৫৮ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২১ মে, ২০২১ / ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সমস্ত মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য যা করতে হবে
প্রভাত পট্টনায়েক
মোদী সরকার এতদিন পর্যন্ত যত যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাণ্ডজ্ঞানশূন্য সিদ্ধান্ত হলো, তথাকথিত ‘খোলা বাজারের’ হাতে ভ্যাকসিন বণ্টন ব্যবস্থাটিকে সঁপে দেওয়া। প্রাথমিকভাবে, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দু’টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই ডোজ প্রতি ১৫০ টাকা মূল্যে কেন্দ্রীয় সরকার কিনে নিচ্ছিল। অতঃপর, সেই ভ্যাকসিন জনগণকে বিনামূল্যে দেওয়ার বন্দোবস্ত সরকার নিজেই করেছিল। সেক্ষেত্রে, একইসাথে, ভ্যাকসিন দেওয়ার অন্যান্য ব্যবস্থাগুলিকেও সরকার ব্যবহার করে, যার মধ্যে ছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলিও (যদিও বা সেখানে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ডোজ পিছু ২৫০ টাকা দিতে হয়, কারণ ওই প্রতিষ্ঠানগুলিকে সম পরিমাণ অর্থ সরকারকে দিতে হচ্ছিল)। এই ‘খোলা বাজার’ বন্দোবস্তের ফলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে তাদেরই নির্ধারিত দামে ভ্যাকসিন কিনতে আচমকাই বাধ্য করা হলো রাজ্য সরকারগুলিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও।
ভ্যাকসিনের ঘাটতি এবং বিশ্বজোড়া মহামারীর প্রকোপ ঠেকাতে যুদ্ধকালীন বন্দোবস্তে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা - পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে নিজেদের শ্রীবৃদ্ধির এই যে সুযোগ সরকার ওই প্রতিষ্ঠান দু’টির হাতে তুলে দিল, তা তারা সোল্লাসেই গ্রহণ করে নিলো, এবং তাদের উৎপাদন ব্যয়ের সাথে কোনোরকম সম্পর্ক ছাড়াই ভ্যাকসিনের জন্য তারা ধার্য করলো মনগড়া গলাকাটা দাম। (পরবর্তীকালে তারা রাজ্য সরকারগুলির জন্য সামান্য কিছু দাম কমিয়েছে; যা প্রমাণ করে দেয়, কোনোরকম যুক্তিগ্রাহ্য নীতি নয়, তারা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ করছে।)
অনেকগুলি রাজ্য সরকার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু দেখার বিষয় হলো তাদের নড়বড়ে আর্থিক অবস্থা এই সদিচ্ছা পূরণের পক্ষে তাদের কতটা অনুমোদন দেয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলি ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য গলাকাটা দাম ধার্য করে তাদের যে দাম দিতে হবে তা নিশ্চিতভাবেই তুলে নিয়ে আসবে। ফলত, জনগণের একটি বিশাল অংশকে কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য মোটা টাকা গুণতে হবে।
অনেকেই এক্ষেত্রে বলতে পারেন, যে সমস্ত পয়সাওয়ালা মানুষ বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা নেয়, তারা যদি বড়ো অঙ্কের অর্থ দিয়ে ভ্যাকসিন নেয়, তাহলে ক্ষতি কী? তাদের ভ্যাকসিনের জন্য সরকার ভরতুকি দেবে কেন? এর উত্তর দু’দিক থেকে দেওয়া যায়।
