E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২য় সংখ্যা / ২১ আগস্ট ২০২০ / ৪ ভাদ্র ১৪২৭

‘ডেইলি দেশের কথা’ বন্ধের বেআইনি নির্দেশিকা বাতিল করলো ত্রিপুরা হাইকোর্ট


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ত্রিপুরায় সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির দৈনিক মুখপত্র ‘ডেইলি দেশের কথা’র প্রকাশনা বন্ধ করার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক, ১৪ আগস্ট তা বাতিল করে দিয়েছে ত্রিপুরা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই দৈনিকের সম্পাদক সমীর পালের স্বীকৃতির শংসাপত্র প্রত্যাহার এবং আরএনআই-এর ‘ডেইলি দেশের কথা’র সংশোধিত নিবন্ধিকরণ খারিজের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে ত্রিপুরা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর পরিকল্পিত ও নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের উপর শাসক‍দলের নির্লজ্জ আক্রমণের চেহারা উন্মোচিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপি জোট সরকার ‘ডেইলি দেশের কথা’র উপর লাগাতার আক্রমণ শুরু করে। অনেকটা ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে ‘গণশক্তি’ পত্রিকার উপর আক্রমণ শুরু হয়েছিল, সেভাবেই ত্রিপুরায় পত্রিকা সরবরাহে বাধা, পত্রিকা পুড়িয়ে দেওয়া, পত্রিকার বোর্ড জ্বালিয়ে দেওয়া, হকার ও গ্রাহকদের ওপর নানাভাবে আক্রমণ শুরু হয়। এর পাশাপাশি সরকারের উদ্যোগেই পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধের জন্য অপচেষ্টা চলে। তারই অঙ্গ হিসেবে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক সম্পূর্ণ বে‌আইনি এবং অগণতান্ত্রিক আদেশের মধ্যদিয়ে ‘ডেইলি দেশের কথা’ বন্ধের নির্দেশ দেন। এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের পিছনে যে শাসকদলের গভীর চক্রান্ত ছিল, তাও ঘটনাক্রমে স্পষ্ট হয়ে যায়। ওই দিনই বিকালে মোহনপুরের তারাপুরের জনৈক শ্যামল দেবনাথের ভুয়ো অভিযোগক্রমে জেলাশাসক শুনানি ধার্য করেন। এই একই দিনে ‘ডেইলি দেশের কথা’র সম্পাদক সমীর পালকে দেওয়া স্বীকৃতির শংসাপত্র প্রত্যাহার করে নেন সদরের তৎকালীন মহকুমাশাসক। আর সেদিনই রাতে দিল্লির আরএনআই অফিস থেকে পত্রিকা দপ্তরে পাঠানো ই-মেইলে পত্রিকার নিবন্ধিকরণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কারণ হিসাবে বলা হয়, সদর এসডিএম ‘ডেইলি দেশের কথা’র শংসাপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবং জেলাশাসক আরএনআই-কে তা জানিয়েছেন। ‘ডেইলি দেশের কথা’-র প্রকাশনা বন্ধ করতে জেলা শাসকের এক্তিয়ার বহির্ভূত অতিসক্রিয়তা এর মধ্যদিয়ে প্রমাণ হয়ে যায়। সেই রাতে বিজেপি-র রাজ্য নেতা রাজীব ভট্টাচার্য জেলাশাসকের কক্ষে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়। রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে জেলাশাসক পত্রিকা অফিসে পত্রিকার বন্ধের ফরমান পাঠান। জেলা শাসকের এই বেআইনি আদেশের ফলে পত্রিকা প্রকাশনা ৯ দিন বন্ধ ছিল। দশম দিনে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পর ফের মুদ্রণ শুরু হয়।

জেলাশাসকের এই বেআইনি আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ‘ডেইলি দেশের কথা’-র তরফে রিট পিটিশন করে পত্রিকা বন্ধের বেআইনি এবং এক্তিয়ার বহির্ভূত আদেশ বাতিল এবং প্রকাশনা পুনরায় চালুর দাবি জানানো হয়। ‘ডেইলি দেশের কথা’-র পক্ষে এই মামলায় সওয়াল করেন ত্রিপুরার প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল তথা বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁকে সহায়তা করেন ত্রিপুরার আইনজীবী তাপস দত্ত মজুমদার, শিশির চক্রবর্তী, জয়ন্ত মজুমদার, রাজশ্রী পুরকায়স্থ, সমরজিৎ ভট্টাচার্য প্রমুখ।

১৪ আগস্ট অনলাইন কোর্টে এই রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি শুভাশিস তলাপাত্র। ১০৪ পাতার এই রায়ের ১৮০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেঃ ‘‘অতএব, সাংবিধানিক গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে এমন যে কোনো হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে হস্তক্ষেপ আইনত সম্পূর্ণ অস্বীকৃত বা কোনওভাবেই এর জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অতএব জেলাশাসক যেভাবে এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছেন অথবা সর্বশেষ ১/১০/২০১৮ তারিখের আদেশটি দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি। সেই জন্যই এই আদেশের উপর হস্তক্ষেপ করা হলো।’’

এদিন ত্রিপুরা হাইকোর্টের এই রায়ের মধ্যদিয়ে প্রকট হয়েছে কীভাবে শাসকদলের নির্দেশে জেলাশাসক সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মতো সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক, অধিকারকে হরণ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। ত্রিপুরা হাইকোর্টের এই রায় বিজেপি’র গণতন্ত্র বিরোধী, সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার বিরোধী কুৎসিত ভূমিকাকে আবারও উন্মোচিত করে দিয়েছে।