৫৮ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২১ মে, ২০২১ / ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
করোনায় প্রয়াত বিশিষ্ট চিকিৎসক সুবীর দত্ত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন জনবিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, স্বনামধন্য প্যাথলজিস্ট, বিশিষ্ট অধ্যাপক চিকিৎসক সুবীর দত্ত। ১৪ মে সকাল ১০টা নাগাদ ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়। বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন, তার সাথে কোভিডে আক্রান্ত হন। গত ২৫ এপ্রিল থেকে তিনি ওই হাসপাতালে ভরতি ছিলেন।
ডাঃ সুবীর দত্তের জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। এদিন বিমান বসু বলেন, ‘‘সুবীরদার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। আজীবন বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী ডাঃ সুবীর দত্ত বরাবর সমাজহিতে কাজ করে গিয়েছেন। সমাজ সচেতনতা, বিজ্ঞান চেতনা গড়ে তোলার কাজ করেছেন। সাক্ষরতার কাজেও আমরা তাঁর সাহায্য সবসময়ে পেয়েছি। তাঁর কন্যা ও পরিবারের অন্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ সূর্য মিশ্র এদিন এক শোকবার্তায় বলেন, ‘‘সুবীরদার হাতে গড়া সায়েন্টিফিক ক্লিনিকাল ল্যাবরেটরি রাজ্যের কয়েকটি হাতে গোনা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। মেডিক্যাল শিক্ষা, মেডিক্যাল কাউন্সিল ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও পরিবার পরিজনদের সমবেদনা জানাই।’’
কলকাতার তালতলায় বেসরকারি স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র সায়েন্টিফিক ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির কার্যকরী অধিকর্তা ডাঃ সুবীর দত্ত রাজ্যের অন্যতম অভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট বলে খ্যাত ছিলেন। তিনি একসময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগের ডিন পদে ছিলেন। জাতীয় স্তরে একাধিক স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল-এর সহ সভাপতি ছিলেন ১০ বছর। স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টির সদস্যও ছিলেন তিনি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী ডাঃ সুবীর দত্ত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পিপলস রিলিফ কমিটি বা পিআরসি’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে ওই সংস্থার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাধারণ মানুষের জন্য কম খরচে রক্তের পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিষয়ে অন্যান্য পরীক্ষা কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে তাঁর বিস্তর গবেষণা ছিল।
রাজ্যের একাধিক গবেষণাধর্মী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডাঃ দত্ত। তিনি একসময়ে এশিয়াটিক সোসাইটির কাউন্সিল সদস্য ছিলেন, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন সহ একাধিক সংস্থার সক্রিয় সদস্য ছিলেন। প্যাথোলজি নিয়ে তাঁর শিক্ষাদানে অনেক চিকিৎসক উপকৃত হয়েছেন। তাঁর সংস্থার প্যাথোলজিক্যাল রিপোর্টের প্রতি রাজ্যের চিকিৎসক মহলের দারুণ আস্থা ছিল।
পিপলস রিলিফ কমিটি পরিচালনায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তিনি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি ছিলেন। শারীরিক কারণে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিলেও প্যাথলজি বিভাগের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন আজীবন। তাঁকে পিআরসি থেকে সাম্মানিক সদস্যপদ দেওয়া হয়। তিনি ‘গণদর্পণ’-এর প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। পিআরসি’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ফুয়াদ হালিম তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন।
‘গণদর্পণ’-এর সভাপতি ডাঃ প্রবুদ্ধকুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত সাহা রায় গভীর শোক জানিয়ে বলেছেন, ‘‘গণদর্পণের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ সুবীর দত্তর প্রয়াণে আমরা শোকাহত। গণদর্পণ পরিচালনায়, এর উত্তরণে তাঁর অবদান আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। মাত্র গতকালই চলে গেলেন ব্রজ রায়। আমাদের মনোবলের উপর পরপর আঘাত। আমরা বিজ্ঞান-আন্দোলনের এই দুই নেতার কর্ম-দৃষ্টান্তকে উজ্জ্বল করে রাখার অঙ্গীকার করছি।’’