E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২য় সংখ্যা / ২১ আগস্ট ২০২০ / ৪ ভাদ্র ১৪২৭

রাজ্যে রাজ্যে

সময়ে বেতন উপযুক্ত সুরক্ষা সহ বিভিন্ন দাবিতে প্রকল্প শ্রমিকদের দেশজুড়ে দু’দিনব্যাপী ধর্মঘট


ছাঁটাই এবং পুলিশি হেনস্তা, গ্রেফতারির হুমকিকে অগ্রাহ্য করে দেশজুড়ে প্রকল্প শ্রমিকরা দু’দিনব্যাপী ধর্মঘটে শামিল হলেন। ৭ এবং ৮ আগস্ট লাগাতার কেন্দ্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ প্রকল্প শ্রমিক যারা বুনিয়াদি পরিষেবা - ন্যাশনাল হেলথ মিশন (এনএইচএম), আইসিডিএস, মিড ডে মিল (এমডিএম) কর্মী, সর্বশিক্ষা অভিযান (এসএসএ)সহ অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, দিল্লি, গুজরাট, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওডিশা, পাঞ্জাব, তামিলনাডু, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যে সাফল্যের সঙ্গে এই ধর্মঘট পালন করেন। কোভিড ডিউটিতে কর্মরত প্রকল্প কর্মীদের জন্য উপযুক্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম, সংক্রমিতদের জন্য দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, মাসিক দশ হাজার টাকা ঝুঁকি ভাতা প্রদান, ঠিক সময়ে বেতন প্রদানের মতো মূল দাবিগুলি সহ অন্যান্য দাবিকে সামনে রেখে এই ধর্মঘট সংগঠিত হয়।

এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি এবং আশা প্রকল্পের কর্মীরাও, যাঁদের বেশিরভাগই মহিলা, তাঁরা ধর্মঘটী প্রকল্প শ্রমিকদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান সরকারের টালবাহানার বিরুদ্ধে এবং দাবিসমুহের পক্ষে স্লোগান দেন। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ঠিকা ও চুক্তি শ্রমিকরাও এই ধর্মঘটে যোগ দেন। যে সমস্ত রাজ্যগুলিতে কোভিড পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর সেখানে আশা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা কাজে যোগ দেন কালো ব্যাজ পরে।

এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নসমূহের অনুমোদিত স্কিম ওয়ার্কারদের ইউনিয়ন এবং ফেডারেশনগুলির যৌথ মঞ্চ থেকে। অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের ট্রেড ইউনিয়নসমূহ প্রকল্প শ্রমিকদের এই ধর্মঘটকে সমর্থন করে। কৃষক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেও এই ধর্মঘটকে স্বাগত জানানো হয়। প্রকল্প শ্রমিকদের পরিষেবার গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষ এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা প্রকল্প কর্মীদের এই ধর্মঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের ধরনা এবং বিক্ষোভে সহমর্মিতা জানিয়েছেন।

অত্যন্ত গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েই দেশের সামনের সারিতে থাকা এই স্বাস্থ্যকর্মীরা, বিশেষত আশা, এনএইচএম এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা কোভিডজনিত পরিস্থিতিতে বিপন্ন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম এই করোনা যোদ্ধাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এই প্রকল্প কর্মীরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংক্রমণ এবং সংক্রমিত ব্যক্তিদের খবর নিচ্ছেন, পর্যবেক্ষণ করছেন। কোভিড-১৯ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংক্রমণের জেরে মৃত্যু হয়েছে একাধিক আশা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর। কিন্তু তাঁরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। প্রতিদিনই প্রায় কয়েক হাজার প্রকল্প কর্মী কাজ করতে গিয়ে সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম না থাকার জন্য। সামগ্রিক পরিস্থিতির জেরেই দু’দিনব্যাপী এই ধর্মঘটের ডাক দেন ওই শ্রমিকরা। আবার বহু রাজ্যেরই বিভিন্ন প্রকল্পের বহু কর্মী গত ৬ মাসের বেতন মজুরি পাননি। মিড ডে মিল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা কোনো ভাতা ছাড়াই লকডাউন পরবর্তী সময়ে কাজ করে চলেছেন - রয়েছে এমন নজিরও। তাঁদের মজুরি মাসিক মাত্র ১,০০০ টাকা। তাও সরকার দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে ধর্মঘটী শ্রমিকরা সঠিক সময়ে বেতন-ভাতা প্রদান, ঝুঁকি ভাতা এবং সংক্রমণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ এর দাবিতে পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন দাবি আদায়ের জন্য।

অধিকাংশ রাজ্যে ধর্মঘটের প্রথমদিন শ্রমিকরা বিক্ষোভ সংগঠিত করেছেন ব্লক স্তরে এবং দাবি সনদ পেশ করেছেন ব্লক আধিকারিক স্তরের কর্তৃপক্ষের কাছে। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন গ্রাম স্তরে ধরনা বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বেশকিছু লেখা গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে ইতিমধ্যেই, যা জনমত সংগঠিত করতে সহায়তা করেছে। তাদের আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে ডাকা ৯ আগস্ট-এর দেশব্যাপী জেল ভরো এবং সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন এই প্রকল্প শ্রমিকরা। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী এবং দেশবিরোধী নীতিসমূহের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা। এই জেল ভরো কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে দেশের কৃষক সংগঠনগুলিও।

সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেশের প্রথম সারির স্বাস্থ্য কর্মী এই প্রকল্প শ্রমিকদের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং ঝুঁকি ভাতা দেবার দাবি জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি আরও বেশকিছু স্কিম, বুনিয়াদি পরিষেবার জন্য চালু করার দাবি জানিয়েছে সিআইটিইউ। প্রকল্প শ্রমিকদের ফেডারেশন এবং ইউনিয়নগুলির জাতীয় মঞ্চের পক্ষ থেকে এই প্রকল্প শ্রমিকদের জীবন এবং জীবিকার সুরক্ষা সহ অন্যান্য দাবি আদায়ের জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে।