৫৮ বর্ষ ২য় সংখ্যা / ২১ আগস্ট ২০২০ / ৪ ভাদ্র ১৪২৭
‘নতুন ভারতের’ ভাষ্যঃ সংবিধান ধ্বংস
সীতারাম ইয়েচুরি
আমাদের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ভারতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক নতুন জাতীয় ভাষ্যকে সামনে আনা হচ্ছে। ‘নতুন ভারতের’ এই ভাষ্যে বলার চেষ্টা হচ্ছে ১৯৪৭-র ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছে, কিন্তু ২০১৯-র ৫ আগস্ট ৩৭০ নং ধারা এ ৩৫-এ ধারা বিলোপ এবং ২০২০-র ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী যখন রামমন্দির নির্মাণের কাজ সরকারিভাবে শুরু করলেন তখন ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা পেল।
এই নতুন ভাষ্য ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের মহাকাব্যিক সংগ্রাম এবং তার মধ্যে দিয়ে জন্ম নেওয়া সাধারণতন্ত্র ও সংবিধানকে পুরোপুরি নস্যাৎ করছে, সেই ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত ধারণা তৈরি করছে। প্রধানমন্ত্রীর অযোধ্যায় ভাষণের সেই ছিল মর্মবস্তু।
আমাদের দেশ ও জনগণের বৈশিষ্ট্য হলো সমৃদ্ধ বহুত্ব ও বৈচিত্র্য, ভারতের সংবিধানে তা প্রতিফলিত। ভারতের ঐক্যকে তখনই সংহত করা যায় যখন এই বৈচিত্র্যের মধ্যে অভিন্নতার বন্ধনকে শক্তিশালী করা যায়, যখন এই বহুত্বের সমস্ত ক্ষেত্রকে - ভাষা, জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় পরিচিতি - সম্মান দেওয়া হয়, সমতার ভিত্তিতে দেখা হয়। যে কোনও ধরনের একমুখীনতা যদি এই বৈচিত্র্যের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সামাজিক বিস্ফোরণ ঘটবে। আরএসএস ও তাদের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি ধর্মীয় অভিন্নতা চাপিয়ে দিতে চাইছে সরকার ও রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে। তা যদি করতে হয় তাহলে এক স্বৈরাচারী রাষ্ট্র তৈরি করে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করতে হবে, নাগরিক অধিকারকে খর্ব করতে হবে, যাদের তারা ‘অভ্যন্তরীণ শত্রু’ বলে মনে করে তাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
এই ‘নতুন ভারত’ শুধু মোদী সরকারের তৈরি নয়, ১৯২৫-এ আরএসএস প্রতিষ্ঠার সময় থেকে প্রায় এক শতাব্দীর ইতিহাস আছে এর পিছনে। সাভারকরের হিন্দুত্ব সম্পর্কে তত্ত্ব, ১৯৩৯-এ গোলওয়ালকরের ফ্যাসিবাদী ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের মতাদর্শগত নির্মাণ এবং সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার সময় থেকে তা চলছে।
বারংবার ভারতীয় জনগণ এই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, স্বাধীনতা সংগ্রাম জোরের সঙ্গে স্বাধীন ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র বলে ঘোষণা করেছে। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পরে পাকিস্তান গঠনের সময়ে যে ঐস্লামিক সাধারণতন্ত্রের ধারণা সামনে আনা হয় তা ছিল এই ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র বদলে আরএসএস’র দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেবার চেষ্টা দশকের পর দশক ধরে চলেছে, যা আজকের পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানের ওপরে আক্রমণ