প্রথমত, অদূর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের কিছু ঘাটতি যেহেতু দেখা দেবে, সেক্ষেত্রে একই মজুত (যার পরিমাণ ভ্যাকসিনের মোট উৎপাদনের অর্ধেক, বাকি অর্ধেক তো কেন্দ্রীয় সরকার আগেই সরিয়ে নিচ্ছে) থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারগুলি ও বেসরকরি হাসপাতালগুলির মধ্যে যদি প্রতিযোগিতা শুরু হয় তাহলে বেসরকারি হাসপাতালগুলিই নিশ্চিতভাবে বেশি ভ্যাকসিন পাবে। তার কারণ, তাদের কাছে ভ্যাকসিন বিক্রি করা অনেক বেশি লাভজনক। সুতরাং, রাজ্য সরকারগুলি ভ্যাকসিনের ঘাটতিতে ভুগবে এবং বেশ কিছু গরিব মানুষ বাধ্য হবে বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে। অতএব, এই গলাকাটা দাম কেবলমাত্র পয়সাওয়ালা মানুষের বিষয় হয়ে থাকবে না; যে সমস্ত গরিব মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হবে, তাঁরাও সেই দামের বোঝা ঘাড়ে নেবে। কোনো কোটা নির্ধারণ না করেই, অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে একই যোগানের থেকে কোন্ পক্ষ কতটা পাব,তা স্থির না করেই দু’ধরণের দাম চালু করা চরম নির্বুদ্ধিতার কাজ; এবং মোদী সরকার সেই কাজটাই করেছে।
দ্বিতীয়ত, এবং যেটা আরও অনেক বেশি মৌলিক প্রশ্নও, তা হলো বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার বন্দোবস্ত করার অর্থ প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার অধিকারকে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতিদান। বেঁচে থাকার অধিকার হলো একটি সর্বজনীন অধিকার। এর সর্বজনীনতার আবেদন প্রকাশিত হয় প্রত্যেকের পক্ষে উপযোগী একটি অভিন্ন দামের মধ্যে দিয়ে; আর এই ধরনের একটি অভিন্ন দাম একমাত্র শূন্যই হতে পারে। শূন্য ব্যতীত যে কোনো দাম - তা সে অভিন্নই হোক বা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হোক - বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি করে। সেই অভিঘাত কেমন ধারার হবে তা নির্ভর করে মানুষের আর্থিক আয়ের ওপরে। অতএব, দামের এই ভিন্নতার সারমর্ম হলো, বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্নে সরকার ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ওপরে ভিন্ন ভিন্ন মূল্য চাপিয়ে দিচ্ছে। এর থেকে বলা যায়, সমস্ত মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের ধারণাটিকে রাষ্ট্র সমান চোখে দেখছে, তা ফুটে ওঠে একমাত্র সকলের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের বন্দোবস্ত করার মধ্যে দিয়ে।
একটি নির্দিষ্ট বয়সের সমস্ত নাগরিকের ক্ষেত্রে ভোটদানের অধিকার হলো একটি সর্বজনীন অধিকার। কোনো অর্থ প্রদানের শর্তে এই অধিকার নির্ধারিত হতে পারে না (কেননা, সেক্ষেত্রে ওই অর্থ প্রদানের মাপকাঠি ভোটদানের অধিকারের সমতাকে বিঘ্নিত করবে, অতএব তার সর্বজনীনতাকে খেলাপ করা হবে)। একইভাবে, বেঁচে থাকার অধিকারের প্রসঙ্গটির ওপরে কোভিড-১৯ মোকাবিলাকারী ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে, তাই তা শর্তাধীন হতে পারে না - সকলকেই পুরোপুরি বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
নিশ্চিতভাবেই, এর জন্য রাষ্ট্রকে অর্থের সংস্থান করতে হবে, এবং অবশ্যই তা করতে হবে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ওপরে ভিন্ন ভিন্ন করের বোঝা চাপিয়ে। কিন্তু, ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে একজন মানুষের সাথে অপর মানুষের কোনো পার্থক্য থাকলেও, করের বোঝার এই পার্থক্যটিকে তার সাথে কোনোভাবে যুক্ত করা যাবে না। ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়টিকে সর্বজনীন ও করের সাথে সম্পর্কহীন হতে হবে; কর চাপানোর প্রসঙ্গটিকে একটি পৃথক বিষয় হিসাবে দেখতে হবে। আর সকলকে যদি বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে হয়, তাহলে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে সেই কাজ করা যায় - ভ্যাকসিনের গোটা যোগানটাই কেন্দ্রীয় সরকার সংগ্রহ করে নেবে, এবং বেসরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সংস্থানের মারফত তা জনগণের মধ্যে বিলি করা হবে। (এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে; ইতিপূর্বে যে ২৫০ টাকা ন্যূনতম চার্জ নেওয়া হচ্ছিল, সেই ধরনের কোনো ন্যূনতম অর্থও নেওয়া যাবে না।)
