E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২৩ সংখ্যা / ২১ জানুয়ারি, ২০২২ / ৭ মাঘ, ১৪২৮

“স্বার্থ যত পূর্ণ হয় লোভক্ষুধানল তত তার বেড়ে ওঠে”

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


মোদ্দা কথা হলো...। না থাক। আমি কী মনে করি তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি যা ভাবছি সেটাই ঠিক, তা ভেবে নেওয়াটাও সঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং বিবরণ দেওয়া অনেক সহজ। ধারাবিবরণীতে কোনো চাপ নেই। ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলির পর এই ফেসবুকীয় যুগে যা সহজতম কাজ। কার কথা, কে বলে, কে শোনে, কে জানে! তবু দেয়াল যখন একটা পাওয়া গেছে লিখতে দোষ কী? ঠিক, ভুল কে দেখতে যাচ্ছে। শিল্প, সংস্কৃতি, খেলা, রাজনীতি, সমাজনীতি, সাইকোলজি, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস - সর্বজ্ঞ হওয়া আটকায় কোন শা...! আমি ভুল করতেই পারিনা। অতএব জয় মুখবইয়ের জয়। জয় ঘুঁটেশিল্পর জয়। হয়তো আগামীতে সেরা রচনার জন্য দু’একটা ‘ঘুঁটেশ্রী’ উপাধিও চালু হতে পারে।

ওপরের প্যারাটা লেখার পর পড়তে গিয়ে দেখলাম ট্র্যাশস্য ট্র্যাশ। এবং আমি ছাড়া এই ট্র্যাশ আর কে লিখতে পারে। তাই নিজে নিজে লেখার চেষ্টায় ক্ষান্ত দেওয়াই শ্রেয়। বরং এদিক ওদিক থেকে খুঁটে টুঁটে যদি একটা কিছু দাঁড় করানো যায় তাহলে সময়ের এই মাগ্গিগণ্ডার বাজারে দু’একজন হয়তো একটু সময়-টময় করে পড়ে-টড়ে দেখতে পারেন। সেটুকুই লাভ। অতএব ঠাকুর দেবতার শরণ নিয়ে ‘গণেশ বন্দনা’ দিয়েই শুরু করে ফেলা যাক...

১৩২৫, শ্রাবণ। তিনি লিখলেন, “সকল দেশেই গরিব বেশি, ধনী কম। তাই যদি হয় তবে কোন্ দেশকে বিশেষ করিয়া গরিব বলিব? এ কথার জবাব এই, যে দেশে গরিবের পক্ষে রোজগার করিবার উপায় অল্প, রাস্তা বন্ধ।” ভারত ধনী দেশ নাকি, গরিব দেশ, নাকি ধম্মো দেশ - এ বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে লেখাটা ১০৩ বছরের পুরনো। তাই নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে ধনী, গরিব, বৈষম্য, অসাম্য, বিষয়গুলো তখনও বেশ ভালোরকমই ছিল এবং এখনও আছে। হয়তো সেইসময়ের অনুপাতে অবস্থাটা আরও খারাপের দিকে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘বিদেশি পুঁজির প্রশ্রয়ে’ ‘দেশকে বদনামি করনে কে লিয়ে’ বিভিন্ন সংস্থা যে সমস্ত পরিসংখ্যান-টংখ্যান বার করে তা বেশ ভয়ের। এ সবকিছুই দেশবিরোধী চক্রান্ত বলে দাগিয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ অথবা মানুষের সামনে অযোধ্যা, কাশি, মথুরার গাজর ঝুলিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা - দুটোই জোরকদমে চলে। যদিও সত্যিটা তাতে আড়াল করা যায় না। যে লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে এই প্যারা শুরু করেছিলাম সেখানেই অবশ্য বলা আছে - “যখন আমরা পেটের জ্বালায় মরি তখন কপালের দোষ দিই; বিধাতা কিম্বা মানুষ যদি বাহির হইতে দয়া করেন তবেই আমরা রক্ষা পাইব, এই বলিয়া ধূলার উপর আধ-মরা হইয়া পড়িয়া থাকি।” এসব ছেঁদো কথা আপাতত থাক। একটু বরং অন্য কথা বলি।