‘নতুন ভারত’ গড়ে তুলতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন পুরানো ভারতের ধারণাকে ধ্বংস করা যা সংবিধানের মধ্যে দিয়ে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। গত ছ’বছরে মোদী সরকারের আমলে সংবিধানের ওপরে আক্রমণ তীব্রতর হয়েছে। সংবিধানের সবক’টি মৌলিক ভিত্তিকে - ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা - খর্ব করা হচ্ছে।
সংবিধানের ওপরে এই আক্রমণ করতে হলে যে সব সাংবিধানিক সংস্থা সংবিধান রূপায়ণে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রাখার কাজ করে, জনগণের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করে সেগুলিকে খর্ব করতে করতেই যেতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের সাধারণতন্ত্রের তিন প্রতিষ্ঠান হলো সরকার, আইনসভা, বিচারবিভাগ। প্রত্যকেই পৃথক কিন্তু দায়িত্ব ও কর্তব্য রূপায়ণে পরস্পরের সহযোগী।
আইনসভা, অর্থাৎ সংসদকে গুরুতর রকমের খর্ব করা হয়েছে, তাকে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের একচেটিয়া শাসনে’ পরিণত করা হয়েছে। সংসদীয় বিধি, কমিটির কাজ, আলোচনা সবই খর্ব করা হচ্ছে।
এটি বিপজ্জনক কেননা ভারতের সংবিধানের কেন্দ্রীয় মর্মবস্তুই হলো জনগণের সার্বভৌমত্ব। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ আইনসভা এই সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করে, সরকার আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। এই ভাবেই ‘আমরা, ভারতের জনগণ’ আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করি। সংসদ যদি অকার্যকরী হয়ে যায়, তাহলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা উধাও হয়ে যায়, সরকার আর আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে না, তাকে কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না।
বিচারবিভাগঃ স্বাধীন বিচারবিভাগ তৈরি করা হয়েছিল যাতে সাংবিধানিক ধারাকে সরকার লঙ্ঘন করতে না পারে। সংবিধান জনগণকে যে মৌলিক অধিকার ও গ্যারান্টি দিয়েছে তা যেন ঊর্ধ্বে তুলে ধরা যায়। যদি বিচারবিভাগের পক্ষপাতহীনতা ও স্বাধীনতা খর্ব হয় তাহলে বিচারবিভাগের নজরদারির অস্তিত্ব থাকবে না, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার রক্ষা করা যাবে না। গত ছ’বছরে এই প্রশ্নে বিপদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনঃ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে, সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বীকে সমান সুযোগ করে দেয়। যখন এই স্বাধীনতা আর থাকে না তখন সরকার জনগণের রায়ের প্রতিফলন হয় না।
সিবিআই, ইডি, ভিজিল্যান্স দপ্তর তৈরি করা হয়েছিল যাতে ফৌজদারি ও দেওয়ানি অপরাধের তদন্ত হতে পারে, দেশের আইন অনুযায়ী অপরাধীরা শাস্তি পায়। যদি তার বদলে এইসব সংস্থা সরকারের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয় তাহলে শাসক দলের যাবতীয় অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা হবে না, বিরোধীদের হয়রানি ও চুপ করিয়ে রাখতে তা ব্যবহার করা হবে।
সংবিধান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলির এইরকম সামগ্রিক অবক্ষয় বড়ো আকারের দুর্নীতি ও ধান্দার ধনতন্ত্রের রাস্তা করে দেয়। এই পথে শাসক দল বিপুল অর্থশক্তি সঞ্চয় করে। এক ধাক্কায় গণতন্ত্রের উৎকর্ষতা নষ্ট হয়। যে কোনও নির্বাচনে জনগণের রায় লঙ্ঘিত হতে পারে, বিধায়ক কেনাবেচা করে সরকার গঠন করা যেতে পারে। এখন চলতি কথাই হয়ে গেছে বিজেপি ভোটে হারতে পারে কিন্তু সরকার ওদেরই হবে!
