E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২১ জুলাই, ২০২৩ / ৪ শ্রাবণ, ১৪৩০

“লাগছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে”

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সকালে লিখতে বসে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। ‘হিং টিং ছট’ প্রশ্নগুলো তো মাথার মধ্যে দিনরাত কামড়াতেই থাকে। তাই ঠিক কোন বিষয় নিয়ে লিখব সেটাই ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের নামে রাজ্য নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় সরকার এবং তৃণমূলের তৈরি করা নাটক নিয়ে, নাকি মণিপুরের নৃশংস, ভয়ানক ঘটনা নিয়ে অথবা বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকের পর তড়িঘড়ি যেভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বড়ো ছোটো সব নেতা একযোগে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার একটা বড়ো অংশকে নিয়ে ‘গেল গেল’ রব তুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তা নিয়ে?

গুরুত্বের দিক থেকে বিবেচনা করলে বিষয় হিসেবে কোনোটারই ওজন কম নয়, কোনোটাই খাটো নয়। একথা তো কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, আমাদের ‘মাননীয়’ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুরের ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গা নিয়ে ২০ জুলাইয়ের আগে গত ৭৫ দিনে একটিবারের জন্যও মুখ খোলবার সময় পাননি অথবা প্রয়োজন মনে করেননি। অথচ এই সময়েই তিনি গোটা দুই ‘মন কী বাত’, গোটাকতক বিদেশ ভ্রমণ, নিজের দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে চিন্তা ব্যক্ত করতে ভোলেননি। বিজেপি শাসিত মণিপুরের জাতিগত হিংসা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা সেই তিনিই যেভাবে মৌনব্রত ভেঙে হঠাৎ করে যেভাবে ‘অপোজিশন পার্টিস মিট’ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাতে চমক লাগাই তো স্বাভাবিক। তাও কোনো রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে নয়। পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরের এক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে। মণিপুর নিয়ে মুখ বন্ধ করে থাকা প্রধানমন্ত্রী সেদিন বিরোধী মঞ্চের বৈঠক নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়ে বলেন, “কিছু দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। সেখানে প্রকাশ্যে হিংসা হয়েছে, লাগাতার খুনখারাপি হচ্ছে। এ নিয়েও এঁদের মুখ বন্ধ। কংগ্রেস ও বাম কর্মীরা ওখানে নিজেদের কী করে বাঁচাবেন, ভাবছেন। কিন্তু তাঁদের নেতারা ব্যক্তিগত স্বার্থে নিজেদের কর্মীদেরও মরার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।” বিরোধীদের সম্মেলনকে তিনি “কট্টর ভ্রষ্টাচার সম্মেলন” বলেও দাগিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ ঘটনা পরম্পরায় তাঁর ভাবলেশহীনতা কেটে যায় এবং তিনি ভালোই প্রতিক্রিয়া দিতে পারেন। তাই মণিপুরের ঘটনায় নির্লিপ্ত থাকা প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের বৈঠকে ঈশানকোণে মেঘ দেখতে পেয়েছেন বলেই তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া। সুকুমার রায় কী সাধে লিখে গেছেন - “বলছিলাম কি, বস্তুপিণ্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে,/ অর্থাৎ কিনা লাগছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে -”

অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা কথা একটু ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। সময়ের দাবিতে যা প্রয়োজনীয়ও বটে। মিডিয়া সুনামির এই যুগে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া দম দেওয়া পুতুলের মতো সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে একের পর এক অ্যাজেন্ডা তৈরি করতেই থাকে। আক্রমণের মূলে থাকে সেই বাম রাজনীতি, সাধারণ মানুষের রুটি রুজির লড়াই। এটা মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার ‘ভূত’ দেখা নয়। বরং কঠিন এবং কঠোর বাস্তব। রীতিমতো জাতীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় রাজনীতির আলাদা আলাদা প্রেক্ষিত একের পর এক খাপ বসিয়ে আদ্যন্ত গুলিয়ে এবং ঘুলিয়ে দেয় পেইড মিডিয়ার নন্দী ভৃঙ্গীরা। সেই খেলা ধরতে না পেরে তাই নিয়ে পাড়ার চায়ের দোকান, ঠেক আর সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে মাথা ফাটাফাটি করে মরে জনসাধারণ। এতকিছুর পরেও তৈরি করে দেওয়া সেই বাইনারির খেলা যখন ভেঙে যায় তখন সাময়িক দিশেহারা হয়ে গিয়ে নতুন পরিকল্পনা করে আবারও খেলা শুরু হয়ে যায়। বিগত কয়েক দিনে সেই খেলা বারবার দেখা গেছে এবং যাচ্ছে। এ খেলা চলতেই থাকবে। তাই সেসবে কান না দিয়ে আপাতত একটু রাজ্যে ফিরি।