তিন ধরনের দাম চালু করার আগে (বর্তমানে কেন্দ্র, রাজ্যগুলি ও বেসরকারি হাসপাতালের জন্য পৃথক পৃথক দাম চালু হয়েছে) সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে নিত ডোজ প্রতি ১৫০ টাকা হিসাবে। তখনকার হিসাবের তুলনায় বর্তমানে ভ্যাকসিন উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পায়নি বললেই চলে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল পরিমাণে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করলে এখনও ওই দাম যথেষ্ট বলেই বিবেচনা করা যায়। এখন ধরে নেওয়া হয় যদি ১২০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে এবং প্রত্যেকে দু’টি করে ডোজ পাবে, তাহলে সেক্ষেত্রে মোট খরচ হবে ৩৬,০০০ কোটি টাকা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৩ জন নেতানেত্রী চিঠি লিখে নরেন্দ্র মোদীকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, সরকারের বাজেটে সাধারণ ভ্যাকসিন কর্মসূচির জন্য যে অর্থবরাদ্দ করা আছে তার থেকে ব্যয়বরাদ্দ করে জনগণকে কোভিড-১৯ মোকাবিলার ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। কিন্তু, সরকার যদি তা না-ও করতে চায়, এবং যদি অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহও না করে, তাহলে ফিসক্যাল ঘাটতি বৃদ্ধি করে কোভিড-ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যয় এক্ষুনি করতে হবে। পরে যদি এই ঘাটতি মেটানোর জন্য সম্পদ সংগ্রহ করে তাহলে তো ভালো; অন্যথা এই অতিরিক্ত ৩৬,০০০ কোটি টাকার ঘাটতি অত্যন্ত মামুলি একটি বিষয়, কেননা এই ঘাটতি জিডিপি-র ০.২ শতাংশেরও কম। এই ঘাটতির কী প্রভাব লগ্নি বাজারে পড়তে পারে তা নিয়ে সরকারের যদি দুশ্চিন্তা থাকে, তাহলে বলতে হয় এই যৎসামান্য ঘাটতি লগ্নি বাজারের নজরেও আসবে না। আর, যেখানে দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন আজ বিপন্ন, সেখানে আন্তর্জাতিক লগ্নি বাজারের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে মাথাব্যথা করাটাই একটি অপরাধমূলক কাজ।
‘খোলা বাজারের’ হাতে ভ্যাকসিন বণ্টন ব্যবস্থাকে সঁপে দেওয়ার যে কাজ সরকার করেছে তাকে চরম অমানবিক বলে অভিহিত করা ছাড়া যদি অন্য কোনো ব্যাখ্যা দিতে হয়, তাহলে বলতে হয়, সরকারের একমাত্র মাথাব্যথা বিশ্ব লগ্নি পুঁজি নিয়েই। করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছিল বয়স্ক মানুষেরা; কিন্তু তার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বয়স্ক মানুষদের সাথে সাথে কমবয়সীরাও সমানভাবে আক্রান্ত। সেইহেতু ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্র বাড়িয়ে তা কমবয়সীদের মধ্যেও নিয়ে যেতে হতো; এবং সেক্ষেত্রে সরকার যুক্তি সাজাতেই পারে যে, তার পুরনো বন্দোবস্তকে আরও বৃহত্তর মাত্রায় চালিয়ে নিয়ে যেতে গেলে ফিসক্যাল ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পাবে ও তাতে আন্তর্জাতিক লগ্নি দূরে সরে যাবে। কিন্তু, কোনো সরকার যদি তার নাগরিকদের জীবনের ঊর্ধ্বে আন্তর্জাতিক লগ্নির প্রতিক্রিয়াকে ঠাঁই দেয়, তাহলে তা জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাকতার কাজ মাত্র।