যুক্তির ওপরে আক্রমণ
‘নতুন ভারতের’ ভাষ্য সফল করতে গেলে সেই ভাষ্যের মতাদর্শগত উপাদানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে ভারতের ইতিহাসের পুনর্লিখন করতে হবে। তাহলে এমন ভাবে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজাতে হবে যাতে যুক্তিবোধের বদলে অযৌক্তিক চিন্তা ও তার প্রয়োগ প্রসারিত হয়। যাতে বিজ্ঞানভিত্তিক মানসিকতার বদলে কুসংস্কার, উপকথা, অন্ধ বিশ্বাসের রমরমা হয়। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলির চরিত্র এমন ভাবে বদলাতে হবে যাতে ভারতীয় সংস্কৃতির মিশ্র বিবর্তনের বদলে একদেশদর্শিতা চাপিয়ে দেওয়া যায়। এক সংস্কৃতির ভাষ্যকে চাপিয়ে দেওয়া যায়। ভারতের বৈচিত্র্য ও বহুত্ব থেকে উদ্ভব হওয়া সংস্কৃতির সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। ভারতের মিশ্র ইতিহাসের বদলে জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে উপকথার মহাকাব্যকে। প্রত্নতত্ত্বকে অতীতের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বদলে হিন্দুত্বের অবৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিক প্রমাণ উৎপাদনেই কাজে লাগানো হবে।
এমন ‘নতুন ভারতের’ ভাষ্যের জন্য চাই সমাজে নতুন প্রতীক। হিটলারের কুখ্যাত বার্লিনের ডোমের ধাঁচে মহামারী চলাকালীন বিপুল ব্যয়ে সেন্ট্রাল ভিস্টা তৈরি করা হচ্ছে, মূর্তি, বুলেট ট্রেনের মতো প্রকল্প নেহরুর ‘আধুনিক ভারতের মন্দিরের’ ধারণার বিপ্রতীপে দাঁড় করানো হচ্ছে।
নতুন ভারতের ভাষ্য দাঁড় করানো যাবে না অনুগত মিডিয়া ছাড়া, যারা দিবারাত্র ভুয়ো খবর, ভুয়ো ভাষ্য দিয়ে জনগণের চেতনার ওপরে হানাদারি চালিয়ে যাবে; ভারতীয় জনগণের প্রকৃত বাস্তবতা এবং যন্ত্রণাকে পিছনে ঠেলে দেবে।
এই নতুন ভারতের অনিবার্য উপাদান হলো ঘৃণা-বিদ্বেষের প্রচার চালিয়ে সামাজিক উত্তেজনা তৈরি করা, দলিত, আদিবাসী, মহিলা ও সংখ্যালঘুদের ওপরে হিংসা চালিয়ে যাওয়া। এই কাঠামোর জীবনরেখা হিসাবে অন্যদের বাদ দিয়ে, সাম্প্রদায়িক, হিন্দুত্বের ভোট ব্যাঙ্কের সমর্থন সংহত করতে তা প্রয়োজন।
অযোধ্যায় ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণের সূচনা করে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ এক অর্থে এই নতুন ভারতের ভাবনাকে তুলে ধরেছে।
সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা বিতর্ক নিয়ে রায় দিয়েছে, বিচার দেয়নি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে আইনের ফৌজদারি লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দিতে বলেছে। যারা মসজিদ ভেঙেছিল তাদের হাতেই বিতর্কিত জমিতে মন্দির নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছে। এই নির্মাণ করার কথা ট্রাস্টের।
প্রধানমন্ত্রী ও সরকার নির্লজ্জভাবে এই দায়িত্ব নিয়ে মন্দির নির্মাণের সূচনাকে সরকারি অনুষ্ঠানে পর্যবসিত করলেন। যে প্রধানমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় সংবিধানের নামে শপথ নিয়ে ওই পদে বসেছেন তিনিই তা লঙ্ঘন করলেন। সংবিধান গ্যারান্টি করে যে সরকার সব মানুষের ধর্ম বেছে নেবার অধিকারকে রক্ষা করবে। সরকারের নিজের কোনও ধর্ম নেই। সংবিধানের এই অলঙ্ঘনীয় অবস্থানকেই ছুঁড়ে ফেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। আরএসএস’র রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসাবে নতুন ভারতের সূচনার বার্তাবহ এই চরম সংবিধান লঙ্ঘন।
তাঁর ভাষণের নিকৃষ্টতম অংশ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে মন্দির নির্মাণ আন্দোলনকে তুলনা করা। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করেনি এমন কোনও অংশ নেই দেশে। ১৫ আগস্ট লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের এবং স্বাধীনতার জন্য গভীর আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তেমনই কয়েক শতাব্দী ধরে কয়েক প্রজন্ম রাম মন্দির নির্মাণের জন্য স্বার্থহীন আত্মত্যাগ করেছে।’’
