, ইউজিসি - সবকটি স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা হারায়। সরকারি হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের অংশ হিসাবে তাদের বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র পড়াতে হয়। কর্মকাণ্ড নামে ফলিতবিদ্যার এক শাখায় প্রশিক্ষিত পুরোহিত আর যোগ বিশারদ তৈরি করা হয়।
২০০৯ সালে মন্ত্রকের এক নির্দেশে এনসিইআরটি’র ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক থেকে একতরফাভাবে কিছু আপত্তিকর অংশ ছেঁটে ফেলা হয়। যে সব অংশ আপত্তিকর বলে বাদ দেওয়া হয়, তার মধ্যে ছিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - যেমন ভারতবর্ষে বর্ণব্যবস্থার উদ্ভব ও বিবর্তন। এইসব বিষয় আলোচনার জন্য কোনো পেশাদার ঐতিহাসিকদের ডাকা হয়নি। এক বছর পরে তড়িঘড়ি করে পুরনো বই পাল্টে নতুন পাঠ্যপুস্তক তৈরি হয়। সেইগুলি সম্পর্কে কিছু সমালোচনা হয়, যা শাসকদল কোনভাবে গ্রাহ্য করে না। যদিও এরপরেই সরকার উচ্চশিক্ষার পাঠক্রমের একটি শুদ্ধিকরণের চেষ্টা শুরু করে।
এটা ঠিক যে, ভারতবর্ষের ইতিহাসে পর্বভাগ অঙ্কের যুক্তিতে নয়, নির্ধারিত হয় বিশেষ সময়ে, বিশেষ মতাদর্শের দ্বারা। প্রাক্ দ্বাদশ শতাব্দীকে প্রাচীন ও হিন্দু হিসাবে চিহ্নিত করেন প্রথমে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদরা, পরে সেই কাঠামোয় প্রলেপ চড়ান কিছু জাতীয়তাবাদী লেখক। এঁদের ইতিহাস চিন্তায় যে পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি হয়, তাতে প্রাচীন হয় ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ। যার ঠিক বিপরীতে মুসলমান বা অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগ। প্রাচীন যুগের ধ্বংসের ওপর নির্ভর করে মধ্যযুগের আবির্ভাব। এঁদের মতে হিন্দু সভ্যতাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে মুসলমান রাজশক্তি নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করে। একেই এঁরা অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগ বলে চিহ্নিত করেন। ক্রমশ এর থেকেই জন্ম নেয় হিন্দু বনাম মুসলমান দ্বিজাতি তত্ত্ব।
কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, যে সব আকর গ্রন্থের সূত্র ধরে ইতিহাস রচনা সম্ভব হয়, আমাদের দেশে তার প্রাচীনতম সংকলন রয়েছে ধর্মে। এই বিশ্বাস প্রথমে ঔপনিবেশিক ঐতিহাসিক জেমস মিলের মধ্যে লক্ষ করা গেলেও পরবর্তীকালে রমেশচন্দ্র মজুমদার, যিনি ভারতীয় বিদ্যাভবনের বহু খণ্ডে প্রকাশিত ভারতীয় ইতিহাসের সম্পাদক ছিলেন তাঁরও ঘোষিত মত। কিন্তু এখানেও ‘হিন্দু’ হিসাবে পরিচিত রমেশচন্দ্র মজুমদার অনুসরণ করেছিলেন ঐতিহাসিকের কিছু যুক্তি। প্রায় একইসময়ে ইতিহাস রচনা করছিলেন আর জি ভান্ডারকর। ইরফান হাবিবের মতে তাঁর কাজ - ‘আ পিপ ইনটু দ্য আরলি হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া ১৯২০’ এখনও ঐতিহাসিকদের কাছে একটা উদাহরণ হিসাবে কাজ করে। ভান্ডারকর অতীত সংক্রান্ত তথ্য পুনরুদ্ধার করার জন্য ঐতিহাসিক পদ্ধতিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করেন। ফলে তাঁর লেখা কোনো মতেই সাম্প্রদায়িক নয়।
সাম্প্রদায়িকতার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইতিহাসকে নিজের ইচ্ছামত ঢেলে সাজানো। এর ফলে তারা কল্পনা করেন এক আদর্শ হিন্দু রাষ্ট্র। এবার তাকে কোথায় স্থান করে দেওয়া যায়? তার সমাধান করা হয় হিন্দুত্ববাদীদের কাছে প্রাচীন ভারতবর্ষে। ইতিহাসকে যে বিকৃত করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক যুক্তিতে, সে সম্পর্কে কারুর খেয়ালই হয় না।
হিন্দুত্ববাদীরা এই সাম্প্রদায়িক মতাদর্শকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সরকারিভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে কুসংস্কারের অদ্ভুত এক মিশেল যা দিয়ে সৃষ্টি করা যাবে এমন একটি বিষয়, যাকে বলা চলে (Counter History) প্রতি-ইতিহাস, এভাবে একগুচ্ছ অতিকথা ও উদ্ভাবনের সহায়তায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে অতীত সম্পর্কে এমন একটি ভাষ্য - ‘ন্যারেটিভ’ যা এখনকার শাসকদের স্বৈরতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক নীতিসমূহকে সরাসরি ন্যায্যতা দেয়। অধুনা আমরা ইতিহাস চর্চার একটি সংকটের মধ্যে আছি। যেখানে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পশুশক্তি প্রয়োগ করে হত্যা করেছেন একাধিক বুদ্ধিজীবীকে। তাঁদের অপরাধ? তাঁরা প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করে দেখাতে চেয়েছিলেন যে - ভারতীয়রা একটি বহুভাষী, বহু সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাদের শুধু দুটি ধর্ম সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে দেখলে চলবে না। ১৯৯২’র ৬ ডিসেম্বর যখন এক উন্মত্ত জনতা বাবরি মসজিদ নামে খ্যাত একটি মধ্যযুগীয় সৌধকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তখন থেকেই ভারতের ইতিহাস হয়ে দাঁড়ায় একটি যুদ্ধক্ষেত্র। একদল হিন্দুত্ববাদী অন্য দল ‘সেকুলারিস্ট’ যাদের ঠাট্টা করে বলা হতে থাকল সিউডো সেকুলারিস্ট। শুরু হলো বই পোড়ানো, ঐতিহাসিকদের উপর আক্রমণ, হুসেনের মতো বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের দেশ থেকে নির্বাসন। লড়াইটা আর ক্লাসরুম আর সেমিনার হলের চার দেওয়ালের মধ্যে রইল না। আজ সেই রণক্ষেত্র থেকেই বলছি আমাদের ইতিহাস মুছে দেওয়া চলবে না।
সূত্রঃ
● The Wire, 13 April, 2023.
● ABP Ananda Live, 12 April, 2023.
● ইরফান হাবিব, ‘ইতিহাসের ওপর সাম্প্রতিক হামলা’, মার্কসবাদী পথ (৪২ বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০২৩; পৃঃ ৯-১৫)।
● প্রীতা ভট্টাচার্য - ভারতঃ লোকতন্ত্রের জননী? সরকারি হুকুমতের কবলে ইতিহাস। মার্কসবাদী পথ (৪২ বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০২৩; পৃঃ ৪৭-৫৬)।
● প্রীতা ভট্টাচার্য, তিতাস চক্রবর্তী - আরএসএস ও ইতিহাসের পঠন। সম্পাদনা - মালিনী ভট্টাচার্য, দেবযানী সেনগুপ্ত - শিকড় থেকেঃ একটি সমকালীন রচনা সংকলন, কলকাতা-২০২২ পৃঃ ৫১-৫৬।