পরিশেষে, ভ্যাকসিনের যোগানের প্রসঙ্গে প্রশ্ন থাকছে। কোভিশিল্ডের উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউটকে ৩০০০ কোটি টাকা ও কোভ্যাকসিনের উৎপাদক ভারত বায়োটেককে ১৫০০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তাদের স্ব স্ব উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য। কিন্তু তাদের উৎপাদন বৃদ্ধির সময়ভিত্তিক নকশা এবং পরিকল্পিতভাবে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজের ক্ষেত্রে সেই সময়ভিত্তিক নকশা কীভাবে মানানসই হয়ে উঠবে, সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা আছে। এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার দেশের মানুষকে তার আস্থায় নিয়ে আসেনি।
এর বাইরে আরও দু’টি সমস্যা আছে। সেরাম ইনস্টিটিউট ব্রিটিশ সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য তারা ২৪০ মিলিয়ন পাউন্ড (টাকার অঙ্কে ২৪৮৮ কোটির বেশি) ব্রিটেনে বিনিয়োগ করবে। ভারতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বর্তমানে গোটা বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বলে চিহ্নিত হয়েছে। সুতরাং, ভারতের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাজ মুলতবি রাখা এবং সেই কাজের পরিশ্রম ও সম্পদ অন্য বাজারে চালান দেওয়া - দু’টোই আটকাতে হবে। এই দিক থেকে দেখলে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাজ কারবারের ওপরে নজরদারি চালানো অত্যন্ত জরুরি। সেরাম ইনস্টিটিউটের পরিচালনমণ্ডলীতে সরকারি প্রতিনিধিত্ব এই নজরদারি নিশ্চিত করতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে এর প্রয়োজন আছে, কেননা সরকার যদি তাদের ৩০০০ কোটি টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে সেই টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে তার ওপর নজর রাখতে তো হবেই। (ঠিক একই ধরনের একটি বন্দোবস্ত ভারত বায়োটেকের ক্ষেত্রেও করতে হবে।)
ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে ভ্যাকসিন যোগান দেওয়ার পরিকল্পিত সময়সীমা রক্ষা করতে অ্যাস্ট্রাজেনিকা ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই, সরকারি টাকা নিয়ে সেরাম ইনস্টিটিউট বা ভারত বায়োটেকও যে একইভাবে ব্যর্থ হতে পারে, সেই সম্ভাবনা কোনোভাবেই আর সামান্য নয়। সঠিক জায়গায় সরকারি প্রতিনিধিকে বসিয়ে তাঁর মাধ্যমে ওই কোম্পানি দু’টির পরিচালন ব্যবস্থায় নজরদারি চালানো এক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে ন্যূনতম প্রয়োজন। এরমধ্যে দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে দু’টি বিষয় - প্রথমত, তারা মুনাফাখোর না হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ডোজ প্রতি ১৫০ টাকা হারে বিক্রি করবে; দ্বিতীয়ত, ভ্যাকসিন জোগানোর পরিকল্পিত নির্ঘণ্ট তারা রক্ষা করে চলবে।
আলোচ্য সমস্যা দু’টির দ্বিতীয়টি হলো, ভ্যাকসিনের উৎপাদন বৃদ্ধি। এরজন্য সরকারকে এই দু’টি প্রতিষ্ঠানের বাইরেও উৎপাদন করতে দিতে হবে। বাধ্যতামূলক লাইসেন্স দিতে হবে এবং ভ্যাকসিন উৎপাদনের নতুন ব্যবস্থা শুরু করতে হবে; ভালো হবে যদি তা সরকারি ক্ষেত্রের মাধ্যমেই চালু করা হয়, যাতে সরকার তাদের কাছ থেকে ডোজ প্রতি ১৫০ টাকা হারে ভ্যাকসিন কিনে নিতে পারে।
কোভিড-১৯ সঙ্কট হলো একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো। এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে হবে সেইসব পদক্ষেপের মাধ্যমে, যেগুলি একটা যুদ্ধের সময় গৃহীত পদক্ষেপের থেকে কোনো অংশেই কম জরুরি নয়।
অনুবাদঃ জয়দীপ ভট্টাচার্য