অক্সফ্যাম বলে একটা সংস্থা আছে। তারা ওইসব সার্ভে টার্ভে করে থাকে। ভারতেও এই সংস্থার একটা শাখা আছে। সম্প্রতি অক্সফ্যাম এক রিপোর্ট বের করেছে। যার নাম - ‘ইনইক্যুয়ালিটি কিলস’। ২০২২ সালের গ্লোবাল অক্সফ্যাম ডাভোস রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালীরা কোভিড-১৯ সংকটের সময় তাদের সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। যা আদপে দেশকে ধ্বংস করেছে এবং দারিদ্র্যকে আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে।

অক্সফ্যাম প্রকাশিত রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত বছর দেশের চরম কোভিড সংকটের সময় ভারতে নতুন করে বিলিওনেয়ার হয়েছেন ৪০ জন। অর্থাৎ তারও আগের বছরের ১০২ জনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশে এখন মোট বিলিওনেয়ারের সংখ্যা ১৪২। কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উলঙ্গ চেহারা সামনে এসে গেছে। শ্মশান ও কবরস্থানেও মানুষকে জায়গা দেওয়া যায়নি। বিভিন্ন রাজ্যে গঙ্গার পাড় ধরে লাশ চাপা দেবার ছবি সকলেই দেখেছি। স্তম্ভিত হয়েছি। আর অক্সফ্যাম রিপোর্ট আমাদের আরও একবার স্তম্ভিত করে জানাচ্ছে, এই সম্পদ বৃদ্ধি সেই সময়েই। দেশ এবং বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলা ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নিয়ে সোমবার ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বিলিওনেয়ারদের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় $৭২০ বিলিয়ন ডলার, যা জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ দরিদ্রের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি। ওই রিপোর্টই জানাচ্ছে, ভারতে ২০২১ সালে প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষের রোজগার কমেছে। আর ২০২০-র নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের মানুষ যখন কীভাবে একটু বাঁচার রসদ জোগাড় করবেন তা ভাবছেন, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজে আর লেজার লাইটের তালে তালে সারনাথে আরতি দেখছেন। ছবিটা মনে আছে তো? এবার আবার অক্সফ্যাম রিপোর্টে ফিরি।

এই রিপোর্ট অনুসারে ভারতের ১০০ জন সম্পদশালী ২০২১ সালে তাঁদের সম্পদের সঙ্গে আরও ৫৭.৩ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ যুক্ত করেছেন। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিলিওনেয়ারদের সম্পদ ২৩.১৪ লক্ষ কোটি থেকে পৌঁছে গেছে ৫৩.১৬ লক্ষ কোটিতে। হ্যাঁ। এই ভারতেই। অন্যদিকে ২০২০ সালেই ভারতের ৪.৬ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমায় পৌঁছে গেছেন। রাষ্ট্রসংঘ জানাচ্ছে, বিশ্বে দরিদ্র মানুষের তালিকায় সাম্প্রতিক সময়ে যত মানুষ যুক্ত হয়েছেন তার অর্ধেকের বেশি ভারতবাসী।

অক্সফ্যামের মতে, সরকারের উচিত সম্পদের পুনর্বণ্টন করার জন্য তাদের নীতির পুনর্বিবেচনা করা। অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহার তাঁর বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন, বৈষম্যের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২১,০০০ মানুষের বা প্রতি ৪ সেকেন্ডে ১ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বেহার জানিয়েছেন, ২০২০ সালে মহামারীর সময় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মহিলারা। তাঁদের রোজগার কমেছে প্রায় ৫৯.১১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৯-এর অনুপাতে ২০২০ সালে মহিলা কর্মীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ১.৩ কোটি। অক্সফ্যামের সুপারিশ, সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগের জন্য জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করুক। এই রিপোর্ট আরও জানিয়েছে যে, ভারতের ১০ জন ধনকুবেরের সম্পদের এই সামান্য অংশ আগামী ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের শিশুদের স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষায় অর্থ সংস্থানের জন্য যথেষ্ট। অবশ্য কার কথা কে শোনে জানিনা। রবীন্দ্রনাথ ১০৩ বছর আগে ওই প্রবন্ধেই বলে গেছিলেন, “...আমাদের দেশে সকলের চেয়ে দরকার, হাতে ভিক্ষা তুলিয়া দেওয়া নয়, মনে ভরসা দেওয়া। মানুষ না খাইয়া মরিবে―শিক্ষার অভাবে, অবস্থার গতিকে হীন হইয়া থাকিবে, এটা কখনোই ভাগ্যের দোষ নয়, অনেক স্থলেই এটা নিজের অপরাধ।...”