স্বাধীনতা সংগ্রামের দৃষ্টিতে ছিল এমন এক ভারত যেখানে সকলে মিলে থাকবে। আরএসএস’র ভারতের ধারণা হলো বাদ দিয়ে চলার ভারত। সকলকে নিয়ে ভারত গড়ে তোলার এই দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপুল জনসমাবেশ ঘটিয়েছে, যার পরিণতি ঘটেছে ১৯৪৭-র ১৫ আগস্টের স্বাধীনতা অর্জনে। আজ ‘নতুন ভারতের’ ভাষ্য স্বাধীনতা সংগ্রাম যা কিছুর প্রতিনিধিত্ব করত, তার সব কিছুকেই নস্যাৎ করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আরএসএস কোনোদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ ছিল না। আরএসএস সম্পর্কে দরদ নিয়ে লেখা ইতিহাসেও বিশদে দেখানো আছে কীভাবে আরএসএস স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপস্থিত থেকেছে এবং বিনিময়ে ব্রিটিশদের কাছ থেকে সুবিধা পেয়েছে (ওয়াল্টার অ্যান্ডারসন, শ্রীধর ডামলে ‘ব্রাদারহুড ইন স্যাফ্রন’, ১৯৮৭)। এমনকি প্রয়াত আরএসএস তাত্ত্বিক নানাজী দেশমুখ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘কেন আরএসএস সংগঠন হিসাবে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়নি?’ বস্তুত বোম্বাই হোম দপ্তর ১৯৪২-র ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ে বলেছিল, আরএসএস কঠোরভাবে নিজেকে আইনের মধ্যে রেখেছিল, বিশেষ করে ১৯৪২-র আগস্টে হওয়া গোলমালে অংশ নেওয়া থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিল।
এই সত্য আড়ালে আরএসএস/বিজেপি কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে বলে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ১৯৯২ সালের ৯ আগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে সংসদের মধ্যরাতের অধিবেশনে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা বলেছিলেন, ‘‘ কানপুর, জামশেদপুর, আমেদাবাদের মিলে ব্যাপক ধর্মঘটের পরে দিল্লি থেকে ১৯৪২-র ৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে সেক্রেটারি অব স্টেটের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছিল বহুদিন ধরেই যা স্পষ্ট তা এদের বহু সদস্যের আচরণে ফের প্রমাণিত হয়েছে যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের নিয়ে তৈরি।’’ আর কিছু কি বলার দরকার আছে?
ভারতের ভবিষ্যৎ ধ্বংস প্রতিহত কর
এই ‘নতুন ভারত’ কেবলমাত্র ভারতের ইতিহাসের পুনর্লিখন করছে না, শুধুমাত্র সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে না, জনগণের জীবনজীবিকা ও নাগরিক অধিকারকে খর্ব করছে না। ভারতের ভবিষ্যতের ক্ষতি করছে ও সংঘাতকে মদত দিয়ে, দলিত, আদিবাসী, মহিলা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে হিংসা নামিয়ে এনে।
এই ‘নতুন ভারত’ ভারতের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও ভিত্তিকে নষ্ট করছে। গত ছ’বছরে ভারতীয় অর্থনীতির ধ্বংসসাধন এর প্রমাণ। এখন জাতীয় সম্পদ লুট, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সামগ্রিক বেসরকারিকরণ, ভারতের খনিজ সম্পদ এবং অরণ্য ও সবুজভূমিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেবার অর্থনৈতিক নকশা রূপায়ণ করা হচ্ছে। শ্রমিকশ্রেণি ও শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে বিলোপ করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য দেশি-বিদেশি কর্পোরেটের মুনাফা সর্বোচ্চকরণের জন্য ভারতের জাতীয় সম্পদকে পুরোপুরি উজাড় করে দেওয়া। ভারতীয় কৃষির কর্পোরেটকরণ হচ্ছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন বিলোপে অর্ডিন্যান্স, ন্যূনতম সহায়কমূল্য, শস্য সংগ্রহ, দাম নিয়ন্ত্রণের মতো ন্যূনতম সুরক্ষা প্রত্যাহার গণবণ্টনের সার্বিক ধ্বংস ডেকে আনবে, খাদ্যের অভাবের আশঙ্কা তৈরি হবে। মুনাফা লুটবে কৃষি বাণিজ্যের কর্পোরেটরা। আমাদের অন্নদাতাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসছে।
‘নতুন ভারত’ তাই সাংবিধানিক ব্যবস্থার অস্তিত্বের সঙ্কট ডেকে আনছে। জীবনজীবিকা, স্বাধীনতা, সম্ভ্রম, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয়ের সমৃদ্ধির পথে বিপদ ডেকে আনছে। ভারতের বহুত্ববাদ, ভাষাগত বৈচিত্র্য, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অস্তিত্বের সঙ্কট ডেকে আনছে। গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার, যুক্তি ও যুক্তিবোধের লক্ষ্যে যাত্রার পথে সঙ্কট তৈরি করছে।
‘নতুন ভারতের’ এই বিপদকে প্রতিরোধ করতে হবে, পরাস্ত করতে হবে। এই বছরের স্বাধীনতা দিবসের শপথের এটিই হবে মূল কথা।