৫৮ বর্ষ ২য় সংখ্যা / ২১ আগস্ট ২০২০ / ৪ ভাদ্র ১৪২৭
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে শামিল মহারাষ্ট্রের শ্রমিক কৃষকরা
কেন্দ্রের বিজেপি-আরএসএস পরিচালিত সরকারের জনবিরোধী কর্পোরেটমুখী এবং স্বৈরাচারী সাম্প্রদায়িক নীতিসমূহের বিরুদ্ধে গোটা মহারাষ্ট্র জুড়ে তিন দিনব্যাপী ব্যাপক গণবিক্ষোভ প্রতিবাদ সংঘটিত হলো। গণবিক্ষোভের এই কর্মসূচিতে সিআইটিইউ এবং এআইকেএস’র নেতৃত্বে অংশ নেয় সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, ডিওয়াইএফআই, এসএফআই, এআইএডব্লিউইউ, এএআরএম প্রমুখ গণসংগঠনের সদস্যরাও। সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ৮, ৯ এবং ১০ আগস্ট মহারাষ্ট্রের ৪৯১টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংযোগ স্থলে শামিল হন উত্তাল গণবিক্ষোভে। মুষলধারে বৃষ্টি সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কোভিড-১৯ জনিত অতিমারীর বিপদকে মাথায় রেখেও রাজ্যের ৩১টি জেলার ৯৯টি তহসিল এবং ২৩টি ছোটো বড়ো শহর জুড়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানান। জীবন-জীবিকার জ্বলন্ত ইস্যুগুলি এবং দাবিসমূহকে এদিন তাঁরা মানুষের কাছে তুলে ধরেন। তিন দিনব্যাপী এই কর্মসূচির শহরকেন্দ্রিক জমায়েতগুলির মূল উদ্যোক্তা সিআইটিইউ এবং গ্রামকেন্দ্রিক জমায়েতগুলির মূল উদ্যোক্তা সারা ভারত কৃষক সভা।
এই ৩ দিনব্যাপী আন্দোলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয় সোলাপুর জেলার কালেক্টর অফিস চত্বরে। কালেক্টর অফিস চত্বরে আসার জন্য সন্নিহিত এলাকার বিভিন্ন মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। জেলা সদরের এই জমায়েতে প্রায় কুড়ি হাজার শ্রমিক সহ বিভিন্ন অংশের মানুষ সমবেত হন। শ্রমিকশ্রেণির পাশাপাশি বিভিন্ন গণসংগঠন সমূহের সদস্যরা কালেক্টর অফিস ঘেরাও কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য এগোলে তা পুলিশের নিপীড়নের শিকার হয়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ঢল আটকাতে পুলিশ নৃশংসভাবে লাঠিচার্জ করে। খেটে খাওয়া মানুষ কিন্তু পুলিশের অকারণ আক্রমণের জেরে পাল্টা সংঘর্ষে প্ররোচিত হননি। পুলিশি লাঠিচার্জের ফলে শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন এদিন। পুলিশ সোলাপুরের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে আক্রমণ করেই থেমে যায়নি। রাজ্য সিআইটিইউ’র সহ-সভাপতি নরসায়া আদম, সাধারণ সম্পাদক এম এইচ শেখ এআইকেএস-এর সহ-সভাপতি নলিনী কালবুর্গি, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সভাপতি নাসিমা শেখ সহ জেলার গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন এবং এসএফআই নেতৃত্বকে গ্রেফতার করে। মূল জমায়েত থেকে পুলিশি অকারণ তৎপরতায় মোট গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০। এর মধ্যে নরসায়া আদম সহ প্রায় ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে মহারাষ্ট্র পুলিশ।
মহারাষ্ট্রের থানে পালঘর জেলায় মূলত সারা ভারত কৃষক সভার উদ্যোগে এবং অন্যান্য গণসংগঠনের উপস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। জেলার ৭৯টি গ্রাম এবং সাতটি তহসিল সহ উল্লাস নগর সিটি এবং নাসিক জেলার চারটি তহসিল থেকে ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। থানে পালঘর জেলায় কর্মসূচিতে ৮,৩০৭ জন কৃষক এবং নাসিক জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষক তিন দিনব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দেন।
অন্যান্য জেলা সমূহের মধ্যে জলনায় ২,২৮৫ জন আহমদ নগরে ১,৬০৩, নান্দেদ জেলায় ১,৫২৫ জন, ঔরঙ্গাবাদ জেলায় ১,২৮০ জন এবং মুম্বাইয়ে সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। থানে পালঘর জেলায় কর্মসূচি পালিত হয় সারা ভারত কৃষক সভার জাতীয় সভাপতি অশোক ধাওয়ালের নেতৃত্বে। নাসিক জেলায় নেতৃত্ব দেন সিআইটিইউ জাতীয় সহ সভাপতি এসকে থমবরে, বিধায়ক বিনোদ নিকোলে সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এই কর্মসূচিতে সহমর্মিতার ভিত্তিতে এআইটিইউসি, এইচএমএস, এআইসিসিটিইউ, এআইইউটিইউসি, টিইউসিআই, ডব্লিউআরইইউ, এসএসএস প্রমুখ ট্রেড ইউনিয়ন অংশ নেয়। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষও বিজেপি’র মানুষ মারা নীতির বিরোধী এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়।
মুম্বাই শহরের ২৯টি বিভিন্ন স্থানে গণসংগঠনগুলির কয়েক হাজার মানুষ ট্রেড ইউনিয়নসমুহের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির নেতৃত্বে অংশ নেন। গ্রান্ট রোড রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এখান থেকে ঐতিহাসিক আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে মিছিল করে আসেন শ্রমিকেরা। প্রসঙ্গত, এই ঐতিহাসিক স্থান থেকেই ১৯৪২ সালের ৯ আগস্ট ব্রিটিশকে ‘ভারত ছাড়ো’ ডাক দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। উল্লিখিত জেলাগুলি ছাড়াও রাজ্যের বাইশটি অন্যান্য জেলাতেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির পাশাপাশি সারা ভারত কৃষক সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি এবং ভূমি অধিকার আন্দোলন এই সংগ্রামে অংশ নেয়।