৫৮ বর্ষ ২য় সংখ্যা / ২১ আগস্ট ২০২০ / ৪ ভাদ্র ১৪২৭
স্বাধীনতা দিবসে সংবিধান গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ রক্ষার শপথ নিলেন বাম ও সহযোগী দলের কর্মীরা
স্বাধীনতা দিবসে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান রক্ষার শপথ গ্রহণ কর্মসূচিতে বিমান বসু সহ বাম ও সহযোগী দলের নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ভারতের সংবিধান রক্ষায় গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি নস্যাৎ করার প্রতিবাদে ও দেশের স্বাধীনতা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্বাধীনতা দিবসে পথে নেমে শপথ নিলেন বামপন্থীরা। ১৫ আগস্ট দেশের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের আহ্বানে কলকাতা সহ রাজ্যের জেলায় জেলায় বামপন্থী ও সহযোগী দলের কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পোস্টার, ফেস্টুন নিয়ে মানব প্রাচীর তৈরি করেন এবং সংবিধান রক্ষায় শপথ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা দিবসের এই দিনটিতে তাঁরা ঘোষণা করেছেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁরা অংশগ্রহণ করেনি, তারা এখন দেশের শাসন ক্ষমতায় বসে সংবিধানকে ধ্বংস করছে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে পূর্ণ শক্তিতে এর মোকাবিলা করা হবে।
এদিন কলকাতার মোট ৪৩টি জায়গায় এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এছাড়া রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ - সমস্ত জেলাতেই সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থানে বামপন্থী কর্মীরা সমবেত হয়ে মানব প্রাচীর তৈরি করে সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। কলকাতায় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের ওপর এন্টালি বাজারের সামনে এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। কলেজ স্ট্রিট বাটা মোড়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন সিপিআই (এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
এন্টালির কর্মসূচিতে বিমান বসু বলেছেন, স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও আজ দেশ বিপন্ন। বিপন্ন কৃষক, শ্রমিক সহ সর্বস্তরের মেহনতি মানুষ। বিজেপি শাসিত দেশে বিপন্ন দেশের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ, গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা। তাই দেশ ও দেশের সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে দেশপ্রেমিক মানুষদের। আমরা দেশ বিক্রি হতে দিতে পারি না। তাই দেশরক্ষায় শপথ নিতে সবাই মিলে শামিল হয়েছি।
কলেজ স্ট্রিট বাটা মোড়ের কর্মসূচিতে সূর্য মিশ্র বলেছেন, দেশের সংবিধানের নামে শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পর এখন সংবিধান নির্দেশিত ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের জলাঞ্জলি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি নির্বিকার। রামের নামে দেশে দাঙ্গা বাধানো হচ্ছে। ঐক্যের ভারতে প্রতিদিন পরিকল্পনা করে ভেদাভেদ বাড়ানো হচ্ছে। মহামারী করোনার আবহে দেশের লাভজনক সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কোথায় উন্নয়ন? যা ছিল তাও রসাতলে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিদের সঙ্গে অযোধ্যায় রাম পুজো করে কোয়ারান্টিনে না গিয়ে প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় অনর্গল মিথ্যাচার করে ভাষণ দিচ্ছেন। আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে দেশকে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া মেনে নিতে পারি না। তাই দেশপ্রেমিক সমস্ত মানুষকে প্রতিবাদে শামিল হতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিন এন্টালির অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিপিআই(এম) নেতা তরুণ ব্যানার্জি। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হাফিজ আলম সইরানি, আরসিপিআই নেতা সুভাষ রায়, মিহির বাইন, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের জয়হিন্দ সিং, পিডিএস’র অনুরাধা পুততূণ্ড, সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের বাসুদেব বসু, এনসিপি নেতা নজরুল ইসলাম, সিপিআই(এম) নেতা দীপক দাশগুপ্ত, নিরঞ্জন চ্যাটার্জি, রত্না দত্ত, সুখেন্দু পানিগ্রাহি, দেবেশ দাশ, সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি প্রমুখ।