এ তো গেল ভারতের কথা। মহামারীর সময়ে বিশ্বজুড়ে কী হয়েছে সেটাও তো একটু জেনে নেওয়া দরকার। কারণ, এরকম ভেবে নেবার কোনো কারণ নেই যে, এই বঞ্চনা শুধু ভারতে। এ বঞ্চনা বিশ্বজুড়ে। আমরা যেহেতু বেশিরভাগ মানুষই ‘অরাজনৈতিক’ থাকাতে বেশি স্বচ্ছন্দ তাই এই ‘প্যানপ্যানানি’ সবসময় সহ্য হয়না। এ কী রে ভাই! সবকিছুতেই আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত। বারবার ওসব পুঁজিপতি-টতি আউড়ে কিস্যু লাভ নেই। ‘যার কেউ নেই তার ভগবান আছে’। এই সরল সত্যি মেনে নিলেই মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়। তখন দশ লাখি স্যুট, আর কয়েক হাজার কোটির সেন্ট্রাল ভিস্তা, কয়েক কোটি টাকার বিলাসবহুল বিমান - সব কোথায় হারিয়ে যায়। টেলিপ্রম্পটার বীরদের সামনে থাকা যন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলে সমস্ত জ্ঞান কোথায় থাকে, আর ফাম্বলিং কীভাবে শুরু হয় তা তো হালে সকলেই দেখে নিয়েছেন। যাক গে। আমরা বোধহয় অক্সফ্যাম রিপোর্টে ছিলাম।

২০২১ এর জানুয়ারিতে সুইৎজারল্যান্ডের দাভোস শীর্ষ সম্মেলনে অক্সফ্যাম The Inequality Virus - শীর্ষক প্রতিবেদনে - "ত্রুটিযুক্ত এবং শোষণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা... বৈষম্য ও নিপীড়ন, পিতৃতন্ত্র এবং কাঠামোগত বর্ণবাদ, সাদা আধিপত্যবাদে বদ্ধমূল ধারণা" - এগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছিল এবং ‘‘অন্যায় ও দারিদ্র্যের মূল কারণ’’ হিসেবে এগুলোকেই চিহ্নিত করেছিল। রিপোর্টে বলা হয়, ‘‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিলিওনেয়ারদের সম্পদ বিস্ময়করভাবে ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।... বিশ্বের সবথেকে ধনী দশ ধনকুবের এই সময়ের মধ্যে তাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৫৪০ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছেন। এই একই সময়ের মধ্যে বিশ্ব সাক্ষী থেকেছে কীভাবে মহামারীর কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়ে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে।... অনুমান করা হচ্ছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মোট মানুষের সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন থেকে ৫০০ মিলিয়ন পর্যন্ত বাড়তে পারে।” ওই রিপোর্টে বলা হয়, এই মহামারীর কারণে মহিলা, অন্য বর্ণ এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমানোর জন্য কৌশলগত নীতি পরিবর্তনের ওপর জোর দিতে বলা হয়।

