৫৯ বর্ষ ২৩ সংখ্যা / ২১ জানুয়ারি, ২০২২ / ৭ মাঘ, ১৪২৮
বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ প্রয়াত
প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক ও কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের জীবনাবসান হয়েছে। ১৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭। তাঁর দুই পুত্র, এক কন্যা ও নাতি-নাতনিরা রয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন শিল্প, সাহিত্য এবং রাজনৈতিক জগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল, ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু, কৌশিক রায় প্রভৃতি বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ দীর্ঘ সময় ধরে শিশু-কিশোর মননের উপাদান জুগিয়ে অবদান রেখে গিয়েছেন। কমিক স্ট্রিপ ছাড়াও তিনি শিশু-কিশোরদের বহু উপন্যাসের অলঙ্করণ করেছেন।
নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫ সালে হাওড়ার শিবপুরে। যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠেন তিনি। বাবা জ্যাঠাদের গয়নার দোকান ছিল, কিন্তু নারায়ণ দেবনাথ সেদিকে যাননি। ছোটোবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি। পড়াশোনা শেষ করে আর্টস কলেজে ভরতি হন নারায়ণ দেবনাথ। তারপরে দেব সাহিত্য কুটির প্রকাশিত 'শুকতারা' পত্রিকায় ছবি আঁকা শুরু নারায়ণ দেবনাথের। তাঁর প্রথম সৃষ্টি হাঁদা ভোঁদা চরিত্রের। শিবপুরের রকে বসে ছোটোদের দেখে দেখে মজার নানা কাহিনি এবং তার পরে সেগুলিকে কমিকস স্ট্রিপে পরিণত করতেন তিনি। সেগুলি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পরে তিনি সৃষ্টি করেন ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-এর। হাঁদা ভোঁদা ছিল সাদা কালো কমিকস। বাঁটুল দি গ্রেট লাল কালো রঙে তৈরি। বাঙালি শিশু-কিশোরদের ছোটোবেলায় অক্ষর পরিচয় হবার পর থেকে গল্পের বইয়ের প্রতি আগ্রহ জাগাতে হাতিয়ার ছিল নারায়ণ দেবনাথের ছবি সমেত বই। হাঁদা ভোঁদা এবং বাঁটুল দি গ্রেট-এর পরে তৈরি হয় নন্টে ফন্টে চরিত্র। 'কিশোর ভারতী'র কর্ণধার দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধে তিনি তৈরি করেন ‘পটলচাঁদ ম্যাজিসিয়ান’। প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিশু-কিশোররা নারায়ণ দেবনাথের কমিকসের গল্প পড়ে আনন্দ পেয়েছে। শৈশবকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে তাঁর কমিকসের বইগুলি আজও সমাদৃত। শিশুসাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তাঁকে 'সাহিত্য আকাদেমি' পুরস্কার এবং 'বঙ্গবিভূষণ', ২০১৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে 'ডি লিট' দেওয়া হয়। ২০২১ সালে তিনি 'পদ্মশ্রী' পদক পান। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দিল্লিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে পারেননি নারায়ণ দেবনাথ। কিছুদিন আগে হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে 'পদ্মশ্রী' তুলে দেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব।
এদিন সকালে নারায়ণ দেবনাথের মৃত্যুর খবর পাওয়ার সাথে সাথে শিবপুরে তাঁর বাড়ির সামনে জড়ো হতে শুরু করেন বহু অনুরাগী, বহু স্কুল ছাত্র-ছাত্রী, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সমাজের সাধারণ মানুষ। বাড়িতে গিয়ে মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী অরূপ রায়। এরপরে শিবপুর শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেখানে অগণিত মানুষ, বিভিন্ন ক্লাব, বিভিন্ন স্কুল ও বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার পক্ষ থেকে মরদেহে মাল্য দান করা হয়।
সিপিআই(এম)’র হাওড়া জেলা কমিটির পক্ষ থেকে মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টি নেতা পরেশ পাল। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, কিশোর বাহিনী ও গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের পক্ষ থেকেও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নারায়ণ দেবনাথের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন।