E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২১ জুলাই, ২০২৩ / ৪ শ্রাবণ, ১৪৩০

কাদের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে সিপিআই(এম)-কে?

দেবেশ দাস


গণনায় কারচুপির প্রতিবাদে হিঙ্গলগঞ্জে সিপিআই(এম)’র বিক্ষোভ।

‘‘দেখ্ খুলে তোর তিন নয়ন
রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে
দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।’’


- শঙ্খ ঘোষ

চুপ, উন্নয়ন চলছে। এত টাকা খরচ করে চারিদিকে উৎসব হচ্ছে, মেলা হচ্ছে, রাস্তার হোর্ডিং-এ, সংবাদপত্রে, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এত বিজ্ঞাপন, তাতেও উন্নয়ন চোখে পড়ে না? তা সত্ত্বেও কেন উন্নয়ন নিয়ে কথা বলা? ভোটে কেন প্রার্থী দেওয়া? কেন ভোট দিতে আসা? আর তারপরে কেন আসা গণনায়? উন্নয়ন জিন্দাবাদ, উন্নয়নকে পাহারা দিতে উন্নয়নের পাহারাদাররা চারিদিকে খড়্গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে প্রার্থীদের গলায় খড়্গ, ভোটের দিন ভোটারদের, গণনার দিন কাউন্টিং এজেন্টদের। নির্বাচনে বিরোধী জিতলে, সার্টিফিকেট যাতে শাসকদল পায়, তার জন্য আবার খড়্গ লাগে।

গণতন্ত্রের নতুন সংজ্ঞা দিচ্ছে খড়্গধারীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে, বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে না পারলে তাঁরা যেন ওঁর কাছে যান। যেন জঙ্গলে বাঘেদের রাজা ছাগলদের ডেকে বলছে, কোনো বাঘ তাদের বিরক্ত করলে যেন তাঁকে খবর দেওয়া হয়। কী দারুণ গণতন্ত্র?এখন তৃণমূল বলছে, যারা ঘরে ফিরতে পারছে না, তারা যেন তৃণমুল নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে।

খড়্গধারীদের মদতে কারা কারা?

(১) নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির সাথে সভা না করেই হঠাৎ এক মাসের মধ্যে নির্বাচন ডেকে দিল, যাতে বিরোধী দলগুলি প্রস্তুতি না নিতে পারে, বিশেষত সিপিআই(এম)। ৯ জুন গেজেট নোটিফিকেশন করে বলল নমিনেশন জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৫ জুন, ভোট ৮ জুলাই। অনেক দল হাইকোর্টে গেল নির্বাচন পিছোতে, সিপিআই(এম)যায়নি। হাইকোর্টে কিছু দল গেল সেন্ট্রাল ফোর্সের দাবিতে। সিপিআই(এম) সেই দাবি করেনি, কারণ সিপিআই(এম) জানত সেন্ট্রাল ফোর্স আসলেও তাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হবে। হাইকোর্ট বলল সেন্টাল ফোর্স আনার কথা, নির্বাচন কমিশনের খুশি হওয়ার কথা, সে ছুটল সুপ্রিম কোর্টে সেন্ট্রাল ফোর্স আসা ঠেকাতে। শেষ দু’দিনে তৃণমূল ৭৬ হাজার নমিনেশন জমা দিল। নির্বাচন কমিশনের সাথে সাঁট না থাকলে এটা হয়? নির্বাচনের সময় গণ্ডগোল, ভোটের গণনায় গণ্ডগোল, কমিশনের প্রশাসন পুলিশ বা সেন্ট্রাল ফোর্স ডাকেনি। কমিশনার বলেছেন, তাঁর দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা করার, শান্তিতে নির্বাচন করা তাঁর দায়িত্ব নয়, কে কাকে গুলি করবে তিনি কী করে জানবেন? গণনার সময় সেই প্রশাসনের সামনে কেউ ব্যালট গিলে ফেলেছে, জানালা দিয়ে ব্যালট ফেলে দিয়েছে, ব্যালটে কালি ঢেলে দিয়েছে, সব ক্ষেত্রেই সিপিআই(এম)’র ভোট। কমিশনের প্রশাসন শুধু দেখেনি, কুকর্মে সাহায্য করেছে। পরিশেষে জেতা প্রার্থীকে সার্টিফিকেট না দিয়ে খড়্গধারীদের জিতিয়ে দিয়েছে।

(২) পুলিশ পৌঁছে গেছে বিরোধী প্রার্থীর বাড়ি, তাঁকে মাদক-মামলার ভয় দেখিয়ে নাম প্রত্যাহার করাতে চেয়েছে, কোনো ক্ষেত্রে প্রার্থীকে নির্বাচন অফিসে টেনে নিয়ে গেছে তাঁর নাম প্রত্যাহার করাতে, কাউন্টিং এজেন্টদের পিটিয়েছে, যাতে গণনায় যেতে না পারে। প্রার্থী জিতলেও নির্বাচন প্রশাসন যখন সার্টিফিকেট দেয়নি, তখন সার্টিফিকেট চাইলে পুলিশ গুলি করে মেরেছে (ভাঙড়ের ঘটনা)।

(৩) সেন্ট্রাল ফোর্সের কথা ভাবুন। প্রথম থেকে সেন্ট্রাল ফোর্স নিয়ে কেন্দ্রের টালবাহানা। সেটা কী এল? কত এল? কোথায় ছিল?