কলেজ স্ট্রিট বাটা মোড়ের কর্মসূচিতে সূর্য মিশ্র ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা সংগ্রাম চ্যাটার্জি, আরএসপি নেতা অশোক ঘোষ, সিপিআই নেতা কল্যাণ ব্যানার্জি, বলশেভিক পার্টির শিবনাথ ঘোষ। এখানে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিপিআই(এম) নেত্রী মধুজা সেনরায়।
এদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়ও দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার শপথ নিতে পথে নেমেছিলেন বামপন্থী দল ও সহযোগী দলের অগণিত কর্মী। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার গাঙ্গুলি বাগান, যাদবপুর, হালতু, ধাপা-বাইপাস, গড়িয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, সোনারপুর, বারুইপুর, বেলেগাছি, বেগমপুর, চম্পাহাটি, চরণ স্টেশন, ক্যানিং, দক্ষিণ রাবাসত, জয়নগর, কুলতলি, মন্দিরবাজার, মথুরাপুর, রাধাকান্তপুর, বজবজ, আমতলা, ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা প্রভৃতি অঞ্চলে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণ, চারাগাছ, মাস্ক, স্যানিটাইজার বিলি করা হয়েছে।
হাওড়া জেলায় বালি, লিলুয়া, জগৎবল্লভপুর, আমতা, উদয়নারায়ণপুর, সাঁকরাইল পাঁচলা, ডোমজুড়, লিলুয়া, বালি জগাছা, বেলুড়, উত্তর ও দক্ষিণ হাওড়ায় এই কর্মসূচি পালিত হয়। ডোমজুড় এলাকার লক্ষণপুর ও গয়েশপুরে রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৮৩টি স্থানে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ নেন সাধারণ মানুষ। মেদিনীপুর শহরে বিদ্যাসাগর মূর্তির সামনে বামফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক তরুণ রায় শপথ বাক্য পাঠ করান। জেলার খড়্গপুর, ঘাটাল, নারায়ণগড়, বেলদা, গোপীবল্লভপুর, সবং, পিংলা, কেশিয়াড়ি, শালবনী, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোণা রোড, ক্ষীরপাই, রামজীবনপুর প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় উত্তর দমদম কালচারাল মোড় থেকে বিরাটির যশোর রোড পর্যন্ত স্যানিটাইজেশন করা হয়। এই কর্মসূচিতে ছিলেন সিপিআই(এম) বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য সহ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস দলের কর্মীরা। এছাড়া বিধাননগর, নিউটাউন, উত্তর ও দক্ষিণ দমদম, বারাসত সহ বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক হাসপাতাল মোড়ে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, কাকটিয়া, ডিমারি ময়না, নন্দকুমার, জালপাই, নাইকুড়ি,মহিষাদল, হলদিয়া, সুতাহাটা, চৈতন্যপুর, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম, ভগবানপুর, হেঁড়িয়া, খেজুরি, কাঁথি, মারিশদা, দেশপ্রাণ, রামনগর, এগরা, ভবানীভক, বালিঘাই, বালিসাই, পটাশপুর, মুগবেড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় পতাকা উত্তোলন ও শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়েছে।
এদিন হুগলি জেলায় পার্টির ৪৩টি এরিয়া কমিটির উদ্যোগে শপথ গ্রহণ ও অবস্থান বিক্ষোভ হয়েছে। জেলার উত্তরপাড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, ভদ্রেশ্বর, চণ্ডীতলা, মশাট, শিয়াখালা, জাঙ্গিপাড়া, সিঙ্গুর, হরিপাল, নালিকুল, ধনিয়াখালি, আরামবাগ, পুরশুড়া, পাণ্ডুয়া, বলাগড়, মগরা, বাঁশবেড়িয়া, ব্যান্ডেল, কোদালিয়া, চকবাজার, চুচুঁড়া, চন্দননগর, চাপদানি, বৈদ্যবাটি প্রভৃতি স্থানে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ভদ্রেশ্বরে ডিওয়াইএফআই ও মহিলা সমিতির উদ্যোগে রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানেও এদিন বামপন্থীদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।