চুলোয় দিয়ে গণতন্ত্র
ভোটাধিকার বলি

তাঁর পালিত প্রাণী আমি
তাঁর কথাতেই চলি।

রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে টানাপোড়েন এখনও থামেনি। থামার কোনো লক্ষণই নেই। আদালত, রাজ্য নির্বাচন কমিশন, রাজ্য সরকার - বিবাদ চলছেই। ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন অনেকেরই স্মৃতিতে ফিরিয়ে এনেছে ৫১ বছর আগের ১৯৭২-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রহসন। যদিও এবারের নির্বাচন হয়তো সেই রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন ত্রিস্তরীয় লুঠ। মনোনয়ন জমা, ভোটদান পর্ব এবং গণনা। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লুঠ করা হয়েছে। যে নির্বাচনের বলি হতে হয়েছে আমারই রাজ্যের ৫৯ জন সাধারণ মানুষ তথা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের। গত ১১ জুলাই ভোট গণনা হয়ে যাবার পর থেকে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন গণনাকেন্দ্রের আশপাশ থেকে, জঞ্জালের ভ্যাট থেকে, পুকুরের ধার থেকে উদ্ধার হচ্ছে বাম প্রার্থীদের, বিরোধী প্রার্থীদের প্রতীকে ছাপ মারা গোছা গোছা ব্যালট। মালদহের গাজোলের ঘটনা তো আরও সাঙ্ঘাতিক। যেখানে গণনা, ফল প্রকাশ সবকিছু হয়ে যাবার পরে উদ্ধার হয়েছে একাধিক সিল করা ব্যালট বাক্স। এমনকী প্রশাসনের বিরুদ্ধে জোর করে সই করানোর অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, আদালতের হস্তক্ষেপের পর বিরোধী প্রার্থী ও এজেন্টদের কাছে পুলিশ যাচ্ছে। ভয় দেখিয়ে একটা কাগজে সই করতে বাধ্য করছে তাঁদের। যাতে আদালতে প্রমাণ হয় গণনার দিন গণনা কেন্দ্রে বিরোধী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। যদিও ভোট গণনার দিন অধিকাংশ গণনা কেন্দ্র থেকেই মেরে বের করে দেওয়া হয়েছিল বিরোধী দলের এজেন্ট, প্রার্থীদের।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ভোট দিতে পারেননি জ্যাংড়া হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নিউটাউনের বাসিন্দারা। যদিও গণনার দিন দেখা যায় ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ওই বুথগুলিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন ভোর ৫টা থেকেই নিউটাউনের তিন ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। যার মধ্যে ছিল নিউটাউনের এপিজে আব্দুল কালাম কলেজও। এই কলেজে ঢোকার তিনটে রাস্তার সবক’টির দখল নেয় বহিরাগতরা। স্থানীয় ভোটারদের বাধা দেওয়া হয়। এমনকী পুলিশের ব্যারিকেড ব্যবহার করে বাধা দেয় দুষ্কৃতীরা। সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে ক্যামেরা কেড়ে সেই ভিডিয়ো জোর করে মুছে দেওয়া হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে বাধা পেয়ে নির্বাচনের পরের দিন কালো পোশাক, কালো আর্ম ব্যান্ড পরে রাস্তায় প্রতিবাদ দেখান নিউটাউনবাসীদের একাংশ। এই ঘটনাতেও রাজারহাট ব্লকের বিডিও-কে তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

আবার সম্পূর্ণ অন্য ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির রামকৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। যেখানে সিপিআই(এম) প্রার্থী অর্পিতা বণিক সর্দার অভিযোগ করেছেন, গণনার দিন তাঁকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। তখনই স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার লোকজন নিয়ে গণনাকেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে আধিকারিকদের হুমকি দেন। এরপরেই তৃণমূল প্রার্থীকে ১ ভোটে জয়ী করা হয়। নির্বাচনকে কমিশনকেও পুরো বিষয়টি জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কমিশন।

হাবড়ার ২ নম্বর ব্লকের দিঘরা মালিকবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন বুথে ১০০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। যে অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয় বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ নির্বাচনের দিন কারচুপি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, একটি বুথে ১৫২৯ জন ভোটার থাকলেও ভোট পড়েছে ১,৭৪০টি। অন্য এক বুথে ভোট পড়েছে ২,৪৯৬টি অথচ ভোটার সংখ্যা ১,৪৮৮ জন। আরও একটি বুথে ১,৪৮১ জন ভোটার থাকলেও ভোট পড়েছে ২,১৭৭টি। গোটা ঘটনায় হাবরা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও-র রিপোর্ট তলব করেছে আদালত।