যদিও সে আবেদনে যে কাজ কিছুই হয়নি তার প্রমাণ ২০২২-এর রিপোর্ট। কী আছে এবারের রিপোর্টে? এবারের রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের ১০ জন ধনী ব্যক্তির সম্পদ বিশ্বব্যাপী মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে $১.৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে। শেয়ার এবং সম্পত্তির দাম বৃদ্ধির পরে তাঁদের সম্পদের এই বৃদ্ধি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধানকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অক্সফ্যাম জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, এই সময়ে আরও প্রায় ১৬৩ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। অন্যদিকে মহামারীর সময় অতি ধনী ব্যক্তিরা ভাইরাসের প্রভাব কমাতে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন উদ্দীপক প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করে তাঁদের সম্পদ আরও বাড়িয়ে তুলেছেন। এদের ঠিক উলটোদিকে থাকা মানুষদের আয় কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশের আয় হ্রাস পেয়েছে, যখন বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এবং অন্য ৯ ধনী বিলিওনেয়ারের সম্পদ সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন $১.৩ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিলিওনেয়ারদের তালিকা থেকে গৃহীত পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ইলন মাস্ক মহামারীর প্রথম ২০ মাসে তার সম্পদ ১০ গুণ বাড়িয়ে ২৯৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছেন, যা তাকে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের চেয়েও এগিয়ে রেখে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি করেছে। এই সময় জেফ বেজোসের নিট সম্পদ ৬৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে $২০৩ বিলিয়ন। ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গের সম্পদ দ্বিগুণ হয়ে $১১৮ বিলিয়ন হয়েছে। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সম্পদ ৩১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে $১৩৭ বিলিয়ন। ব্লুমবার্গ বিলিওনেয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, গত বছর ভারতে সবথেকে বেশি সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে গৌতম আদানির। যা বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। তিনি গত বছর তাঁর সম্পদে $৪২.৭ বিলিয়ন ডলার যোগ করেছেন, যা এখন প্রায় $৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদ ২০২১ সালে $১৩.৩ বিলিয়ন বেড়েছে এবং এখন তার মূল্য $৯৭ বিলিয়ন। এর পাশাপাশি যে তথ্যটা না জানলেই নয়, তা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে, প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ৫.৫০ ডলারের কম আয় করবেন। রাজনীতি করবেন না প্লিজ। ওটা আবার আমার ধাতে একদম সয় না।

এই চরম বিপর্যয় সম্পর্কে সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে সীতারাম ইয়েচুরি এক সাংবাদিক বৈঠকে এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “বিশ্বের ধনী দেশগুলি তাদের নিজেদের এবং তাদের কোম্পানির লাভের জন্য মানবতাকে বিপন্ন করছে। এমনকী কোভিড মহামারীর সময়েও, ভ্যাকসিন থেকে পেটেন্ট রয়্যালটি কমানোর পরিবর্তে তারা এটিকে এত ব্যয়বহুল করে তুলছে যে, অনেক দরিদ্র দেশ ভ্যাকসিন কিনতে পারছে না। ফলস্বরূপ এই মহামারীর সময়ে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব ক্রমশই বেড়ে চলেছে।” তিনি আরও বলেন, “ভারত সহ, বিশ্বের কিছু ধনী ব্যক্তির সম্পদের ব্যাপক বৃদ্ধি হয়েছে। সরকার এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করছে, সেগুলিও সরাসরি এই ধনকুবেরদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এর ফলে একদিকে ক্ষুধা-মৃত্যু বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে কর্পোরেট বাজার।”

আমার কথা শুনতে আপনার খারাপ লাগে জানি। কিন্তু কী করব বলুন। আপনার খারাপ লাগা দূর করতেই তো নিজের কথা না বলে অক্সফ্যামের কথা বললাম। তাও তো ইউনিসেফের কথাটা বলিনি। যেখানে তারা জানাচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছিল যা মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি ছিল। ফলে ওই ভ্যাকসিন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি ফেলে দিতে বাধ্য হয়। ইউনিসেফের সরবরাহ প্রধান ইটলেভা কাদিলি জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ডিসেম্বরেই ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ভ্যাকসিন দেশগুলি প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ তারা সেগুলি বিতরণ করতে পারেনি।

বদহজম হয়ে যেতে পারে। তাই একসাথে সব না বলে সইয়ে সইয়ে বলাই ভালো। পিঠে মারার থেকেও ভালো ওষুধ তো পেটে মারা। আপনি তাতে রাজনীতি খুঁজে না পেলেও রাজনীতি আছে। সেটা যত দ্রুত বুঝে ওঠা যাবে ততই মঙ্গল। তাঁর ‘সমবায় ১’ থেকে আর একটা কথা বলেই পালিয়ে যাব। তিনি ১০৩ বছর আগে লিখেছিলেন - “মানুষের ধর্ম জয় করিবার ধর্ম, হার মানিবার ধর্ম নয়। মানুষ যেখানে আপনার সেই ধর্ম ভুলিয়াছে সেইখানেই সে আপনার দুর্দশাকে চিরদিনের সামগ্রী করিয়া রাখিয়াছে। মানুষ দুঃখ পায় দুঃখকে মানিয়া লইবার জন্য নয়, কিন্তু নূতন শক্তিতে নূতন নূতন রাস্তা বাহির করিবার জন্য।...” আমি তো রাস্তার খোঁজেই আছি। আপনিও আছেন তো?