(৪) মিডিয়াকে দেখুন। সিপিআই(এম) লড়েছে বামফ্রন্টকে নিয়ে, শুধু তাই নয়, বামফ্রন্ট যতগুলি আসনে লড়েছে, তার বাইরেও অন্য আসনে তাঁদের সমর্থন করেছে যাঁরা তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে। মিডিয়া কোথাও একবার এক লাইন বলেছে বা দেখিয়েছে যে সিপিআই(এম) এবং সিপিআই(এম)সমর্থিত আসন সংখ্যা বিজেপি’র চেয়ে বেশি? মিডিয়া ব্যস্ত ছিল বিজেপি-কেই দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে দেখাতে। শুধু তাই নয়, জনসমীক্ষায়, এক্সিট পোলে সিপিআই(এম) এবং সিপিআই(এম) সমর্থিতরা কার্যত হাওয়া! তাহলে কি জনসমীক্ষার পদ্ধতি ভুল? আদৌ না। জনসমীক্ষা একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। ওরা যদি ঠিকমতো জনসমীক্ষা করে থাকে, তবে ঠিকই জানতে পেরেছিল যে তৃণমূলের হাল খারাপ, বিজেপি দ্বিতীয় নয়, শুধু লেখবার সময় উল্টোটা লিখেছে। এত এত সরকারি বিজ্ঞাপনের টাকা পায় মিডিয়াগুলি, তাই দিয়ে তাঁদের মাইনে হয়, যে শাসকদল দুটি তাদের বিজ্ঞাপন দেয় তাদের প্রতি তাঁরা নেমকহারামি করে কী করে? দুটো শাসকদলেরই কোনো চক্ষু লজ্জা নেই, প্রকাশ্যেই বলে, নেমকহারামি করলে বিজ্ঞাপন পাবে না। সিপিআই(এম)-কে ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে।

(৫) শেষ দু’দিনে তৃণমূল যে ৭৬ হাজার নমিনেশন জমা দিয়েছে, এত তাড়াতাড়ি এত ফর্ম পূরণ কড়া, ঠিকঠাক জমা দেওয়া, এসবের জন্য নির্বাচন কমিশনের সাথে অবশ্যই সাঁট ছিল, কোনো পেশাদারি সংস্থাও নিশ্চয় কাজ করেছে। বিজেপি, তৃণমূল পেশাদারি সংস্থা নিয়োগ করেই থাকে নির্বাচনে লড়ার জন্য। এর আগে পেশাদারি সংস্থা আইপ্যাক-কে সরকারি টাকায় নিয়োগ করেছিল তৃণমূল। এই পেশাদারি সংস্থাগুলির কাজ কালোকে সাদা বানানো, চোরকে জনগণের কাছে সাধু বানানো। যার পয়সা পায়, সেই মক্কেলকে তাঁরা পরামর্শ দেয় জনগণকে কী বলতে হবে, কীভাবে জনগণের দিকে তাকাতে হবে, চুরি করেও কীভাবে এমনভাব করতে হবে যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না,কোন বুথে সিপিআই(এম)-কে নমিনেশন দিতে দেওয়া যাবে না, কোন বুথে কাউকে ভোট দিতে দেওয়া যাবে না, কোন বুথে কাউন্টিং এজেন্টদের পেটানো ছাড়া পথ নেই। এই ধরনের কোম্পানিগুলির আরও কাজ - তাদের মক্কেলদের বিরুদ্ধে মেহনতি জনতা যাতে কিছুতেই ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তার জন্য সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করা অনেকদিন আগে থেকেই। এসবের জন্য তারা টাকা নেয়। কত টাকা বলুন তো? কয়েকশ কোটি টাকা। নেবেই। কারণ এর থেকেই তো শাসকদল কয়েক হাজার কোটি টাকা কামায়। ভাড়া করা দক্ষ-পেশাদারি লোকজনের বিরুদ্ধে লড়ে যায় দরিদ্র মেহনতি মানুষ। আসলে অর্থের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই।

(৬) পঞ্চায়েতে বা যে ভোটেই হোক, প্রার্থী দাঁড় করাতে গেলে ঝান্ডা লাগে, পোস্টার লাগে, প্রচার করতে লাগে। পাবে কোথায় সিপিআই(এম)? মানুষের কাছ থেকে তুলতে হয়। কত টাকা ওঠে? গত বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে সিপিআই(এম) তুলেছিল ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা, রাজ্যের বেশিরভাগ বিধানসভাতেই সিপিআিই(এম) এত টাকা তুলতে পারে না। এখন খরচ করার অধিকার ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত, সিপিআই(এম) কোনদিন সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি, বাম আমলেও না। যদি ৫ লাখ টাকা বিধানসভা কেন্দ্র প্রতি খরচ ধরি তাতে সিপিআই(এম)’র সারা রাজ্যে খরচ হবে ১৫ কোটি টাকার কম। আর তৃণমূলের একজনের খাটের তলা থেকে পাওয়া যায় ৪৭ কোটি টাকা। তৃণমূলের কোনো নেতার পকেটে যা থাকে মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির রাজ্য জুড়ে কোনো নির্বাচনে তা খরচ হয় না। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটি জনসংযোগ-গণসংগ্রহ কর্মসূচি নিয়েছিল। ৫০ দিন ধরে কয়েক হাজার কর্মী, সাথে রাজ্যের নেতৃত্ব মিলে টাকা উঠেছিল ৪০ লাখের মতো, কমরেডরা খুশি। কিন্তু তা খাটের তলার ৪৭ কোটির ১ শতাংশেরও কম। নির্বাচনের সময়ে তৃণমূল কিংবা বিজেপি পেশাদারি সংস্থা দিয়ে যে গাদা গাদা হোর্ডিং লাগায়, তাতে একটা হোর্ডিং-এ যা খরচ, তা সিপিআই(এম)’র একটি বিধানসভা কমিটি তুলতে পারে না। বোঝা যাচ্ছে, কত শক্তিধর শক্তির সাথে লড়তে হয়?

(৭) বিধানসভায় ৭৭টি বিধায়ক বিজেপি’র। ওরাই বিরোধী দল। রাজ্যে একদিনে ৪ জন খুন হয়ে গেল পুলিশের গুলিতে ভাঙড়ে, বিজেপি’র কোনো প্রতিবাদ দেখলেন? শুধু মুখে বড়ো বড়ো কথা, আর তাই নিয়ে সন্ধ্যাবেলায় চ্যানেলে চ্যানেলে আলোচনা। তৃণমূলের দুর্নীতি প্রথম থেকে সব জেনেও কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করেনি, এখন আদালতের হস্তক্ষেপে সিবিআই-ইডি হচ্ছে। শেষপর্যন্ত কতটা হয় দেখা যাক। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি ততটুকুই যাবে যতটা নাগপুর থেকে আরএসএস বলে দেবে। মমতা নাগপুরের খুব পছন্দের লোক, তার আমলেই রাজ্যে আরএসএস অনেক বেড়েছে, আরএসএস তাঁকে দুর্গা বলে। আরএসএস’র ঘোষিত শত্রু কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে চিরকাল লড়াই করেছেন মমতা। এতটা অন্ধ কমিউনিস্ট বিরোধিতা করার কৃতিত্ব রাজ্যের কোনো বিজেপি নেতার ঝুলিতেই নেই। নাগপুর মমতাকে বলে দিয়েছে কারা আসল শত্রু। তাই সিপিআই(এম) সমর্থিত একমাত্র বিধায়ক আইএসএফ-কে নিয়ে তৃণমূলের যত মাথাব্যাথা। ৪১ দিন তাঁকে আটকে রাখল পুলিশ, তাঁর বিধানসভা এলাকাতেই তাঁকে ঢুকতে দিচ্ছে না। বিজেপি’র কোনো বিধায়কের প্রতি এমন আচরণ করেছে? উপনির্বাচনে জেতা আরেকজন সিপিআই(এম) সমর্থিত বিধায়ককে দলে টেনে নেওয়ার আগে পর্যন্ত তৃণমূলের ঘুম ছিল না। অথচ বিজেপি’র ৭৭ জনকে নিয়ে তৃণমূল নিশ্চিন্তে আছে। ওরা আসতে পারে, যেতে পারে, যাতায়াতে কোনো বাধা নেই। সিপিআই(এম)’র আজন্ম লড়াই আরএসএস’র বিরুদ্ধে, তার দুটি টিম - তৃণমূল এবং বিজেপি।

(৮) বর্তমানে এ রাজ্যে গরিব মানুষের জন্য সিইএসসি’র বিদ্যুতের দাম বেশিরভাগ রাজ্য থেকেই বেশি, গরিবের জন্য ভরতুকি তুলে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল রাজ্য থেকে শিল্প তাড়িয়েছে, কিন্তু শিল্পপতি গোয়েঙ্কার লাভের জন্য সদা সক্রিয়। আদানিকে ডেকে আনছে দেওচা পাঁচামীতে আদিবাসীদের তাড়িয়ে জমি জঙ্গল তাঁর হাতে দেওয়ার জন্য। মোদি সরকার মুষ্টিমেয় যে কয়েকটি মানুষের হাতে দেশের সম্পদ লুঠতে দিতে চায়, তাদের অনেকেই বিজেপি এবং তৃণমূল-কে টাকা দেয়। গত ২০২১-২২ সালে (পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের বছর) বিজেপি ইলেকটোরাল বন্ডে পেয়েছে ১১৬১ কোটি টাকা, ওই বছরে তারপরেই ছিল তৃণমূল ৫২৮ কোটি টাকা। সিপিআই(এম)-কে লড়তে হচ্ছে, দেশের পয়সাওয়ালা দুটি দলের বিরুদ্ধে, আসলে মুষ্টিমেয় শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে।

(৯) ২০১১ সালে মমতা সিপিআই(এম)-কে হারানোর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিন্টন সরাসরি কলকাতায় এসেছিলেন মমতার সাথে দেখা করতে। ব্রিটেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনও সরাসরি কলকাতায় এসেছিলেন মমতার সাথে দেখা করতে। কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরই এই মানের আন্তর্জাতিক স্তরের সাক্ষাৎপ্রার্থী জুটেছে বলে শুনিনি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন লোকের নাম বার করেছিল তাতে হিলারির সাথে নাম ছিল মমতার। মমতার কথাবার্তা নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করেন, বিশেষত সমাজমাধ্যমে। রাজনীতিতে তিনি কখনো এটা বলেন, কখনো ওটা বলেন, ভুরিভুরি মিথ্যা বলেন, এই কাউকে গাল পারছেন, এই কাছে টেনে নিচ্ছেন। কখনো কখনো কথাবার্তায় পাগল-পাগল ভাব। কেউ ভাবেন - মাথাটারই বোধ হয় গণ্ডগোল! ভুল বুঝছেন, একটা বিষয়ে তাঁর মাথা ভীষণ ঠান্ডা, অসম্ভব গুণ, যে গুণের কদর সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে আছে। সেটা হচ্ছে তার আজীবন তীব্র অন্ধ কমিউনিস্ট বিরোধিতা। সিপিআই(এম)’র শত্রু সাম্রাজ্যবাদ।

বোঝাই যাচ্ছে, কী বিশাল শক্তিধরদের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম)’র লড়াই। শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই হলে, সেটা তেমন কিছু নয়। প্রশ্ন হচ্ছে সিপিআই(এম)’র কর্মীরা কী এমন কাজ করেন যে এই সমস্ত বিশাল শক্তিধররা সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে, কেন তারা সিপিআই(এম)-কে হারাতে কাড়িকাড়ি টাকা ঢালেন?

আসলে সিপিআই(এম) শোষণের বিরুদ্ধে। শোষণ থাকবে আর সিপিআই(এম) থাকবে না, তা হয় না। সেখানে বিধানসভায় শূন্য পাইয়েও সিপিআই(এম)-কে দমানো যাবে না। শোষণকারীরা তাই মরিয়া, তারা সিপিআই(এম)-কে ঠেকাতে চায়। তাই ভোট লুঠ, গণনা লুঠ। বিধানসভায় শূন্য আসন পাওয়া, তৃণমূল-বিজেপি’র তুলনায় প্রায় শূন্য টাকা নিয়ে সিপিআই(এম) লড়ে যাচ্ছে।

সিপিআই(এম) কী এই লড়াইয়ে পারবে? অর্থের শক্তি, পেশী শক্তি, মিডিয়ার শক্তির বিরুদ্ধে সিপিআই(এম) শুধু একটাই অস্ত্রে এগোতে শিখেছে, তা হচ্ছে জনতার শক্তি। মিডিয়াতে, বিজ্ঞাপনে, সেই জনতার শক্তিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে ঠিকই নানা কায়দায় - মানুষের কানে বারে বারে ভুল কথা বলে, নানা প্রলোভনে। তবে সেই বিভ্রান্তি কেটে যায় বাস্তবতার কঠিন মাটিতে আর সিপিআই(এম)’র ম্যান-টু-ম্যান যোগাযোগে। পঞ্চায়েত ভোটে যতটুকু এগিয়েছে সিপিআই(এম), তা জনতার শক্তির ওপর ভর করেই। মেহনতি মানুষের সর্বনাশ আটকাতেই, তাই সিপিআই(এম)-কে লড়াইয়ে জিততেই হবে, তা ছাড়া কোনো দ্বিতীয় পথ নেই।