এরকম হাজারো ঘটনায় ঘটনাবহুল এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন। যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই জালিয়াতি নিয়ে সবথেকে সরব বামফ্রন্ট তথা সিপিআই(এম)। একইভাবে সরব কংগ্রেস, আইএসএফ-ও। অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি-ও। যদিও এই প্রসঙ্গে অন্য একটি উদাহরণ টানা খুবই প্রয়োজন। সেটা সেপ্টেম্বর ২০১৮-র ঘটনা। ত্রিপুরার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন। যে নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে এই বিজেপি। ২০১৮-তে এই পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিল তৃণমূল। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ইতিহাসে যে নজির আর নেই। পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, ভোট লুঠ, নির্বাচনী জালিয়াতির নিরিখে বিজেপি-তৃণমূল একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। যে বিজেপি ত্রিপুরায় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়, সেই বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে সরব হয়। আবার যে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়, তারাই আবার অন্য জায়গায় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে সরব হয়। তাই তৃণমূল-বিজেপি আঁতাতটা ঠিক কোথায় সেটা বুঝতে খুব একটা অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। ব্যতিক্রম বোধহয় একমাত্র বাম দলগুলোই। যারা ত্রিপুরা হোক বা পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট হোক বা মধ্যপ্রদেশ - দেশজুড়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে সরব সবসময়।

এবার আসা যাক বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় বৈঠক নিয়ে। যে বৈঠক থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ‘I-N-D-I-A’ মঞ্চের। যে বৈঠকে তৃণমূলের উপস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবেই। এই প্রসঙ্গেও একটা উদাহরণ টানা খুবই জরুরি। এই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই কিছুদিন আগে উদ্যোগী হয়েছিলেন কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনে। যে উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। যদিও শেষমেষ কিছু বিচক্ষণ শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের হস্তক্ষেপে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। যে উদ্যোগ প্রসঙ্গে সেই সময় সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছিলেন, “বিজেপি-র বিরুদ্ধে যখন একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ে এগোনো হচ্ছে, তখন মমতা তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের কথা বলে বিজেপি-র হাতই শক্ত করছেন।” সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থীর কাছে তৃণমূল প্রার্থীর পরাজয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল একলা লড়বে। তৃণমূলের জোট হবে মানুষের সঙ্গে।

আসলে জন্মলগ্ন থেকেই শিবির বদলে বদলে সুবিধাবাদী রাজনীতি করতে অভ্যস্ত তৃণমূল। রাজ্য তথা দেশ সেকথা জানে। তৃণমূলের সেই মনোভাব একেবারে বদলে গেছে এরকম কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। একাধিকবার বিজেপি-র সঙ্গে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েছে এবং ভেঙেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বিজেপি জোটে থাকাকালীন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সহ একাধিক তৃণমূল সাংসদ মন্ত্রীও হয়েছেন। সেক্ষেত্রে বিরোধীদের সমঝোতা মঞ্চে জাতীয় দলের তকমা হারানো তৃণমূলের উপস্থিতি এবং বিজেপি বিরোধী অবস্থানে তৃণমূলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। একসময় ‘বিজেপি-কে ফ্রন্টে রেখে লড়াই করবো’ বলা আরএসএস-এর ‘দুর্গা’ এই মুহূর্তে বিরোধী মঞ্চে থাকলেও আগামীদিনেও এই বিরোধী মঞ্চে থাকবেন কিনা তার উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুটা সময়। কারণ এর আগে একাধিকবার বিরোধীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ভেঙে একলা চলো রে নীতি নিয়েছে তৃণমূল।

দেশের রাজনীতি, রাজ্যের রাজনীতি এই মুহূর্তে এক বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে দেশজুড়ে, রাজ্যজুড়ে। যে লড়াই থেকে বামেদের পিছিয়ে আসার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। ঠিক সেভাবেই বিজেপি বিরোধিতায়, তৃণমূল বিরোধিতায় বামেদের অবস্থান নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠা সম্ভব নয়। কেরালায় কংগ্রেস বিরোধিতা অথবা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরোধিতা নিয়েও কোনও দ্বিমত থাকার কথা নয়। ১৯ জুলাই এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম খুব স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন, “বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও এই অবস্থান আমাদের পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত। আর এই বিজেপি-কে হটাতে রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতি ইঞ্চিতে লড়াই জারি থাকবে। কারণ আরএসএস স্পনসর করেছে তৃণমূলকে।” তাই আস্থা থাকুক মানুষের লড়াইতে, আস্থা থাকুক বাম পথে।