৫৯ বর্ষ ২৩ সংখ্যা / ২১ জানুয়ারি, ২০২২ / ৭ মাঘ, ১৪২৮
বিজেপি-কে হারানোই সিপিআই(এম)’র প্রধান লক্ষ্য
সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি
ভূপালে সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, গোয়া এবং মণিপুর - এই পাঁচ রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি-কে হারানোই সিপিআই(এম)’র প্রধান কর্তব্য এবং সেই লক্ষ্যেই পার্টি কাজ করবে বলে আরও একবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ১৭ জানুয়ারি ভোপালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা জানান। এদিন তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, আমরা চাইছি পাঁচ রাজ্যেই বিজেপি বিরোধী ভোট যাতে ভাগ না হয়। সিপিআই(এম) সেই চেষ্টাই করছে।
এদিন তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে পার্টি। উত্তর প্রদেশে বিজেপি বিরোধী মনোভাব দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে। সেখানে বিজেপি বিরোধী প্রধান দল সমাজবাদী পার্টি। সিপিআই(এম) সমাজবাদী পার্টিকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে। আমরা অন্য বামপন্থী দলগুলির সঙ্গেও আলোচনা করছি। সমাজবাদী পার্টির সঙ্গেও আলোচনা চলছে, যাতে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ না হয়। যদি ভাগ হয়ও কোথাও কোথাও, তা যেন সর্বাধিক কম করা যায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, একদিকে বেকারি, অনাহার, দারিদ্র্য বাড়ছে, সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। প্রতিদিনের জীবন বরবাদ হয়ে যাচ্ছে। অক্সফ্যামের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুনিয়ার সব থেকে বেশি ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বাড়ছে ভারতে। করোনা মহামারীর মধ্যে কীভাবে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে এবং বিপরীতে আরও কত কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন তার উল্লেখ করেন তিনি।
১৯ জানুয়ারি সিপিআই(এম) মালদহ জেলা সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলন চলে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সুমিত দে।
দেশের সম্পদের সর্বাত্মক লুঠ চলছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা মোদি সরকার বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে না। সত্তর বছরের পরিশ্রমে দেশের মানুষ যে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র তৈরি করেছিল, যে আর্থিক সার্বভৌমত্ব ছিল তা ধ্বংস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সরকারের একমাত্র কাজ হচ্ছে দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পরিস্থিতি তৈরি করা। নির্বাচন জেতার জন্য এটাই বিজেপি-র একমাত্র হাতিয়ার। মানুষের সমস্যা, সংকটের দিকে সরকারের কোনো নজর নেই।
সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, এই পরিস্থিতিতেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন এসেছে। সেই নির্বাচনে বিজেপি-কে পরাস্ত করাই আমাদের পার্টির কাছে প্রধান কর্তব্য। ভারতকে বাঁচাতে হবে। তাই আজ সর্বত্র বিজেপি-কে হারানো অবশ্য কর্তব্য। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ২৬ জানুয়ারির প্যারেডে রাজ্যগুলির ট্যাবলো আটকে দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে শুধু বিজেপি শাসিত কর্ণাটককে অনুমতি দিয়েছে। তিনি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেন, কেরালার এলডিএফ সরকার সমাজ সংস্কারক নারায়ণ গুরুর উপরে ট্যাবলো করেছিল। তা বিজেপি সরকারের অপছন্দ। নারায়ণ গুরুকে সারা দুনিয়ার মানুষ মানেন। তিনি বলেছিলেন মানবতাই ধর্ম। এটা নিয়ে বিজেপি’র আপত্তি।
শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট প্রচারে সিপিআই(এম) প্রার্থী সুদীপ ভট্টাচার্য।
বিজেপি দেশে শুধু ঘৃণা আর হিংসার বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। সামাজিক একতা, সম্প্রীতি ধ্বংস করছে। সামাজিক হিংসা, ঘৃণা ছড়িয়ে কোনো দেশ টিকে থাকতে পারে না। তা ধ্বংস হয়ে যায়। এইভাবে সাংবিধানিক কাঠামো বাঁচানো যাবে না। তা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই বিজেপি-কে সরানো জরুরি।
তিনি বলেন, দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী আন্দোলন তৈরি করেছেন কৃষকরা, শ্রমিকরা। সিপিআই(এম) সহ বামপন্থীরা সেই আন্দোলনগুলিকে সমর্থন করেছে। এটা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে বামপন্থীরা বৈঠক করেছেন। এক সঙ্গে সরকার বিরোধী বিবৃতি দেওয়া, আন্দোলন করছে। এমনকি ধর্মঘটের সমর্থনেও এক সঙ্গেও বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে কোনো সমস্যা নেই। দেশজুড়ে শ্রমিক-কৃষকের আন্দোলন তীব্র হচ্ছে।
সম্প্রতি সংযুক্ত কিষান মোর্চা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার যে অভিযোগ এনেছে, সে কথা উল্লেখ করে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, অতীতেও কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে ছিল সিপিআই(এম), সংযুক্ত মোর্চা আবারও যে আন্দোলনে নামছে, তাতেও সমর্থন জানাবে সিপিআই(এম)।