৫৮ বর্ষ ২য় সংখ্যা / ২১ আগস্ট ২০২০ / ৪ ভাদ্র ১৪২৭
রক্ষা করতে হবে দেশের স্বাধীনতা,সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে
স্বাধীনতা দিবসে আলোচনায় সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিজেপি-আরএসএস-র শাসনে দেশের সামনে যে ভয়াবহ বিপদ তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় জাতি, ভাষা, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ১৫ আগস্ট ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে সিপিআই(এম) আয়োজিত ফেসবুকে এক আলোচনায় (ওয়েবিনার) নেতৃবৃন্দ এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে যে ‘আত্মনির্ভরতা’, ‘নতুন ভারত’-এর কথা উল্লেখ করেছেন, তার তীব্র সমালোচনা করে সিপিআই(এম)-র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, মোদীর ভারত আসলে বিদেশি কর্পোরেটের কাছে আজ্ঞাবহ থাকা। তীব্র গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই কেন্দ্রের দেশবিরোধী নীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
দেশে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা ও তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবসে দেশের বর্তমান অবস্থা এবং সিপিআই(এম)-র সময়োচিত ভাবনা ও দায়িত্ব-কর্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে সামাজিক মাধ্যমে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। ‘দেশের স্বাধীনতা রক্ষা’ শীর্ষক এই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)-র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত, মানিক সরকার, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এই আলোচনাসভা পরিচালনা করেন পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত। পলিট ব্যুরো সদস্যদের আলোচনার বিষয় ছিলঃ ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতাঃ এগিয়ে যাবার পথ’ - সীতারাম ইয়েচুরি; ‘স্বাধীন ভারতে জাতীয় সংহতি’ - প্রকাশ কারাত; ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের শিক্ষা’ - পিনারাই বিজয়ন; ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয় ঐক্য’ - সূর্যকান্ত মিশ্র এবং ‘আক্রান্ত গণতন্ত্র - মানিক সরকার।
এই আলোচনায় কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে কর্পোরেটদের কাছে দেশকে বিকিয়ে দিচ্ছে, সে প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণে যে আত্মনির্ভরতার কথা বলেছেন, তা আসলে আত্মসমর্পণ। তা আমাদের দেশের সংবিধানে উল্লিখিত ভারত থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। তিনি অভিযোগ করেছেন, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা যেভাবে জলের দরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, তাতে আত্মনির্ভরতার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। তিনি যে ‘নতুন ভারত’-এর কথা বলেছেন, তা আসলে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের পরিবর্তন ঘটানো।
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে ৫ আগস্ট রাম জন্মভূমির ভিত্তি স্থাপনকে ‘প্রকৃত স্বাধীনতা’ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা নস্যাৎ করে সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই ছিল দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে পৌঁছানো। অথচ দেশ এখন প্রত্যক্ষ করছে ধর্মীয় মেরুকরণ, বিদ্বেষ এবং হিংসা। সংবিধানের স্তম্ভকেই এরা দুর্বল করে দিচ্ছে।
সীতারাম ইয়েচুরি আরও বলেন, বিজেপি’র শাসনে দেশের আইনসভা, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, ইডিসহ সংবিধানের সমস্ত স্তম্ভই আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এরা শাসন ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস হচ্ছে। কেন্দ্রের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত হচ্ছে। আজ সামাজিক ন্যায়, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক-সামাজিক সার্বভৌমত্ব সমস্ত কিছুর ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে। তিনি বলেন, লক-ডাউনের সময়কালে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়েছেন। দেশব্যাপী একদিকে লগ্নিপুঁজির দাপট বেড়েছে, অন্যদিকে গরিব সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এই অবস্থায় ঋণদানের পরিবর্তে প্রয়োজন তাঁদের হাতে নগদ অর্থ দেওয়া।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সরকার নির্বিচারে স্বৈরশাসন কায়েম করেছে। ইউপিএ-র মতো দানবীয় ধারায় প্রতিবাদীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ওরা চাইছে হিন্দুরাষ্ট্র কায়েম করতে। বিজেপি-আরএসএস-র এই সার্বিক আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশের স্বাধীনতা ও সংবিধানকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সমস্ত অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের ‘বিকল্প ভারত’ নির্মাণ করতে হবে।
এদিন নেতৃবৃন্দের ভাষণে উঠে এসেছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের গুরুত্বপূর্ণ উজ্জ্বল ভূমিকার কথা। এই আন্দোলনে দেশের শ্রমিক, কৃষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। স্বাধীনতার পর দেশের যে সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার ছাপ পড়েছিল। আজ কর্পোরেট পুঁজির পথে, আরএসএস-বিজেপি হিন্দুত্বের পথে সংবিধানকে নস্যাৎ করতে চাইছে। এর প্রতিবাদে দেশের সমস্ত অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রক্ষা করতে হবে দেশের স্বাধীনতা, সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে।