E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২১ মে, ২০২১ / ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

করোনার প্রকোপে দেশজুড়ে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত

কেন্দ্রের ব্যর্থতায় এবার সংক্রমণের জেরে বিপর্যস্ত গ্রাম ভারত


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ভারতে এ পর্যন্ত ২ কোটি ষাট লক্ষেরও বেশি মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে একতরফা পরিসংখ্যান দাখিল করে দেশে এই মুহূর্তে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা সামগ্রিকভাবে কমেছে একথা বলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু উত্তর প্রদেশ সহ অন্যত্র গঙ্গায় এবং একাধিক নদীতে ভেসে আসা হাজার হাজার লাশের দৃশ্য, বিভিন্ন প্রান্তে গণশবদাহের করুণ চিত্র এই তথ্যকে সমর্থন করছে না। দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা (১৯ মে পর্যন্ত) দাঁড়িয়েছে ২.৯১ লক্ষে। সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য বলছে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২.৬ কোটি। দেশের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী অবশ্য এই ‘তথ্য’তে আস্থা রাখছেন না বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষ কেউই। মানুষ কার্যত এই তথ্যের চমককে মোদী সরকারের সারবত্তাহীন জুমলা বলেই মনে করছে। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে লকডাউন এবং কড়া বিধি-নিষেধ চালু হলেও গণটিকাকরণ ও কোভিড বিধি সংক্রান্ত জনসচেতনতার পথে হাঁটতে হবে ভারতকে। সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে আগেই তোলা হয়েছে বিনামূল্যে গণটিকাকরণের এবং আর্থিক ভাবে অসচ্ছল পরিবারগুলির হাতে অর্থ সাহায্য তুলে দেবার দাবি।

বিরোধীরা বলছেন, মোদী তার স্বপ্নের ভিস্তা প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি মেতে উঠেছেন বিজেপি-আরএসএস সরকারের সপ্তম বর্ষ পূর্তি নিয়ে, রাম মন্দির নির্মাণের সাফল্যের জয়োল্লাসে। স্বাস্থ্যের বেহাল দশার জেরে আত্মনির্ভর ভারতের দাবি টেঁকে কিনা তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা ধেয়ে আসছে মোদি সরকারের দিকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ দিনে নরেন্দ্র মোদী ১৭টির বেশি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বৈঠক করেছেন। ‘কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি তেমন কিছু হয় নি’ এই সমালোচনা ঢাকতেই তাই পরিসংখ্যানের বিভিন্ন সূচককেই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মেলে ধরা হচ্ছে। দেশজুড়ে অক্সিজেন এবং ওষুধসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবার যন্ত্র এবং হাসপাতালগুলির বেড নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ উঠলেও সরকার তাতে কান দিচ্ছে না। তবুও কেন্দ্রের মন্ত্রীরা কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে নারাজ। উল্টে মোদীরাজের সপ্তম বর্ষপূর্তিতে রাম মন্দির নির্মাণের বিষয়টিকেই সামনে আনা হচ্ছে সাফল্যের খতিয়ান হিসেবে। বিপর্যস্ত অর্থনীতি এবং বেকারি ও দারিদ্র বাড়ার বিষয়টি কেন্দ্রের কাছে গুরুত্বের বিষয় নয় উপেক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।

দেশে মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং কর্ণাটক আক্রান্তের তালিকায় ধারাবাহিক ভাবে ওপরের দিকে রয়েছে। এই মাসের কোভিড আক্রান্তের প্রবণতার ঢাল থেকে দেখা যাচ্ছে কমছে দক্ষিণ ভারতের কেরালা এবং তেলেঙ্গানাতে। আরও দেখা যাচ্ছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এখন পূর্ব ভারত মুখী। বাড়ছে পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতেও। গ্রামীণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে করোনার বাড়তে থাকা সংক্রমণকে ঘিরে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির অপদার্থতা এবং বিভীষিকার নানা খণ্ডচিত্র গোটা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকেই কার্যত প্রহসনে পরিণত করেছে। কি অবস্থা ‘বিকাশ পুরুষে’র ভারতের? যোগীর উত্তর প্রদেশের হাল থেকে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ৬ থেকে ১২ মে - সাত দিনে উত্তর প্রদেশে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮৯১ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এরমধ্যে প্রতিদিন ৩১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গড়ে। ৭ দিনে মোট ২,২১৯ জনের প্রাণ গিয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী এই তথ্য সামনে রাখা হলেও তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। কারণ বিস্তীর্ণ গঙ্গাপাড় সংলগ্ন জেলাগুলিতে হাজারে হাজারে বেনামি মরদেহের খোঁজ ওই রাজ্যের গ্রামগুলির ভয়াবহ অবস্থাকেই তুলে ধরেছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যে অবশ্য ব্যতিক্রম কেরালা তার সীমিত সামর্থ্য নিয়েই।

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ২০ মে অনলাইন প্রেস কনফারেন্সে টিকা কেন্দ্রিক অস্বচ্ছতাদুর করতে টিকা নীতি সম্পর্কে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে। কত টিকা এ পর্যন্ত সংগৃহীত হয়েছে এবং কত টিকা দেশে আনা হবে তার হিসাব শ্বেতপত্রে তুলে ধরার দাবি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের গ্রামীণ এলাকায় সংক্রমণ, রোগ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত ঘাটতি দ্রুত দূর করে পরিস্থিতি শুধরানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

আবার বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে আসছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার সরঞ্জাম ও পরিকাঠামোর অভাব সহ আরেক গুরুতর অভিযোগের কথাও। মধ্য ভারতের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে করা অভিযোগে বলা হয়েছে, করোনার জেরে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীকে নিয়ে রাজ্যের বড়ো হাসপাতালে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হলে তা করোনায় মৃত্যু হিসেবে নথিভূক্ত করা বা ঘোষিত করা হচ্ছে না। প্রতিবেদনে প্রকাশ, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যখন একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের করোনা আক্রান্তকে নিয়ে পরিজনেরা হাসপাতালে পৌঁছেছেন, তাঁদের সহযোগিতা করার এবং রোগীর দ্রুত চিকিৎসার বদলে ফেলে রাখা হচ্ছে। পরে রোগীকে মৃত ঘোষণা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ওই গরিব পরিবারটিকে চাপ সৃষ্টি করে তার পরিজনকে আক্রান্ত হৃদরোগ জনিত কারণে মৃত বলে সার্টিফিকেট নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এদিকে কুম্ভ মেলার ধর্মীয় জমায়েতের মাধ্যমে ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়েছে বলে মনে করছে আইসিএমআর। তাদের রিপোর্টে পরিযায়ী শ্রমিকদের দিকেও আঙ্গুল তোলা হচ্ছে। যদিও পরিযায়ী শ্রমিকদের দায়ী করার বিষয়টিকে বিভিন্ন মহল থেকে গুরুতর বলে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না।

স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে একটি আবেদন জমা পড়েছে। একটি পিটিশন দাখিল করে কোভিড আক্রান্ত নয় এমন রোগীরা চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবার আবেদন জানানো হয়েছে। শীর্ষ আদালতের কাছে কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসালয়গুলিতে যেভাবে করোনা আক্রান্তদের গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি অন্য সাধারণ রোগীদের পরিষেবা দেবার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।